শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধেও জয়ে ফিরতে পারল না ভারত। বৃহস্পতিবার সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে তাদের দ্বিতীয় ম্যাচ গোলশূন্য ড্র করে মাঠ ছাড়তে হল ইগর স্টিমাচের দলকে। এক ঝাঁক ভুল ও একাধিক গোলের সুযোগ নষ্ট করার খেসারত দিতে হয় সুনীল ছেত্রীদের। মালের ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে এ দিন আধিপত্য ছিল ভারতেরই। বল পজেশনেও তারা অনেক এগিয়ে ছিল। কিন্তু সুযোগ কাজে লাগাতে পারার ব্যর্থতাই এ দিন জিততে দিল না সাত বারের চ্যাম্পিয়নদের।

১৮ বছর আগে এই সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ১-১ ড্র হয়েছিল ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে। তার পরে ফুটবল মাঠে দুই দলের দেখা হয় চারবার। প্রতি বারই হারে শ্রীলঙ্কা। কিন্তু এ বার ভারতকে রুখে দিল ফিফা ক্রমতালিকায় ৯৮ ধাপ নীচে থাকা শ্রীলঙ্কা।  এ দিন ৭৩ শতাংশ বল পজেশন ছিল ভারতের। কিন্তু সারা ম্যাচে ভারত একটি মাত্র শট গোলে রাখতে পারে। শ্রীলঙ্কা তাও পারেনি।  

১৭ বারের মুখোমুখিতে এই নিয়ে পঞ্চমবার ড্র হল দুই দলের মধ্যে। এই ড্রয়ের ফলে সাফের দুই ম্যাচে দুই পয়েন্ট অর্জন করল ভারত। ঠিকমতো সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে এ দিন অন্তত তিন গোলে ম্যাচটা জিততে পারত ভারত।

  • ২২ মিনিট: গোলের সামনে থেকে কোলাসোর হেড লক্ষ্যভ্রষ্ট। সামনে শুধু শ্রীলঙ্কার গোলরক্ষক সুজন পেরেরা ছিলেন।
  • ৬০ মিনিট: মন্দার বক্সের বাঁ দিক থেকে গোলের সামনে ক্রস দিলেও তাতে পা ছোঁয়াতে পারেননি অনিরুদ্ধ থাপা।
  • ৭৩ মিনিট: জালে বল জড়িয়ে দিয়েছিলেন ফারুক। কিন্তু তার আগের মুহূর্তেই বক্সের মধ্যে শুভাশিস বিপক্ষের খেলোয়াড়কে ফাউল করায় সে গোল বাতিল হয়ে যায়।
  • ৮৭ মিনিট: কর্নার থেকে গোল করার সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করেন শুভাশিস। গোল লাইনের প্রায় সামনে থেকে বল গোলে না ঠেলে বারের ওপর দিয়ে উড়িয়ে দেন।

বৃহস্পতিবার তিনটি পরিবর্তন করে প্রথম এগারো নামান ভারতীয় কোচ ইগর স্টিমাচ। প্রীতম কোটাল, মনবীর সিং ও চিঙলেনসানা সিংকে বসিয়ে প্রথম একাদশে আনা হয় মন্দার রাও দেশাই, সেরিটন ফার্নান্ডেজ ও সুরেশ সিংকে। মন্দার ছাড়া অন্য দুজন এ দিন ভাল পারফরম্যান্স দেখাতে পারেননি।

প্রত্যাশিত ভাবেই শুরু থেকে এ দিন ম্যাচের রাশ ছিল ভারতেরই হাতে। খেলাটাও হচ্ছিল মূলত শ্রীলঙ্কার অঞ্চলেই। বাঁ দিক দিয়ে মন্দার, কোলাসোরা গোলের সুযোগ তৈরি করার চেষ্টা শুরু করেন ও ডান দিক দিয়ে উদান্ত সিংকে সুযোগ তৈরিতে সাহায্য করার চেষ্টা করেন সুরেশ।

ম্যাচের বয়স যখন ১৫ মিনিট, তখন মন্দার সুনীল ছেত্রীর উদ্দেশ্যে লম্বা ক্রস দেন গোলের সামনে। কিন্তু ঠিকমতো বলের নাগাল পাননি ভারত অধিনায়ক। দেশের হয়ে ৭৭ গোল করে কিংবদন্তি পেলেকে ছোঁয়ার সুযোগ নষ্ট করেন এ ভাবেই। এর সাত মিনিট পরে বক্সের মধ্যে যখন কোলাসোর হেড লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়, তখন সামনে শুধু শ্রীলঙ্কার গোলরক্ষক সুজন পেরেরা ছিলেন।

প্রথমার্ধে সুজনকে যতটা চাপে থাকতে হয়, তার দশ শতাংশও চাপে ছিলেন না গুরপ্রীত। সারা ম্যাচে কোনও শট যায়নি তাঁর কাছে। দুই দলের খেলাতেও তেমন গতি বা তীব্রতা ছিল না। গ্যালারিতে একদল ভারতীয় সমর্থক তারস্বরে বাঁশি, ভেঁপু বাজিয়েও ভারতীয় ফুটবলারদের উদ্বুদ্ধ করতে পারছিলেন না। আগের ম্যাচের মতোই ভুল করার প্রবণতায় তেমন কোনও সংশোধন দেখা যায়নি ভারতীয় ফুটবলারদের মধ্যে। ফলে সমর্থকেরাও একটা সময় হতোদ্যম হয়ে পড়েন।

