ইস্পাতনগরীর দলের বিরুদ্ধে বরাবরই কড়া চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। এ বারেও যে ব্যাপারটা সে রকমই হতে চলেছে, এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তবে টানা পাঁচ ম্যাচে অপরাজিত জামশেদপুরের বিরুদ্ধে ফিরতি লেগে জয়ের একটা জোরালো তাগিদ রয়েছে সবুজ-মেরুন শিবিরের। এই ম্যাচ জিতলে লিগ টেবলের দু’নম্বরে উঠতে পারে তারা। এর চেয়ে বড় প্রেরণা আর কীই বা হতে পারে?

গত ম্যাচে ওডিশা এফসি-র বিরুদ্ধেও এই সুযোগটাই ছিল তাদের সামনে। কিন্তু সেই ম্যাচ থেকে তিন পয়েন্ট অর্জন করতে না পারায় তিন নম্বরেই রয়ে যেতে হয় মোহনবাগানকে। কিন্তু বুধবার এফসি গোয়া ও মুম্বই সিটি এফসি-র মধ্যে ম্যাচ ড্র হওয়ায় ও বৃহস্পতিবার ওডিশা এফসি জিতে যাওয়ায় দ্বিতীয় স্থানে ওঠার সুযোগ চলে এসেছে আন্তোনিও লোপেজ হাবাসের দলের বিরুদ্ধে। জামশেদপুরের কাছে এটি ছ’নম্বর জায়গা ধরে রাখার ম্যাচ। ইস্টবেঙ্গল এফসি হেরে যাওয়ায় তারা কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেও নর্থইস্ট ইউনাইটেড কিন্তু তাদের ঘাড়ে এখনও নিঃশ্বাস ফেলছে।

দুই দলই গত পাঁচটি ম্যাচে অপরাজিত। নতুন বছর শুরু হওয়ার পর কোনও পক্ষকেই হারের মুখ দেখতে হয়নি। দুই প্রতিবেশী রাজ্যের দলই এ বছর আইএসএলে পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে তিনটি করে জয় পেয়েছে। কিন্তু পয়েন্টের ফারাকটা দুই দলের মধ্যে অনেকটাই। মোহনবাগান এসজি যেখানে ১৫ ম্যাচে ৩০ পয়েন্ট পেয়ে তিন নম্বরে, সেখানে জামশেদপুর ১৭ ম্যাচে ২০ পয়েন্ট নিয়ে ছয়ে। কিন্তু এখন আর এই দূরত্বটা বোধহয় খুব একটা বড় ফ্যাক্টর নয়।

বছরের শুরুতে কলকাতা ডার্বির পর সাতদিনের ব্যবধানে তিনটি ম্যাচ খেলতে হয় মোহনবাগানকে। সে জন্য ঘুরিয়ে ফিরিয়ে অনেককে খেলান তাদের নতুন কোচ হাবাস। শেষ দুটি ম্যাচেই চার-পাঁচটি করে পরিবর্তন করে প্রথম এগারো সাজান তিনি। এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে চারটি পরিবর্তন করে প্রথম এগারো নামিয়েছিলেন। নর্থইস্টের বিরুদ্ধেও চারটি পরিবর্তন করে প্রথম এগারো নামান হাবাস।

ওডিশার বিরুদ্ধে অবশ্য পূর্ণশক্তির দল নিয়েই নেমেছিল হাবাস-বাহিনী। তবে সেই ম্যাচে দুই কোচই এতটাই কৌশলী ফুটবল খেলে যে, মাঠের খেলাটা ততটা উপভোগ্য হয়ে ওঠেনি। দু’পক্ষ যে ভাবে একে অপরকে ফাইনাল থার্ডে প্রবেশ করা থেকে বিরত রাখায় বেশি মনোনিবেশ করে, তাতে দর্শনীয় ফুটবল হয়নি। একাধিক গোলের সুযোগ তৈরি করেও তা কাজে লাগাতে পারেনি মোহনবাগান। ওডিশাকেও কোনও বাড়তি ঝুঁকি নিতে দেখা যায়নি সে দিন।

