দলে সুযোগ পেতে যে কোনও ভূমিকা পালনে রাজি রহিম
‘আমাকে প্রতিদিন নিজেকে প্রমাণ করতে হবে এবং কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। আমি জানি, কোচের প্রথম এগারোয় জায়গা পাওয়া সহজ হব না। তবে আশা করি, আমার সুযোগ আসবে’।
চেন্নাইন এফসি-র হয়ে পাঁচ বছর খেলার পর এ বার ওডিশা এফসি-তে যোগ দিয়েছেন বাংলার ফরোয়ার্ড রহিম আলি, যাঁকে ভবিষ্যতের ভারতীয় তারকা বলে অনেকে মনে করছেন। তিনি নিজেও মনে করেন, দৃঢ় প্রত্যয় ও কঠোর শৃঙ্খলা তাঁকে তাঁর লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে পারে। কিন্তু ক্লাব ফুটবলে তাঁর প্রবলতম ইচ্ছা, কলকাতার ক্লাবের জার্সি গায়ে খেলা।
এই মরশুমের আগেই ওডিশা এফসি-তে যোগ দেন ব্যারাকপুরের রহিম। গত পাঁচটি আইএসএলে ৭২টি ম্যাচ খেলে দশটি গোল করেছেন তিনি, অ্যাসিস্ট করেছেন পাঁচটিতে। গড়ে প্রতি ম্যাচে প্রায় ৫৬ মিনিট করে মাঠে থাকার সুযোগ পেয়েছেন তিনি। এই সুযোগের যতটা পেরেছেন সদ্ব্যবহার করেছেন ২৪ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড।
দলের বিদেশী ফরোয়ার্ডরা যেমন তাদের ছত্রছায়ায় ঢেকে রেখেছেন তাঁকে, তেমনই তাঁদের কাছ থেকে এমন অনেক কিছু শিখেছেন, যা তাঁকে ভবিষ্যতে অনেক উন্নতি করতে সাহায্য করেছে। এ ছাড়া আওয়েন কোইলের মতো কোচ তো তাঁর সঙ্গে ছিলেনই।
এ বার আইএসএলের অন্যতম সেরা কোচ সের্খিও লোবেরার হাতে পড়েছেন রহিম। নিজেকে আরও উন্নত করে তোলার সুযোগ পাবেন। তাই এই মরশুমকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন রহিম আলি। indiansuperleague.com কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রহিম বলেন, “আমি বিশ্বাস করি আসন্ন মরশুম আমার কেরিয়ারের অন্যতম সেরা মরশুম হতে পারে। যদি আমি শৃঙ্খলা এবং পেশাদারিত্ব বজায় রাখতে পারি এবং সবসময় বিনয়ী থাকি, তা হলে তা সম্ভব। সেরাটা দেওয়ার জন্য আমাকে প্রতিদিন কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। সে জন্য আমি প্রস্তুত”।
𝐑𝐚𝐡𝐢𝐦: 𝐒𝐭𝐫𝐚𝐢𝐠𝐡𝐭 𝐨𝐮𝐭𝐭𝐚 𝐚𝐜𝐭𝐢𝐨𝐧 𝐦𝐨𝐝𝐞! 🏃🏻💪#OdishaFC #AmaTeamAmaGame #KalingaWarriors pic.twitter.com/z25F9Yl9SG
— Odisha FC (@OdishaFC) August 18, 2024
যখন চেন্নাইনে খেলতেন, তখন কোচের খুব প্রিয় পাত্র ছিলেন রহিম। এমনকী, ভারতীয় দলের প্রাক্তন কোচ ইগর স্টিমাচও তাঁর প্রশংসা করেছিলেন। এ বার লোবেরার দলে যোগ দিতে পেরে খুশি রহিম। বলেন, “সের্খিও লোবেরার খেলার স্টাইল আমি খুবই পছন্দ করি। তাই, ওডিশা এফসি-তে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। তাঁর খেলার স্টাইলের সঙ্গে মানিয়ে নিতে আমার সময় লাগছে ঠিকই, কিন্তু আমি কঠোর পরিশ্রম করছি। আমাদের দলে খুবই ভাল খেলোয়াড় আছে। তাদের কাছ থেকেও অনেক কিছু শিখছি”।
