ATKMB Media Team

এএফসি কাপে এটিকে মোহনবাগানের দাপট অব্যহত। মাজিয়া স্পোর্টস অ্যান্ড রিক্রিয়েশন ক্লাবের বিরুদ্ধেও দাপুটে জয় পেল তারা। মলদ্বীপের এই ক্লাবকে ৫-২-এ হারিয়ে টুর্নামেন্টের ইন্টার জোনাল সেমিফাইনালে উঠে পড়ল কলকাতার দল। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ইন্টার জোনাল সেমিফাইনালে এটিকে মোহনবাগানের প্রতিপক্ষ কারা হতে পারে, তা হয়তো জানা যাবে আগামী মাসে।

গত বছর একই টুর্নামেন্টের গ্রুপ লিগে যে দলকে ৩-১ গোলে হারিয়েছিল তারা, সেই দল এ বার আরও পরিণত হয়ে মাঠে নামলেও তাদের রেয়াত করেনি সবুজ-মেরুন বাহিনী। জনি কাউকোর জোড়া গোল এবং রয় কৃষ্ণা, শুভাশিস বোস ও কার্ল ম্যাকহিউ একটি করে গোল তাদের জয় সুনিশ্চিত করে। মাজিয়ার স্প্যানিশ মিডফিল্ডার তানা দু’টি গোল শোধ করেন।

এ দিন বিকেলে বাংলাদেশের বসুন্ধরা কিংস তাদের শেষ ম্যাচে গোকুলম কেরালা এফসি-কে হারানোর ফলে এটিকে মোহনবাগানের সামনে নক আউটের দরজা খোলাই ছিল। তবে সেই দরজা দিয়ে নক আউট পর্বে প্রবেশ করতে তাদের এই ম্যাচ জেতা ছাড়া কোনও উপায় ছিল না।

মঙ্গলবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে গত ম্যাচের দল অপরিবর্তিত রেখেই প্রথম এগারো নামান এটিকে মোহনবাগান কোচ হুয়ান ফেরান্দো। ছক ও কৌশলও একই রকম ছিল। কিন্তু মাজিয়া এসআরের শুরু থেকেই তাদের চাপে রাখার প্রবণতা ছিল অপ্রত্যাশিত। কুড়ি মিনিটের মধ্যে হামজা মহম্মদ এবং কর্নেলিয়াস স্টুয়ার্টের দু’টি গোলমুখী শট ব্যর্থ হয়। স্টুয়ার্টের শট বাঁচিয়ে দলকে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করেন সবুজ-মেরুন গোলকিপার অর্শ আনোয়ার।

তবে ম্যাচ কুড়ি মিনিট গড়িয়ে যাওয়ার পর থেকে ক্রমশ পাল্টা চাপ বাড়াতে থাকে এটিকে মোহনবাগান এবং ২৬ মিনিটের মাথায় গোলও পেয়ে যায় তারা। মাজিয়ার গোলকিপার কিরণ লিম্বু গোলকিক করতে যাওয়ার সময় রয় কৃষ্ণা তাঁর দিকে তেড়ে যাওয়ায় লিম্বু ভুল করে জনি কাউকোর দিকে বল ঠেলে দেন এবং বক্সের মাথা থেকে গোলে শট নিতে বিন্দুমাত্র ভুল করেননি (১-০)।

প্রথম গোল পাওয়ার পর থেকেই আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে এটিকে মোহনবাগান। কাউকো এ দিন দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন। ৩২ মিনিটের মাথায় বক্সের বাইরে থেকে তাঁর নেওয়া শট ব্লক হয়ে যায়। পরের মিনিটেই কর্নার থেকে হেডে গোল করার চেষ্টা করলেও তা গোলের বাঁ দিক দিয়ে বেরিয়ে যায়। রয় কৃষ্ণার বক্সের মাথা থেকে নেওয়া শট বাইরে দিয়ে চলে যায় এবং গোলের সামনে হেড করার চেষ্টা করেও পারেননি  তিনি। এ ছাড়াও দু’টি গোলমুখী শট নিয়েও ব্যর্থ হন ফিজিয়ান তারকা।

