যাবতীয় জল্পনার অবসান। আসন্ন হিরো আইএসএলে ‘এটিকে মোহনবাগান’ নামে আত্মপ্রকাশ করবে কলকাতার দল। তিনবারের হিরো আইএসএল চ্যাম্পিয়ন এটিকে এফসি ও ১৩১ বছরের ঐতিহ্যবাহী মোহনবাগানের সংযুক্তিরণের পরে এই নামই হতে চলেছে এ বার। শুক্রবার এটিকে মোহনবাগানের বোর্ড অফ ডিরেক্টর্সের যে বৈঠক হয়, তাতেই ক্লাবের নতুন নাম নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। নাম বদলালেও মোহনবাগানের ঐতিহ্য বহন করা জার্সির রঙ ও প্রতীক কোনও বদল ঘটানো হয়নি। জার্সির সবুজ-মেরুন ও পাল তোলা নৌকার প্রতীক রেখে দেওয়া হয়েছে সযত্নে, যা নিয়ে ক্লাবের বহু সমর্থক তাঁদের সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে। ১৮৮৯ থেকে বাঙালির হৃদয়ে জায়গা করে নেওয়া এই ক্লাবকে আধুনিকতার মোড়কে মুড়তে গিয়ে তার গর্বের ইতিহাসকে একেবারেই অস্বীকার করা হয়নি।

বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন ক্লাবটির সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা সমর্থকেরা এত বছর ধরে মোহনবাগান ফুটবলারদের যে পোশাকে দেখে আসছেন, তাদের চিরপরিচিত পতাকায় যে পাল তোলা নৌকার প্রতীক নিয়ে গর্ব করে আসছেন, সে দুটোই অক্ষত থাকবে নতুন সত্ত্বায়। মোহনবাগানের নামও থাকবে তাতে। শুধু জুড়বে এটিকে-র নাম, তিনবার আইএসএল খেতাব জেতার পরে যা ভারতীয় ফুটবলে একটি নামী ও দামী ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। মোহনবাগানের ঐতিহ্য ও তাদের সমর্থকের সঙ্গে এটিকে-র এই ব্র্যান্ড ভ্যালুকে জুড়ে তৈরি হল এক নতুন ব্র্যান্ড, যা সাফল্যের দিক থেকে এটিকে-কেও ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করেন নতুন ক্লাবের ডিরেক্টরদের অনেকেই।

প্রধান কর্ণধার সঞ্জীব গোয়েঙ্কা যেমন বলেন, “গত কয়েক দশক ধরে মোহনবাগানের ঐতিহ্য বহন করে এসেছেন যে কিংবদন্তিরা, তাঁদের প্রণাম জানাই। নতুন এই অভিযানে তাঁদের আশীর্ব্বাদ ও শুভেচ্ছা সবার আগে প্রয়োজন। ছোটবেলা থেকেই মোহনবাগান আমার হৃদয়ের অনেক কাছের। সবুজ-মেরুন বাহিনীর বহু স্মরণীয় মুহূর্তের সাক্ষী থাকতে পারার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। তাই সেই জার্সিকে সম্মান দিয়ে রেখে দেওয়া হয়েছে, যাকে যুগের পর যুগ, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ভালবেসেছে, শ্রদ্ধা করেছে। এটিকে মোহনবাগানকে বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্লাব বানানোই আমার স্বপ্ন, আন্তর্জাতিক ফুটবলে যাদের একটা উল্লেখযোগ্য জায়গা থাকবে”।

এটিকে মোহনবাগানের ফুটবলার, কোচেরা যাতে সেরা ও আন্তর্জাতিক মানের পরিকাঠামোর সুবিধা পেতে পারেন, তার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। আন্তর্জাতিক ফুটবলে সাফল্য পাওয়ার জন্য যে ধরনের সুবিধা প্রয়োজন, সেগুলোই তাদের দেওয়ার বিভিন্ন পরিকল্পনা শুরু হয়েছে। বর্তমান যে পরিকাঠামো মোহনবাগান তাঁবু ও মাঠে রয়েছে, তারও উন্নতির জন্য বাড়তি বিনিয়োগ করারও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে ক্লাবসূত্রে জানা গিয়েছে। যাতে ভবিষ্যতে আইএসএল ও এএফসি-র টুর্নামেন্টের ম্যাচ এখানে হতে পারে।

