ক্রমতালিকার এক নম্বরে থেকে লিগ শেষ করাই যে এখন মোহনবাগান শিবিরের একমাত্র লক্ষ্য, তা এখন প্রায় রোজই মনে করিয়ে দিচ্ছেন তাদের স্প্যানিশ কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাস। তাই এখন বাকি সাতটি ম্যাচের কোনওটিতেই হারতে চান না তিনি ও তাঁর দল।

শুক্রবার ঘরের মাঠ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে জামশেদপুর এফসি-র বিরুদ্ধে নামার আগে তাই ফের একবার মনে করিয়ে দিলেন, এখন আর হারের কথা ভাবছেনই না তিনি। বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “হারের সম্ভাবনা নিয়ে আমি ভাবছিই না। সব সময় জেতার কথা মাথায় রেখেই প্রস্তুতি নিচ্ছি আমরা। কালকের ম্যাচে হারলে সমস্যা হতে পারে, জানি। কিন্তু তার পরেও আমাদের এক নম্বর জায়গাটা পাওয়ার লড়াই চলবে”।

নিজেদের অগ্রগতির জন্য অন্য কোনও দলের ম্যাচের দিকেও তাকিয়ে থাকতে রাজি নন আইএসএল জয়ী কোচ। স্পষ্ট জানিয়ে দেন, “অন্য কোনও দলের ম্যাচের ফলে আমাদের ওপর কী প্রভাব হবে, সে সব নিয়ে ভাবতে চাই না আমরা। আমাদের সাফল্য-ব্যর্থতা শুধু আমাদের হাতেই রয়েছে। তাই শুধু নিজেদের দলের খেলায় মনোনিবেশ করতে চাই। নিজেদের ম্যাচ নিয়েই ভাবতে চাই”।

গত ম্যাচে ওডিশা এফসি-র বিরুদ্ধে কিছুটা রক্ষণাত্মক লেগেছিল হাবাসের দলকে। অযথা ঝুঁকি নিতে রাজি ছিল না কোনও পক্ষই। তাই ম্যাচ গোলশূন্য থেকে যায়। তবে শুক্রবার জামশেদপুরের বিরুদ্ধে ম্যাচে সেই কৌশলে বদল আসবে, এমনই ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন সবুজ-মেরুন কোচ। বলেন, “গত ম্যাচের প্রতিপক্ষ আর এই ম্যাচের প্রতিপক্ষ এক নয়। কাল আমরা অন্য একটা দলের বিরুদ্ধে খেলব এবং ঘরের মাঠে খেলব। এই ম্যাচটা সম্পুর্ণ অন্যরকম। তাই আমাদের পরিকল্পনা, কৌশলও আলাদা হবে। কী রকম হবে, তা খেলোয়াড়দের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করব”।

তাই বলে অবশ্য প্রতিপক্ষকে কম গুরুত্ব দেওয়ার ভুল করতে রাজি নন অভিজ্ঞ কোচ। তাঁরই মতো মরশুমের মাঝখানে দায়িত্ব নেওয়ার পর জামশেদপুর দলটার মধ্যে অনেক পরিবর্তন এনেছেন কোচ খালিদ জামিল। ভারতীয় কোচের প্রশংসা করে হাবাস বলেন, “খালিদ জামিল ভাল কাজ করছে। ও যখন নর্থইস্টের কোচ ছিল তখন থেকেই আমি ওকে জানি। ওর আর ওর দলের প্রতি শ্রদ্ধা আছে আমাদের। তবে এই ম্যাচ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। ওরাও নিশ্চয়ই এই ম্যাচের জন্য ভাল প্রস্তুতিই নিচ্ছে। ভাল ম্যাচ হবে”।

