ইন্ডিয়ান সুপার লিগে ৫০ ম্যাচ খেলা স্কটিশ ফরোয়ার্ড ও উইঙ্গার গ্রেগ স্টুয়ার্ট যোগ দিলেন মোহনবাগান সুপার জায়ান্টে। শুক্রবার ক্লাবের পক্ষ থেকে সরকারি ভাবে এই খবর জানানো হয়। তিনি সবুজ-মেরুন শিবিরে যোগ দেওয়ায় তাদের নতুন স্প্যানিশ কোচ হোসে মলিনার একজন অ্যটাকিং মিডফিল্ডার-ফরোয়ার্ডের অভাব পূরণ হবে বলে মনে করে ক্লাব কর্তৃপক্ষ।

এর আগে আইএসএলে দু’টি ক্লাবের লিগশিল্ড জয়ে অভিজ্ঞ স্কটিশ তারকা স্টুয়ার্টের গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল। ২০২১-২২ মরশুমে গোল্ডেন বল জেতেন তিনি। পাসিং, গোলের সুযোগ তৈরি ও গোল করা, সব দিক থেকেই পারদর্শী এই ফুটবলার মোহনবাগান শিবিরে যোগ দেওয়ায় দলের আক্রমণের শক্তি বাড়তে পারে। এর আগে জনি কাউকো যে ভূমিকা পালন করতেন, ঠিক সেই ভূমিকা না হলেও তাঁর চেয়েও কার্যকরী হয়ে উঠতে পারেন এই স্টুয়ার্ট। ভাল ফর্মে থাকলে মোহনবাগান আক্রমণে স্টুয়ার্টের সঙ্গে দিমিত্রিয়স পেট্রাটস ও জেসন কামিংসের এক মারাত্মক ত্রিভূজ তৈরি হয়ে উঠতে পারে। তাঁকে কী ভাবে দলের কাজে লাগাবেন কোচ, সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

স্কটল্যান্ডের ডান্ডি এফসি, আবেরদিন এফসি, রেঞ্জার্স এফসি ও ইংল্যান্ডের বার্মিংহাম সিটি-র মতো নামী ক্লাবের হয়ে খেলার পর ২০২১-এর সেপ্টেম্বরে জামশেদপুর এফসি-তে যোগ দেন স্টুয়ার্ট। পরের বছর তিনি যোগ দেন মুম্বই সিটি এফসি-তে। এ বছর জানুয়ারিতে মুম্বই সিটি এফসি তাঁকে অব্যহতি দিলে স্কটল্যান্ডের কিলমার্নক এফসি-তে সই করেন ৩৪ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড। এ বার তিনি আগামী মরশুমের জন্য চুক্তিবদ্ধ হলেন আইএসএল ২০২৩-২৪-এ লিগশিল্ডজয়ীদের দলে।

আইএসএলে প্রথম বছরে জাশেদপুরের হয়ে ২১টি ম্যাচ খেলে ১১টি গোল করেন স্টুয়ার্ট ও দশটি গোলে অ্যাসিস্ট করেন। পরের বছর মুম্বই শিবিরে যোগ দিয়ে ২০ ম্যাচে আটটি গোল ও আটটি অ্যাসিস্ট করেন তিনি। তবে গত মরশুমে সেরা ফর্মে ছিলেন না তিনি। ন’টি ম্যাচে দু’টি গোল ও তিনটি অ্যাসিস্ট করেন তিনি। সে জন্যই মরশুমের মাঝখানেই তাঁকে অব্যহতি দেয় মুম্বই সিটি এফসি। তবে স্কটিশ ক্লাব ফুটবলে ফিরে গিয়ে ১১টি ম্যাচ খেললেও গোলে ফিরতে পারেননি তিনি। আইএসএলে ফিরে এসে ফর্মে ফিরতে পারেন কি না তিনি, সেটাই দেখার।