ক্রমশ চাপ বাড়াতে থাকা সবুজ-মেরুন শিবির ব্যবধান বাড়িয়ে নেয় ৩৭ মিনিটের মাথায়। এ বারও নায়ক হয়ে ওঠেন ফিনল্যান্ডের ইউরো দলের সদস্য কাউকো। মনবীরের হেড থেকে বল পেয়ে বক্সের মধ্যে প্রথমে বুক দিয়ে রিসিভ করে তার পের গোলে শট নেন তিনি (২-০)।

অনবদ্য এই গোলের পর এটিকে মোহনবাগান গতি কিছুটা কমিয়ে নিলে সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ব্যবধান কমানোর জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে মাজিয়া। ৩৮ মিনিটে ইব্রাহিম আইসাম বিপক্ষের বক্সের মাথা থেকে গোলে শট নিলে তা সেভ করেন অর্শ। ৪০ মিনিটের মাথায় ফের স্টুয়ার্টের শট গোলে ঢোকার আগে আটকে দেন অর্শ।

এমনই ঘন ঘন আক্রমণের পরে প্রথমার্ধের শেষ মিনিটে বিপক্ষের ডিফেন্সের বোঝাপড়ার অভাবকে কাজে লাগিয়ে প্রতি আক্রমণ থেকে প্রথম গোল করেন মাজিয়ার স্প্যানিশ অ্যটাকিং মিডফিল্ডার তানা। দীপক টাঙরির ভুলের মাশুল দিতে হয় দলকে। তাঁর পা থেকে বল নিয়ে তীব্র গতিতে গোলের দিকে দৌড়ন তানা। তিন ডিফেন্ডার চেষ্টা করেও তাঁকে আটকাতে পারেননি। বক্সে ঢুকে গোলে শট নেন তিনি (২-১)।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই চোট পান এটিকে মোহনবাগান ডিফেন্সের দুই নির্ভরযোগ্য তারকা প্রীতম কোটাল এবং প্রবীর দাস। প্রীতম চোট সামলে মাঠে থেকে গেলেও প্রবীর মাঠের বাইরে চলে যান। এই সময়ে একাধিক পরিবর্তন করেন ফেরান্দো। প্রবীরের জায়গায় নামেন ডেভিড উইলিয়ামস ও দীপক টাঙরিকে বসিয়ে নামানো হয় লেনি রড্রিগেজকে।

এই পরিবর্তনের দু’মিনিটের পরেই ব্যবধান বাড়িয়ে নেন রয় কৃষ্ণা। বাঁ দিকের উইং থেকে শুভাশিসের মাপা ক্রস যখন বক্সের মধ্যে রয়ের কাছে উড়ে আসে, তখন তিনি সম্পুর্ণ অরক্ষিত। ছ’গজের বক্সের মাথা থেকে গোলে শট নেন রয় (৩-১)।

এই অর্ধের শুরুতেই ৪৮ মিনিটের মাথায় গোলের সামনে থেকে বাইরে বল মেরেছিলেন যিনি, সেই শুভাশিস বোস সেই ভুলের দশ মিনিট পরেই চতুর্থ গোলটি করে প্রায়শ্চিত্ত করেন। এ বার বক্সের বাইরে থেকে লিস্টন কোলাসোর মাপা ফ্রিকিক অনুসরণ করে ছ’গজের বক্সে ঢুকে গোল করেন শুভাশিস (৪-১)।

৬৫ মিনিটের মাথায় আরও একটি গোল পেতে পারত এটিকে মোহনবাগান। জনি কাউকোর কাছ থেকে পাস পেয়ে বিপক্ষের বক্সের বাঁ দিক থেকে লব করেন কোলাসো। কিন্তু অল্পের জন্য দ্বিতীয় পোস্টের বাইরে দিয়ে চলে যায়। এর দু’মিনিট পরে জনি কাউকোর বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া শট গোলের বাইরে চলে যায়।

