প্রিয় দলের প্রত্যেক ম্যাচে গ্যালারিতে থাকা চাইই চাই ‘মোহনবাগানের মেয়ে’ সুমিতার
কোনও অভিনয় নয়, কোনও পরিকল্পিত প্রতিক্রিয়া নয়, একজন সমর্থকের খাঁটি আবেগ ফুটে উঠেছিল তাঁর সেই উল্লাসে।

ভারতীয় ফুটবল এখন অনেক রমণীয়— এ কথা বোধহয় বিন্দুমাত্র ভুল নয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মাঠে যেমন দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন মহিলা ফুটবলাররা, বিদেশের মাঠেও ভারতের জার্সি গায়ে প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হচ্ছেন, তেমনই এ দেশে ফুটবল স্টেডিয়ামের গ্যালারিতেও দিন দিন বেড়েই চলেছে মহিলা সমর্থকদের সংখ্যা। বছর দশেক আগেও যা ছিল অভাবনীয়। ":0,"335559740":256}"="">
কলকাতার মাঠেও গত কয়েক বছর ধরেই দেখা গিয়েছে, সমর্থকদের ঝাঁকের মধ্যে নারী সদস্যদের উপস্থিতি যথেষ্ট। ছেলেদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে, রীতিমতো পাল্লা দিয়ে প্রিয় দলের জন্য গলা ফাটায় তারা, সমান উৎসাহে উল্লাসে ফেটেও পড়ে। ":0,"335559740":256}"="">
সবুজ-মেরুন সমর্থকেরা নিশ্চয়ই ভুলে যাননি, গত মরশুমের আইএসএল ফাইনালে জেসন কামিংসের অসাধারণ গোলে যখন চ্যাম্পিয়নের খেতাব নিশ্চিত করে মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের জোড়া খেতাব, সেই অবিস্মরণীয় মুহূর্তের কথা। সেই মুহূর্তে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের গ্যালারির এক দুর্লভ মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দী হয়েছিল সম্প্রচারকারী সংস্থার ক্যামেরায় এবং কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই ভিডিও রীতিমতো দাবানলের গতিতে ভাইরাল হয়ে পড়ে। ":0,"335559740":256}"="">
কামিংসের গোলের মুহূর্তের সেই ভিডিওয় যে সবুজ-মেরুন সমর্থকের অভূতপূর্ব প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছিল, সেই সুমিতা নায়েক এখন বাংলার ফুটবল মহলে বেশ পরিচিত এক মুখ এবং বিখ্যাত হয়ে ওঠা এক নাম। কামিংসের গোলের পর তাঁর সেই চোখ কপালে তোলা প্রতিক্রিয়া অনেকেরই মনে দাগ কাটে। ":0,"335559740":256}"="">
— Indian Super League (@IndSuperLeague) June 5, 2025
কোনও অভিনয় নয়, কোনও পরিকল্পিত প্রতিক্রিয়া নয়, একজন সমর্থকের খাঁটি আবেগ ফুটে উঠেছিল তাঁর সেই উল্লাসে। যা নিয়ে সুমিতা বলছেন, “ওই সময় যে আমার ভিডিও তোলা হচ্ছে, তা আমি জানতামই না। ম্যাচের পরের দিন ভিডিওটা দেখতে পাই। তখন আমি আমার মধ্যে ছিলামই না। আমি জানতামই না, তখন কী ভাবে প্রতিক্রিয়া জানানো উচিত। ওই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর ঝাঁকে ঝাঁকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট আসতে শুরু করে আমার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে। বিশ্বাসই করতে পারিনি”। indiansuperleague.com-এর প্রতিনিধির সঙ্গে এক আড্ডায় কথাগুলি বলেন আদ্যান্ত মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের সমর্থক সুমিতা। ":0,"335559740":256}"="">
