থাইল্যান্ডের ম্যাচটি হংকং ম্যাচের প্রস্তুতির পক্ষে ভাল: মানোলো মার্কেজ
‘হংকংয়ে আমাদের জন্য একটি কঠিন ম্যাচ অপেক্ষা করছে। আমাদের প্রস্তুতির সময় আছে। এই সময়ে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে হবে আমাদের এবং জিতে তিন পয়েন্ট অর্জন করতে হবে’।

ভারতীয় দলের আসন্ন চ্যালেঞ্জ নিয়ে যে বেশ চিন্তায় আছেন কোচ মানোলো মার্কেজ, তা তাঁর কথাবার্তা থেকেই বোঝা যাচ্ছে। প্রথমত তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন, তাঁর দলের এখনও অনেক উন্নতির প্রয়োজন এবং দ্বিতীয়ত, জুনে এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বের ম্যাচে হংকংয়ের বিরুদ্ধে ম্যাচ যে তাঁর দলের পক্ষে বেশ কঠিন হতে চলেছে, তাও মানতে দ্বিধা নেই কোচের। সব মিলিয়ে ভারতীয় দল যে এক কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি তা স্বীকার করে নিয়েছেন কোচ। তাই স্বাভাবিক ভাবেই চিন্তায় আছেন তিনি।
জুনের ফিফা আন্তর্জাতিক উইন্ডোয় থাইল্যান্ড ও হংকংয়ের বিরুদ্ধে খেলবে। আগামী ১০ জুন হংকংয়ের কাওলুন সিটিতে এএফসি এশিয়ান কাপ ২০২৭ বাছাই পর্বের ম্যাচে তারা হংকংয়ের মুখোমুখি হবে, যা ভারতের পক্ষে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ হতে চলেছে। এই ম্যাচের প্রস্তুতির অঙ্গ হিসেবে ৪ জুন তারা থাইল্যান্ডের পাতুম থানিতে একটি প্রীতি ম্যাচ খেলবে সেই দেশের জাতীয় দলের বিরুদ্ধে। কলকাতায় এই দুই ম্যাচের প্রস্তুতি শিবির শুরু হয়ে গিয়েছে সোমবার, ১৯ মে থেকে।
এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে ভারতের গ্রুপে রয়েছে হংকং, সিঙ্গাপুর ও বাংলাদেশ। বাছাই পর্বে মোট ২৪টি দলকে ছ’টি গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে। প্রতি গ্রুপের এক নম্বর দলগুলি মূলপর্বে উঠবে, যেখানে ইতিমধ্যেই ১৮টি দল জায়গা পাকা করে ফেলেছে। ভারত রয়েছে ‘সি’ গ্রুপে। আগামী বছর ৩১ মার্চ পর্যন্ত চলবে বাছাই পর্বের এই খেলাগুলি। তার পরেই বোঝা যাবে কারা এই গ্রুপ থেকে ২০২৭-এ সৌদি আরবে এশিয়ান কাপের মূলপর্বে খেলবে।
এই গ্রুপে ভারতই (১২৬) ফিফা ক্রমতালিকায় সবার ওপরে থাকা দল। হংকং রয়েছে ১৫৫ নম্বরে, সিঙ্গাপুর ১৬০-এ ও বাংলাদেশ ১৮৫। তবে প্রথম ম্যাচেই ভারত হোঁচট খেয়েছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গোলশূন্য ড্র করে। গ্রুপে থাকা অপর দুই দল হংকং ও সিঙ্গাপুর-ও তাদের ম্যাচে গোলশূন্য ড্র করে। ফলে গ্রুপের প্রতিটি দলই একই জায়গায় রয়েছে। ভারতের স্বস্তির কারণ বলতে শুধুমাত্র এটুকুই। তবে হংকংয়ের বিরুদ্ধে আসন্ন ম্যাচে ভারতকে জেতার সংকল্প নিয়েই নামতে হবে।
যদিও কোচ মার্কেজ বলেছেন, “আমাদের অনেক কিছুতেই উন্নতি করতে হবে। কারণ, আমরা এর আগে প্রতিটি ফিফা উইন্ডোতে এগিয়েছিলাম। কিন্তু শেষ ম্যাচটি ছাড়া”। সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের ওয়েবসাইটে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
মার্চে মলদ্বীপের বিরুদ্ধে ফ্রেন্ডলি ম্যাচে ৩-০-য় জিতেছিল ভারত। জাতীয় কোচ হিসেবে মার্কেজের প্রথম জয় ছিল সেটি। কিন্তু তার কয়েকদিন পরেই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নিরুত্তাপ গোলশূন্য ড্রয়ের ফলে ফের ধাক্কা খায় তারা। অর্থাৎ, বাছাই পর্বের শুরুটা মোটেই ভাল হয়নি তাদের। কিন্তু বাকি পাঁচটি ম্যাচে তাদের ভাল না খেললে গ্রুপশীর্ষে থেকে মূলপর্বে ওঠা হবে না ভারতের।
বাংলাদেশ ম্যাচের ড্র নিয়ে মার্কেজ কলকাতায় এসে বলেন, “বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আমরা প্রথম একাদশের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়দের পাইনি। তবে একে খারাপ পারফরম্যান্সের অজুহাত হিসেবে খাড়া করা যাবে না। আমাদের বুঝতে হবে যে, হংকংয়ে আমাদের জন্য একটি কঠিন ম্যাচ অপেক্ষা করছে। আমাদের প্রস্তুতির সময় আছে। এই সময়ে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে হবে আমাদের এবং জিতে তিন পয়েন্ট অর্জন করতে হবে”।