এ মরশুমে ওডিশা এফসি-র আক্রমণ বিভাগে রয়েছেন রয় কৃষ্ণা, দিয়েগো মরিসিও, আইজ্যাক ভানলালরুয়াতফেলা ও জেরি মাওমিংথাঙ্গা। এ ছাড়াও হুগো বুমৌস, আহমেদ জাহুদের মতো অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারও রয়েছেন তাঁদের দলে। লোবেরা ছাড়াও এঁদের সঙ্গও রহিমকে অনেকটাই উন্নত করে তুলতে সাহায্য করবে।
তবে দলে এত ভাল ভাল খেলোয়াড় থাকায় তাঁকে দলের মধ্যে কঠিন প্রতিযোগিতার মধ্যেও পড়তে হবে। এই প্রসঙ্গে রহিম বলেন, “হ্যাঁ, প্রতিযোগিতা সর্বত্রই আছে। কিন্তু আমাকে প্রতিদিন নিজেকে প্রমাণ করতে হবে এবং কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। আমি জানি, কোচের প্রথম এগারোয় জায়গা পাওয়া সহজ হব না। তবে আশা করি, আমার সুযোগ আসবে। আমি স্ট্রাইকার হিসেবে খেলতেই বেশি পছন্দ করি ঠিকই। কিন্তু দলের প্রয়োজনে কোচ আমাকে উইঙ্গার হিসেবে খেলালেও আমার তাতে কোনও আপত্তি নেই। আমি যে কোনও পজিশনে খেলতেই রাজি”।
২০২১-এ প্রথম ভারতীয় দলের জার্সি গায়ে নামা রহিম জাতীয় দলেও যে কোনও পজিশনে খেলার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। বলেন, “ক্লাবের স্ট্রাইকার হিসেবে খেলতে খেলতে যদি ভারতীয় দলের হয়ে মাঠে নেমে হঠাৎ উইঙ্গার হিসেবে খেলতে বলা হয় আমাকে, তা হলে দ্রুত ভূমিকা বদলাতে একটু অসুবিধা হয় ঠিকই। কিন্তু আমি সেই সমস্যা কাটিয়ে দ্রুত মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করি। পেশাদার ফুটবলে এটা সবাইকেই করতেই হয়। তবে এটাও ঠিক, যে ফুটবলাররা ক্লাব ও জাতীয় দলে একই পজিশনে খেলে, তারা কিন্তু দ্রুত উন্নতি করে। তবে আধুনিক ফুটবলে সব রকম পরিস্থিতির জন্যই তৈরি থাকতে হয়। আমিও তৈরি থাকি”।
বাংলার অন্যতম উজ্জ্বল ফুটবল প্রতিভা তিনি। অথচ এখন পর্যন্ত কলকাতার কোনও ক্লাবের জার্সি গায়ে মাঠে নামার সুযোগ আসেনি তাঁর সামনে। ইন্ডিয়ান অ্যারোজ থেকে ২০১৯-এ তিনি চেন্নাইন এফসি-তে যোগ দেন। তার পরে এ বারই ওডিশার হয়ে খেলছেন।
অনেক বছর রাজ্যের বাইরে থাকার পর এ বার তিনি কলকাতার ক্লাবে খেলতে চান। বলেন, “একজন বাঙালি খেলোয়াড় হিসেবে এ মরশুমে কলকাতার তিন ক্লাবের বিরুদ্ধে খেলা আমার কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। মাঠে পা রাখলেই আমি সর্বদা আমার সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, একজন বাঙালি ফুটবলার হিসেবে নিজের রাজ্যের দলগুলোর বিরুদ্ধে খেলাটা অত্যন্ত রোমাঞ্চকর এবং (বাংলার ফুটবলমহলে) নিজেকে প্রমাণ করারও ব্যাপার থাকে। আমি খুব তাড়াতাড়িই কলকাতায় ফিরতে চাই। কলকাতার কোনও ক্লাবের হয়ে আইএসএলে খেলতে চাই”।