শ্রীলঙ্কার ফুটবলারদের মধ্যেও সময় নষ্ট করে, খেলার গতি কমিয়ে ভারতকে হতাশ করে তোলার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এমনিতেই প্রথমার্ধে তাঁদের সুনীল ছেত্রীকে কড়া পাহাড়ায় রাখার উদ্দেশ্য সফল হয়। তার ওপর দুই উইং দিয়ে ভারতের আক্রমণ প্রতিহত করতেও সফল হয় তারা। অর্থাৎ, এ দিন শ্রীলঙ্কাকেই তাদের উদ্দেশ্য পূরণে বেশি সফল হতে দেখা যায়। জয়ের উদ্দেশ্যে ব্যর্থ হয় ভারত।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে সুরেশের জায়গায় তরুণ ইয়াসির মহম্মদকে নামান স্টিমাচ। কিন্তু প্রথমার্ধে যে সমস্যা দেখা গিয়েছিল, সেই সমস্যাই ঘুরেফিরে আসে তাদের দ্বিতীয়ার্ধের পারফরম্যান্সেও। সমানে গোলের সুযোগ তৈরির চেষ্টা করে গেলেও বিপক্ষের গোলের মুখ খুলতে পারেননি তাঁরা। শ্রীলঙ্কার গোলকিপার ও ডিফেন্ডারদের তৎপরতায় বারবার আটকে যান তাঁরা।

৬০ মিনিটের মাথায় বক্সের বাঁ দিক থেকে মন্দার গোলের সামনে ক্রস দিলেও তাতে পা ছোঁয়াতে পারেননি অনিরুদ্ধ থাপা। আগের দিন এই ভুলগুলোই শোধরানোর কথা বলেছিলেন কোচ স্টিমাচ। কিন্তু তাদের ভুলের ধারাবাহিকতা বজায় ছিল এ দিনও। সেট পিসেও ভারতের গলদ ছিল চোখে পড়ার মতো। সারা ম্যাচে এক ঝাঁক কর্নার পেয়েছে তারা। কিন্তু কোনওটাই কাজে লাগাতে পারেনি। বিপক্ষের বক্সের ঠিক বাইরে পাওয়া ফ্রিকিকেও আশ্চর্যজনক ভাবে ব্যর্থ হয় তারা। দলের এই অপ্রত্যাশিত পারফরম্যান্স দেখে হতাশ কোচ স্টিমাচকে মেজাজ হারাতেও দেখা যায়। দ্বিতীয়ার্ধে রেফারির সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে হলুদ কার্ডও দেখতে হয় তাঁকে।  

নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার ২২ মিনিট বাকি থাকতে কোলাসোকে বসিয়ে সাহাল আব্দুল সামাদকে ও থাপাকে বসিয়ে ফারুক চৌধুরিকে আনা হয়। মাঠে নামার কিছুক্ষণের মধ্যেই ৭৩ মিনিটের মাথায় জালে বল জড়িয়ে দিয়েছিলেন ফারুক। কিন্তু তার আগের মুহূর্তেই বক্সের মধ্যে শুভাশিস বিপক্ষের খেলোয়াড় ডাকসনকে ফাউল করায় সে গোল বাতিল হয়ে যায়।

 শেষ দশ মিনিটের জন্য মনবীর সিং নামেন মন্দার রাওয়ের জায়গায়। উদ্দেশ্য অবশ্যই ছিল গোলের সম্ভাবনা বাড়ানো। তাতেও খুব একটা কাজ হয়নি। মনবীর সিংকে প্রথম ম্যাচে দেখেও মনে হয়নি তিনি খুব একটা ভাল ফর্মে আছেন। ৮৭ মিনিটের মাথায় কর্নার থেকে গোল করার সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করেন শুভাশিস। গোল লাইনের প্রায় সামনে থেকে বল গোলে না ঠেলে বারের ওপর দিয়ে উড়িয়ে দেন তিনি। দ্বিতীয়ার্ধের শেষে আট মিনিট বাড়তি সময় দেওয়া হয়। কিন্তু এতটা সময় পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারেননি ভারতীয়রা।

ফাইনালে ওঠার আশা জিইয়ে রাখতে রবিবার নেপালের বিরুদ্ধে ও বুধবার আয়োজক মলদ্বীপের বিরুদ্ধে শেষ দুই ম্যাচে জিততেই হবে ভারতকে। তা হলে তাদের ফাইনালে ওঠার ক্ষীণ আশা থাকবে।      

ভারতীয় দল: গুরপ্রীত সিং সান্ধু (গোল), রাহুল ভেকে, মন্দার রাও দেশাই (মনবীর সিং), শুভাশিস বসু, সেরিটন ফার্নান্ডেজ, অনিরুদ্ধ থাপা (ফারুক চৌধুরি), সুরেশ সিং (ইয়াসির মহম্মদ), গ্ল্যান মার্টিন্স, লিস্টন কোলাসো (সাহাল আব্দুল সামাদ), সুনীল ছেত্রী, উদান্ত সিং।