কয়েকদিনের মধ্যেই টের পান, তিনি কতটা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। নিজেই সে কথা জানিয়ে সুমিতা বলেন, “কয়েক দিন পরে যখন ক্লাবের মাঠে বারপুজোয় গিয়েছিলাম, তখন অনেক সমর্থক এসে আমার সঙ্গে আলাপ করেন, বয়সে বড় অনেক সমর্থকদের কাছ থেকেও বার্তা পেয়েছি। এ থেকেই বোঝা যায়, আমাদের সমর্থকদের মধ্যে কতটা একতা, মধুর সম্পর্ক ও আবেগ রয়েছে”। ":0,"335559740":256}"="">
কলকাতায় প্রিয় দলের কোনও ম্যাচে গ্যালারিতে অনুপস্থিত থাকেন না সুমিতা। এমনকী, কলকাতার বাইরেও সবুজ-মেরুন বাহিনীর খেলা দেখতে যান তিনি। নিজেই সে কথা জানিয়ে আইএসএলের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটকে সুমিতা বলেন, “২০২২ থেকে নিয়মিত মাঠে যাতায়াত করছি। এখন প্রতি ম্যাচে গ্যালারিতে থাকি। এমনকী দলের অ্যাওয়ে ম্যাচ থাকলেও চেষ্টা করি যেতে। বাড়ি থেকে চাপ থাকলেও গত মরশুমে জামশেদপুরে দুই ম্যাচেই ছিলাম। সেমিফাইনালেও গিয়েছিলাম। ভুবনেশ্বরেও গিয়েছিলাম। ওই মুহূর্তগুলো উপভোগ করার লোভ সামলাতে পারি না”।":0,"335559740":256}"="">
কিন্তু কেন এত আবেগ, কেনই বা এত ভালবাসা? “মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট আমার কাছে সব কিছু। অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজকম্মো বাদ দিয়ে ম্যাচ দেখতে যাই। ক্লাবের জন্য গলা ফাটাতে যেতেই হবে আমাকে। কী হবে না হবে, সে সবের পরোয়া করি না। দলের একটা ম্যাচও আর মিস করি না”, বলেন ‘মোহনবাগানের মেয়ে’ সুমিতা নায়েক। ":0,"335559740":256}"="">
মেরিনার্স দ্য এক্সট্রিম ফ্যানগ্রুপের গর্বিত সদস্যা তিনি এখন। এতই ভালবাসেন এই গ্রুপকে যে তাদের উৎসর্গ করে এক ট্যাটুও করিয়েছেন। গ্যালারিতে এক্সট্রিম-এর সদস্যদের সঙ্গে গান গাওয়া, স্লোগান দেওয়া এবং দলের ফুটবলারদের উৎসাহিত করার জন্য গলা ফাটানো, সব কিছুই তিনি করেন। এ জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম হলেও, কুছ পরোয়া নেহি সুমিতার। নিজেকে মোহনবাগানী পরিচয় দিতে পারলে আর কিছুই চাই না তাঁর। ":0,"335559740":256}"="">
সল্টলেকের বাসিন্দা সুমিতার ফুটবল প্রীতি ছোটবেলা থেকেই। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রমশ ফুটবল পাগল হয়ে উঠেছেন তিনি। পাগলামির শুরুর দিকের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “স্কুলে পড়ার সময় থেকেই ফুটবল ভালবাসি আমি। স্কুলে ফুটবল খেলেওছি। প্রায়ই স্কুলে যাতায়াতের সময় প্রায়ই দেখতাম, দলে দলে সবুজ-মেরুন জার্সি গায়ে সমর্থকেরা চলেছে স্টেডিয়ামের দিকে। ২০১৬-১৭ হবে তখন। সবুজ-মেরুন জার্সি প্রথম দেখেই প্রেমে পড়ে যাই। পরের মরশুমে প্রথম কলকাতা ডার্বি দেখতে মাঠে যাওয়ার সুযোগ আসে”। ":0,"335559740":256}"="">
