নাইজিরিয়া থেকে ফের এক চিমা আসছেন কলকাতার ফুটবলে। তবে ইনি অন্য চিমা। ড্যানিয়েল চিমা চুকুউ। ইনি নরওয়ের প্রথম ডিভিশনে তিনবারের চ্যাম্পিয়ন দলের স্ট্রাইকার, যাঁকে আগামী হিরো আইএসএল মরশুমের জন্য চুক্তিবদ্ধ করল এসসি ইস্টবেঙ্গল। বৃহস্পতিবার এই নতুন চিমার যোগদানের কথা ঘোষণা করল কলকাতার ক্লাব।

নরওয়ের প্রথম ডিভিশন ক্লাব মোল্ড এফকে-র লিগ চ্যাম্পিয়ন দলে ছিলেন চিমা। একবার নয়, তিনবার। চার বছর লিগে অংশ নিয়ে তিনবারই চ্যাম্পিয়ন হয় তারা। ২০১০ থেকে ২০১৫-র মধ্যে দু’বার নরওয়েইয়ান কাপজয়ী মোল্ড দলেও ছিলেন তিনি। ২০১৩-য় সেই ক্লাবের সর্বোচ্চ স্কোরারও হয়েছিলেন ১৩ গোল করে। ২০১১ থেকে ২০১৪— এই চার বছর বর্তমান ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড কোচ ওলে গানার সোলস্কায়েরের তত্ত্বাবধানেও ছিলেন তিনি। ওই চার বছর মোল্ডের কোচের দায়িত্বে ছিলেন তিনিই।

মোল্ডের প্রথম লিগ জয়ে চিমার গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল। ২০১১-য় সেই মরশুমে ২৪ ম্যাচে পাঁচ গোল করেন তিনি। ২০১২-র ইউরোপা লিগে জার্মানির ঐতিহ্যবাহী ক্লাব ভিএফবি স্টুগার্টের বিরুদ্ধে ২-০ জয়ে গোল করে ক্লাবের নায়কের সন্মান পান তিনি। ২০১২-র মরসুমেও মোল্ডের লিগ জয়ে তাঁর পারফরম্যান্স ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

মোল্ড ছাড়াও পোল্যান্ডের ক্লাব লেগিয়া ওয়ারশর হয়েও মাঠে নেমেছেন ৩০ বছর বয়সি এই স্ট্রাইকার। ২০১৭-য় এই পোলিশ ক্লাবে যোগ দিয়ে তাদের হয়ে ন’টি ম্যাচ খেলেন তিনি। এর মধ্যে উয়েফা ইউরোপা লিগ ও উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের বাছাই পর্বের ম্যাচও ছিল। পোল্যান্ডে যাওয়ার আগে তিনি চিনের সুপার লিগ ক্লাব সাংহাই শেনজিনের হয়েও খেলেন।  ২০১৮-য় তিনি মোল্ডে ফিরে আসেন এবং ১৭ ম্যাচে ছ’টি গোল করেন। ওখান থেকে লোনে চিমা ফিরে যান চিনা ফুটবলে, হেলঙজিয়াঙ লাভা স্প্রিং ক্লাবে। ২০১৯ পর্যন্ত সেখানেই ছিলেন। গত বছর চিমা দু’বছরের চুক্তিতে যোগ দেন চিনেরই আর এক ক্লাব তাইঝু ইউয়ান্ডায়।

এতদিন মূলত ইউরোপে খেলার পরে এ বার ভারতের ঐতিহ্যবাহী ক্লাব এসসি ইস্টবেঙ্গলে যোগ দিয়ে চিমা বলছেন, “এমন এক সন্মানীয় ক্লাবের অংশ হয়ে উঠতে পেরে আমি খুশি। এসসি ইস্টবেঙ্গলকে যত বেশি সম্ভব ম্যাচ জেতানোই হবে আমার কাজ। নরওয়েতে আমি চ্যাম্পিয়ন দলে ছিলাম। একাধিক ভাল কোচের সঙ্গে কাজ করেছি। আমার অভিজ্ঞতা দলের কাজে লাগানোর চেষ্টা করব। সতীর্থদের উন্নতিতেও সাহায্য করব। নতুন একটা চ্যালেঞ্জের অপেক্ষায় ছিলাম। ভারত থেকে আসা সুযোগটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে। ইন্ডিয়ান সুপার লিগ ক্রমশ উন্নতি করছে। মনে হয়, সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছি”।  

