ভারতীয় দলের হেড কোচের দায়িত্ব নিতে চলেছেন খালিদ জামিল। শুক্রবার এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিল সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন। এ দিন তাদের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডলে ফেডারেশন জানায়, ‘ফেডারেশনের টেকনিক্যাল কমিটির উপস্থিতিতে পুরুষদের জাতীয় সিনিয়র দলের হেড কোচ হিসেবে খালিদ জামিলকে নিয়োগ করার সিদ্ধান্তে সম্মতি জানিয়েছে এক্সিকিউটিভ কমিটি’।

অর্থাৎ ১৩ বছরে এই প্রথম কোনও ভারতীয় কোচকে জাতীয় দলের কোচের দায়িত্ব পালন করার সুযোগ দেওয়া হল। স্প্যানিশ কোচ মানোলো মার্কেজ এই দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর সম্প্রতি জাতীয় কোচের পদের জন্য আবেদন করার বিজ্ঞপ্তি দেয় ফেডারেশন। দেশ, বিদেশ থেকে বহু আবেদনের মধ্যে থেকে তিনজনকে বেছে নেওয়া হয়।

জামিলের সঙ্গে ভারতীয় দলের প্রাক্তন কোচ স্টিফেন কনস্টান্টাইন ও স্লোভাকিয়ার প্রাক্তন জাতীয় কোচ স্তেফান তারকোভিচের নামও চূড়ান্ত করে আইএম বিজয়নের নেতৃত্বাধীন টেকনিক্যাল কমিটি। তবে প্রত্যাশা অনুযায়ী জামিলকেই বেছে নেয় ফেডারেশন।

২০১১ থেকে ২০১২ পর্যন্ত স্যাভিও মেডেইরা ভারতীয় দলের কোচ ছিলেন। এর পর আর কোনও দেশীয় কোচকে জাতীয় দলের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। তাই ৪৮ বছর বয়সী খালিদ জামিলকে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। যে ভাবে আইজল এফসি ও জামশেদপুর এফসি-কে সাফল্যের পথ দেখিয়েছেন তিনি, সে ভাবেই তিনি ভারতীয় দলকেও সাফল্যের রাস্তায় ফিরিয়ে আনতে পারবেন কি না, সেটাই দেখার।

কুয়েত-জাত খালিদ জামিল ভারতের এক নম্বর লিগে খেলোয়াড় কোচ দুই ভূমিকাতেই খেতাব জয় করেছেন। ২০০৫-এ মহিন্দ্রা ইউনাইটেডের হয়ে খেলে ও ২০১৭-য় আইজল এফসির কোচ হিসেবে আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হন তিনি।

এএএফসি প্রো লাইসেন্স অর্জনকারী জামিল আই-লিগ, আই-লিগ এবং ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (আইএসএল)- কোচিং করিয়েছেন আইজল এফসি-কে আই-লিগ জেতানোর সময় থেকেই কোচ হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেন তিনি। এই ক্লাবের একমাত্র শীর্ষস্থানীয় শিরোপা ছিল সেটি। ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাসে অন্যতম স্মরণীয় সাফল্য হিসেবে লেখা থাকবে তাদের এই কীর্তি।

তিনি ২০২৩২৪ মরশুমের মাঝপথে জামশেদপুর এফসির দায়িত্ব নিয়ে দলকে সুপার কাপের সেমিফাইনালে নিয়ে যান এবং পরবর্তী মরশুমে রানার্স আপ ও আইএসএল সেমিফাইনাল পর্যন্তও পৌঁছে দেন তার আগে ২০২০-২১ মরশুমে নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি-কেও সেমিফাইনালে তোলেন তিনি।

তাঁর দলের প্রতিভাবান ফুটবলারদের থেকে সেরা পারফরম্যান্স বের করে আনার দক্ষতার জন্য পরিচিত জামিল। একইসঙ্গে তিনি রাহুল ভেকে, লালেঙমাউইয়া রালতে (আপুইয়া), আশুতোষ মেহতা এবং জয়েশ রানের মতো একঝাঁক তরুণ প্রতিভাকে গড়ে তুলেছেন, যাঁরা পরবর্তী সময়ে আইএসএলে ও ভারতীয় দলেও নিজেদের প্রমাণ করেছেন। কোচ হিসেবে তাঁর এই দক্ষতা এ বার ভারতীয় দলকে কী ভাবে সাহায্য করে, সেটাই দেখার বিষয়।

ভারতীয় দলের কোচ হিসেবে জামিলের প্রথম পরীক্ষা বেশ কঠিন হতে চলেছে। এ মাসের শেষ দিকে কাফা নেশনস কাপে ভারত মুখোমুখি হবে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইরান এবং ২০২৩ এশিয়ান কাপ কোয়ার্টারফাইনালিস্ট তাজিকিস্তানের। বর্তমানে ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ে ১৩৩ নম্বরে থাকা ভারত এই টুর্নামেন্টে অংশ নিচ্ছে ফিফা উইন্ডোর বাইরে।

ওই সময় ডুরান্ড কাপ চললেও তার ফাইনাল এবং কাফার টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচের মধ্যে এক সপ্তাহের বিরতি থাকায় জাতীয় দলের বেশিরভাগ খেলোয়াড়কেই পেতে পারেন তিনি। তবে দলের সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে প্রস্তুতির সুযোগ খুব একটা পাবেন না তিনি। অবশ্য, এই প্রতিযোগিতায় প্রতিটি ম্যাচের জন্য নতুন স্কোয়াড নির্বাচন করার সুযোগ থাকায় জামিল বিভিন্ন খেলোয়াড়দের পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ ভালমতোই পাবেন।

তবে এএফসি এশিয়ান কাপের বাছাই পর্বে ভারতীয় দল বেশ চাপে রয়েছে গ্রুপ ‘সি’-তে নিজেদের প্রথম দুটি ম্যাচে বাংলাদেশ ও হংকংয়ের বিরুদ্ধে যথাক্রমে একটি ড্র এবং একটি হারের ফলে তারা পয়েন্ট টেবলের সর্বশেষ স্থানে রয়েছে। এই অবস্থা থেকে দলকে টেনে তোলার চ্যালেঞ্জও নিতে হবে নয়া কোচকে।

জাতীয় দলের দায়িত্ব পাওয়ায় ক্লাবের দায়িত্ব ছাড়তে হবে জামিলকে। ২০২৬ সাল পর্যন্ত জামশেদপুর এফসির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ রয়েছেন তিনি। তবে এখন আরও বড় দায়িত্ব পাওয়ায় তিনি হয়তো চলতি ডুরান্ড কাপ পর্যন্তই ইস্পাতনগরীর দলের সঙ্গে থাকবেন এই টুর্নামেন্টে জামশেদপুর ইতিমধ্যে কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে গিয়েছে। তাদের চ্যাম্পিয়ন করে দায়িত্ব ছাড়তে পারলে, জামিলের পক্ষে এর চেয়ে ভাল আর কিছু হবে বলে মনে হয় না।