দুই যুযুধান দলেরই ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হয়ে হয়ে গেলে যেমন সেই লড়াইয়ের কোনও গুরুত্ব থাকে না, শনিবার বেঙ্গালুরুর কান্তিরাভা স্টেডিয়ামের ম্যাচটাও অনেকটা সে রকমই হতে চলেছে। এটিকে-র পায়ের তলার মাটিটা অবশ্য বেঙ্গালুরু এফসি-র (বিএফসি) চেয়ে শক্ত। শনিবার ম্যাচের ফল যাই হোক না কেন, কলকাতার দলকে কেউ লিগ টেবলের দুই নম্বর জায়গাটা থেকে টলাতে পারবে না। নক-আউট পর্ব থেকে ছিটকে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই সুনীল ছেত্রীদেরও।

গতবারের চ্যাম্পিয়ন বেঙ্গালুরু এফসি আপাতত তিন নম্বরে থাকলেও তাদের জায়গাটা অতটা শক্তপোক্ত নয়। শক্তপোক্ত হবে, যদি শনিবার ঘরের মাঠে তারা এটিকে এফসি-কে হারাতে পারে। সেক্ষেত্রে সেমিফাইনালেও এই দুই দলই মুখোমুখি হবে। কিন্তু এই ম্যাচে তারা হারলে বা ড্র করলে অন্য দলের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে। চার নম্বরে নেমে গিয়ে লিগশীর্ষে থাকা অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠা এফসি গোয়ার মুখোমুখি হতে হবে হয়তো।  

তবু বেঙ্গালুরু এফসি-র পক্ষে শনিবার শুধু জয়ের কথা ভেবে খেলতে নামা কঠিন। কারণ, দু’দিন আগেই বিএফসি-কে মালদ্বীপে গিয়ে এএফসি কাপ প্লে অফ রাউন্ডের ম্যাচ খেলতে হয় সেখানকার দল মাজিয়া এসঅ্যান্ডআরসি-র বিরুদ্ধে। যে ম্যাচে তারা ১-২ হারে। বুধবার ম্যাচ খেলে সেখান থেকে শুক্রবার সকালেই ফিরেছে দল। এর পরে সেমিফাইনালে দু’টি ম্যাচ ও ফাইনালে উঠলে আরও একটি ম্যাচ খেলতে হবে।

হিরো আইএসএল নক আউট পর্বের মধ্যেই আবার ২৬ ফেব্রুয়ারি তাদের মাজিয়ার বিরুদ্ধে এএফসি কাপের হোম ম্যাচেও নামতে হবে। এই ঠাসা সূচির জন্যই দলের খেলোয়াড়দের ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্টই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে কোচ কার্লস কুয়াদ্রাতের কাছে। শনিবার এটিকে-র বিরুদ্ধে তাই প্রথম দলের সাতজন খেলোয়াড়কে বাইরে রেখেই দল নামাবেন বলে জানিয়ে দিলেন বেঙ্গালুরুর কোচ। বলে দেন, “কাল আমার দলের সাতজনের একসঙ্গে হিরো আইএসএল অভিষেক হতে পারে। এ ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। খেলোয়াড়দের ঠিকমতো বিশ্রাম না দিলে ওদের আসল সময়ে ফর্মে পাওয়া যাবে না”।     

বেঙ্গালুরু এফসি-র সময়টা মোটেই ভাল যাচ্ছে না। এক সপ্তাহ আগে কেরালা ব্লাস্টার্স তাদের বিরুদ্ধে এক গোলে পিছিয়ে থেকেও ২-১-এ ম্যাচ জিতে নেয়। তার আগের ম্যাচেই চেন্নাইন এফসি-র বিরুদ্ধে গোলশূন্য ড্র করে কুয়াদ্রাতের দল। সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স তাদের খুব একটা ভাল নয়। শেষ পাঁচটা ম্যাচের মধ্যে জয় মাত্র দু’টিতে, দু’টিতে হার ও একটিতে গোলশূন্য ড্র। এই হল গতবারের চ্যাম্পিয়নদের সাম্প্রতিক ফর্মের খতিয়ান। যা নিয়ে কোচের ব্যাখ্যা, “আমরা গোলের সামনে গিয়েই খেই হারিয়ে ফেলছি। এই সমস্যাটা আমাদের সারা মরশুমে ভুগিয়েছে। আমরা সুযোগ তৈরি করছি। অথচ সেগুলোকে গোলে পরিণত করতে পারছি না”।