গ্রুপ সি-তে চার দলেরই পয়েন্ট সমান (১)। ১০ জুন সিঙ্গাপুরও খেলবে ঢাকায় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। তবে ভারত জিতলে সেই ম্যাচের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে না তাদের। তাদের গ্রুপ যে বেশ কঠিন, তা স্বীকার করে মার্কেজ বলেন, “বাংলাদেশ ম্যাচের আগে আমি কোচ হাভি কাব্রেরার সঙ্গে কথা বলেছিলাম। উনি বলেছিলেন, এই গ্রুপে কেউই বলতে পারবে না কে প্রথম হবে আর কে শেষ। প্রত্যেক দলই একে অপরকে হারাতে পারে। প্রথম দিনের ফলাফলের পর আমি তাকে বলি, তুমি ঠিকই বলেছিলে। এখন চার দলেরই এক পয়েন্ট করে। সব কিছু আবার নতুন করে শুরু করার মতো—ছয় ম্যাচ নয়, পাঁচ ম্যাচ বাকি আছে”।
ভারতীয় কোচের মতে, তাদের গ্রুপ এতটাই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ যে, কম ব্যবধানে ফল নির্ধারিত হতে পারে। বলেন, “এই গ্রুপে সব ম্যাচই কঠিন। আমি সিঙ্গাপুর বনাম হংকং-এর ম্যাচ দেখেছি। প্রথমার্ধে সিঙ্গাপুর ভাল খেলেছিল, দ্বিতীয়ার্ধে হংকং ভাল খেলে। সমানে সমানে লড়াই হয়েছিল সেই ম্যাচে। যেমন ভারত-বাংলাদেশ খেলায় হয়েছে”।
তার আগে আছে থাইল্যান্ডের বিরুদ্ধে রয়েছে ফ্রেন্ডলি ম্যাচ। তারাও যথেষ্ট ভাল দল এবং বাছাই পর্বের গ্রুপ ডি-তে তুর্কমেনিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচের প্রস্তুতি ওই ম্যাচে নেবে তারা। বিশ্ব ক্রমতালিকায় ৯৯ নম্বরে থাকা থাইল্যান্ড ভারতের চেয়ে ২৮ ধাপ এগিয়ে। মার্চে ২০০ নম্বরে থাকা শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ১-০ গোলে জয় পেলেও, কোচ মার্কেজ মনে করেন থাইল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচে ভারতের ভাল প্রস্তুতি হতে চলেছে।
“থাইল্যান্ডের ম্যাচটি হংকং ম্যাচের প্রস্তুতির পক্ষে ভাল হবে। কারণ, তারা প্রথম পটে সারির দল। আমি শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ওদের খেলা দেখেছি। তারা কেবল ১-০ তে জিতেছে। কিন্তু আমার মনে হয় শ্রীলঙ্কা ওই ম্যাচে হারার মতো খেলেনি”।
যে ২৮ জন সম্ভাব্য খেলোয়াড়কে শিবিরে ডেকেছেন মার্কেজ, তাদের মধ্যে ২৬ জন প্রথম দিনের অনুশীলনে অংশ নেন। রাহুল ভেকে পারিবারিক কারণে ২৩ মে দলে যোগ দেবেন। অসুস্থ থাকার কারণে ২১ মে থেকে অনুশীলনে যোগ দেবেন মিডফিল্ডার আশিক কুরুনিয়ান। ২৮ মে থাইল্যান্ড সফরে রওনা হবে ভারতীয় দল।
ভারতীয় শিবিরে কিছু নতুন মুখ রয়েছেন, যারা ইন্ডিয়ান সুপার লিগে এবং কলিঙ্গ সুপার কাপে ভাল পারফরম্যান্স দেখিয়ে জাতীয় দলে প্রথমবার ডাক পেয়েছেন। মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের ফরোয়ার্ড সুহেল আহমদ ভাট, এফসি গোয়ার গোলরক্ষক হৃত্বিক তিওয়ারি এবং পাঞ্জাব এফসি-র মিডফিল্ডার নিখিল প্রভু আন্তর্জাতিক অভিষেকের আশায় রয়েছেন।
সবুজ-মেরুন বাহিনীর তরুণ ফরোয়ার্ড সুহেল ভাটকে নিয়ে মার্কেজ বলেন, “সুহেলের মুভমেন্ট দুর্দান্ত। আমরা সুপার কাপে দেখেছি, গোলের জন্য দুর্দান্ত পজিশনে পৌঁছতে পারে ও এবং ফিনিশও করতে পারে খুব ভাল”।
গোলকিপার হৃত্বিক তিওয়ারিকে নিয়ে তাঁর বক্তব্য, “আমি হৃত্বিককে ভাল ভাবে চিনি। আমার মতে, ও ভারতের সেরা গোলরক্ষকদের একজন হয়ে উঠবে। নিখিল প্রভু অনেক উন্নতি করছে। ও মূলত সেন্টার-ব্যাক ছিল। কিন্তু ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবেও দুর্দান্ত খেলেছে। বল পায়ে খুব ভাল এবং হেডিংয়েও অনেক উন্নতি করেছে। ওর ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল”।