সেই অভিজ্ঞতা কোনওদিন ভুলতে পারবেন না সুমিতা। কোচিং ক্লাস পালিয়ে খেলা দেখতে যাওয়ার সেই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “সে দিন কোচিং ক্লাস না করে স্টেডিয়ামে চলে গিয়েছিলাম ডার্বি দেখতে। এক বন্ধুর কাছ থেকে টিকিট জোগাড় করে স্টেডিয়ামে ঢুকে পড়ি। সেই প্রথম ডার্বি দেখা আমার (ফল ছিল ২-২)। আর প্রথম অভিজ্ঞতাই ছিল অসাধারণ”। ":0,"335559740":256}"="">
তাঁদের মেয়ের নিয়মিত মাঠে গিয়ে খেলা দেখা নিয়ে যে পরিবারের লোকেদের আপত্তি ছিল না, তা একেবারেই বলা যায় না। কিন্তু তাঁদের বুঝিয়ে-সুঝিয়ে ক্রমশ ‘মোহনবাগানের মেয়ে’ হয়ে ওঠার সম্পুর্ণ কৃতিত্ব সুমিতারই। এখন শুধু তিনিই নন, তাঁর মতো মহিলা সমর্থকেরা ঝাঁকে ঝাঁকে মাঠে আসেন নিয়মিত। গলা ফাটান প্রিয় দলের জন্য, স্লোগান দেন। এ সবই এখন তাঁদের কাছে ক্রমশ নিয়মিত ব্যাপার হয়ে উঠেছে। ":0,"335559740":256}"="">
সুমিতার আশা, এ বঙ্গে ফুটবল মাঠের গ্যালারিতে মেয়েদের সংখ্যা আরও বাড়বে। বলেন, “আগে তো গ্যালারিতে এত মেয়েদের দেখা যেত না। এখন প্রচুর মেয়েরা আসে। তারা ভাল ফুটবলও বোঝে। মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট যে কতটা মহান, তাও খুব ভাল জানে তারা। আশা করি, ভবিষ্যতে আরও মেয়েরা নিয়মিত মাঠে আসবে এবং আমি নিশ্চিত, ওরা নিয়মিত মাঠে আসতে শুরু করলে ফুটবলের প্রেমে পড়ে যাবে”। ":0,"335559740":256}"="">
সবচেয়ে বড় কথা মহিলা সমর্থকেরা যে সহযোগিতা ও সাহায্য পেয়ে থাকে পুরুষ সমর্থকদের কাছ থেকে, তা মুগ্ধ করেছে তাঁকে। সুমিতা বলেন, “বেশি রাতে ম্যাচ শেষ হলেও আমাদের বাড়ি ফিরতে অসুবিধা হয় না। ঠিক কেউ না কেউ বাড়ি পৌঁছে দিতে সাহায্য করে। এমনকী, মাঝে মাঝে ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের কাছ থেকেও সাহায্য পেয়েছি। কোনও ইস্টবেঙ্গল সমর্থক সমস্যায় পড়লেও মোহনবাগান সমর্থকেরা এগিয়ে আসে তাকে ঠিকমতো বাড়ি ফিরতে সাহায্য করার জন্য। এমনই মানবিক বোঝাপড়া আছে আমাদের মধ্যে”। ":0,"335559740":256}"="">
যারা শুধুই দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাবের রেষারেষি, তাদের সমর্থকদের মধ্যে বাগযুদ্ধ, এমনকী, দুই দলের ফুটবলারদের মধ্যে হাতাহাতি দেখেছেন, তাদের এ কথা বিশ্বাস করতে অসুবিধা হতে পারে। কিন্তু সুমিতারা জানেন আসল সত্যিটা। ফুটবলই আবার মেলায় দুই ভিন্ন মেরুর মানুষদের। ফুটবলের স্বার্থে অনেকে মনুষ্যত্বকেই বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন। মাঠে যতই রেষারেষি থাকুক, মাঠের বাইরে অনেকেই হয়ে ওঠেন পরষ্পরের বন্ধু। সেই বন্ধুদেরই দেখা পেয়েছেন সুমিতা ও তাঁর মতো আরও অনেক মহিলা সমর্থকেরা। ":0,"335559740":256}"="">
সুমিতারাই ফুটবল মাঠে টেনে আনতে পারেন নারীশক্তিকে। মাঠে যেমন ইতিমধ্যেই প্রমাণ হয়ে গিয়েছে ফুটবল আর পুরুষসর্বস্ব নয়, নারীশক্তিও সেখানে জাগ্রত। তেমনই, মাঠের বাইরেও হাজার হাজার সুমিতা নায়েকরা প্রমাণ করে দিতে পারেন, ফুটবল মাঠের গ্যালারি তাঁদেরও। এমনই আরও হাজারো সুমিতার অপেক্ষায় রয়েছে ভারতীয় ফুটবল এবং ইন্ডিয়ান সুপার লিগ। আরও রমণীয় হয়ে ওঠো ‘সব খেলার সেরা বাঙালির তুমি ফুটবল’। ":0,"335559740":256}"="">