মরশুমের শুরুটা যথেষ্ট ইতিবাতক ভাবে করলেও মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের কোচ হুয়ান ফেরান্দো মনে করেন, এখনও অনেক কাজ বাকি এবং এখনও অনেক সংশোধনের কাজ করতে হবে দলকে। গত শনিবার চলতি আইএসএলে তাদের প্রথম ম্যাচে দাপুটে ফুটবল খেলে পাঞ্জাব এফসি-কে হারায় মোহনবাগান এসজি। তার আগে এএফসি কাপের গ্রুপ পর্বের খেলাও শুরু করেছে তারা। প্রথম ম্যাচে ওডিশা এফসি-কেও ভুবনেশ্বরে গিয়ে হারিয়ে এসেছে তারা। সেই ম্যাচেও যথেষ্ট ভাল পারফরম্যান্স দেখায় সবুজ-মেরুন বাহিনী। মরশুমের শুরুতে ডুরান্ড কাপ জয়ের কথা এখনও নিশ্চয়ই কেউ ভোলেনি।

দলের এমন পারফরম্যান্স যেখানে, সেখানে কোচের যথেষ্ট খুশি ও সন্তুষ্ট হওয়ারই কথা। কিন্তু ফেরান্দো সেই ধাতুতে গড়া নয়। দল যতই ভাল খেলুক, তিনি চান আরও ভাল কিছু করতে। তাই আইএসএলের দ্বিতীয় ম্যাচে নামার আগে মোহনবাগান কোচ বললেন, “দলের এখনও অনেক উন্নতি প্রয়োজন। খুঁটিনাটি অনেক ব্যাপারেই সংশোধন দরকার। আমি খুশি দলের ছেলেদের পরিশ্রম সফল হয়েছে বলে। ওরা খুবই পরিশ্রম করে। মাঠে নিজেদের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করে। এটাই আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আরও সময় পেলে আরও উন্নতি করতে পারব”।

তিনি এখন চলতি আইএসএলের সবচেয়ে সুখী কোচ কি না, জানতে চাইলে ফেরান্দো বলেন, “আমি তখনই নিজেকে খুশী মনে করব, যখন ফাইনাল জিতে ট্রফি পাব। এখন আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বেঙ্গালুরু ম্যাচ, অতীতে কী হয়েছে, সেটা নয়। ঘরের মাঠে তিন পয়েন্ট পাওয়াটা খুবই জরুরী। খুশি হওয়া বা না হওয়াটা বড় কথা নয়। আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। চুপচাপ থেকে আগামী কালের ৯০ মিনিটে মনঃসংযোগ করাই ভাল”।

প্রথম ম্যাচে পাঞ্জাব এফসি-কে ৩-১-এ হারানোর পরে দ্বিতীয় ম্যাচে এ বার প্রতিদ্বন্দী বেঙ্গালুরু এফসি। গতবার আইএসএল ফাইনালে তাদের হারিয়েই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তৎকালীন এটিকে মোহনবাগান। বেঙ্গালুরু যে একই রকম শক্তিশালী দল রয়েছে, তা স্বীকার করে নিয়ে ফেরান্দো জানান, “কালকের ম্যাচ বেশ কঠিন। বেঙ্গালুরু ভাল দল। ওদের গতবারের দলের খেলোয়াড়রা বেশিরভাগই রয়েছে। একই পরিকল্পনা নিয়ে খেলছে ওরা। এই পরিকল্পনায় খেলেই ওরা গতবার তিনটে ফাইনালে উঠেছিল, আইএসএল, ডুরান্ড কাপ ও সুপার কাপ। তাই ওদের বিরুদ্ধে ম্যাচটা সহজ হবে না। আমাদের অনেক খুঁটিনাটি ব্যাপার নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। কারণ, প্রতিপক্ষ প্রায়ই তাদের কৌশল, পরিকল্পনা বদলাতে পারে। সে জন্য আমাদের তৈরি থাকতে হবে”।

প্রতিপক্ষ সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, “গতবার যে পরিকল্পনা নিয়ে খেলেছিল ওরা, সেই পরিকল্পনার ওপরই ভরসা রেখেছে, যা একেবারে পরিষ্কার। ওরা ওঠানামায় খুবই ভাল। কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে হারটা ওদের ছোট ভুলের ফল। কিন্তু তাই বলে দলটাকে কোনও ভাবেই খারাপ বলা যাবে না। ওদের বিরুদ্ধে অনেক খুঁটিনাটি ব্যাপারে নিয়ন্ত্রণ আমাদের হাতে রাখতে হবে”।

তবে তাঁর নিজের দল যে গত দুই ম্যাচের পরিকল্পনা অনুযায়ীই খেলবে, এমন নিশ্চয়তা দিলেন না ফেরান্দো। বলেন, “আমাদের সিস্টেম হয়তো একই থাকবে। কিন্তু একই পরিকল্পনা নিয়ে যে খেলব, তার কোনও মানে নেই। দেখা যাক। এটা নির্ভর করবে পরিস্থিতির ওপর। ওডিশা, পাঞ্জাবের চেয়ে বেঙ্গালুরু দলটা আলাদা। কম সময়ে আমরা এখনও পুরো প্রস্তুতি নিতে পারিনি। আমাদের কাছে ম্যাচটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি, কাল সাফল্য নিয়েই মাঠ ছাড়ব”।

