শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে কারা এগিয়ে, তা প্রমাণ হতে চলেছে সোমবার ফতোরদা স্টেডিয়ামে, যখন চলতি হিরো আইএসএলের দুই সেরা দল মুখোমুখি হবে একে অপরকে টেক্কা দিতে। এটিকে মোহনবাগান বনাম মুম্বই সিটি এফসি। সোমবারের এই ম্যাচকে এই মুহূর্তে এই লিগের উষ্ণতম যুদ্ধ বললে বোধহয় একটুও ভুল করা হবে না।

কে এগিয়ে, কে পিছিয়ে?  

একদিকে যেমন ন’টি ম্যাচের মধ্যে সাতটি জিতে ও একটি ড্র করে ২২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে মুম্বই সিটি এফসি, অন্যদিকে তেমন, ন’টির মধ্যে ছ’টি ম্যাচ জিতে ও দু’টি ড্র করে ২০ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে এটিকে মোহনবাগান। এই ম্যাচে যারা জিতবে, তারাই একে অপরকে টেক্কা দিয়ে উঠে যাবে লিগ তালিকার শীর্ষে।

ধারাবাহিকতার দিক থেকে অবশ্য মুম্বই সিটি এফসি তুলনামূলকভাবে এগিয়ে। গত আটটি ম্যাচে অপরাজিত রয়েছে তারা। তার মধ্যে একটিতে ড্র করেছে। বাকি সবকটিতে জয়। নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি-র কাছে হার দিয়ে শুরুর পরে আর হারেনি তারা। অন্যদিকে এটিকে মোহনবাগানের অপরাজিত থাকার দৌড় চলছে গত পাঁচটি ম্যাচ ধরে। প্রথম তিন ম্যাচে জয় পাওয়ার পরে চতুর্থ ম্যাচে জামশেদপুর এফসি-র কাছে হেরে যায় কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাসের দল। তার পরে দু’টি ম্যাচে ড্র ও তিনটিতে জয় পেয়েছে।

উত্তেজনায় ঠাসা তারকা-যুদ্ধ

দুই শীর্ষস্থানীয় দলের লড়াইটাই যে এখন পর্যন্ত সেরা ম্যাচ হতে চলেছে এমনটা ধরেই নেওয়া যায়। দুই দলের আক্রমণ বিভাগেরও লড়াই এটা। এ পর্যন্ত যেখানে ১৬টি গোল করেছে মুম্বই সিটি এফসি, সেখানে এটিকে মোহনবাগান এফসি-র গোলসংখ্যা ১০। রয় কৃষ্ণা (৬) যেমন গোল পেয়ে চলেছেন, তেমনই মুম্বইয়ের অ্যাডাম লে ফন্দ্রে (৬), বার্থোলোমিউ ওগবেচেও (৩) গোলের বন্যা বইয়ে চলেছেন। রক্ষণও দুই দলেরই প্রায় সমান শক্তিশালী।

মুম্বইয়ের দলের কোচ লোবেরা গত বার ছিলেন গোয়ার দলেরই দায়িত্বে। লিগের মাঝখানে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল কোনও কারণ না জানিয়েই। এ বার মুম্বইয়ের দায়িত্ব পেয়ে তিনি গতবার লিগ টেবলে এক নম্বরে থাকা এফসি গোয়া থেকে তুলে নিয়ে আসেন ডিফেন্ডার মান্দার রাও দেশাই এবং তিন বিদেশি মিডফিল্ডার ফ্রান্সের হুগো বুমুস, সেনেগালের মুর্তাদা ফল ও মরক্কোর আহমেদ জাহুকে।

গত মরশুমের মাঝে ইংল্যান্ডের বিখ্যাত সিটি ফুটবল গ্রুপ ক্লাবটির দায়িত্ব নেওয়ার পরে এ বার অনেকটাই বদল এসেছে দলে। প্রথমেই তারা কোচ বদল করেন এবং দল বাছাইয়ের দায়িত্ব দিয়ে দেয় লোবেরাকে। এফসি গোয়া থেকে চার নির্ভরযোগ্য ফুটবলারকে তুলে আনা ছাড়াও লোবেরা স্প্যানিশ মিডফিল্ডার হার্নান সান্তানাকে নিয়ে আসেন দলে। ইউডি লা পালমায় লোবেরার প্রশিক্ষণে খেলেছিলেন সান্তানা। তাঁর সঙ্গে রাওলিন বোর্জেস, রেইনিয়ে ফার্নান্ডেজরা মাঝমাঠকে যথেষ্ট শক্তি জোগাচ্ছেন।

