সেমিফাইনালের প্রথম লেগে হারার পর তিনি বলেছিলেন, দ্বিতীয় লেগে তাঁর দলকে অন্য চেহারায় দেখা যাবে। এ বার ঘরের মাঠে দ্বিতীয় লেগের ম্যাচের আগের দিনও মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাস জানিয়ে দিলেন, জয়ের ব্যাপারে তিনি আত্মবিশ্বাসী। এমনকী এও বলে দিলেন, যে এই ম্যাচকে ফাইনাল ধরে নিয়েই নামবে তাঁর দল।

সেমিফাইনালের প্রথম লেগে ওডিশা এফসি-র কাছে ১-২-এ হারায় এই ম্যাচে জয় চাইই-চাই মোহনবাগানের। তাও আবার অন্তত দু’গোলের ব্যবধানে। তা হলে অতিরিক্ত সময় বা টাই ব্রেকারে না গিয়েই ফাইনালে উঠে যাবে তারা। এক গোলে জিতলে অবশ্য খেলা অতিরিক্ত সময়ে গড়াবে। কলকাতার এই দুঃসহ গরমে যা চাইছেন না হাবাস। ম্যাচটাকে ৯০ মিনিটেই ফয়সালা করে আসতে চান তিনি।

শনিবার সাংবাদিকদের সবুজ-মেরুন কোচ বলেন, “প্রথম লেগে ভুবনেশ্বরেও সে দিন খুব গরম আর আর্দ্রতা ছিল। কাল অতিরিক্ত সময়ে ম্যাচটা যাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে ভাবছি না। ৯০ মিনিটেই ম্যাচটা জিততে হবে আমাদের। এই আবহাওয়ায় আরও ৩০ মিনিট খেলতে চাই না আমরা”।

জয় নিয়ে যে আত্মবিশ্বাসী তিনি, তা স্পষ্ট জানিয়ে হাবাস বলেন, “অবশ্যই আমরা আত্মবিশ্বাসী। আত্মবিশ্বাস ছাড়া এরকম কঠিন ম্যাচ জেতা যায় না। গত ম্যাচে হারার পর এই ম্যাচে জয় ছাড়া ফাইনালে পৌঁছনোর কোনও উপায় নেই। তাই আমাদের কাছে আপাতত এটাই ফাইনাল, সেমিফাইনাল নয়। লিগ জয়ের পর গত ম্যাচে খেলোয়াড়রা পুরো একশো শতাংশ দিতে পারেনি। মানসিক ভাবে তারা কিছুটা পিছিয়ে গিয়েছিল। এই ম্যাচে আমাদের একশো শতাংশ দিতেই হবে”।

কিন্তু দলের সবাই সুস্থ থাকলেও এই ম্যাচে আক্রমণের অন্যতম ভরসা আরমান্দো সাদিকুকে পাবেন না হাবাস। গত ম্যাচে লাল কার্ড দেখায় এই ম্যাচে নেই তিনি। যদিও এই নিয়ে হতাশ নন মোহনবাগান কোচ। বলেন, “ফুটবলে এ রকম হয়েই থাকে। কোনও ম্যাচে পুরো দল পাওয়া যায় আবার কোনও ম্যাচে কোনও খেলোয়াড়কে পাওয়া যায় না। যেমন কাল আমরা সাদিকুকে পাব না। লোবেরাও (কার্লোস) দেলগাদোকে পাবে না। ওরও আমাদের মতোই সমস্যা রয়েছে। তবে আমি সব সময়ই পুরো দল নিয়ে ভাবি। দলে দু-একজনকে নিয়ে আলাদা করে ভাবি না”।

এই প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “আমার কাছে যেমন সাদিকু গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়, তেমনই লোবেরার কাছে দেলগাদোর গুরুত্বও বেশি। তবে কোনও একজন বা দুজন খেলোয়াড়কে বেশি গুরুত্ব দেওয়া সম্ভব নয়। দু-একজনের জন্য ম্যাচে বিশেষ কিছু বদলে যায় না”।

রবিবারের ম্যাচে একটা বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারেন মোহনবাগানের প্রাক্তনী রয় কৃষ্ণা। গত ম্যাচে তাঁর গোলেই জিতেছিল ওডিশা। তাই এই ফিজিয়ান তারকা মোহনবাগান শিবিরে অবশ্যই চিন্তার বিষয়। হাবাসের কথাতেও সেই ইঙ্গিত পাওয়া গেল, যখন তিনি বলেন, “রয় খুবই ধূর্ত খেলোয়াড়, ওকে তো নিয়ন্ত্রণ করতেই হবে। গত ম্যাচে ওর ক্ষেত্রে আমাদের যে রকম ভুল হয়েছিল, আর সে রকম ভুল করলে চলবে না”।

তবে শুধু রয়ের কথা ভেবে যে দলের ফরমেশনে বদলে চার ব্যাকে খেলার চেষ্টাই করবেন না, তা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়ে হাবাস বলেন, “এই ম্যাচের জন্য আলাদা কোনও ফরমেশনে খেলা আমাদের পক্ষে অসম্ভব। কারণ, তার জন্য যে প্রস্তুতি দরকার, তার সময় আমাদের হাতে নেই। রিকভারির জন্য একদিন চলে গিয়েছে। দু’দিন কেটে গেল ছেলেদের নতুন করে প্রস্তুত করতে। এর পরে আর অন্য ফরমেশনে খেলার প্রস্তুতির সময় কোথায়? তবে তবে ম্যাচ চলাকালীন প্রয়োজন হলে ফরমেশন বদলাতে হতেই পারে। সেই পরিকল্পনা তো থাকবেই”।

