মরশুমের প্রথম কলকাতা ডার্বিতে যে ভাবে একমাত্র গোল করে দলকে ৫৫ মাস পরে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহনবাগান এসজি-র বিরুদ্ধে জয় উপহার দিয়ে সমর্থকদের নয়নের মণি হয়ে উঠেছিলেন তিনি, সে ভাবেই সোমবারও গোল করে ইস্টবেঙ্গল জনতার অন্যতম প্রিয় তারকা হয়ে উঠেছেন তামিল উইঙ্গার নন্দকুমার শেকর।

সোমবার নিজের রাজ্যের দল চেন্নাইন এফসি-র বিরুদ্ধে ম্যাচে ৬৫ মিনিটের মাথায় গোল করে ইস্টবেঙ্গলকে লিগের চতুর্থ জয় এনে দেন নন্দকুমার। এর আগে প্রথমার্ধে এবং দ্বিতীয়ার্ধের কুড়ি মিনিট ধরে গোল পাওয়ার অনেক চেষ্টা করে তাঁর দল। অবশেষে গোলের খরা মেটান নন্দকুমারই। কর্নার থেকে দ্বিতীয় পোস্টের সামনে বল পান তিনি এবং প্রায় ৪৫ ডিগ্রি কোণ থেকে গোলে শট নেন। নন্দর এই শট ব্লক বা ক্লিয়ার করতে যান চেন্নাইনের তরুণ ডিফেন্ডার বিকাশ ইউমনাম, যা তাঁর পায়ে লেগে বারের নীচ দিয়ে গোলের ওপরের নেটে জড়িয়ে যায়। এই গোলের পর উল্লাসে ফেটে পড়ে যুবভারতীর গ্যালারি এবং তৃপ্তির হাসি দেখা দেয় নন্দকুমারের মুখে।

এই গোলের পর দুই দলই আরও গোলের সুযোগ পেলেও কোনও পক্ষই কোনওটি কাজে লাগাতে পারেনি। এই গোলে দলকে ম্যাচ জেতানোর পর নন্দকুমার indiansuperleague.com কে বলেন, “চেন্নাইন এফসি-র বিরুদ্ধে কঠিন ম্যাচে গোল করতে পেরে আমি খুব খুশি। ম্যাচটা আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। অনেকগুলো ড্র ও হারের পর তিন পয়েন্ট পাওয়াটা খুবই জরুরি ছিল। দলের জন্য আমি খুব খুশি”।

এই গোলের সঙ্গে চলতি লিগে নন্দকুমারের গোলের সংখ্যা দাঁড়াল পাঁচ। এ ছাড়াও তিনটি গোলে অ্যাসিস্ট করেছেন তিনি। ফলে সব মিলিয়ে দলের আটটি গোলে অবদান রেখেছেন তিনি। যা ছাপিয়ে গিয়েছে সুনীল ছেত্রীকেও (৭)। ভারতীয় গোলদাতাদের তালিকাতেও সুনীলকে টপকে শীর্ষে উঠে পড়েছেন ২৮ বছর বয়সী এই উইঙ্গার।

চলতি মরশুমে লাল-হলুদ জার্সি গায়ে মোট ন’টি গোল করা হয়ে গেল তাঁর। আইএসএলের আগে ডুরান্ড কাপ ও কলিঙ্গ সুপার কাপেও দু’টি করে গোল করেছিলেন তিনি। অর্থাৎ, এই মরশুমে লাল-হলুদ শিবিরের ভারতীয় ফুটবলারদের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে বেশি গোলের অধিকারী।

দলের জন্য এতগুলি গোল করা প্রসঙ্গে নন্দকুমার বলেন, “এতগুলো গোলে আমার অবদান রাখতে পেরে ভাল লাগছে। তবে আরও অনেক কিছু করতে চাই। শুধু নিজের জন্য নয়, দলকে পরের স্তরে নিয়ে যাওয়ার জন্যও”।  

সোমবার জয়ে ফেরার পর বৃহস্পতিবার তাদের সামনে কঠিন পরীক্ষা। সে দিন ভুবনেশ্বরে ওডিশা এফসি-র বিরুদ্ধে মাঠে নামতে হবে ইস্টবেঙ্গলকে। কয়েকদিন আগেই ভুবনেশ্বরে গিয়ে গোলশূন্য ড্র করে এসেছেন মোহনবাগান এসজি। এ বার ইস্টবেঙ্গলকেও ওডিশার ঘরের মাঠে নামতে হবে।

লাল-হলুদ শিবিরে যোগ দেওয়ার আগে কলিঙ্গবাহিনীরই সদস্য ছিলেন নন্দকুমার। ২০২২-২৩ মরশুমে আইএসএলে ওডিশার হয়ে ছ’টি গোল করেছিলেন ও একটি করিয়েছিলেন নন্দকুমার। সে বার ওডিশার সুপার কাপ জয়ে তাঁর অবদান ছিল গুরুত্বপূর্ণ। সুপার কাপে একাই চারটি গোল করেন তিনি। সেই ওডিশার বিরুদ্ধে এ বার খেলতে নামবেন তিনি। চলতি লিগের প্রথম সাক্ষাতে ওডিশার বিরুদ্ধে গোলশূন্য ড্র করে ইস্টবেঙ্গল। এই ম্যাচেও তাদের সামনে বড় পরীক্ষা।

নিজের প্রাক্তন দলের বিরুদ্ধে ম্যাচ নিয়ে নন্দকুমার বলেন, “এর পরে একটা ভাল ম্যাচ খেলতে চলেছি আমরা। ওডিশা এফসি এখন লিগ টেবলে এক নম্বর দল। আমরা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। তিন পয়েন্টের জন্যই খেলব আমরা”।

তবে এমন একটি কঠিন ম্যাচে রক্ষণ সামলানোর জন্য জর্ডন থেকে আসা সেন্টার ব্যাক হিজাজি মাহেরকে পাবে না ইস্টবেঙ্গল। চেন্নাইনের বিরুদ্ধে ম্যাচের শেষ দিকে তিনি হলুদ কার্ড দেখায় এই ম্যাচে তাঁকে মাঠে নামাতে পারবে না ইস্টবেঙ্গল। সাইডলাইনে দেখা যাবে না কোচ কার্লস কুয়াদ্রাতকেও।   

দলের রক্ষণের বড় ভরসা হয়ে উঠেছেন হিজাজি। ওডিশার বিরুদ্ধে তাঁকে না পাওয়া প্রসঙ্গে নন্দকুমার বলেন, “হিজাজিকে ছাড়া সামলানো কঠিন হবে। তবে আমাদের দলে এমন খেলোয়াড় আছে যারা দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত। বেঞ্চের খেলোয়াড়দের কাছে এটা এগিয়ে আসার একটা বড় সুযোগ। আশা করি, সেই সুযোগ তারা কাজে লাগাতে পারবে”।