আক্রমণ বিভাগকে আগের চেয়ে ধারালো করে তুলতে গত বার কেরালা ব্লাস্টার্সের জার্সি গায়ে একের পর এক গোল পাওয়া (মোট ১৫) ফরাসি স্ট্রাইকার বাবার্থোলোমিউ ওগবেচেকে নিয়ে আসা হয়েছে যেমন, তেমনই এ লিগের ক্লাব সিডনি এফসি-র হয়ে ৬৭ ম্যাচে ৪৫ গোল করে আসা লে ফন্দ্রেকেও সই করানো হয়। এঁরা দু’জনই ফর্মে রয়েছেন। তাই এটিকে মোহনবাগানের রয় কৃষ্ণা-ডেভিড উইলিয়ামস জুটিকে টেক্কা দিচ্ছেন। মঙ্গলবার এই দু’জনকে সামলানো প্রীতম কোটাল, তিরি, সন্দেশ ঝিঙ্গন, শুভাশিস বসুদের কঠিন পরীক্ষা হয়ে উঠতে পারে।

এই কঠিন পরীক্ষা নিয়ে দলের সিনিয়র ডিফেন্ডার প্রীতম কোটাল বলছেন, “ওদের ফরোয়ার্ডরা ভাল ফর্মে আছে বলেই যে আমাদের টপকে গোল করে যাবে, তার কোনও মানে নেই। আমাদের রক্ষণ এখন পর্যন্ত এই লিগের সেরা। সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে আমাদের। ওদের গোল করার জন্য অ্যাডাম, বুমুসরা যেমন রয়েছে, তেমনই আমাদেরও রয় কৃষ্ণা, ডেভিড উইলিয়ামস, মনবীর সিংরা আছে। আশা করি, ম্যাচটা উপভোগ্য হবে”।

সবুজ-মেরুন তারকারা যা বলছেন

সোমবার এটিকে মোহনবাগানের বেশিরভাগ সমর্থকই গোলের জন্য যাঁর দিকে তাকিয়ে থাকবেন, সেই রয় কৃষ্ণা এই ম্যাচ নিয়ে রবিবার ভার্চুয়াল সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, “যে কোনও বড় খেলোয়াড়ই বড় ম্যাচে খেলতে চায়। আর লিগের প্রথমার্ধে এটাই সবচেয়ে বড় ম্যাচ। আমরা নিজেদের খেলার দিকে মন দিচ্ছি। ভাল খেলতে হবে আমাদের আর পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলতে হবে”।

নিজেদের দলের প্রশংসা করে রয় বলেন, “(সাতটা ম্যাচে) ক্লিন শিট রাখতে পারাটা বড় ব্যাপার। এমনকী গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ভাল না খেলা সত্ত্বেও আমরা জয় পেয়েছি, এটাও ভাল। এটাই প্রমাণ করে, আমরা কেমন দল। আশা করি আমাদের রক্ষণ একই রকম ভাল হবে, ঘন ঘন কাউন্টার অ্যাটাকেও উঠব এবং সুযোগগুলো কাজে লাগাব”।   

ভারতীয় ফুটবলের এই মহাযুদ্ধ নিয়ে রয়ের সঙ্গী স্ট্রাইকার ডেভিড উইলিয়ামস এটিকে মোহনবাগান মিডিয়াকে বলেছেন, “আমি মনে করি এটা মরশুমের সেরা ম্যাচ হতে চলেছে। লিগ টেবলের পরিপ্রেক্ষিতেও এই ম্যাচ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা দুই দলই তিন পয়েন্টের জন্য ঝাঁপাব। ফলে ম্যাচটা উত্তেজনাপূর্ণ হতে হবে। দুই দলেই প্রতিভাবান ও অভিজ্ঞ কোচ ও ফুটবলার আছে”। প্রতিপক্ষ সম্পর্কে হাবাসের দলের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার বলেন, “ওরা একেবারে অন্য ধরনের ফুটবল খেলে। নর্থইস্টের বিরুদ্ধে জয়টা তাই আমাদের বাড়তি সুবিধা দেবে বলে মনে হয় না। আমাদের দলের যা শক্তি, তাতে ওদের না হারানোর কোনও কারণ নেই। আমি আশাবাদী, সোমবারের ম্যাচের পরে লিগশীর্ষে আমরাই থাকব”।