এটিকে ও মোহনবাগানের এই সংযুক্তিকরণকে স্বাগত জানিয়ে ফুটবল স্পোর্টস ডেভলপমেন্ট লিমিটেডের চেয়ারপার্সন নীতা অম্বানি বলেন, “ভারতীয় ফুটবলের দুই সেরা শক্তি এটিকে ও মোহনবাগানের এই সংযক্তিকরণকে স্বাগত জানাই। ভারতের সবচেয়ে প্রাচীন ও সবচেয়ে নামী ক্লাবগুলির অন্যতম মোহনবাগানকে ইন্ডিয়ান সুপার লিগে স্বাগত এবং আই লিগ চ্যাম্পিয়নদের দু’হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরার জন্য সঞ্জীব গোয়েঙ্কাকে অভিনন্দন। আশা করি, এই দুই শক্তি মিলে যাওয়ায় ভারতীয় খেলাধুলোর ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে। এটিকে মোহনবাগান এফসি শুধু বাংলা বা ভারত নয়, আন্তর্জাতিক ফুটবলও মাতাবে। এএফসি-র টুর্নামেন্টগুলোতে ভারতীয় ক্লাবগুলিরে ভিত শক্ত করতে আরও সাহায্য করবে”। ভারতীয় ফুটবলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে তুলতেও এটিকে মোহনবাগান অগ্রনী ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করেন শ্রীমতি অম্বানি।  

শুক্রবারের বোর্ড বৈঠকে ছিলেন প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেট অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি। এটিকে মোহনবাগানের বোর্ড অফ ডিরেক্টর্সের অন্যতম সদস্য হিসেবে তিনি এই বৈঠকে ছিলেন। বৈঠকের পরে তিনি বলেন, “এটিকে ও মোহনবাগানের এই হাত মেলানোর উদ্যোগকে আমি কূর্ণিশ জানাই। আশা করি, এটিকে মোহনবাগানের এই নতুন ব্র্যান্ড নতুন ইতিহাস তৈরি করবে”।

মোহনবাগান ক্লাবের দুই প্রধান কর্তা সৃঞ্জয় বোস ও দেবাশিস দত্ত এটিকে মোহনবাগান প্রাইভেট লিমিটেডের অন্যতম দুই ডিরেক্টর।  তাঁদের যৌথ বিবৃতি, “এটিকে মোহনবাগানের বোর্ড ঐতিহ্যবাহী সবুজ ও মেরুন রঙ ও পাল তোলা নৌকার প্রতীক বজায় রাখবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আমরা খুবই খুশি। সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা লক্ষ লক্ষ সমর্থকদের কাছে এই দুটো ব্যাপারই হৃদস্পন্দনের মতো। এর ফলে ঐতিহ্য ও স্পিরিট দুটোই বজায় থাকবে। ১৩১ বছরের ঐতিহ্যকে যে আন্তর্জাতিক ফুটবলের আঙিনায় ঠিক নিয়ে যাবে এই বোর্ড ও তাদের দেখানো পথে যে দেশের বাইরে থেকেও সাফল্য আসবে, এই বিশ্বাস আমাদের রয়েছে। নতুন এই অবতার আসলে এক বর্ণময় অতীত ও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ”।

নতুন ক্লাব বাংলায় গড়ে তুলবে এক আন্তর্জাতিক মানের ফুটবল অ্যাকাডেমি, যা এ রাজ্যের ফুটবলকে নতুন প্রজন্ম এনে দিতে থাকবে। আগামী দিনে যাতে ভারতীয় ফুটবলের ‘পাওয়ারহাউস’ হয়ে উঠতে পারে এই বাংলা, সেই উদ্দেশ্যেই গড়ে তোলা হবে এই অ্যাকাডেমি। যার শাখা ছড়িয়ে দেওয়া হবে সারা ভারতে।

শুক্রবার এটিকে মোহনবাগান বোর্ডের বৈঠকে ছিলেন ড. সঞ্জীব গোয়েঙ্কা প্রধান কর্ণধার, সৌরভ গাঙ্গুলি ও উৎসব পারেখ, অন্যতম কর্ণধার এবং ডিরেক্টর সৃঞ্জয় বোস, দেবাশিস দত্ত, গৌতম রায় ও সঞ্জীব মেহরা।