পরিসংখ্যান

ম্যাচ: ২৪ | জয়: ২ | পরাজয়: ১৫ | ড্র: ৭ | পয়েন্ট: ১৩ | গোল করেছে: ১২ | গোল হজম করেছে: ৪৩

আই-লিগ ২০২৩-২৪ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে ইন্ডিয়ান সুপার লিগে (আইএসএল) খেলার যোগ্যতা অর্জন করা দ্বিতীয় দল এই মহমেডান স্পোর্টিং ক্লাব। কলকাতার তৃতীয় দল হিসেবে তাদের আইএসএলে অন্তর্ভুক্তি লিগের আকর্ষণকে আরও বাড়িয়ে তুললেও শেষ পর্যন্ত প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি তারা। আশা করা যায়, প্রথমবার খেলার পর তারা বুঝে নিয়েছে আইএসএলের মতো উঁচু মানের লিগে টিকে থাকতে হলে তাদের আগামী মরশুমে কী করতে হবে।

লিগ পর্বে পয়েন্ট তালিকার সর্বনিম্ন স্থানে থেকে মরশুম শেষ করে মহমেডান। নতুন বছরে তারা উন্নতির কিছু লক্ষণ দেখিয়েছিল ঠিকই, টানা চার ম্যাচ অপরাজিত থেকে একটিতে জয়লাভ করেছিল। কিন্তু টানা পাঁচটি হারের ফলে তাদের গতি ফের কমে যায় এবং এই সময়ে হেড কোচ আন্দ্রে চেরনিশভ দায়িত্ব ছেড়ে চলে যান। অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান কোচ মেহরাজউদ্দিন ওয়াডু দায়িত্ব নেওয়ার পর বাকি মরশুম তাদের একেবারেই ভাল কাটেনি।

ইতিবাচক দিক

নানান চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলেও হতাশাজনক মরশুমে কিছু ইতিবাচক দিকও ছিল মহমেডান এসসি-র। লিগে সপ্তম সর্বোচ্চ (পাঁচটি) ক্লিন শিট অর্জন করে তারা। তাদের অন্যতম স্মরণীয় জয় আসে বেঙ্গালুরু এফসির বিরুদ্ধে শ্রী কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে, যেখানে আন্ডারডগ হিসেবে নেমে কোনও গোল হজম না করে ম্যাচ জিতে সবাইকে চমকে দেয়। এই পারফরম্যান্স তাদের ক্ষমতাকে তুলে ধরে।

নেতিবাচক দিক

এ মরশুমে মহমেডান এসসির সবচেয়ে বড় সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি ছিল আক্রমণ বিভাগের চরম ব্যর্থতা। তারা লিগের সর্বনিম্ন গোলসংখ্যা নিয়ে মরশুম শেষ করে। কারণ, তাদের ফরোয়ার্ডরা গোলের সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়। যার ফলে তাদের গোল করা বিরল ঘটনা হয়ে দাঁড়ায়। আক্রমণের এই কার্যকারিতার অভাবেরই মূল্য চোকাতে হয় দলকে। কারণ, প্রতিটি ম্যাচেই যথেষ্ট লড়াই করে এবং ভক্তদের হতাশ করে। গোল করতে না পারার কারণে শুধু দলের মনোবলই ভেঙে পড়েনি বরং রক্ষণ বিভাগের ওপরও প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হয়, যা আগেই দুর্বল ছিল।

মহমেডান এসসি-র রক্ষণ বিভাগও কঠিন সময় পেরিয়েছে। লিগে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোল হজম করে তারা। যদিও কিছু ক্লিন শিট সাময়িক স্বস্তি দিয়েছিল, তবে রক্ষণভাগ প্রায়শই বেশ ভঙ্গুর ছিল। মরশুম যত এগোয়, আশার আলো ততটাই ম্লান হয়। প্রতিপক্ষ দলগুলো নিয়মিতভাবে তাদের রক্ষণের দুর্বলতা কাজে লাগায়।