আসন্ন মরশুমের জন্য সম্প্রতি বিদেশি ফুটবলারদের নাম ঘোষণা করা শুরু করেছে এসসি ইস্টবেঙ্গল। এই তালিকায় ছিলেন স্লোভেনিয়ান স্লোভেনিয়ান মিডফিল্ডার আমির দার্ভিসেভিচ এবং দুই সেন্টার ব্যাক অস্ট্রেলিয়ান টমিস্লাভ মরচেলা ও ক্রোয়েশিয়ান ফ্রানিও পর্চে। এ বার সেই তালিকায় যোগ দিলেন নাইজিরিয়ান স্ট্রাইকার ড্যানিয়েল চিমা চুকুউ।

গত আশির দশকে নাইজিরিয়া থেকে চিমা ওকোরি এসেছিলেন কলকাতার ফুটবলে। ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৭ তিনি মহমেডান স্পোর্টিংয়ের হয়ে খেলার পরে ইস্টবেঙ্গলে যোগ দেন তিন বছরের জন্য। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৩ খেলেন মোহনবাগান এসি-র হয়ে। এর পরের চার বছর পর ইউরোপের বিভিন্ন ক্লাবে খেলার পরে ১৯৯৭-এ ফিরে আসেন মোহনবাগানে ও ১৯৯৯ পর্যন্ত সেই ক্লাবেই খেলেন। কলকাতার তিন প্রধানে হইচই ফেলে দেওয়া সেই স্ট্রাইকারের স্মৃতি বাংলার ফুটবলপ্রেমীদের মনে ফেরাতে পারেন কি না এই নতুন চিমা, সেটাই দেখার।  

সবার আগে অবশ্য ১৭ জন ভারতীয় ফুটবলারের নাম ঘোষণা করেছে কলকাতার ক্লাব। তাঁরা হলেন গোলকিপার অরিন্দম ভট্টাচার্য, ডিফেন্ডার আদিল খান, স্যারিনিও ফার্নান্ডেজ, রাজু গায়কোয়াড়, হীরা মন্ডল, জয়নার লরেন্সো, অঙ্কিত মুখার্জি, ড্যানিয়েল গোমস, মিডফিল্ডার অমরজিৎ সিং কিয়াম, জ্যাকিচন্দ সিং, রোমিও ফার্নান্ডেজ, সৌরভ দাস, সংপু সিঙসিট, লালরিনলিয়ানা হামতে এবং স্ট্রাইকার শুভ ঘোষ, নাওরেম মহেশ সিং ও থঙখোসিম সেম্বয় হাওকিপ।

সম্প্রতি দলের নতুন কোচের নামও ঘোষণা করেছে এসসি ইস্টবেঙ্গল। লিভারপুলের কিংবদন্তি ফুটবলার রবি ফাউলারের জায়গায় নতুন কোচ হিসেবে যোগ দিচ্ছেন স্পেনের হোসে মানুয়েল ‘মানোলো’ ডিয়াজ ফার্নান্ডেজ। রিয়াল মাদ্রিদের যুব ও রিজার্ভ দল-সহ বিভিন্ন ক্লাবে ২০ বছর ধরে কোচের দায়িত্ব পালন করে আসা ডিয়াজ এ বার এসসি ইস্টবেঙ্গল দলের প্রধান কোচের দায়িত্বে।

আসন্ন হিরো আইএসএলে এসসি ইস্টবেঙ্গল প্রথম ম্যাচ খেলতে নামছে ২১ নভেম্বর জামশেদপুর এফসি-র বিরুদ্ধে। এর পরেই ২৭ নভেম্বর এটিকে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে কলকাতা ডার্বি খেলতে নামবে তারা।