অনভিজ্ঞদের নিয়ে গড়া দল মাঠে নামিয়েও বাজিমাত করল মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। শনিবার ভুবনেশ্বরের কলিঙ্গ স্টেডিয়ামে কলিঙ্গ সুপার কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে তারা ফর্মে থাকা কেরালা ব্লাস্টার্সকে ২-১-এ হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠে পড়ল। এ দিন কেরালার দলকে হারাতে সেই রাজ্যেরই দুই ফুটবলারের ভূমিকা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সহাল আব্দুল সামাদ ও আশিক কুরুনিয়ানের দাপটে এ দিন ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় ব্লাস্টার্সের রক্ষণ।

২১ মিনিটের মাথায় সহালের গোলে এগিয়ে যায় আইএসএলের জোড়া খেতাবজয়ীরা। ৫১ মিনিটের মাথায় ব্যবধান বাড়িয়ে নেন সুহেল ভাট, যাঁকে মাপা ক্রস দিয়ে প্রায় গোল সাজিয়ে দেন আশিক। ম্যাচের শেষ দিকে সংযুক্ত সময়ে একটি গোল শোধ করেন পরিবর্ত ফরোয়ার্ড শ্রীকুট্টন এমএস। সারা ম্যাচে নিজেদের অসাধারণ রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলে নিজেদের দূর্গ রক্ষা করলেও, যখনই সুযোগ পেয়েছে, আক্রমণে উঠেছে এবং সাফল্যও পেয়েছে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট।

গত ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে রীতিমতো দাপুটে ফুটবল খেলে যারা জয় ছিনিয়ে নিয়েছিল, সেই কেরালা ব্লাস্টার্স এফসি এ দিন অদ্ভূত ভাবে মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের দ্বিতীয় সারির দলের কাছে মাথা নত করে। আক্রমণ, মাঝমাঠ ও রক্ষণ, কোনও বিভাগেই ছন্দ বজায় রাখতে পারেননি নোয়া সাদাউই, জেসুস জিমিনিজরা। প্রতিপক্ষের সুপরিকল্পিত ফুটবলের সামনে প্রায় আত্মসমর্পণ করতে দেখা যায় তাদের।

মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট এ দিন প্রথম এগারোয় আইএসএলের দলে থাকা সাতজনকে মাঠে নামিয়েছিল, যাদের বেশিরভাগকেই রিজার্ভ বেঞ্চে বসে কাটাতে হয়েছে। বাকিরা যুব দলের। কিন্তু উজ্জীবিত ফুটবল খেলে এই সুযোগ ভরপুর কাজে লাগান তাঁরা। সুপরিকল্পিত ফুটবল খেলে কলিঙ্গ সুপার কাপের শেষ চারে পৌঁছে এ বার তাদের সামনে এফসি গোয়া, যারা এদিন দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে পাঞ্জাব এফসি-কে ২-১-এ হারায়।

এ দিন ম্যাচের শুরুতে কোনও দলই অযথা ঝুঁকি নিতে রাজি ছিল না। প্রতিপক্ষকে পরখ করে নিয়ে আক্রমণে ওঠার পরিকল্পনা নিয়েই নেমেছিল তারা। মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট সম্পুর্ণ নতুন কম্বিনেশনে খেলছিল বলেই হয়তো তাদের এই কৌশল। কিন্তু ফর্মে থাকা কেরালা ব্লাস্টার্সকেও একই কৌশল নিয়ে খেলতে দেখা যায়। অধিনায়ক আদ্রিয়ান লুনাকে স্কোয়াডের বাইরে রেখেই এ দিন নামে তারা। হয়তো সে জ্ন্যই আক্রমণে উঠতে অনেক সময় নেয় তারা।

তবে কেরালা ব্লাস্টার্স আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠার আগেই তাদের জালে বল জড়িয়ে দেন মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের তারকা মিডফিল্ডার সহাল আব্দুল সামাদ। ২২ মিনিটের মাথায় ডানদিক দিয়ে ওঠা যুব মিডফিল্ডার সালাউদ্দিন আদনানের এক অসাধারণ ক্রসে বল পেয়ে ছ’গজের বক্সের মধ্যে থেকে গোলে বল ঠেলে দেন সহাল। ব্লাস্টার্সের ডিফেন্সের ফাঁক কাজে লাগিয়ে নেন তিনি। তবে আদনানের ক্রসটি ছিল প্রশংসনীয়। অনেকটা উঠে গিয়েও কাট ইন করে প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারদের ধোঁকা দিয়ে বক্সে ঢুকে ক্রসটি বাড়ান তিনি।

নোয়া সাদাউই ও জেসুস জিমিনিজকে কড়া পাহাড়ায় রাখার পরিকল্পনা নিয়ে এ দিন নেমেছিল মোহনবাগান। দীপেন্দু বিশ্বাস ও নবাগত বিদেশি স্টপার নুনো রেইজ তাঁদের কাজে যথেষ্ট সতর্ক ছিলেন। গোল খাওয়ার পরেই তা শোধ করার জন্য যখন ঘন ঘন আক্রমণে ওঠে ব্লাস্টার্স, তখনই প্রায় পুরো মোহনবাগান দল দ্রুত নেমে এসে রক্ষণে যোগ দিচ্ছিলেন। ফলে সংখ্যায় কমে যাচ্ছিলেন জিমিনিজরা।

গোলকিপার ধীরজ সিংও যথেষ্ট ভাল পারফরম্যান্স দেখান। প্রথমার্ধের সংযুক্ত সময়ে বাঁ দিক দিয়ে বক্সে ঢুকে কোণাকুনি শটে প্রায় গোল করেই ফেলেছিলেন মহম্মদ আইমেন। ধীরজ লাফিয়ে উঠে বল বারের ওপর দিয়ে বার করে না দিলে গোল শোধ করে ফেলত কেরালা-বাহিনী। এর আগেও ডান উইং থেকে হরমিপম রুইভার একটি দূরপাল্লার শট গোলে ঢোকার ঠিক আগের মুহূর্তে ডাইভ দিয়ে আটকান বাগান গোলকিপার।

দ্বিতীয়ার্ধের খেলা পাঁচ মিনিট গড়াতেই ফের আক্রমণ হানে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট এবং ব্যবধানও বাড়িয়ে নেয় তারা। প্রথম গোলের মতো দ্বিতীয় গোলেও কেরালারই এক ফুটবলারের প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল। তিনি আশিক কুরুনিয়ান। হরমিপমকে ধোঁকা দিয়ে ডানপ্রান্ত থেকে বক্সে ঢুকে এক লো ক্রসে গোলের সামনে প্রায় বল সাজিয়ে দেন তিনি। সেখানেই ছিলেন সুহেল ভাট এবং তিনি পায়ের এক টোকায় গোলে বল পাঠাতে বিন্দুমাত্র ভুল করেননি। তাঁর পিছনেই ছিলেন ব্লাস্টার্সের বিদেশি ডিফেন্ডার মিলোস দ্রিনচিচ। কিন্তু তিনিও আটকাতে পারেননি সুহেলকে।

দ্বিতীয় গোল খাওয়ার পরে হাল ছেড়ে না দিয়ে ব্যবধান কমানোর চেষ্টা শুরু করে ব্লাস্টার্স। তবে ততক্ষণে নিজেদের গোল এরিয়ায় কার্যত পাঁচিল তুলে দেয় মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। ফলে জিমিনিজ, নোয়া, পেপরা-রা অনেক চেষ্টা করেও ব্যবধান কমাতে পারেননি। পরিবর্ত হিসেবে নামা ফরোয়ার্ড শ্রীকুট্টন সংযুক্ত সময়ে একটি গোল করে ব্যবধান কমান।

ম্যাচের পরে মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের গর্বিত কোচ বাস্তব রায় বলেন, “আমাদের ছেলেরা আবার একটা ম্যাচ খেলার সুযোগ পেল, এটাই সবচেয়ে ভাল। আমাদের সিনিয়ররা ওদের খুব ভাল সাপোর্ট করেছে। জুনিয়ররাও যথেষ্ট মানসিক শক্তি নিয়ে খেলেছে। ওরা নিজেদের সেরাটা উজাড় করে দিয়েছে। সে জন্যই দু’গোল করে জিততে পারলাম আমরা”।