জামশেদপুর দলে জেরেমি মানজোরোর মতো সেটপিস বিশেষজ্ঞ রয়েছেন, যিনি বক্সের কাছ থেকে ফ্রিকিকে একাধিক গোল করেছেন। জামশেদপুরের এই বিশেষ সুবিধা নিয়ে হাবাস বলেন, “ওরা সেটপিসে ভাল হতে পারে। তবে সেটপিস এড়ানোর সবচেয়ে ভাল উপায় কর্নার, ফাউল এগুলো হতে না দেওয়া। সে জন্য আমাদের বুদ্ধি করে খেলতে হবে। জামশেদপুরের বিরুদ্ধে ম্যাচে আমাদের ছেলেরা একশো শতাংশ দেওয়ার জন্যই নামবে। কারণ, এই ম্যাচটা আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই ম্যাচে জিতলে হয়তো আমরা এক নম্বরে উঠে যেতে পারি”।

দলের অ্যাটাকারদের প্রচুর গোলের সুযোগ হাতছাড়া করা প্রসঙ্গে দিমিত্রিয়স পেট্রাটসদের গুরু বলেন, “গোল করতে হলে গোলের সুযোগ তৈরি করতেই হবে। আমরা গোলের সুযোগ যত তৈরি করব, ততই গোলের সম্ভাবনা বাড়বে। তাই এই নিয়ে আমি চিন্তিত নই। গোলের সুযোগ তৈরি হওয়া তো ভাল। তা ছাড়া, প্রতি ম্যাচ পাঁচ গোলে বা তিন গোলে জেতা সম্ভব না। আপনারা দেখেছেন, গত কয়েকটি ম্যাচে ব্যবধান কমই হয়েছে। দু-এক গোলের বেশি ব্যবধানে কেউ জিততে পারেনি। লিগের এই জায়গায় এসে অনেক গোল করে ম্যাচ জেতা কঠিন। কারণ, প্রায় সব দলই একে অপরের শক্তি-দুর্বলতা সম্পর্কে জেনে গিয়েছে”।

শুক্রবারের এই ম্যাচের পরেই তাদের সামনে কলকাতা ডার্বি। যা নিয়ে অনেক অনুশীলন ও প্রস্তুতির প্রয়োজন। তবে শুক্রবারের ম্যাচ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ডার্বি নিয়ে কোনও চিন্তা করতেই রাজি নন সবুজ-মেরুন কোচ। ডার্বিকে বাড়তি গুরুত্বও দিতে রাজি নন তিনি। বলেন, “সমর্থকদের কাছে ডার্বি অনেক গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। কিন্তু আমাদের কাছে জামশেদপুর ম্যাচের গুরুত্ব যে রকম, ডাবির গুরুত্বও সে রকম। এখনই ডার্বি নিয়ে ভাবছি না। আগে আমাদের কালকের ম্যাচে জামশেদপুরের বিরুদ্ধে একশো শতাংশ দিতে হবে। তার পরে ডার্বি নিয়ে ভাবা যাবে”।

পরপর ম্যাচ সত্ত্বেও দলের ফুটবলারদের ফিটনেসের স্তর দেখে খুশি হাবাস। তবে ফিটনেস নিয়ে এর আগে অনেক সমস্যা ছিল বলেও অভিযোগ করেন তিনি। এই প্রসঙ্গে বলেন, “পরপর এত ম্যাচ খেলে দলের ছেলেরা ক্লান্ত হয়ে যেতেই পারে। তবে আমাদের দলে ফিটনেস বজায় রাখার পদ্ধতি খুবই ভাল। আমি দায়িত্বে আসার পর সব কিছু যখন নতুন ভাবে শুরু করি, তখন প্রথম ১৫ দিন অনেকেরই পেশীর এবং অন্যান্য সমস্যা ছিল। জাতীয় দল থেকে যখন আমাদের ফুটবলাররা ফিরে এল, তখন ওদেরও ফিটনেসের কিছু সমস্যা ছিল। এখন সবার ফিটনেসে একটা ভারসাম্য এসেছে”।

