কত দিন মাঠের বাইরে আনোয়ার আলি! ধন্দে মোহনবাগান এস জি কোচ হুয়ান ফেরান্দো
আনোয়ার মাস খানেকও খেলতে না পারলে আগামী মাসে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে তাঁর ভারতের হয়ে মাঠে নামাও কঠিন হয়ে উঠতে পারে। আগামী ১৬ ও ২২ নভেম্বর ভারতীয় দলের ম্যাচ রয়েছে কুয়েত ও কাতারের বিরুদ্ধে। এই দুই ম্যাচে নামাও আনোয়ারের পক্ষে সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েই যাচ্ছে।

এএফসি কাপের ম্যাচে পায়ে চোট পাওয়ার ফলে তাঁদের নির্ভরযোগ্য সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার আনোয়ার আলিকে যে একাধিক সপ্তাহের জন্য মাঠের বাইরে থাকতেই হবে, তা জানিয়ে মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের কোচ হুয়ান ফেরান্দো জানিয়ে দিলেন, চোট কতটা গুরুতর, তার ওপর নির্ভর করছে, এখন কত দিন বা কত মাস তাঁকে মাঠের বাইরে থাকতে হবে।
গত মঙ্গলবার ভুবনেশ্বরে বসুন্ধরা কিংসের বিরুদ্ধে ম্যাচে পায়ে চোট পান আনোয়ার আলি। যার ফলে তাঁকে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যেতে হয়। পরে জানা যায়, তাঁর চোট গুরুতর হতে পারে এবং আশঙ্কা করা হয়, পায়ের এই চোট গুরুতর হলে হয়তো আগামী অন্তত এক মাস মাঠে ফেরা হবে না তাঁর।
সোমবার কলকাতায় সাংবাদিক বৈঠকে মোহনবাগান কোচ ফেরান্দো জানিয়ে দেন, “এখনই আমাদের পক্ষে বলা অসম্ভব আনোয়ারকে ঠিক কত দিনের জন্য মাঠের বাইরে থাকতে হবে। এক মাসও হতে পারে আবার দু’মাসও হতে পারে। চোটের জায়গাটা খুবই ফুলে গিয়েছে। ফোলা কিছুটা কমলে স্ক্যান করা হবে। তার পরে চোটের সঠিক অবস্থাটা বোঝা যাবে। এখনই সঠিক ভাবে কিছু বলতে পারছি না”।
আনোয়ার মাস খানেকও খেলতে না পারলে আগামী মাসে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে তাঁর ভারতের হয়ে মাঠে নামাও কঠিন হয়ে উঠতে পারে। আগামী ১৬ ও ২২ নভেম্বর ভারতীয় দলের ম্যাচ রয়েছে কুয়েত ও কাতারের বিরুদ্ধে। এই দুই ম্যাচে নামাও আনোয়ারের পক্ষে সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েই যাচ্ছে।
তবে আনোয়ার না খেলতে পারলেও তাঁর দলে বড় কোনও সমস্যা হবে বলে মনে করেন না ফেরান্দো। তিনি দাবি করেন, আনোয়ারের বিকল্প খেলোয়াড় তাঁর হাতে রয়েছে। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “পরের ম্যাচগুলোতে আনোয়ারকে না পেলেও আমি খুব একটা চিন্তিত নই। দলে এমন খেলোয়াড় আছে যারা ওর জায়গায় খেলতে পারে। (দীপক) টাঙরি, সুমিত (রাঠি) রয়েছে। দীর্ঘ মরশুমে এমন হতেই পারে। যেমন আশিক (কুরুনিয়ান), আনোয়ারদের হল। তাই বিকল্প খেলোয়াড়দের তৈরি রাখতেই হয়”।