যেহেতু কম সময়ে অনেকগুলি ম্যাচ খেলতে হচ্ছে তাদের, তাই দলের ফুটবলারদের ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেলারই পক্ষপাতী সবুজ-মেরুন কোচ। সে জন্য দলে যথেষ্ট ভাল মানের খেলোয়াড়ও রয়েছে বলে মনে করেন তিনি। এই প্রসঙ্গে কোচ বলেন, “আমাদের দলের সব খেলোয়াড়ই মাঠে নামার জন্য তৈরি থাকে। তাই সবাইকে বিশ্রাম দিয়ে খেলানো যেতে পারে। কারণ, ফুটবলারদের শুধু শারীরিক ভাব তরতাজা হয়ে মাঠে নামলে হয় না, মানসিক ভাবেও তাদের তরতাজা হয়ে মাঠে নামা উচিত। সামনে অনেক ম্যাচ আছে। তাই ম্যানেজমেন্টকে ধন্যবাদ যে ভাল একটা দল তারা গড়েছে, যেখানে সবাই ভাল খেলার অবস্থায় রয়েছে। শুধু আশিকের চোটটা আমায় হতাশ করেছে। তবে আমি খুশি এই কারণে যে প্রত্যেকেই নিজেকে প্রমাণ করার জন্য মরিয়া”।

সবুজ-মেরুন কোচের ধারণা, ফুটবলাররা সবাই ভাল খেলায় দলের ফলও ভাল হচ্ছে। তিনি বলেন, “এদের মধ্যে থেকে সেরাদের বেছে দল নামানো কঠিন। কিন্তু এটাই আমার কাজ। প্রথম ম্যাচে থাপার অভাব টের পাওয়া গিয়েছে ঠিকই। কিন্তু সহাল ও গ্ল্যান যথেষ্ট ভাল খেলেছে। ম্যাচের মাঝখানে কৌশল বদলের দরকার হলে খেলোয়াড় বদল করার প্রয়োজন হয়। সেই বিকল্পও আমাদের হাতে ভরপুর আছে। দলে প্রতিভার অভাব নেই। কিন্তু এই প্রতিভাকে সঠিক ভাবে ব্যবহার করতে পারাটাই আসল ব্যাপার”।

ডুরান্ড কাপে লাল কার্ড দেখায় গত ম্যাচে অনিরুদ্ধ থাপা খেলতে পারেননি। এই ম্যাচে তিনি খেলবেন। এ দিন কোচের সঙ্গে তিনিও সাংবাদিক বৈঠকে ছিলেন। দলের ড্রেসিং রুমের আবহাওয়া নিয়ে থাপা বলেন, “ড্রেসিংরুমে আমরা খুব হাসিখুশি একটা পরিবারের মতো। ম্যাচ জিততে থাকলে তো সবাই খুশি হবেই। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আমরা যা করেছি, সে জন্যই সবাই খুশি। অনুশীলনও খুব ভাল হচ্ছে। সেখানে সবাই খুব পরিশ্রম করছি।  শুরু থেকেই ভাল আছি আমরা। ডুরান্ড কাপ জিতেছি। এর ফলে দলের মধ্যে একটা খুশির বাতাবরণ এমনিতেই রয়েছে। তবে আমাদের এই ভাল খেলাটা চালিয়ে যেতে হবে। তা হলে আমরা একই রকম ভাল থাকব”।

নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে ভারতীয় দলের নির্ভরযোগ্য মিডফিল্ডার বলেন, “আমি সবসময়ই ভাল খেলতে চাই। কিন্তু মাঝে মাঝে পরিকল্পনার স্বার্থে নিজেকে অতটা মেলে ধরা সম্ভব হয় না, যতটা আমি পারি। প্রতি ম্যাচেই প্রতিপক্ষের শক্তি-দুর্বলতা অনুযায়ী পরিকল্পনা তৈরি করতে হয় আমাদের এবং সেই অনুযায়ীই খেলতে হয়। তাই প্রতিদিন হয়তো সেরাটা দেওয়ার সুযোগ পাই না। কিন্তু চেষ্টা করি। মানসিকতাও একই থাকে যে, সেরাটাই দিতে হবে”।

বুধবারের ম্যাচে বেঙ্গালুরু দলে নেই কিংবদন্তি তারকা সুনীল ছেত্রী। জাতীয় কর্তব্য পালনের জন্য তিনি এখন চিনের হাংঝৌউয়ে, এশিয়ান গেমসে। তবে সে জন্য বেঙ্গালুরু এফসি দুর্বল হয়ে যাবে বলে মনে করেন না থাপা। বলেন, “সুনীল ভাই কত ভাল খেলোয়াড়, তা আমরা সবাই জানি। কিন্তু আমরা তো ম্যাচটা খেলছি বেঙ্গালুরু এফসি-র বিরুদ্ধে।  ওদের সব খেলোয়াড়ই যথেষ্ট দক্ষ। ভাল খেলছেও। ওদের আটকানোর জন্য আমাদের তৈরি থাকতে হবে এবং সেরা খেলাটা খেলে তিন পয়েন্টও পেতে হবে”।