এএফসি এশিয়ান কাপের প্রস্তুতি পরিকল্পনা নিয়ে খুশি ভারতীয় অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী। তাঁর ধারণা, কুয়েত, লেবাননের মতো দেশের বিরুদ্ধে খেললে বোঝা যাবে ভারতীয় দল ঠিক কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে সুবিধা হবে তাঁদের।

“লেবানন ও কুয়েতের সঙ্গে খেললে আমরা নিজেদের অবস্থাটা বুঝতে পারব। বিশেষ করে এশিয়ান কাপে যেহেতু আমাদের সিরিয়া, উজবেকিস্তানের মতো দলের বিরুদ্ধে খেলতে হবে। উজবেকিস্তান হয়তো আমাদের চেয়ে এক ধাপ ওপরে রয়েছে। সিরিয়াও শীর্ষস্থানীয় দল। দলের তরুণ ফুটবলাররা ওদের বিরুদ্ধে কখনও খেলেনি। বব হাউটনের সময়ের সিনিয়ররা অবশ্য খেলেছে। ওরা প্রচুর উন্নতি করেছে। আর অস্ট্রেলিয়া যে এশিয়ার সেরা দল, তা সবাই জানে”, শনিবার এক ভার্চুয়াল সাংবাদিক সন্মেলনে এ কথা বলেন সুনীল।

আগামী বছর ১২ জানুয়ারি থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি কাতারে অনুষ্ঠিত হবে এএফসি এশিয়ান কাপ। এশিয়ার সবচেয়ে বড় আন্তর্দেশীয় এই প্রতিযোগিতার মূলপর্বে ভারত এই প্রথম পরপর দু’বার অংশ নিতে চলেছে। সাফল্য পেতে গেলে তাদের গ্রুপ পর্বে ভাল পারফরম্যান্স দেখাতে হবে। ফিফা ক্রমতালিকায় বর্তমানে ভারত যেখানে রয়েছে ১০১ নম্বরে, সেখানে তাদের গ্রুপে থাকা সিরিয়া ৯০, উজবেকিস্তান ৭৪ ও অস্ট্রেলিয়া রয়েছে ২৯ নম্বরে। অর্থাৎ ভারতের কাজটা খুব একটা সোজা হবে না।

আসন্ন হিরো ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপে ভারত খেলবে মঙ্গোলিয়া (ফিফা ক্রমতালিকায় ১৮৩), ভানুয়াতু (১৬৪) ও লেবাননের (৯৯) বিরুদ্ধে। এই টুর্নামেন্টের পরেই সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের গ্রুপ পর্বে ভারত খেলবে কুয়েত  (১৪৩), নেপাল (১৭৪), পাকিস্তানের (১৯৫) বিরুদ্ধে। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের নক আউট পর্বেও লেবাননের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ভারতের।

টানা ম্যাচের মধ্যে থাকার পরিকল্পনাকে স্বাগত জানাচ্ছেন ভারতীয় ফুটবলের সেরা তারকা। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা যত আমাদের চেয়ে ভাল দলের বিরুদ্ধে খেলব, তত বেশি উন্নতি করব। আমাদের কাজ হবে ওদের বিরুদ্ধে ভাল খেলা। দল হিসেবে তো উন্নতি করতেই হবে। ব্যক্তিগত উন্নতিও প্রয়োজন। প্রস্তুতি শিবিরে আমরা যা করছি, সেগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যখন এশিয়ান কাপ শুরু হবে, তখন নিজেদের সেরা জায়গায় রাখতে হবে”।

এএফসি কাপেভারত কঠিন গ্রুপে রয়েছে বলে মনে করেন ভারতীয় দলের হেড কোচ ইগর স্টিমাচ। তবে নিজেদের ‘আন্ডারডগ’ হওয়ার সুবিধা নিতে চান ভারতীয় ফুটবলে সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক গোলের মালিক সুনীল। বলেন, “২০১৯-এর এশিয়ান কাপের চেয়ে এ বার খাতায় কলমে গ্রুপ আরও কঠিন। আমরা জানতাম এ বার লড়াই কঠিন হবে। ২০১৯-এও ব্যাপারটা একই রকম ছিল। তবে আমরা ভাল খেলেছিলাম। বিশেষ করে তাইল্যান্ড ও বাহরিনের বিরুদ্ধে দ্বিতীয়ার্ধে। আমরা যে প্রতিপক্ষ হিসেবে যথেষ্ট কঠিন, তা বোঝাতে হবে। সম্প্রতি একাধিক আন্ডারডগকে নিজেদের প্রমাণ করতে দেখা গিয়েছে। বিশ্বকাপে মরক্কোই এর সবচেয়ে উদাহরণ”।