গত বছর ডিসেম্বরে মুম্বই ফুটবল এরিনায় প্রথমে গোল করে ও পরে অ্যাসিস্ট করে মোহনবাগান এসজি-কে ২-১-এ হারানো স্টুয়ার্ট এ বার সবুজ-মেরুন শিবিরে যোগ দিয়ে ক্লাব মিডিয়াকে বলেন, “ভারতীয় ফুটবলের মক্কা কলকাতায় খেলার স্বপ্ন ছিল। ভারতের সব ফুটবল স্টেডিয়ামের পরিবেশই আমার চেনা। তবে মোহনবাগানের মতো ঐতিহ্যবাহী ও ভারতসেরা ক্লাবের জার্সি গায়ে মাঠে নামার রোমাঞ্চই আলাদা। ক্লাব ম্যানেজমেন্ট আমাকে সেই সুযোগ দেওয়ায় তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। ক্লাবের প্রতি সবুজ-মেরুন সমর্থকদের আবেগ ও ভালবাসা আমি দেখেছি। তারাই ভারতের সেরা। নিজের সেরাটা দিয়ে এ দেশের দুটি ক্লাবকে চ্যাম্পিয়ন করেছি। এ বার লক্ষ্য মোহনবাগান সুপার জায়ান্টকে ফের চ্যাম্পিয়ন করা ও সমর্থকদের মুখে ফের হাসি ফোটানো। আমি জানি ভারতের আর অন্য ক্লাবে খেলে এই স্বাদ পাওয়া যাবে না”।

ভারতীয় ক্লাব ফুটবলের সেরা লড়াই কলকাতা ডার্বিতে খেলার জন্যও খুবই আগ্রহী স্টুয়ার্ট। ডার্বি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে কলকাতা ডার্বি খেলার প্রবল ইচ্ছাও আমার মোহনবাগান এসজি-তে সই করার একটা বড় কারণ। এশিয়ার অন্যতম সেরা এই কলকাতা ডার্বি। এই ম্যাচে মাঠে নামার স্বপ্নও দেখি আমি। ভারতে অনেক কঠিন ম্যাচে জিতেছি। কিন্তু এই ডার্বি জেতার স্বাদ পাইনি। সে কথাও মাথায় থাকবে আমার”।

সম্প্রতি অভিজ্ঞ মিডফিল্ডার জনি কাউকোকে বিদায় জানায় মোহনবাগান এসজি। এই ঘাটতি তারা কী ভাবে পূরণ করবে, তা নিয়ে অনেক জল্পনা হয়েছে এত দিন ধরে। মাঝমাঠ সামলানোর জন্য গত মাসে সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার লালেংমাউইয়া রালতেকে সই করায় মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। ভারতীয় ফুটবলে যিনি পরিচিত আপুইয়া নামে, সেই ২৩ বছর বয়সী ভারতীয় দলের অন্যতম নির্ভরযোগ্য ফুটবলার পাঁচ বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। কিন্তু আপুইয়ার সঙ্গী বিদেশী মিডফিল্ডার কে হতে চলেছেন, সেই প্রশ্ন ছিলই। এতদিনে সেই প্রশ্নের উত্তর পেলেন সমর্থকেরা।

সম্প্রতি আর এক স্কটিশ ফুটবলার ডিফেন্ডার টম অ্যালড্রেডকেও সই করিয়েছে গতবারের লিগশিল্ডজয়ীরা। এ ছাড়াও স্পেনের দীর্ঘদেহী সেন্টার ব্যাক আলবার্তো রড্রিগেজের সঙ্গে চুক্তিও পাকা করে ফেলেছে তারা। পেট্রাটস ও কামিংস তো আছেনই। দলের ছ’নম্বর বিদেশী ফুটবলারটি কে হবেন, এ বার সেই ঘোষণার অপেক্ষায় রয়েছেন সমর্থকেরা। ক্লাবের পক্ষ থেকে এ দিন জানানো হয়, প্রায় পুরো দল নিয়ে আগামী ২৯ জুলাই প্রাক মরশুম প্রস্তুতি শুরু করবেন নয়া কোচ মলিনা।