বসুন্ধরার বিরুদ্ধে দু’বার এগিয়ে গিয়েও শেষ পর্যন্ত ২-২ ড্র করে পয়েন্ট খোয়াতে হয় এএফসি কাপের গ্রুপ ডি-র শীর্ষে থাকা মোহনবাগানকে। এই ম্যাচের ৯২ মিনিটের মাথায় গোড়ালিতে চোট পেয়ে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যান আনোয়ার। পরে তাঁর গোড়ালিতে চড়া ব্যান্ডেজ করে স্টেডিয়াম ছাড়তে দেখা যায়।
আনোয়ারের চোট গুরুতর হলে মোহনবাগান কোচের করণীয় একটাই, আনোয়ারের জায়গায় একজন বিকল্প ডিফেন্ডারকে মোতায়েন করা, যে আনোয়ারের মতো না হোক, কাছাকাছি স্তরে গিয়ে ভাল খেলতে পারবে। কে হতে পারেন সেই সেন্টারব্যাক, জিজ্ঞাসা করায় ফেরান্দো বলেন, “এএফসি কাপের ম্যাচে (লালরিনলিয়ানা) হ্নামতেকে আমরা সেন্টারব্যাক হিসেবে খেলিয়েছি। চেন্নাইনের বিরুদ্ধে শেষ কুড়ি মিনিট টাঙরি ওই জায়গায় খেলেছে। সুমিতও জাতীয় দলের হয়ে খেলে এসেছে। তাই আমাদের কোনও সমস্যা হবে বলে মনে হয় না। এই তিনজনই মাঠে নামার জন্য তৈরি। তবে টাঙরির অস্ত্রোপচার হওয়ার পর ছ’মাস ধরে সেরে ওঠার প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে এসেছে। ওকে হয়তো আরও একটু সময় দিতে হবে। কিন্তু বাকিরা তৈরিই আছে”।
আইএসএলে মোহনবাগান শেষ ম্যাচ খেলেছে ৭ অক্টোবর, চেন্নাইনের বিরুদ্ধে। তার ১৭ দিন পরে তাদের এএফসি কাপের ম্যাচ ছিল বসুন্ধরা কিংসের বিরুদ্ধে। সেই ম্যাচের পরে বুধবার তারা মাঠে নামবে আইএসএলের চতুর্থ ম্যাচ খেলতে, জামশেদপুর এফসি-র বিরুদ্ধে। তিন ম্যাচে ৯ পয়েন্ট নিয়ে মোহনবাগান এসজি যেখানে তিন নম্বরে, সেখানে পাঁচ ম্যাচে পাঁচ পয়েন্ট পেয়ে জামশেদপুরের অবস্থান লিগ টেবলের সাত নম্বরে।
তার আগে দীর্ঘ বিশ্রাম পাওয়ায় দলের ফুটবলারদের উপকারই হয়েছে বলে জানান ফেরান্দো। বলেন, “লম্বা ছুটি পেয়ে আমাদের সবারই ভাল হয়েছে। ম্যাচের প্রস্তুতির জন্য অনেকটা সময় পেয়ে গিয়েছি আমরা। যদিও জাতীয় দলের হয়ে খেলা ফুটবলারদের সেই প্রস্তুতিতে আমরা সঙ্গে পাইনি। তবে এটাই পরিস্থিতি। এখন আমাদের ম্যাচে ফোকাস করতে হবে”।
ইস্পাতনগরীর দলকে নিয়ে স্প্যানিশ কোচ বলেন, “আক্রমণে ও রক্ষণে ওদের পরিকল্পনা খুবই স্পষ্ট। সেটপিসে ওরা গোল পেয়েছে ঠিকই। কিন্তু ওরা প্রচুর গোলের সুযোগ তৈরিও করে। আক্রমণও তৈরি করে। সেকেন্ড বলের জন্য লড়াই করে। আমার মনে হয়, ম্যাচটা কঠিন হতে চলেছে। কারণ, ওরা খুব আগ্রাসী ও সঙ্ঘবদ্ধ ফুটবল খেলে। তা ছাড়া অ্যাওয়ে ম্যাচে খেলাও কঠিন। আমাদের স্মার্ট ফুটবল খেলতে হবে। খেলার নিয়ন্ত্রণ নিজেদের কাছে রাখার চেষ্টা করতে হবে। জায়গা তৈরি করে খেলতে হবে”।
আন্তর্জাতিক ক্যালেন্ডারের জন্য বারবার ইন্ডিয়ান সুপার লিগ ব্যহত হওয়ায় কিছুটা হতাশ হলেও তার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন বলে জানান সবুজ-মেরুন কোচ। বলেন, “বারবার লিগ ব্যহত হওয়াটা আমার পছন্দ নয় ঠিকই। তবে এটা আমাদের হাতে নেই। আমার হাতে থাকলে হয়তো এই নিয়ে মাথা ঘামাতাম। কিন্তু আন্তর্জাতিক ম্যাচ, এএফসি কাপ ম্যাচ থাকলে কিছু করার নেই। বরং প্রস্তুতির জন্য আরও একটু সুবিধা পাওয়া যায়। তবে এতে খেলোয়াড়দের মোটিভেশনের কোনও সমস্যা হয় না। আমরা সবাই পেশাদার। লম্বা ছুটির পর ফের রুটিনে ফিরে যেতে অবশ্য কিছুটা সমস্যা হয়। তবে আমরা রুটিনেই থাকি। কারণ, আমাদের মাঠে থাকতেই বেশি ভাল লাগে”।
