ঘরের মাঠে জয়ে ফিরতে মরিয়া জামশেদপুর, ছন্দ বজায় রাখাই লক্ষ্য মোহনবাগানের
আশিক কুরুনিয়ানের মতো গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় চোট পেয়ে সারা মরশুমের জন্য ছিটকে যাওয়ার পর গতবারের নক আউট চ্যাম্পিয়নরা সম্প্রতি হারিয়েছে রক্ষণের নির্ভরযোগ্য তারকা আনোয়ার আলিকেও। ফলে কিছুটা হলেও দুর্বল হয়েছে তারা।

টানা তিন ম্যাচে জয়ের পরও মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট লিগ টেবলের তিন নম্বরে! তারাই যেখানে একমাত্র দল, যারা এ পর্যন্ত সব ম্যাচেই জিতেছে, তা সত্ত্বেও কী করে তারা তিন নম্বরে? কারণ, অন্যদের চেয়ে একটি ম্যাচ কম খেলেছে সবুজ-মেরুন বাহিনী। বুধবার ইস্পাতনগরীতে টানা চতুর্থ জয় পেলে তারা ফের চলে যাবে শীর্ষে। কিন্তু বাইরের মাঠে খেলা যেখানে খুব একটা পছন্দ করেন না মোহনবাগান কোচ হুয়ান ফেরান্দো, সেখানে তাঁর দল এই ম্যাচে কতটা স্বচ্ছন্দে খেলতে পারবে, সেটাই প্রশ্ন। আশিক কুরুনিয়ানের মতো গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় চোট পেয়ে সারা মরশুমের জন্য ছিটকে যাওয়ার পর গতবারের নক আউট চ্যাম্পিয়নরা সম্প্রতি হারিয়েছে রক্ষণের নির্ভরযোগ্য তারকা আনোয়ার আলিকেও। ফলে কিছুটা হলেও দুর্বল হয়েছে তারা। যদিও কোচ ফেরান্দো তা মানতে রাজি নন। তিনি বলছেন, আনোয়ারের বিকল্প তাঁর দলে রয়েছে। কিন্তু আনোয়ার যে প্রত্যয় ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে দলের রক্ষণ পাহাড়া দিতেন, তা অন্যেরা কতটা পারবেন, সেটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
জামশেদপুর এফসি-র এই মরশুম একেবারেই ভাল যাচ্ছে না। পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে মাত্র একটিতে জিতে তারা এখন টেবলের সাত নম্বরে। তাই ঘরের মাঠে তাদের জয়ে ফেরার পালা। এই মরশুমে ঘরের মাঠে এটি তাদের তৃতীয় ম্যাচ। প্রথম ম্যাচে জয় পেলেও পরের ম্যাচে ড্র করেছে তারা। এ বার না জিততে পারলে টেবলের আরও নীচে নেমে যাবে তারা। কিন্তু সামনের দলটা যেখানে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট, সেখানে কাজটা মোটেই সোজা নয়। নর্থইস্ট ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে যে ভাবে একেবারে শেষ মুহূর্তের গোলে হারে তারা, তাও ছিল বেশ দুর্ভাগ্যজনক। এ বার ঘরের মাঠে সেই দুর্ভাগ্যের অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসাটাই জামশেদপুর এফসি-র কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স
জামশেদপুর এফসি: লিগের প্রথম তিন ম্যাচেই তিন রকম ফল পেয়ে যায় জামশেদপুর এফসি। ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে গোলশূন্য ড্র দিয়ে শুরু করার পরে দ্বিতীয় ম্যাচে ০-১-এ তারা হার মানে কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে। লিগে তাদের প্রথম জয় আসে হায়দরাবাদ এফসি-র বিরুদ্ধে ১-০-য়। কিন্তু পরের দুই ম্যাচে ফের জয়ের খরা। পাঞ্জাব এফসি-র বিরুদ্ধে গোলশূন্য ড্র এবং নর্থইস্ট ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে ১-২-এ হার। নর্থইস্টের কাছে যে ভাবে হারে তারা, তাকে অভাবনীয় বললেও কম বলা হয়। ৯৩ মিনিট পর্যন্ত এক গোলে এগিয়ে থাকার পরেও ১-২-এ হেরে মাঠ ছাড়তে হয় তাদের। নর্থইস্ট গোল শোধ করে ৯৪ মিনিটের মাথায় এবং জয়সূচক গোলটি করে শেষ মিনিটে পাওয়া পেনাল্টি থেকে। সমর্থকদের মনে হতেই পারে, এ বার দুর্ভাগ্য তাড়া করে চলেছে তাদের প্রিয় দলকে।
মোহনবাগান এসজি: লিগের প্রথম ম্যাচে যতটা দাপুটে ফুটবল খেলে মোহনবাগান এসজি, যে ভাবে গোল করে দলকে জেতান জেসন কামিংস, দিমিত্রিয়স পেট্রাটস ও মনবীর সিং, দ্বিতীয় ম্যাচে বেঙ্গালুরু এফসি-র বিরুদ্ধে ততটা দাপট দেখাতে পারেনি তারা। সারা ম্যাচে মাত্র একটি শট তিন কাঠির মধ্যে রেখেছিল মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট এবং সেই শটেই গোল করে জয় এনে দেন ফরাসি মিডফিল্ডার হুগো বুমৌস। গত ম্যাচে চেন্নাইয়ে যে আত্মবিশ্বাস ও আধিপত্য নিয়ে রাজত্ব করে তারা, তাতে একবারও মনে হয়নি সেটি তাদের ঘরের মাঠ নয়। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দাপুটে ফুটবল খেলে ৩-১-এ জেতে তারা। গতবারের কাপ চ্যাম্পিয়ন মোহনবাগান এসজি। চলতি লিগে টানা তৃতীয় জয় পেল তারা। দিমিত্রিয়স পেট্রাটস, জেসন কামিংস ও মনবীর সিং জয় সুনিশ্চিত করেন। তাঁরা গোলের প্রচুর সুযোগ তৈরি করতে পারছে ঠিকই। কিন্তু প্রতিপক্ষের গোলের সামনে গিয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।
দুই শিবিরের খবর
জামশেদপুর এফসি: মাঝমাঠ ও রক্ষণে যথেষ্ট খেলোয়াড় রেখে দল নামানোর পক্ষপাতী জামশেদপুর এফসি-র কোচ স্কট কুপার। অযথা ঝুঁকি নিয়ে আক্রমণে যেতে রাজি নন তিনি। গত ম্যাচে ৩-৪-২-১-এ দল নামিয়েছিলেন তিনি এবং ১৯ মিনিটের মাথায় ড্যানিয়েল চিমার গোলে এগিয়ে যায় তারা। সেই গোলেই ৯৪ মিনিট পর্যন্ত ব্যবধান বজায় রাখে তারা। তাই সেই দলই হয়তো মঙ্গলবারের ম্যাচেও নামাবেন কুপার। সামনে চিমাকে রেখে তাঁর পিছনে নোঙদম্বা নাওরেম ও অ্যালেন স্তেভানোভিচকে রাখবেন হয়তো। নিখিল বারলা, প্রভাত লাকরা, তাচিকাওয়া ও রিকি লাল্লাওমাওমা থাকতে পারেন মাঝমাঠে এবং রক্ষণে ফারুক চৌধুরি, এলসিনহো ও পাচুয়াও লালদিনপুইয়া। গত ম্যাচে এঁদের রেখেই প্রথম এগারো নামিয়েছিলেন কোচ। বঙ্গসন্তান ঋত্বিক দাসের চোট। তিনি একটির বেশি ম্যাচ খেলতে পারেননি। আর এক বঙ্গসন্তান প্রণয় হালদার তিন ম্যাচে ২১২ মিনিট খেলেছেন।
মোহনবাগান এসজি: আনোয়ার আলির পায়ে চোট। কবে মাঠে ফিরবেন তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। এই অবস্থায় তাঁর জায়গায় কাকে খেলানো হবে, এটা একটা বড় প্রশ্ন। কোচ অবশ্য দীপক টাঙরি, সুমিত রাঠি বা লালরিনলিয়ানা হ্নামতের মধ্যে কাউকে খেলানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাকে খেলাবেন, সেটাই দেখার। জেসন কামিংসও অসুস্থ এবং হুগো বুমৌস অনুশীলনে চোট পেয়ে দলের সঙ্গেই যাননি বলে খবর পাওয়া গিয়েছে। আক্রমণে এখন ভরসা