তিনটি ম্যাচের জন্য এসসি ইস্টবেঙ্গলের প্রশিক্ষণের দায়িত্ব নিয়ে যেন দেশের ফুটবল মহলে হইচই ফেলে দিয়েছেন দলের অন্তর্বর্তী কোচ রেনেডি সিং। তাঁর দেখানো রক্ষণনির্ভর ফুটবলের পথে হেঁটে দলের চরম দুঃসময়েও নিজেদের সামলান এসসি ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলাররা। হায়দরাবাদ, বেঙ্গালুরু, মুম্বইয়ের মতো দলের বিরুদ্ধে তুমুল লড়াই করে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস অর্জন করেন লাল-হলুদ বাহিনীর ফুটবলাররা। এই আত্মবিশ্বাস অর্জন করাটাই তাঁর উদ্দেশ্য ছিল বলে জানিয়েছেন রেনেডি। বলেছেন, “পরপর কয়েকটা ম্যাচে গোল না খেলে আত্মবিশ্বাস বাড়ে। আমাদের ছেলেরা সেটাই করতে পেরেছে”।

সর্বভারতীয় সংবাদপত্র ‘দি টাইমস অফ ইন্ডিয়া’- কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক ও ইস্টবেঙ্গল তারকা বলেন, “ভারতীয় ফুটবলাররা ভাল নয়। আইএসএলে এমন হতে পারে না। এই ফুটবলাররা যথেষ্ট ভাল না। যদি মনে হয় ওরা ভাল না, তা হলে ওদের সই করানোর দরকার কী? কিন্তু ওদের সই করালে ওদের নিয়েই খেলতে হবে। আমার প্রশিক্ষণে প্রথম দুটো ম্যাচ ড্র করার পরে ওরা যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস পেয়ে যায়”।

ভারতীয় ফুটবলারদের ওপর এই অনাস্থার জবাব দিতে দলের ছেলেদের চ্যালেঞ্জ জানান রেনেডি। তিনি নিজেই সে কথা জানিয়ে এই সাক্ষাৎকারে বলেন, “ওদের আমি বলেছিলাম, তোমাদের প্রমাণ করতে হবে যে ভারতীয়রাও পারে। ওরা করে দেখিয়েছে। তবে একেবারে শেষে কর্নার থেকে যে গোলটা আমরা খেলাম, তা সত্যিই খুব কষ্টদায়ক। লোকে বলতে পারে, আমরা শুধু ডিফেন্সই করে গিয়েছি। কিন্তু ফুটবলের প্রথম কথা আগে নিজের গোল বাঁচাও। গোল বাঁচালে তবেই গোল করার সুযোগ তৈরি করা যায়”।

কোচিংয়ের এই জ্ঞান কার কাছ থেকে অর্জন করেছেন, জানতে চাইলে রেনেডি বলেন, “২০১৫-য় খেলা ছাড়ার পরে ডেভিড প্ল্যাটের সঙ্গে কাজ করার সৌভাগ্য হয় আমার। উনি আমাকে যে ভাবে গাইড করেছিলেন, এক কথায় তা অসাধারণ। কোচিংয়ের তালিম শুরু থেকে ওঁর কাছেই পেয়েছি। তাই এই চ্যালেঞ্জটার জন্য দীর্ঘদিন অপেক্ষা করেছি। আর এমন একটা কঠিন সময় সুযোগটা এল আমার সামনে যে নিজেকে প্রমাণ করে দেখানো বেশ কঠিন ছিল”।

তাই বলে বিদেশি কোচে বিন্দুমাত্র আপত্তি নেই রেনেডির। বলেন, “বিদেশি কোচ যদি ভাল হয়, তা হলে তাঁর কাছ থেকে শিখতে আমা বিন্দুমাত্র আপত্তি নেই। তাঁর সিস্টেমের মধ্যে থেকে কাজ করতে কোনও অসুবিধা নেই। আসলে কোচের ক্ষেত্রে দেশি-বিদেশি না দেখাই ভাল। শুধু নাম দেখে কাউকে আনলে, ভুলটা হয় সেখানেই। তবে ভারতীয় কোচেদের বরাবরই নিজেদের প্রমাণ করতে হয়েছে। আমারও কোনও আপত্তি ছিল না। এর পরেও যদি নিজেকে ফের প্রমাণ করতে হয়, তাও পিছপা হব না”।

এসসি ইস্টবেঙ্গলের পরের ম্যাচ থেকেই দলের দায়িত্ব নিচ্ছেন তাদের প্রাক্তন কোচ মারিও রিভেরা। এই উয়েফা প্রো লাইসেন্সপ্রাপ্ত স্প্যানিশ কোচ ২০১৮-১৯ মরশুমে ৩২টি ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলের স্প্যানিশ কোচ আলেহান্দ্রো মেনেন্দেজের সহকারী হিসেবে কাজ করেন। পরে আলেহান্দ্রো দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ায় তাঁকেই দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব দেওয়া হয় এবং সাতটি ম্যাচের জন্য লাল-হলুদ বাহিনীর দায়িত্ব নিয়ে তিনি তাদের হিরো আই লিগের দ্বিতীয় সেরার জায়গায় তুলে নিয়ে যান।

এ বারও তাঁকে ক্লাবের কঠিন সময় সামলানোর জন্যই ডেকে আনা হয়েছে। গত সোমবারই তিনি ভারতে পা দেন এবং নিয়ম অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের কোয়ারান্টাইন পর্ব কাটিয়ে দল নিয়ে অনুশীলনে নামার সময় হয়ে গিয়েছে তাঁর।