সপ্তাহ খানেক আগেই বসুন্ধরার বিরুদ্ধে ম্যাচে দু’গোল খাওয়ায় মোহনবাগানের রক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও কোচের সেই নিয়ে তেমন হেলদোল নেই। বলেন, “বসুন্ধরা ম্যাচে বেশি হতাশ হয়েছি আমার গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়ের চোট হয়ে যাওয়ায়। আসলে ম্যাচের মাধঝখানে কেউ চোট পেলে অসুবিধা হয়ে যায়। কিন্তু আমাদের দলে বিকল্প খেলোয়াড় অনেকেই আছে। তাই রক্ষণ নিয়ে খুব একটা চিন্তায় নেই আমি”।
দলের সিস্টেম, ফর্মেশন নিয়েও বেশি মাথা ঘামাতে বারণ করছেন তিনি। বলেন, “সিস্টেমের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল আক্রমণের জন্য জায়গা তৈরি করতে পারার দক্ষতা। আমরা ৩-৫-২-এ খেলছি, না অন্য কোনও ফর্মেশনে খেলছি, সেটা বড় ব্যাপার নয়। আক্রমণের নিয়ম বা রক্ষণের নিয়ম একই থাকে। আমি চাই দলের ফুটবলাররা এই নিয়ম ভাল করে মেনে চলুক। ফর্মেশন নির্ভর করে প্রতিপক্ষ কেমন খেলছে, ম্যাচের পরিস্থিতি কেমন, তার ওপর। সময় অনুযায়ী তাতে পরিবর্তনও হয়”।
বসুন্ধরার বিরুদ্ধে ম্যাচে তাঁদের ভুলগুলি নিয়ে গতবারের আইএসএল নক আউট চ্যাম্পিয়ন বলেন, “আমরা যেমন কিছু কিছু সময়ে ভাল খেলেছি, তেমনই আক্রমণে ওঠা ও তার পরে নামায় সমস্যা ছিল। তবে আমাদের ভুলগুলো সংশোধন করার জন্য কাজ করে যেতে হবে। পুরো দলকেই সেটা করতে হবে। ৭-৮ মাসের মরশুমে একই ভাবে কাজ করে যেতে হয়। কখনও সাফল্য আসে, কখনও আসে না। তবে বর্তমান নিয়ে ভাবতেই আমি বেশি পছন্দ করি। এখন জামশেদপুরের বিরুদ্ধে ম্যাচই আমাদের বর্তমান। এই ম্যাচ থেকে তিন পয়েন্ট পাওয়াই আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যপূরণ করার জন্যই প্রস্তুত হচ্ছি। এএফসি কাপ আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট। ওখানে সব দলই যেমন কঠিন, তেমন এই লিগেও (আইএসএল) কোনও দলই সহজ নয়। বেশির ভাগ ম্যাচেই খুব কম ব্যবধানে ফয়সালা হচ্ছে”।
কোচের পাশে বসা তারকা উইঙ্গার লিস্টন কোলাসো এএফসি কাপের ম্যাচে ড্রয়ের প্রভাব নিয়ে বলেন, “আইএসএলে প্রতিপক্ষরা যতটা পরিচিত হয়, এএফসি কাপে ততটা পরিচিত হয় না। তাই এএফসি কাপ বেশি কঠিন। বসুন্ধরার সঙ্গে ড্রয়ের ফলে আমাদের ছন্দ নষ্ট হয়নি। আমরা নিয়মিত ট্রেনিং করেছি। আর যারা অনুশীলনে ভাল করে, তাদের পারফরম্যান্স ম্যাচেও ভাল হয়। তাই নিজেদের ছন্দ নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নই আমরা”।