দিমিত্রিয়স পেট্রাটস ও আরমান্দো সাদিকু— এই দুই বিদেশি। দুই উইং থেকে তাঁদের গোলের বল জোগানোয় যেমন সাহায্য করতে পারেন লিস্টন কোলাসো, সহাল আব্দুল সামাদরা, তেমনই মাঝমাঠে অনিরুদ্ধ থাপা, মনবীর সিং, গ্ল্যান মাটিন্সরাও যথেষ্ট কার্যকরী। কামিংস, বুমৌস না খেলতে পারলে রক্ষণে হেক্টর ইউস্তে, ব্রেন্ডান হ্যামিলকে একসঙ্গে রাখতে পারেন কোচ। কামিংস না খেলতে পারলে সাদিকু ও পেট্রাটসকে দিয়ে শুরু করানো হতে পারে।
দ্বৈরথের ইতিহাস
ইন্ডিয়ান সুপার লিগে দুই দল মুখোমুখি হয়েছে ছ’বার। দু’টিতে জিতেছে কলকাতার দল। তিনটিতে জামশেদপুর এফসি। বাকি একটি ড্র হয়েছে। গত আইএসএলেই সবুজ-মেরুন বাহিনী প্রথম ম্যাচে ইস্পাতনগরীর দলকে ১-০-য় হারায়। ফিরতি লিগের ম্যাচ গোলশূন্য ড্র হয়। ২০২১-২২ মরশুমে জামশেদপুর দুই ম্যাচেই জেতে, প্রথমে ২-১-এ ও পরে ১-০-য়। তার আগের মরশুমে দুই দলই একবার করে জেতে। প্রথমে জামশেদপুর এফসি ২-১-এ ও পরে মোহনবাগান ১-০-য়।
পরিসংখ্যানবিদরা বলছেন
বুধবার জামশেদপুরকে হারাতে পারলে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট হবে আইএসএলের প্রথম দল, যারা কোনও মরশুমে প্রথম চার ম্যাচেই জিতবে। এমনিতেই তারা প্রথম তিন ম্যাচে জিতে একটি নজির গড়েছে। তারাই একমাত্র দল, যারা দু’বার এই কীর্তি স্থাপন করেছে। আইএসএলে শেষ ছ’টি অ্যাওয়ে ম্যাচের মধ্যে মাত্র একটিতে হেরেছে মোহনবাগান এসজি। এ বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি হায়দরাবাদের কাছে হারে তারা। হুয়ান ফেরান্দোর দল জামশেদপুরের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত মাত্র সাতটি গোল করেছে। ইস্পাতনগরীর দলের বিরুদ্ধে সবচেয়ে কম গোল করেছে সবুজ-মেরুন বাহিনীই। তাদের অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার শুভাশিস বোস এ পর্যন্ত ৯২ শতাংশ এরিয়াল ডুয়াল জিতেছে। এই আইএসএলে আর কোনও ফুটবলার এরিয়াল ডুয়ালে এতটা সফল হতে পারেননি। সহাল আব্দুল সামাদ এ পর্যন্ত ২০টি ড্রিবলের চেষ্টা করে ১৩টিতেই সফল হয়েছেন, যা সর্বোচ্চ।
আইএসএলে গত দুই মুখোমুখিতে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে একটি ম্যাচেও জিততে পারেনি জামশেদপুর এফসি। তবে গত তিনটি হোম ম্যাচে তারা অপরাজিত রয়েছে। জামশেদপুর এফসি-র প্রতীক চৌধুরি আইএসএলে শততম ম্যাচ খেলতে চলেছেন। তিনি ৩৪তম ফুটবলার, যিনি এই সন্মান অর্জন করবেন। জামশেদপুরের হয়ে তিনি ৩২তম ম্যাচ খেলবেন, যা তাঁর নিজেরই গড়া নজির ছোঁবে। এর আগে বেঙ্গালুরু এফসি-র হয়েও ৩২টি ম্যাচ খেলেছিলেন তিনি। সেও ছিল রেকর্ড।
ম্যাচ- জামশেদপুর এফসি বনাম মোহনবাগান এসজি
ভেনু- জেআরডি টাটা স্পোর্টস কমপ্লেক্স, জামশেদপুর
সময়- ১ নভেম্বর, ২০২৩, বুধবার, রাত ৮টা
সরাসরি সম্প্রচার ও স্ট্রিমিং
টিভি: ডিডি বাংলা ও কালার্স বাংলা সিনেমা- বাংলা, স্পোর্টস ১৮ খেল- হিন্দি, স্পোর্টস ১৮ ১ এসডি ও এইচডি- ইংলিশ, ভিএইচ ১ এসডি ও এইচডি- ইংলিশ, সূর্য মুভিজ- মালয়ালাম
স্ট্রিমিং: জিও সিনেমা ও ওয়ানফুটবল