চোটের জন্য সুনীল ছেত্রীর গত দুই ম্যাচে খেলতে না পারাটা আরও একটা সমস্যা বেঙ্গালুরু শিবিরের। এই ম্যাচে তিনি খেলতে পারবেন কি না, সেটাই দেখার। স্প্যানিশ ডিফেন্ডার হুয়ানানের অভাবও সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে জানান বেঙ্গালুরুর কোচ। সেমিফাইনালের আগে জয়ে ফেরার জন্য তাই এই দুই তারকাকে মাঠে নামাবেন, না সেমিফাইনালের লড়াইয়ের জন্য তাঁদের রেখে দেবেন, সেটাই দেখার। কুয়াদ্রাত শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের বেশিরভাগ নতুন ছেলেরাই যেহেতু খেলবে এটিকে-র মতো শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে, তাই জয়টা নিশ্চিত নয়। চেষ্টা অবশ্যই থাকবে। তবে ওদের ওপর চাপ দিতে পারব না। ওদের বলব ম্যাচটা উপভোগ করতে”।

অন্য দিকে, গত ম্যাচে ঘরের মাঠে চেন্নাইন এফসি-র কাছে হেরে যাওয়ার পরে এক নম্বর জায়গাটা খোয়াতে হয় এটিকে এফসি-কে। অপ্রত্যাশিত ভাবে সেই ম্যাচে তাঁদের সেরা খেলাটা দেখাতে পারেননি রয় কৃষ্ণারা। ডেভিড উইলিয়ামস দ্বিতীয়ার্ধ পুরোটাই খেললেও তেমন ধারালো হয়ে উঠতে পারেননি। চোট সারিয়ে ফিরে আসার পরে তাঁকে সেই আগের ফর্মে দেখা যাচ্ছে না। বরং এডু গার্সিয়াকে তাঁর চেয়ে অনেক বেশি কার্যকরী মনে হচ্ছে। কিন্তু গত ম্যাচে এটিকে ফরোয়ার্ডরা প্রচুর সুযোগ নষ্ট করেছেন অপ্রত্যাশিত ভাবে। এমন ভাবে সুযোগ নষ্ট করলে বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধেও তাদের হারতে হতে পারে।

ম্যাচটা যদিও এটিকে-র কাছে মহা গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে সেমিফাইনালের আগে তাদের কাছে জয়ের ছন্দে ফিরে আসাটা খুবই জরুরি। ঘরের মাঠে বেঙ্গালুরু এফসি-কে যেমন ১-০ গোলে হারিয়েছিল তারা, তেমনই এই ম্যাচেও তাদের হারাতে পারলে, ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ের আগে প্রচুর আত্মবিশ্বাস জোগাবে প্রীতম কোটালদের। এ ছাড়া সেমিফাইনালের আগে এত ভাল ম্যাচ প্র্যাকটিসই বা কোথায় পাবেন তাঁরা?

তবে যেহেতু তেমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ নয়, হার-জিত কোনও ব্যাপার নয়, তাই প্রথম দলের বেশ কয়েকজনকে বিশ্রাম দিতে পারেন হাবাস। গোলে ধীরজ সিং, রক্ষণে সালাম রঞ্জন সিং, মাঝমাঠে প্রণয় হালদার, রেজিন মাইকেলদের দেখলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। রয় কৃষ্ণাকেও এই ম্যাচে ছুটি দেওয়া হতে পারে।    

কিন্তু এই ম্যাচে নামার আগেই দুঃসংবাদ এটিকে শিবিরে। চোটের জন্য ছিটকে গিয়েছেন অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার আনাস এডাথোডিকা। গত ম্যাচে নিজেদের বক্সের মধ্যে বিপক্ষের খেলোয়াড়কে আটকাতে গিয়ে চোট পান আনাস। চোটটা এতটাই গুরুতর যে, আপাতত ৬-৭ মাস মাঠের বাইরে থাকতে হবে বলে মনে করেন এটিকে কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাস। দলের অন্যরা অবশ্য ঠিকই আছে। তাই আনকোরা খেলোয়াড়দের নিয়ে নামা বেঙ্গালুরু এফসি-কে হারানোটা খুব একটা কঠিন নাও হতে পারে। তবে কিছু পেতে গেলে কিছু হারাতেই হয়, এই তত্ত্ব মেনেই শনিবার প্রথম দলের বেশিরভাগ খেলোয়াড়কেই বিশ্রাম দিতে চান বেঙ্গালুরু কোচ।            

সম্ভাব্য এটিকে দল: ধীরজ সিং (গোল), প্রীতম, ভিক্টর, সুমিত, সালাম, ম্যান্ডি, প্রণয়, হার্নান্ডেজ, রেজিন, উইলিয়ামস, এডু 

শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, সন্ধ্যা ৭.৩০ থেকে স্টার স্পোর্টস নেটওয়ার্ক, হটস্টার ও জিও টিভিতে বেঙ্গালুরু এফসি বনাম এটিকে এফসি ম্যাচ দেখুন সরাসরি।