এএফসি কাপ: বসুন্ধরা কিংসের বিরুদ্ধে জয় ছাড়া কোনও রাস্তা নেই এটিকে মোহনবাগানের
এএফসি কাপের গ্রুপ লিগেল শুরুতেই যে এ ভাবে ধাক্কা খেতে হবে তাদের, তা বোধহয় দুঃস্বপ্নেও দেখেননি এটিকে মোহনবাগানের সমর্থকেরা। টানা দু’বার আই লিগ জয়ী গোকুলম কেরালা এফসি-র বিরুদ্ধে প্রথম আধঘণ্টা রীতিমতো দাপুটে ফুটবল খেলার পরেও ২-৪-এ হার প্রায় অবিশ্বাস্য। সেই হারের ধাক্কা সামলে শনিবার ফের সেই যুবভারতীতেই নামছে হিরো আইএসএল সেমিফাইনালিস্টরা। প্রতিপক্ষ বাংলাদেশের সেরা ফুটবল খেলিয়ে ক্লাব বসুন্ধরা কিংস। এই ম্যাচে না জিততে পারলে যে টুর্নামেন্ট থেকেই ছিটকে যাবে তারা, এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।

এএফসি কাপের গ্রুপ লিগেল শুরুতেই যে এ ভাবে ধাক্কা খেতে হবে তাদের, তা বোধহয় দুঃস্বপ্নেও দেখেননি এটিকে মোহনবাগানের সমর্থকেরা। টানা দু’বার আই লিগ জয়ী গোকুলম কেরালা এফসি-র বিরুদ্ধে প্রথম আধঘণ্টা রীতিমতো দাপুটে ফুটবল খেলার পরেও ২-৪-এ হার প্রায় অবিশ্বাস্য। সেই হারের ধাক্কা সামলে শনিবার ফের সেই যুবভারতীতেই নামছে হিরো আইএসএল সেমিফাইনালিস্টরা। প্রতিপক্ষ বাংলাদেশের সেরা ফুটবল খেলিয়ে ক্লাব বসুন্ধরা কিংস। এই ম্যাচে না জিততে পারলে যে টুর্নামেন্ট থেকেই ছিটকে যাবে তারা, এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
ইদানীং ভারত ও বাংলাদেশের দল ফুটবল মাঠে মুখোমুখি মানেই তা মহাযুদ্ধের তকমা পেয়ে যায়। বিশেষ করে লড়াইটা যদি এ পার বাংলা ও ওপার বাংলার দুই ক্লাবের মধ্যে হয়। এক মাস আগেই এমন একটা লড়াই দেখা গিয়েছিল এটিকে মোহনবাগান ও ঢাকা আবাহনী লিমিটেডের মধ্যে। এএফসি কাপের প্রাথমিক পর্বের প্লে অফের সেই ম্যাচে ঢাকার ক্লাবকে হারিয়েই চলতি গ্রুপ লিগে অংশ নেওয়ার ছাড়পত্র পায় কলকাতার দল। এ বার গ্রুপ লিগে ঢাকার আর এক ক্লাবের মুখোমুখি হতে এ পারের সেরা ক্লাবকে। সব মিলিয়ে সন্মান রক্ষার দ্বিমুখী চ্যালেঞ্জ নিয়ে শনিবার বিকেলে মাঠে নামবে সবুজ-মেরুন বাহিনী।
সেবার ড্র, এ বার...
গত বছরেও এএফসি কাপের গ্রুপ লিগে দুই দল মুখোমুখি হয়। মালের ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে বসুন্ধরা কিংসের বিরুদ্ধে ১-১ ড্র করে ইন্টার জোনাল সেমিফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে কলকাতার ক্লাব। বসুন্ধরার ব্রাজিলীয় তারকা ফার্নান্ডেজ ২৮ মিনিটে দলকে এগিয়ে দেওয়ার পরে ৬২ মিনিটে গোল শোধ করেন এটিকে মোহনবাগানের অস্ট্রেলীয় তারকা ডেভিড উইলিয়ামস। এই ড্রয়ের ফলে তিন ম্যাচে সাত পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ শীর্ষে থেকে ইন্টার জোনাল সেমিফাইনালের দরজা খুলে ফেলে সবুজ-মেরুন শিবির।
তবে এ বার আর ড্র করলে চলবে না হুয়ান ফেরান্দোর দলের। জয় ছাড়া তাদের সামনে আর কোনও রাস্তা নেই। শুধু জয় নয়। পারলে বড় ব্যবধানে জয়। কারণ, প্রথম ম্যাচেই চার গোল খাওয়া এটিকে মোহনবাগানের গোলপার্থক্যে বেশ পিছিয়ে। যদি লিগপর্বের শেষে অন্য দলের সঙ্গে পয়েন্ট সমান হয়ে যায় তাদের, তা হলে নক আউট পর্বে উঠতে এই গোল পার্থক্য কাজে লাগতে পারে তাদের। তাই কাজটা কঠিন নয়, বেশ কঠিন।
গোকুলম মডেলে বসুন্ধরা?