সবুজ-মেরুন বাহিনী চার গোল দেওয়ার পরেও তাদের বিপক্ষকে ক্রমাগত চাপে রাখার প্রবণতায় বিন্দুমাত্র ভাটা পড়েনি। ৭১ মিনিটের মাথায় ডানদিক থেকে রয় কৃষ্ণার মাটি ঘেঁষা ক্রস মাজিয়ার এক ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে বক্সের বাইরে এলে তা থেকে দলের পঞ্চম গোলটি করেন কার্ল ম্যাকহিউ (৫-১)।

ম্যাচ কার্যত হাত থেকে বেরিয়ে যাওয়া সত্বেও হাল ছাড়েনি মাজিয়া এবং ৭৩ মিনিটের মাথায় ডানদিক থেকে স্টুয়ার্টের ক্রসে মাথা ছুঁইয়ে দলের দ্বিতীয় গোল করেন তানা (৫-২)। ওই সময় তিনি বক্সের মধ্যে সম্পুর্ণ অরক্ষিত ছিলেন। পরিবর্ত হিসেবে নামা ডেভিড উইলিয়ামস ৭৫ মিনিটে জনি কাউকোর কাছ থেকে বল পেয়ে জালে বল জড়িয়ে দিলেও তার আগে অফসাইডের ফাঁদে পড়ে যান।

সুব্রত পাল ও সুমিত রাঠিকে রিজার্ভ বেঞ্চ থেকে নামানো হয় ৭৬ মিনিটের মাথায়। অর্শ আনোয়ার ও শুভাশিসকে তুলে নেওয়া হয়। জনি কাউকোকে তুলে অভিষেক সূর্যবংশীকেও নামানো হয়। ৮১ মিনিটের মাথায় রয় কৃষ্ণার শট বাঁদিকের পোস্টে লেগে ফিরে আসে। ৮৯ মিনিটের মাথায় রয় অফসাইড না হলে হয়তো কোলাসোর থ্রু থেকে আরও একটি গোল পেতেন রয়। সুযোগগুলি কাজে লাগাতে পারলে এটিকে মোহনবাগান আরও বেশি ব্যবধানে ম্যাচটা জিততে পারত।      

এ দিনের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের বসুন্ধরা কিংস ২-১-এ গোকুলম কেরালা এফসি-কে হারিয়ে এটিকে মোহনবাগানের নক আউটে ওঠার দরজা খোলা রেখে দেয়। বাংলাদেশী দলের ব্রাজিলিয়ান অধিনায়ক রবিনহো এ দিন অসাধারণ ফর্মে ছিলেন। ৩৬ মিনিটের মাথায় গোল করেন দলকে এগিয়ে দেওয়ার পরে এবং ৫৪ মিনিটে নুহা মারংকে দ্বিতীয় গোলটি করতে প্রত্যক্ষ সাহায্য করেন। ৭৫ মিনিটের মাথায় মহম্মদ জাসিমের ক্রস থেকে একটি গোল শোধ করেন জারদেইন ফ্লেচার। কিন্তু আর গোল করতে পারেনি আইলিগ চ্যাম্পিয়নরা।

এটিকে মোহনবাগান দল: অর্শ আনোয়ার (গোল) (সুব্রত পাল), প্রবীর দাস (ডেভিড উইলিয়ামস), প্রীতম কোটাল, সন্দেশ ঝিঙ্গন, শুভাশিস বোস (সুমিত রাঠি), কার্ল ম্যাকহিউ, দীপক টাঙরি (লেনি রড্রিগেজ), জনি কাউকো (অভিষেক সুর্যবংশী), মনবীর সিং, রয় কৃষ্ণা (অধি), লিস্টন কোলাসো।