ঘরের মাঠেও তাদের সমস্যা আরও প্রকট হয়ে ওঠে। মহমেডান এসসি মরশুম শেষ করে লিগের সবচেয়ে খারাপ হোম রেকর্ড নিয়ে, যেখানে তারা একটিও ম্যাচ জিততে পারেনি। হোম অ্যাডভান্টেজের অভাব শুধু খেলোয়াড়দের জন্য নয়, সেইসব সমর্থকদেরও হতাশ করে তোলে, যারা অনেক প্রত্যাশা নিয়ে নিয়মিত মাঠে হাজির ছিলেন।

তাদের অ্যাওয়ে পারফরম্যান্সও সে ভাবে আশার আলো দেখায়নি। কারণ, মাত্র দুটি জয় আদায় করতে পারে তারা এবং সর্বনিম্ন অ্যাওয়ে জয়ের নজিরও গড়ে। প্রতিদ্বন্দিতাপূর্ণ লিগে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য এই ব্যর্থতা তাদের কাছে আরও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠে।

সেরা খেলোয়াড়: মির্জালল কাসিমভ

মহমেডান এসসির মিডফিল্ডার মির্জালল কাসিমভ পুরো মরশুম জুড়ে ক্লাবের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় ছিলেন। বক্স-টু-বক্স মিডফিল্ডার হিসেবে খেলতে গিয়ে তিনি রক্ষণ ও আক্রমণ— দুই ভূমিকাতেই দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন, যা দলকেও স্থিতিশীলতা এনে দেয়। পুরো মরশুমে ১৫৫৫ মিনিট মাঠে থেকে দু’টি গোল করেন তিনি। এ ছাড়াও, কাসিমভ দলের হয়ে সবচেয়ে বেশি ট্যাকল করেছেন, যা তাঁকে দলের অন্যতম কার্যকর খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।

সেরা তরুণ খেলোয়াড়: লালরেমসাঙ্গা ফানাই

উইঙ্গার লালরেমসাঙ্গা ফানাই মহমেডান এসসির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং মরশুমে দুটি গোল করেছেন। তাঁর গতি এবং আক্রমণাত্মক দৌড় দলের আক্রমণভাগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। যদিও সুযোগ কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হন তিনি। তবে মাঝে মাঝে অসাধারণ দক্ষতা প্রদর্শন করেন ফানাই। বিশেষ করে, তাঁর করা গোলই মহমেডান এসসিকে তাদের প্রথম আইএসএল জয় এনে দেয় চেন্নাইন এফসির বিপক্ষে। মিজোরাম-জাত উইঙ্গারটি রক্ষণেও অবদান রাখেন। মাঝে মাঝে নেমে এসে ডিফেন্সকে সহায়তা করেন এবং দলের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ান।

পরবর্তী মরশুমে কী প্রয়োজন?

মহমেডান এসসিকে পরবর্তী মরশুমের জন্য তাদের কৌশল পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে এবং একটি শক্তিশালী স্কোয়াড গঠন করতে হবে, যা আইএসএলের স্তরে ভাল কিছু করতে সক্ষম হবে। তাদের অভিষেক আইএসএল মরশুম চ্যালেঞ্জিং হওয়ারই কথা ছিল। তবে যেহেতু এখন তাদের ভারতীয় এবং বিদেশি খেলোয়াড়দের লিগের অভিজ্ঞতা হয়েছে, যা ধারাবাহিকতা আনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে।

তাদের আক্রমণভাগের সমস্যা সমাধানকে সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কারণ, তারা লিগের সর্বনিম্ন গোলসংখ্যা নিয়ে মরশুম শেষ করেছে। দলটি নিয়মিতভাবে সুযোগ তৈরি করলেও, ফিনিশিংয়ের দক্ষতা বাড়াতে এবং আক্রমণভাগের কার্যকারিতা আরও বাড়াতে দক্ষ ও শক্তিশালী খেলোয়াড়দের অন্তর্ভুক্তি অপরিহার্য।

রক্ষণভাগের ক্ষেত্রেও মহমেডান এসসি বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। কারণ, তারা হায়দরাবাদ এফসির পর লিগে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোল হজম করেছে। রক্ষণকে শক্তিশালী করতে নতুন, দক্ষ ডিফেন্ডার অন্তর্ভুক্ত করা গুরুত্বপূর্ণ। যাতে দল আরও সংগঠিত ও শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে।