গত আইএসএল মরশুমে যে ম্যাচে জিতে সেরা ছয়ে ঢুকে পড়েছিল ইস্টবেঙ্গল এফসি, শনিবার সেই ম্যাচ দিয়েই নতুন মরশুম শুরু করছে লাল-হলুদ বাহিনী। গতবার বেঙ্গালুরু এফসি-কে ২-১-এ হারিয়ে সেরা ছয়ে ঢুকে পড়লেও শেষ পর্যন্ত সেই জায়গা ধরে রাখতে পারেনি কার্লস কুয়াদ্রাতের দল। নেমে যায় ৯ নম্বরে। এ বার যাতে সেরা ছয়ে ঢুকে সেখানে টিকে থাকতে পারে, তাই আগে ভাগে দল গড়ে অনেক আগে থেকে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছিলেন কুয়াদ্রাত। এর ফল তিনি কতটা পাবেন, তার ইঙ্গিত পাওয়া যাবে শনিবার শ্রী কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে।

গতবারের সেই ম্যাচের কথা নিশ্চয়ই অনেকেরই মনে আছে। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে সল ক্রেসপো ও ক্লেটন সিলভার গোলে ম্যাচ জিতে নেয় লাল-হলুদ বাহিনী। সুনীল ছেত্রী সমতা আনলেও শেষরক্ষা করতে পারেননি তিনি। আইএসএল ইতিহাসে সেই প্রথম পরপর দু’টি ম্যাচে জেতে ইস্টবেঙ্গল। সে দিনের জয়ের ফলে লিগ টেবলের ছ’নম্বরে উঠে আসে কলকাতার দল। শেষ ম্যাচে তারা পাঞ্জাব এফসি-কে হারাতে পারলে ছ’নম্বরে থেকে লিগ শেষ করার সম্ভাবনা ছিল উজ্জ্বল। কিন্তু শেষ ম্যাচে পাঞ্জাবের কাছে শোচনীয় ভাবে হেরে যায় তারা। ফলে নবম স্থানে থেকে লিগ শেষ করে তারা।

এ বার তাই অনেক সতর্ক ইস্টবেঙ্গল শিবির। তারা প্রাক মরশুম প্রস্তুতি শুরু করে দেয় জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকে। মরশুম শুরুর আগে এক ঝাঁক নতুন ফুটবলারকে সই করায় কার্লস কুয়াদ্রাতের দল। কোচের দাবি, এ বার সমর্থকেরা গর্ব করতে পারেন, এমনই পারফরম্যান্স দেখাবে তাঁর দল।

মরশুমের শুরুতে আশা জাগিয়েও অবশ্য শেষ পর্যন্ত ভাল ফল করতে পারেনি তারা। ডুরান্ড কাপে লিগ পর্বে দুই ম্যাচে ছ’গোল করে নক আউটে উঠলেও সেমিফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে ফাইনালিস্ট শিলং লাজং এফসি-র কাছে ১-২-এ হেরে ছিটকে যায়। তবে সব মিলিয়ে ডুরান্ডের পারফরম্যান্সে আইএসএলে ভাল খেলার ইঙ্গিত অবশ্যই ছিল। এ বার আইএসএলে শুরু থেকেই নিজেদের কতটা মেলে ধরতে পারবে তারা, সেটাই দেখার।

পাঞ্জাব এফসি থেকে আসা ফরাসি অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার মাদি তালাল ও গত আইএসএলে গোল্ডেন বুটজয়ী গ্রিক ফরোয়ার্ড দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকস এ বার ইস্টবেঙ্গলের আক্রমণে দুই স্তম্ভ। ব্রাজিলীয় ফরোয়ার্ড ক্লেটন সিলভা ও স্প্যানিশ মিডফিল্ডার সল ক্রেসপোও এই আক্রমণে বাড়তি শক্তি জোগাতে পারেন।

তবে জর্ডনিয়ান ডিফেন্ডার হিজাজি মাহেরকে প্রথম এগারোয় রাখতে গেলে এই দু’জনের মধ্যে একজনকে ডাগ আউটে বসতে হবে। গতবার আই লিগের সর্বোচ্চ ভারতীয় স্কোরার তরুণ ফরোয়ার্ড ডেভিড লালনসাঙ্গাও এ বার লাল-হলুদ বাহিনীতে যোগ দিয়েছেন। অর্থাৎ, আক্রমণ বিভাগকে বেশ শক্তিশালী করে তুলেছেন কুয়াদ্রাত, যাতে তাঁর দল অনেক গোল করতে পারে।

রক্ষণ গতবারও খুব একটা খারাপ ছিল না ইস্টবেঙ্গলের, এ বারও ভাল। হিজাজির সঙ্গে যোগ দিয়েছেন গতবার মোহনবাগানের হয়ে খেলা হেক্টর ইউস্তে। দুই বিদেশীকে বাইরে রেখেই অবশ্য দল সাজাতে হবে কুয়াদ্রাতকে। মাঝমাঠে তালাল ও ক্রেসপো যথেষ্ট কার্যকরী। তাঁদের সাহায্য করতে রয়েছেন নন্দকুমার, মহেশ, জিকসনদের মতো ভারতীয় মিডফিল্ডাররা। ফলে দলের মধ্যে এ বার গতবারের তুলনায় আরও ভারসাম্য আছে বলেই মনে হয়।