টানা দ্বিতীয়বার এএফসি এশিয়ান কাপ খেলতে চলেছে ভারত। এটা তাদের বাড়তি সুবিধা দেবে বলে মনে করেন সুনীল। এই প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “এএফসি এশিয়ান কাপে খেলা অবশ্যই গর্বের বিষয়। এখন আমাদের আত্মবিশ্বাস ও জ্ঞান অনেক বেড়েছে। প্রতিবারই আমাদের এই চেষ্টা বজায় রাখতে হবে, যাতে এশিয়ার সেরা ফুটবল খেলিয়ে দেশগুলির সঙ্গে লড়াই করার সুযোগ পাই। এই কয়েক বছরে আগের চেয়ে অনেক ভাল কিছু হয়েছে। এ বার নিজেদের প্রমাণ করার পালা”।

সুনীল ছেত্রীর উত্তরসূরী কে হতে পারেন, তা নিয়ে গত কয়েক বছর ধরেই জল্পনা চলছে। কিন্তু তাঁর স্তরের পারফরম্যান্স কারও কাছ থেকেই পাওয়া যাচ্ছে না। তাই বারবার প্রশ্ন ওঠে, সুনীল ছেত্রী অবসর নেওয়ার পর তাঁর জায়গা নেবেন কে? এই প্রশ্ন শুনতে হয় স্বয়ং ভারত অধিনায়ককেও। এ দিনও সাংবাদিকদের কাছ থেকে এই প্রশ্ন শুনতে হয় তাঁকে।

নিজের উত্তরসূরী নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে ৩৮ বছর বয়সী তারকা বলেন, “ক্যাচ টোয়েন্টি-টু পরিস্থিতি এখন। (ইশান) পন্ডিতা, রহিম (আলি), মনবীর (সিং), শিবশক্তি (নারায়ণন) সবাই ভাল খেলোয়াড়। তবে ওদের সেই শ্রদ্ধা অর্জন করতে গেলে আরও পরিশ্রম করতে হবে। হিরো আইএসএলে একাধিক ম্যাচ হয়েছে, যেখানে আমি আর রয় কৃষ্ণা বেঞ্চে ছিলাম। কিন্তু শিবশক্তি সব ম্যাচে খেলেছে। ওদের যত সুযোগ দেওয়া হবে, ততই ওদের আত্মবিশ্বাস বাড়বে।অন্য দিকে, ওরা হিরো আইএসএলের বিদেশি ফুটবলারদের বিরুদ্ধেও লড়াই করছে। তাই ওদের আরও পরিশ্রম করতে হবে”।

এ দিকে, ভুবনেশ্বরে চলতি ভারতীয় শিবির থেকে ছেড়ে দেওয়া হল গোলকিপার ফুর্বা লাচেনপা ও মিডফিল্ডার সুরেশ সিং ওয়াংজামকে। দুজনেরই চোট। লাচেনপার কুঁচকির চোট এবং সুরেশের হ্যামস্ট্রিং চোট। লাচেনপার জায়গায় তাই ভারতীয় শিবিরে ডাকা হয়েছে হায়দরাবাদ এফসি-র গোলকিপার গুরমিত সিং-কে। ২৩ বছর বয়সী এই গোলকিপার গত হিরো আইএসএলে ১৪টি ম্যাচ খেলে ন’টি গোল খেয়েছেন এবং ৪১টি সেভ করেছেন। সাতটি ক্লিন শিট ছিল তাঁর। তাঁর সেভ পার্সেন্টেজ ৮২ শতাংশ। তাঁর এই পারফরম্যান্স দেখেই সম্ভবত কোচ ইগর স্টিমাচ ভারতীয় শিবিরে ডেকেছেন তাঁকে।