শুধু চ্যাম্পিয়ন হওয়াই নয়, হিরো আইএসএলে আরও একটা সাফল্যের মাইলস্টোনও রয়েছে সফল দলগুলির সামনে। লিগ তালিকায় এক নম্বর হয়ে এশিয়ার সবচেয়ে বড় লিগ এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপ পর্বে সরাসরি খেলার যোগ্যতা অর্জন করা। যে সন্মান আজ পর্যন্ত কোনও ভারতীয় ক্লাব অর্জন করতে পারেনি।

আগামী বছর, অর্থাৎ ২০২১ থেকে এই টুর্নামেন্টের মোট দলের সংখ্যা ৩২ থেকে বাড়িয়ে করা হচ্ছে ৪০। সেই দলগুলির মধ্যে পরের বার থেকে রাখা হবে হিরো আইএসএলের লিগ টপারদেরও। আগে হিরো আইএসএল চ্যাম্পিয়নরা এএফসি কাপের বাছাই পর্বে খেলার সুযোগ পেত। কিন্তু এ বার সেই নিয়ম বদলে এএফসি ঘোষণা করেছে, লিগ পর্বের শেষে যারা এক নম্বরে থাকবে, তাদের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপ পর্বে সরাসরি খেলার সুযোগ দেওয়া হবে।

এই ঘোষণায় বেশ খুশি অংশগ্রহণকারী দলগুলি এবং তাদের ফুটবলাররাও। কারণ, যে বিরল সন্মান অর্জন করার সুযোগ পাচ্ছেন তাঁরা, সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে তা তাঁদের ফুটবল জীবনের বড় মাইলফলক হয়ে থাকবে। হিরো আইএসএলের আর দুই রাউন্ডের খেলা বাকি আছে। ইতিমধ্যেই এটিকে এফসি ও এফসি গোয়া সেমিফাইনালে নিজেদের জায়গা পাকা করে নিয়েছে।

যে কোনও টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জটা হয়ে থাকে ফাইনালে জিতে খেতাব অর্জন করা। তবে হিরো আইএসএল অনন্য। এখানে ফাইনালের আগেও আর একটা বড় লড়াই উপভোগ করতে পারেন ফুটবলপ্রেমীরা এবং সেটা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার চেয়ে কম সম্মানের নয়। লিগ টেবলের শীর্ষে থাকার লড়াই। এই লড়াই ইতিমধ্যেই ঢুকে পড়েছে এটিকে ও এফসি গোয়া। গত বারের চ্যাম্পিয়ন বেঙ্গালুরু এফসি-ও আগামী দুই রাউন্ডে সেই লড়াইয়ে ঢুকে পড়তে পারে।

কলকাতার দলের সেরা তারকা রয় কৃষ্ণা, যিনি ফিজি থেকে এসে কলকাতার ফুটবলপ্রেমীদের হৃদয় জিতে নিয়েছেন, তিনি বলেন, “দলের কাছে তো বটেই, ব্যক্তিগত ভাবে আমার কাছেও এটা একটা বড় মোটিভেশন। কারণ, এই তাগিদের জন্য আমরা এ বার কমফর্ট জোন থেকে বেরিয়ে গিয়ে খেলতে বাধ্য হব। প্রত্যেকটা ম্যাচই এখন আমাদের কাছে ফাইনাল। লিগের শীর্ষে থেকে আমরা শুধু হিরো আইএসএলে নয়, ভারতীয় ফুটবলেও সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলতে চাই। আমার বিশ্বাস, যে দলই লিগ তালিকার শীর্ষে থাকুক না কেন, তারা এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স লিগে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবেই। আমি সেই দলের সদস্য হতে পারলে খুবই খুশি হব”।

রয় কৃষ্ণার সতীর্থ ও বাংলার ফুটবলপ্রেমীদের ঘরের ছেলে প্রবীর দাসও এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলার স্বপ্নে বিভোর। তিনি বলেন, “এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স লিগে যোগ্যতা অর্জনের সুযোগ থাকায় ধারাবাহিক ভাবে ভাল খেলার ও প্রচুর পরিশ্রম করার মোটিভেশন পেয়েছি আমরা। ওই স্তরের ফুটবল খেলা আমার কাছে স্বপ্নের মতো। ওই জায়গায় পৌঁছতে পারলে দেশের ফুটবলেও আমরা একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গা অর্জন করতে পারব। এশিয়ার সেরা টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগ পাওয়াটা যে কোনও ভারতীয় ফুটবলারের কাছে বিশাল ব্যাপার। সত্যিই যদি ওই জায়গায় যেতে পারি, তা হলে দারুণ অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারব”।

ফাইনালের আগেই তাই চরম উত্তেজনার আঁচ টের পাচ্ছেন কলকাতার দলের ফুটবলাররা। এটিকে শিবিরে এখন সেমিফাইনালের চেয়ে বেশি চিন্তা লিগের শেষ দুটি ম্যাচ নিয়ে। কারণ, এক নম্বরে থাকতে গেলে এই দুই ম্যাচেই জিততে হবে তাদের। দুটোর কোনও ম্যাচই সহজ হবে না। আগামী রবিবার ঘরের মাঠে চেন্নাইন এফসি-র বিরুদ্ধে নামতে হবে আন্তোনিও লোপেজ হাবাসের দলকে। গত রবিবারই বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে গোলশূন্য ড্র করে চেন্নাইন এফসি সেরা চারে ওঠার সুযোগ নষ্ট করেছে। তাই ওই ম্যাচে এটিকে-কে হারাতে মরিয়া হয়ে উঠতে পারেন ভাল্সকিস, ক্রিভেয়ারোরা।

এটিকে-র শেষ ম্যাচ বেঙ্গালুরু এফসি-র ঘরের মাঠে, যে ম্যাচ জিতে লিগের এক নম্বর হওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠবেন সুনীল ছেত্রীরা। দুই ম্যাচই তাই কঠিন পরীক্ষা এটিকে-র সামনে। লিগসেরা হয়ে এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলার হাতছানি না থাকলে হয়তো এটিকে-র কাছে এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠত না এই ম্যাচগুলো। কারণ, সেমিফাইনালে তাদের জায়গা পাকা তো হয়েই গিয়েছে। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলার সুযোগ কে-ই বা ছাড়তে চায়? তাই এই নিয়ে কোনও আপসে যেতে চায় না তারা।