বেঙ্গালুরু এফসি মরশুমটা বেশ ভালই শুরু করেছে। ডুরান্ড কাপের সেমিফাইনালে ওঠে তারা। দু’গোলে এগিয়েও যায় মোহনবাগানের বিরুদ্ধে। কিন্তু পরপর দু’গোল খেয়ে টাই ব্রেকারে বিপক্ষের গোলকিপার বিশাল কয়েথের দক্ষতার কাছে হেরে যায়। গত মরশুমের দলের দুই বিদেশীকে এ বার রেখে দিয়েছে তারা, আলেকজান্দার জোভানোভিচ ও রায়ান উইলিয়ামস। এ মরশুমে চার বিদেশীকে নিয়ে এসেছে বেঙ্গালুরু। গতবারের কাপজয়ী মুম্বই সিটি এফসি থেকে জর্জ পেরেইরা দিয়াজ ও আলবার্তো নগুয়েরা ছাড়াও এসেছেন পেদ্রো কাপো ও এডগার মেনদেজ। মুম্বই শিবির থেকে অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার রাহুল ভেকে ফিরে এসেছেন তাঁর পুরনো দলে। পাঞ্জাব এফসি থেকে এসেছেন মোহম্মদ সালাহ। গতবার দশ নম্বরে থেকে শেষ করার পর এঁদের নিয়েই এ বার নতুন করে অভিযান শুরু করতে চান কোচ গেরার্দ জারাগোজা।

পরিসংখ্যান বলছে

বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে শেষ চার আইএসএল ম্যাচেই গোল পেয়েছে ইস্টবেঙ্গল। এই চারটি ম্যাচের মধ্যে তিনটিতেই জিতেছে কলকাতার দল। গত চার মরশুমে তারা কখনও আইএসএলের প্রথম ম্যাচে জিততে পারেনি। দু’বার হেরেছে ও দু’বার ড্র করেছে। আইএসএলে শেষ পাঁচটি ম্যাচেই গোল খেয়েছে ইস্টবেঙ্গল এফসি। এই পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে চারটিতে তারা দুই বা তার বেশি গোল খেয়েছে।

এর আগে বেঙ্গালুরু এফসি মাত্র একবার আইএসএল শুরু করেছে হার দিয়ে। ২০২৩-২৪-এ তারা প্রথম ম্যাচে কেরালা ব্লাস্টার্সের কাছে হেরে যায় ১-২-এ। বাকি ছ’বারের মধ্যে চারবার তারা জিতেছে ও দু’বার ড্র করেছে। আইএসএলে গত দু’টি হোম ম্যাচে গোল পায়নি বেঙ্গালুরু এফসি। আইএসএলে কখনও টানা তিনটি ম্যাচে গোলহীন থাকেনি বেঙ্গালুরু। শনিবার সুনীল ছেত্রীরা গোল করতে না পারলে এই প্রথম এমন ঘটনা ঘটবে। তবে কোনও আইএসএলের প্রথম ম্যাচে মাত্র একবারই তারা গোল করতে পারেনি। ২০১৯-২০ মরশুমে নর্থইস্ট ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে (০-০)।

দ্বৈরথের ইতিহাস

আইএসএলে বেঙ্গালুরু এফসি ও ইস্টবেঙ্গল এফসি-র মধ্যে যতবারই দেখা হয়েছে, জমে উঠেছে ফুটবলের লড়াই। আটবারের মুখোমুখিতে বেঙ্গালুরু জিতেছে তিনবার, ইস্টবেঙ্গল চারবার। বাকি একবার ড্র হয়েছে। ২২-২৩ মরশুমে লিগের প্রথম ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলের ১-০ জয়ের কথা নিশ্চয়ই ভোলেননি সমর্থকেরা ফিরতি ম্যাচেও ২-১-এ জেতে তারা। ২১-২২ মরশুমে একবার ১-১ ড্র হয় ও পরের বার সুনীল ছেত্রীর গোলে জেতে বেঙ্গালুরু। ২০২০-২১ মরশুমে প্রথমে ম্যাটি স্টাইনমানের গোলে জেতে লাল-হলুদ বাহিনী ও ফিরতি লিগে দেবজিৎ মজুমদারের নিজ গোল ও ক্লেটন সিলভার গোলে জেতে বেঙ্গালুরু। ২৩-২৪ মরশুমের প্রথম মুখোমুখিতে বেঙ্গালুরু জেতে ২-১-এ। ফিরতি লিগে একই ফলে বেঙ্গালুরুকে হরিয়ে প্রতিশোধ নেয় ইস্টবেঙ্গল।

ম্যাচ- বেঙ্গালুরু এফসি বনাম ইস্টবেঙ্গল এফসি

ভেনু- শ্রী কান্তিরাভা স্টেডিয়াম, বেঙ্গালুরু

কিক অফ- ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, সন্ধ্যা ৭.৩০

সরাসরি সম্প্রচার ও স্ট্রিমিং- স্পোর্টস ১৮-৩- বাংলা, স্পোর্টস ১৮ খেল ও স্পোর্টস ১৮-২- হিন্দি, স্পোর্টস ১৮-১ এসডি ও এইচডি- ইংলিশ; জিও সিনেমা- বাংলা, হিন্দি, ইংলিশ, মালয়ালাম