কিন্তু শুক্রবার যুবভারতীতে সে রকম ফুটবল হবে বলে মনে হয় না। তীব্র আক্রমণাত্মক ফুটবলই নিশ্চয়ই হবে, যেমন হয়েছিল জামশেদপুরের মাঠে। সে দিন এক গোলে পিছিয়ে থেকেও শেষে ৩-২-এ জিতে লিগ টেবলের শীর্ষে উঠে পড়ে সবুজ-মেরুন বাহিনী। তরুণ ফরোয়ার্ড শনন খানের গোলে ছ’মিনিটেই এগিয়ে যায় জামশেদপুর। ২৯ মিনিটে সমতা আনেন আরমান্দো সাদিকু ও ৪৮ মিনিটের মাথায় দলকে এগিয়ে দেন লিস্টন কোলাসো। ম্যাচের শেষ দিকে ব্যবধান বাড়ান কিয়ান নাসিরি। পেনাল্টি থেকে গোল করে ব্যবধান কমান স্টিভ আম্বরি। কিন্তু মোহনবাগান রক্ষণের দুর্ভেদ্য দেওয়ালে আর চিড় ধরাতে পারেনি জামশেদপুর।

ফিরতি ম্যাচেও এ রকমই লড়াকু ফুটবল দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা যথেষ্ট। দিমিত্রিয়স পেট্রাটস (৬), জেসন কামিংস (৬) ও আরমান্দো সাদিকু (৪) তাদের মোট গোলের অর্ধেকের বেশি করলেও সবুজ-মেরুন শিবিরে আরও দশজন স্কোরার আছে। তবে অ্যাসিস্টের দিক থেকে এগিয়ে আছেন অনেকেই। সহাল আব্দুল সামাদ ইতিমধ্যেই চারটি গোলে অ্যাসিস্ট করেছেন। মনবীর, লিস্টন কোলাসোরা তিনটি করে অ্যাসিস্ট করেছেন। নর্থইস্টের বিরুদ্ধে একাই তিনটি গোলে অ্যাসিস্ট করেন জনি কাউকো। কোনও পক্ষেরই গোল করার লোকের অভাব নেই।

গোল করার ব্যাপারে জামশেদপুরও খুব একটা পিছিয়ে নেই। ১৭ ম্যাচে ২৩টি গোল করেছে তারা। যার মধ্যে প্রায় অর্ধেকই ড্যানিয়েল চিমা (৬) ও জেরেমি মানজোরোর (৫)। গত টানা পাঁচটি ম্যাচে হারেনি জামশেদপুর এফসি। দু’টি অ্যাওয়ে ম্যাচে জিতেছে তারা। তার মধ্যে আবার একটি মুম্বই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে। সেই ম্যাচে ৩-২-এ জেতার পর পাঞ্জাব এফসি-কেও তারা হারিয়ে আসে ৪-০-য়। এর মধ্যে বেঙ্গালুরু এফসি ও নর্থইস্ট ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে ড্র হয়। দুই ম্যাচেরই ফল হয় ১-১। ইস্টবেঙ্গলকেও নিজেদের মাঠে হারায় ২-১-এ। অর্থাৎ, গত পাঁচটি ম্যাচে তারা ১১ গোল দিয়ে পাঁচ গোল খেয়েছে।

তাদের রক্ষণ যেমন শক্তিশালী, উইং প্লে-তেও তারা যথেষ্ট গতিময়। তাদের অ্যাটাকাররাও নিয়মিত গোল পাচ্ছেন। পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে জেরেমি মানজোরো জোড়া গোল করেন। ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধেও শেষ মুহূর্তে গোল করে দলকে নাটকীয় জয় এনে দেন তিনি। তরুণ ফরোয়ার্ড মহম্মদ শনন এ পর্যন্ত দু’গোল করেছেন। সবচেয়ে বেশি ছ’গোল করেছেন ড্যানিয়েল চিমা, যিনি একসময় ইস্টবেঙ্গেলেই খেলতেন।

মানজোরো পাঁচটি গোল দিয়েছেন। জাপানি মিডফিল্ডার রেই তাচিকাওয়ার ঝুলিতে রয়েছে তিনটি গোল। এমনকী সদ্য লাল-হলুদ শিবির ছেড়ে জামশেদপুরে যাওয়া হাভিয়ে সিভেরিও-ও তাঁর নতুন দলের হয়ে দু’টি ম্যাচ খেলে একটি গোল পেয়েছেন। সব মিলিয়ে ন’জন স্কোরার জামশেদপুরের। তাই গোল করার ব্যাপারে তারাও পিছিয়ে থাকবে না। তবে লিগের অন্যতম সেরা আক্রমণ বিভাগকে কী ভাবে সামলাবেন লালদিনপুইয়া, প্রভাত লাকরা, প্রতীক চৌধুরিরা সেটাই দেখার।