ঘরের মাঠে চেন্নাইন এফসি-র বিরুদ্ধে ও সেমিফাইনালের প্রথম লেগে প্রথমে গোল করেও পরে হারতে হয়েছে দলকে। কেন এ রকম বারবার হচ্ছে, জানতে চাইলে হাবাস ব্যাখ্যা দেন, “ফুটবলে এ রকম হয়েই থাকে। পুরো ম্যাচ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখা তো সম্ভব হয় না। কারণ, প্রতিপক্ষও ভাল দল, ভাল খেলোয়াড়দের নিয়ে নামে তারা, তাদেরও কিছু পরিকল্পনা থাকে। সে সব সামলে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ম্যাচের প্রতি মিনিট নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন”।

ভুবনেশ্বরের ম্যাচের উদাহরণ দিয়ে তিনি এই প্রসঙ্গে আরও বলেন, “গত ম্যাচে একাধিক হলুদ কার্ড দেখানোর পর সাদিকুকে লাল কার্ড দেখানো হয়। তার পরেই আমাদের একটা ছোট ভুলের জন্য ওরা দ্বিতীয় গোলটা করে দেয়। তবে এই ম্যাচে আর তা হওয়ার সম্ভাবনা কম। দলের ছেলেদের প্রতি আমার যথেষ্ট আস্থা আছে। কাল আমাদের সঙ্গে আমাদের সমর্থকেরাও থাকবেন। তাই আমাদের কাল গোল করার ও জেতার সম্ভাবনা যথেষ্ট”।

প্রতিপক্ষ ওডিশা ও তাদের কোচ সের্খিও লোবেরার প্রতিও যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল হাবাস। বলেন, “লোবেরা অনেক দিন ধরে আইএসএলে কোচিং করছেন, উনি যথেষ্ট ভাল কোচ। ওডিশাও যথেষ্ট ভাল দল এবং ওদের দলে একাধিক অভিজ্ঞ খেলোয়াড় আছে। ওদের এ বার লিগশিল্ড জেতার সম্ভাবনাও ছিল। ওদের হারানো একেবারেই সোজা নয়। যথেষ্ট পরিশ্রম করতে হবে আমাদের এবং লড়তেও হবে”।

কার্লোস দেলগাদোর অনুপস্থিতিকে যে কাজে লাগানোর চেষ্টা করবেন তাঁরা, তা জানিয়ে দলের রাইট উইঙ্গার মনবীর সিং সাংবাদিকদের বলেন, “দেলগাদোর না থাকায় তো আমাদের সুবিধাই হবে। ওদের আরও চাপে রাখার চেষ্টা করতে হবে আমাদের। মুভগুলো আমাদের আরও দ্রুত শেষ করতে হবে। মুর্তাদা ফলের থেকে বলকে দূরে রাখার চেষ্টাও করতে হবে। এই পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়িত করতে হবে আমাদের”।

গত ম্যাচের পর কোচ দলের গা ছাড়া ভাবের কথা বললেও মনবীরের দাবি, “আমি কোনও ম্যাচে গা ছাড়া ভাব দেখাই না। প্রতি ম্যাচেই নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করি। গত ম্যাচেও সে ভাবেই খেলেছিলাম। কালকের ম্যাচটাকে আমরা ফাইনালের মতোই ধরছি। গত ম্যাচে যে যে ভুলগুলো হয়েছে, এই ম্যাচে সেগুলো আর করব না আমরা। দলকে যত ভাবে পারব সাহায্য করতে চাই। গতবারও আমরা কাপ জিতেছিলাম, এ বারও কাপ জেতার সুযোগ এসেছে আমাদের সামনে। সেই সুযোগ ছাড়তে চাই না। কাল মাঠে এই কথা মাথায় রেখেই নামব সবাই”।

গত ম্যাচে এগিয়ে থেকে শেষে হার সম্পর্কে মনবীরের ব্যাখ্যা, “ফুটবলে যে কোনও দল যে কোনও সময়ে গোল করে দিতে পারে। সব সময় প্রতিপক্ষকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় না। গত ম্যাচে সাদিকু লাল কার্ড দেখার পর আমরা সমস্যায় পড়ে যাই। দশ জনে আক্রমণে ওঠা কঠিন হয়ে যায়। এই ম্যাচে কামিংসকে পাব আমরা শুরু থেকে। গোল করার লোক আমাদের অনেক আছে। আশা করি, গোল পাব”।

সেমিফাইনালের প্রথম লেগে মুম্বই সিটি এফসি যে রকম শেষ পর্যন্ত হার না মানার মানসিকতা বজায় রেখে ম্যাচের শেষ সাত মিনিটে তিন গোল করে এফসি গোয়াকে হারায়, সে ভাবেই শেষ মিনিট পর্যন্ত হাল না ছাড়ার মানসিকতা নিয়েই এই ম্যাচে খেলার কথা বলছেন মনবীর। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ম্যাচের শেষ সেকেন্ড পর্যন্ত হাল ছেড়ে না দেওয়ার মানসিকতা আমাদের দলের মধ্যেও আছে। আমার মনে হয় কোনও দলেরই শেষ দিকে হাল ছেড়ে দেওয়ার মানসিকতা থাকে না। মুম্বই সেদিন যেটা করেছে, সেটা ওদের পরিশ্রম ও সৌভাগ্যের ফল। আমরাও ৯০ মিনিটের পর যত মিনিট বাড়তি সময় দেওয়া হয়, পুরোটাই একশো শতাংশ দিই। কালও দেব”।