বুধবার প্রথম ম্যাচে প্রথমার্ধে একাধিক অবধারিত গোলের সুযোগ হাতছাড়া করার মাশুলই দিতে হয় রয় কৃষ্ণাদের। প্রথমার্ধের শেষ দিকে নির্ভরযোগ্য স্প্যানিশ সেন্টার ব্যাক তিরি চোট পেয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পরেই তাদের রক্ষণে যে ফাটল তৈরি হয়, সেই ফাটলকে কাজে লাগিয়েই একের পর এক গোল দেয় গোকুলম কেরালা এফসি। প্রথমার্ধে আক্রমণাত্মক এটিকে মোহনবাগানকে আটকে রাখার পরে দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই খেলার স্টাইল পাল্টে বাজিমাত করে গোকুলম কেরালা এফসি। শনিবার সেই মডেলই অনুসরণ করার কথাই সম্ভবত ভাবছেন বসুন্ধরার স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজোন।
তাই সাংবাদিক বৈঠকে যখন তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, শনিবার খোঁচা খাওয়া এটিকে মোহনবাগান ও তার সমর্থকদের কাছ থেকে তিনি অতিরিক্ত আগ্রাসন আশা করছেন কি না, তখন প্রাক্তন মুম্বই সিটি এফসি কোচ সাফ জানিয়ে দেন, “সেটা প্রথম ৩০ মিনিট, তার পরে যা হবে দেখা যাবে”। অর্থাৎ তিনিও হয়তো গোকুলমের মতো প্রথম আধ ঘণ্টা প্রতিপক্ষকে পরখ করার পরে পাল্টা জবাব দেওয়ার নীল নকশা তৈরি করেছেন।
কিন্তু তা কী হতে দেবে ফেরান্দো-বাহিনী? দ্বিতীয় ম্যাচেও একই ভুল করবে তারা। বুধবার তিরি চোট পেয়ে বেরিয়ে যাওয়ায় যে শূন্যতা তৈরি হয়েছিল, সেই শূন্যতা পূরণ করার জন্য কার্ল ম্যাকহিউকে দলে আনা হয়েছে। শুক্রবার তাঁকে সঙ্গে নিয়েই সাংবাদিক বৈঠকে এসেছিলেন ফেরান্দো। রক্ষণেই তাঁকে রাখা হবে, না কি নিজের পছন্দের জায়গা মাঝমাঠ সামলাবেন তিনি, তা বলতে চাইলেন না। অতীতে তাঁকে দুই জায়গাতেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে দেখা গিয়েছে। সন্দেশ ঝিঙ্গন চোটের জন্য খেলতে পারছেন না। আশুতোষ মেহতা ফর্মে নেই। তাই সুমিত রাঠি বা গুরসিমরত গিলকেও কাজে লাগাতে পারেন বলে জানিয়ে দিলেন ফেরান্দো। কিন্তু তিরির মতো করে রক্ষণকে সামলাতে পারবেন তাঁরা? এটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
আত্মবিশ্বাসী অপরাজিত বসুন্ধরা
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে ১১ গোল করা বসুন্ধরার ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার রবিনহোকে সামলানোটা যেমন একটা বড় চ্যালেঞ্জ, তেমনই মাঝমাঠে সোহেল রাণাকেও নজরে রাখতে হবে তাদের। চলতি এএফসি কাপের প্রথম ম্যাচে মলদ্বীপের মাজিয়া এসআর ক্লাবকে ১-০-য় হারানোর পরে আত্মবিশ্বাসে টগবগ করে ফুটছে দলটা। গাম্বিয়ার ২৯ বছর বয়সি স্ট্রাইকার নুহা মারং সে দিন ৩৩ মিনিটে গোল করে বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনিও কম বিপজ্জনক নন।
কলকাতায় আসার আগে শেষ পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে চারটিতেই জেতে বসুন্ধরা। শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের সঙ্গে ৩-৩ ড্র করে তারা। শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ পুলিশকে ২-১ গোলে হারিয়ে আপাতত লিগ টেবলের এক নম্বরে রয়েছে তারা। ১৫টি ম্যাচের মধ্যে ১২টিতে জিতে ৩৮ পয়েন্ট পেয়ে শীর্ষে রয়েছে। গত এগারো রাউন্ড ধরেই তারা লিগ টেবলের শীর্ষেই রয়েছে। এই আত্মবিশ্বাসেরই ছাপ পড়ে কলকাতায় প্রথম ম্যাচে।