গত মরশুম পর্যন্ত মুম্বইয়ের দলে থাকা বাঙালি ফুটবলার শুভাশিস বসু বলছেন, “গতবার আমি যে মুম্বই দলে ছিলাম, তার চেয়ে এ বারের দলটা একেবারে অন্যরকম। এ বারের দলের অনেক কিছুই নতুন। নতুন কোচ, নতুন ফুটবলাররা এসেছে। এবার মুম্বই সিটি এফসি অনেক বেশি শক্তিশালী। তাই ওদের খাটো করে দেখার কোনও প্রশ্নই নেই। একটা কঠিন ম্যাচ খেলতে চলেছি আমরা নিজেদের রক্ষণ আঁটোসাঁটো করে ঝাঁপাব আমরা”।

প্রীতম কোটাল আরও বলেন, “একে মেগা ম্যাচ বলতে রাজি নই আমি। কলকাতা ডার্বির সঙ্গে এর তুলনা হয় না। ডার্বিতে অন্য রকম মানসিক চাপ থাকে। তা ছাড়া মুম্বইকে বাড়তি দেওয়ার কোনও কারণ নেই। আইএসএলে সব ম্যাচই কঠিন। এটা সে রকমই আর একটা ম্যাচ, ফলে কঠিনও হবে। এটা ঠিকই মুম্বই এ বার শুরু থেকে খুব ভাল খেলছে। আমাদের সঙ্গে সমানে সমানে টক্কর দিচ্ছে। নিজেদের মনোবল আরও বাড়াতে তাই এই ম্যাচ আমাদের জিততেই হবে”।

এটিকে মোহনবাগান শিবির যখন এতটাই তেতে রয়েছে, তখন তাদের সামলানো থেকে মোটেই সোজা হবে না, তা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছে মুম্বই সিটি এফসি। আর মুম্বইয়ের ফরোয়ার্ডদের আটকানোও যে এটিকে মোহনবাগান ডিফেন্সের বড় পরীক্ষা, তা তো আগেই আলোচনা হল। এফসি গোয়া, বেঙ্গালুরু এফসি-কে যে ভাবে হারিয়েছে এটিকে মোহনবাগান, তার পুনরাবৃত্তি হলে মুম্বইয়ের টানা আট ম্যাচে অপরাজিত থাকার দৌড় থেমে যেতে পারে।

এটিকে মোহনবাগান স্কোয়াড:

গোলকিপার: অরিন্দম ভট্টাচার্য, ধীরজ সিং, অভিলাষ পাল, আর্শ শেখ, আরিয়ান নিরজ লাম্বা

ডিফেন্ডার: তিরি, প্রীতম কোটাল, প্রবীর দাস, সন্দেশ ঝিঙ্গন, শুভাশিস বসু, সুমিত রাঠি

মিডফিল্ডার: প্রণয় হালদার, ব্র্যাডেন ইনম্যান, হাভিয়ে হার্নান্ডেজ, এডু গার্সিয়া, কার্ল ম্যাকহিউ, গ্ল্যান মার্টিন্স, জয়েশ রানে, বরিস সিং, রেজিন মাইকেল, শেখ সাহিল, এন ইংসন সিং

ফরোয়ার্ড: ডেভিড উইলিয়ামস, রয় কৃষ্ণা, মনবীর সিং, মহম্মদ ফারদিন আলি মোল্লা

সরাসরি দেখুন:

সন্ধ্যা ৭.৩০ থেকে

টিভিতে: স্টার স্পোর্টস নেটওয়ার্ক

স্ট্রিমিং: ডিজনি প্লাস হটস্টার ও জিও টিভি