গোলকিপার টিপি রেহনেশ ভাল ফর্মে রয়েছেন। এ পর্যন্ত ১৬টি ম্যাচের মধ্যে পাঁচটিতে ক্লিন শিট রাখতে পেরেছেন তিনি, ৪৫টি সেভ করেছেন। তবে গত ম্যাচে সবুজ-মেরুন আক্রমণ সে ভাবে সামলাতে পারেনি তারা। সেই ম্যাচ থেকে শিক্ষা নিয়ে এই ম্যাচে তারা কী করেন, সেটাই দেখার।

পরিসংখ্যান বলছে

আইএসএএলের ইতিহাসে প্রথম লিগ ডাবলের লক্ষ্য নিয়ে নামবে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। প্রথম লেগে জামশেদপুরের বিরুদ্ধে জিতেছে তারা। শুক্রবারও জিতলে তা হবে তাদের প্রথম লিগ ডাবল। জামশেদপুরের বিরুদ্ধে গত তিনটি ম্যাচে অপরাজিত রয়েছে তারা। দু’টিতে জয় ও একটি ড্র। তবে ইস্পাতনগরীর দলের বিরুদ্ধে কখনও টানা জয় পায়নি সবুজ-মেরুন বাহিনী। চলতি লিগে মোহনবাগানের গোলদাতারা ২৪টি গোল করেছেন বক্সের ভিতর থেকে। ওডিশা এফসি ছাড়া বক্সের ভিতর থেকে এতগুলি গোল করার নজির আর কোনও দলের নেই। দুই দলের মুখোমুখিতে সবচেয়ে বেশি, তিনটি গোলে অ্যাসিস্ট করেছেন মনবীর সিং।

জামশেদপুর গত পাঁচটি ম্যাচেই অপরাজিত রয়েছে। চলতি লিগে নতুন বছরে তারা এখন পর্যন্ত কোনও ম্যাচে হারেনি। ২০২১-২২-এ তারা টানা সাতটি ম্যাচে জয় পেয়ে লিগশিল্ড চ্যাম্পিয়ন হয়। সেটিই এখন পর্যন্ত তাদের সবচেয়ে ধারাবাহিক পারফরম্যান্স। চলতি লিগে সেটপিস থেকে তারা এ পর্যন্ত চারটি গোল করেছে, যা এই লিগে সর্বোচ্চ। তাদের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার ড্যানিয়েল চিমা মোহনবাগানের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ছ’টি ম্যাচ খেলেছেন। কিন্তু একটিতেও গোল করতে পারেননি। আইএসএলে কলকাতার কোনও দলের বিরুদ্ধেই তিনি গোল করতে পারেননি।

দ্বৈরথের ইতিহাস

ইন্ডিয়ান সুপার লিগে দুই দল মুখোমুখি হয়েছে সাতবার। তিনটিতে জিতেছে কলকাতার দল। তিনটিতে জামশেদপুর এফসি। একটি ম্যাচ ড্র হয়েছে। গত মরশুমের আইএসএলেই সবুজ-মেরুন বাহিনী প্রথম ম্যাচে ইস্পাতনগরীর দলকে ১-০-য় হারায়। ফিরতি লিগের ম্যাচ গোলশূন্য ড্র হয়। ২০২১-২২ মরশুমে জামশেদপুর দুই ম্যাচেই জেতে, প্রথমে ২-১-এ ও পরে ১-০-য়। তার আগের মরশুমে দুই দলই একবার করে জেতে। প্রথমে জামশেদপুর এফসি ২-১-এ ও পরে মোহনবাগান ১-০-য়। দুই দলের মধ্যে ম্যাচে দু’পক্ষই সাতটি করে গোল করেছে।

ম্যাচ- মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট বনাম জামশেদপুর এফসি

ভেনু- বিবেকানন্দ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন, কলকাতা

সময়- ০১ মার্চ, ২০২৪, সন্ধ্যা ৭.৩০

সরাসরি সম্প্রচার ও স্ট্রিমিং

টিভি চ্যানেল: ডিডি বাংলা ও কালার্স বাংলা সিনেমা- বাংলা, স্পোর্টস ১৮ খেল- হিন্দি, স্পোর্টস ১৮ ১ এসডি ও এইচডি- ইংলিশ, ভিএইচ ১ এসডি ও এইচডি- ইংলিশ

অ্যাপ: জিও সিনেমা ও ওয়ানফুটবল