তবে মাজিয়া এসআর এবং এটিকে মোহনবাগান যে এক নয়, তা তারা খুব ভাল করেই জানে। একটি ম্যাচের ব্যর্থতা তাদের আরও ধারালো করে তুলতে পারে এবং সেই ধারে নাস্তানাবুদ হতে পারে বসুন্ধরা কিংস, এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। গোকুলম কেরালা এফসি-র বিরুদ্ধে প্রথম ১৬ মিনিটের মধ্যেই যে গোলগুলির সুযোগ হাতছাড়া করেন রয় কৃষ্ণা, ডেভিড উইলিয়ামস, জনি কাউকোরা, সেগুলি দেখে সমর্থকদের হতাশ হওয়া ছাড়া কোনও উপায় নেই। সে দিন যে ছন্দে শুরু করেছিল এটিকে মোহনবাগান, এই ম্যাচে সেই ছন্দ ধরে রাখতে পারলে বসুন্ধরাকে সমস্যায় পড়তে হতে পারে।
ভুল শুধরে ঘুরে দাঁড়ানোর চ্যালেঞ্জ
ফেরান্দো এ দিন সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়েই দিয়েছেন, পরিকল্পনা ও স্টাইলে বদল না করেই এই ম্যাচে খেলবেন তাঁরা। এক মাস পরে কোনও সরকারি ম্যাচে খেলতে নামা সবুজ-মেরুন বাহিনী সে দিন যে জায়গাগুলোতে পিছিয়ে ছিল, সেই জায়গাগুলো মেরামত করে নিতে পারলে তাদের গাড়ি সে ভাবেই ছুটবে বলে মনে করেন স্প্যানিশ কোচ, যে ভাবে তিনি দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর টানা ১৫টি ম্যাচে ছুটেছিল।
হুগো বুমৌসের চোট সমস্যা আগে থেকেই ছিল। এ বার তিরিও ছিটকে গেলেন। তার বিদেশি রয়, উইলিয়ামস, কাউকো ও কার্লকে নিয়েই এএফসি কাপ গ্রুপ লিগের হার্ডল পেরোতে হবে তাঁকে। সঙ্গে এক ঝাঁক ভারতীয় তারকা, যাঁদের মধ্যে লিস্টন কোলাসো, প্রবীর দাস, প্রীতম কোটাল, শুভাশিস বোস, কিয়ান নাসিরিদের ওপর চোখ বুজে ভরসা করা যায়। গোলের সামনে গিয়ে গোল মিস করা এবং রক্ষণ পুরোপুরি ফাঁকা করে উঠে গিয়ে আর ঠিকমতো নামতে না পারার রোগ সারিয়ে পরের ম্যাচে খেলতে পারলে এটিকে মোহনবাগানকে আটকানো মুশকিল। সঙ্গে সমর্থকদের শব্দব্রহ্মের শক্তি তো আছেই।
বসুন্ধরার কোচ ব্রুজোন এই সমর্থকদের নিয়ে বলেন, “কলকাতার সমর্থকদের চাহিদা এত বেশি যে, তাতেই হোম টিম মানসিক চাপে পড়ে যেতে পারে। প্রথম ৩০ মিনিট তারা খুব চিৎকার করবে জানি। এতেই ওদের ফুটবলাররা মানসিক চাপে পড়তে পারে। আমরা আমাদের খেলা খেলব। ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিয়ে আসতে পারলে আমরা কাল ভাল ফলই করব”। বিপক্ষের কোচের এই আত্মবিশ্বাসই শনিবারের যুবভারতীতে ফেরান্দোর কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে চলেছে।
এটিকে মোহনবাগান স্কোয়াড
গোলকিপার: অমরিন্দর সিং, অভিলাষ পাল, সুব্রত পাল, অর্শ আনোয়ার শেখ;
ডিফেন্ডার: আশুতোষ মেহতা, সুমিত রাঠি, শুভাশিস বোস, প্রীতম কোটাল, প্রবীর দাস, মাইকেল সুসাইরাজ, দীপক টাঙরি, গুরসিমরত গিল, জোস আরোয়ো, রবি রাণা, রিকি সাবং;
মিডফিল্ডার: জনি কাউকো, কার্ল ম্যাকহিউ, হুগো বুমৌস, বিদ্যানন্দ সিং, শেখ সাহিল, অভিষেক সূর্যবংশী, লেনি রড্রিগেজ, ইঙ্গসন সিং;
ফরোয়ার্ড: রয় কৃষ্ণা, ডেভিড উইলিয়ামস, লিস্টন কোলাসো, মনবীর সিং, কিয়ান নাসিরি।
ম্যাচের খুঁটিনাটি
এএফসি কাপ ২০২২ গ্রুপ ‘ডি’ ম্যাচ
মুখোমুখি: এটিকে মোহনবাগান বনাম বসুন্ধরা কিংস
তারিখ ও সময়: ২১ মে, বিকেল ৪.৩০
ভেনু: যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন, কলকাতা
সম্প্রচার: স্টার স্পোর্টস ৩ ও ডিজনি হটস্টার