তবে শিবিরের প্রায় সব ফুটবলারই এখন চোটমুক্ত থাকায় দল বাছাইয়ে অনেক সুবিধা হচ্ছে বলে জানান সবুজ-মেরুন কোচ। বলেন, “পুরো দল হাতে থাকলে দল বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বিকল্পও অনেক বেশি থাকে। তা ছাড়া সপ্তাহে দু-তিনটে করে ম্যাচ খেলতে হলে খেলোয়াড়দের ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেলানোর সুযোগও বাড়ে। এখন আমাদের ছেলেরা শারীরিক ভাবে অনেক ভাল অবস্থায় রয়েছে। তাই স্কোয়াডের সবাই প্রথম এগারোয় আসার মতো অবস্থায় আছে। যেটা দলের পক্ষে খুবই ভাল”। বিদেশী ডিফেন্ডার ব্রেন্ডান হ্যামিলও সুস্ত হয়ে উঠেছেন বলে জানান কোচ। শুক্রবারের ম্যাচে তিনি হয়তো স্কোয়াডে থাকবেন।

ক্লাবের যুব ফুটবলারদের ম্যাচ খেলার সুযোগ দিতে চান হাবাস। তাই রিলায়্যান্স ফাউন্ডেশন ডেভলপমেন্ট লিগের জন্য খেলোয়াড় ছাড়তে কোনও আপত্তি নেই তাঁর। সাফ জানিয়ে দেন, “যুব দলের জন্য খেলোয়াড়দের আমরা ছাড়তেই পারি। কারণ, ওদেরও ম্যাচ খেলার সুযোগ পাওয়া দরকার। শুধু অনুশীলন করে যাওয়া কারও পছন্দের হতে পারে না। যে ফুটবলারদের বয়স কম, তাদের এখন যত বেশি সম্ভব ম্যাচ খেলা দরকার। সেই জন্য এই ডেভলপমেন্ট লিগের জন্য খেলোয়াড় ছাড়তে আমি রাজি”।

সদ্য চোট সারিয়ে দলে ফেরা আনোয়ার আলি এ দিন এই সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, “মাঠে ফিরে নিজের সেরাটা দেওয়াই এখন তাঁর লক্ষ্য। তাঁর মতে, ফুটবলে যে কোনও সময় চোট লাগতেই পারে। তবে যখন চোট পেয়ে বাইরে বসেছিলাম, তখনও যেমন দলের পাশে ছিলাম, এখন ফিট হয়ে ওঠার পরেও দলকে সাহায্য করতে প্রস্তুত। চোট সারিয়ে ফেরার পরে সর্বস্ব উজাড় করে দেওয়াই লক্ষ্য। সেই চেষ্টাই করছি”।

কোচ বদলের ফলে দলের খেলার স্টাইল ও সিস্টেমেও যে বদল এসেছে, তার সঙ্গে মানিয়ে নিতে কোনও আপত্তি নেই আনোয়ারের। বলেন, “প্রত্যেক কোচেরই বিভিন্ন ভাবনা-চিন্তা আছে এবং প্রত্যেক কোচের কাছ থেকেই আমরা অনেক কিছু শিখি। কোচের নির্দেশ মানাই আমাদের কাজ। আর যখন অনুশীলনে নামি, তখন আমাদের জানা থাকে কী করতে হবে বা কী করতে হবে না। সুতরাং এই ব্যাপারে কোনও অসুবিধা হয় না”।

জামশেদপুর এফসি-কে কর্নার, বক্সের সামনে ফ্রি-কিকের সুযোগ না দেওয়ার দাওয়াই দিয়েছেন তাঁদের কোচ হাবাস। তবে এই নির্দেশ সব ম্যাচেই থাকে বলে জানান আনোয়ার। বলেন, “শুধু কালকের ম্যাচের জন্য নয়, প্রতি ম্যাচেই প্রতিপক্ষকে বক্সের কাছাকাছি ফ্রি-কিক না দেওয়ার পরিকল্পনাই থাকে আমাদের। প্রতি দলেই ভাল ভাল খেলোয়াড় থাকে। জামশেদপুরও যথেষ্ট ভাল দল। বক্সে আমরা অযথা ফ্রি-কিক দিতে চাই না। কারণ, যে কোনও দলের ক্ষেত্রেই সেটা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে”।