গোলের মালা বলতে যা বোঝায়, ঠিক তাই। বৃহস্পতিবার চলতি কলকাতার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ডুরান্ড কাপের গ্রুপ পর্বে তাদের দ্বিতীয় ম্যাচে ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্সকে গোলের মালাই পরাল গতবারের চ্যাম্পিয়ন মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। এ দিন ৬-০-য় ভারতীয় বায়ূসেনার দলকে হারাল পালতোলা নৌকাবাহিনী। এই বিশাল জয়ের ফলে গোলের ব্যবধানের বিচারে ‘এ’ গ্রুপের শীর্ষে পৌঁছে গেল মোহনবাগান এসজি।

অর্থাৎ, আগামী ১৮ অগাস্ট এই যুবভারতীতে যে ডার্বিতে মুখোমুখি হবে কলকাতার দুই প্রধান, সেই ম্যাচই কার্যত হতে চলেছে প্রি কোয়ার্টার ফাইনাল। কলকাতা ডার্বিতে জয়ী দলই শেষ আটে জায়গা করে নেবে। তবে গোলের ব্যবধানের বিচারে যেহেতু মোহনবাগানই এগিয়ে, তাই এই ম্যাচ ড্র হলে মোহনবাগানই গ্রুপসেরা হিসেবে নক আউট পর্বের দরজা খুলে ফেলবে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে আগাগোড়া আধিপত্য বজায় রেখে এয়ারফোর্সকে হাফডজন গোল দিয়ে হারায় মোহনবাগান। সারা ম্যাচে তাদের বল পজেশন ছিল ৬৭ শতাংশ। মোট ৩৭টি শট নেয় তারা, যার মধ্যে ১৬টিই ছিল লক্ষ্যে। সারা ম্যাচে মাত্র একটি শট গোলে রাখতে পারে এয়ারফোর্স দল। এই পরিসংখ্যানেই মোহনবাগানের দাপট বোঝা যায় স্পষ্ট।

এ দিন ম্যাচের শুরুটা যে রকম গোল দিয়ে করে সবুজ-মেরুন বাহিনী, তেমনই ম্যাচের শেষটাও গোল দিয়েই করে। চার মিনিটের মাথায় ‘লকগেট’ খোলেন অস্ট্রেলীয় তারকা ফরোয়ার্ড জেসন কামিংস। দশ মিনিটের মাথায় ব্যবধান বাড়ান স্কটিশ ডিফেন্ডার টম অ্যালড্রেড। ৩৮ মিনিটের মাথায় দলকে তৃতীয় গোল এনে দেন লিস্টন কোলাসো।

তিন গোলে এগিয়ে থাকা মোহনবাগান দ্বিতীয়ার্ধেও একইরকম আগ্রাসী মেজাজে ছিল। ৬৫ মিনিটের মাথায় দূরপাল্লার শটে আশিস রাইয়ের অনবদ্য গোলের পর কামিংস তাঁর দ্বিতীয় গোলটি করেন ৭৬তম মিনিটে। সব শেষে স্টপেজ টাইমের প্রথম মিনিটে ছ’নম্বর গোলটি করেন দলের আর এক স্কটিশ তারকা মিডফিল্ডার গ্রেগ স্টুয়ার্ট।

এ দিনই প্রথম মোহনবাগানের নতুন স্প্যাানিশ হেড কোচ হোসে মোলিনাকে সাইডলাইনে দেখা যায়। মোহনবাগান তাদের বেশ কয়েকজন তারকা খেলোয়াড়কেও মাঠে নামায়। শুধু সুহেল ভাট, থমাস অলড্রেড এবং অভিষেক সূর্যবংশীকে গত ম্যাচে প্রথম একাদশে রাখা হয়েছিল।

চতুর্থ মিনিটেই এগিয়ে যায় মোহনবাগান, যখন সহাল আব্দুল সামাদ জেসন কামিংসকে বক্সের ভেতরে বল দেন এবং প্রথম গোলটি করেন অস্ট্রেলিয়ান স্ট্রাইকার (১-০)। প্রতিপক্ষের ওপর চাপ অব্যাহত রাখে মেরিনার্স এবং মাত্র ছ’মিনিটের মধ্যে দ্বিতীয় গোলটি করে। প্রথমে লিস্টন কোলাসোর ফ্রি-কিক সুহেল ভাটের মাথায় লেগে গোলের দিকে গেলে এয়ারফোর্সের গোলকিপার শুভজিৎ বসু তা আটকালেও ফিরতি বল স্কটিশ সেন্টার ব্যাক থমাস অ্যালড্রেডের পায়ে এসে পড়ে এবং তিনি বলটি জালে জড়িয়ে দিতে কোনও ভুল করেননি (২-০)।

ম্যাচের পুরো সময় জুড়ে সবুজ-মেরুন বাহিনীর একপেশে আক্রমণ দেখা যায়। বাঁ প্রান্ত থেকে তাঁর বুদ্ধি ও গতি দিয়ে বারবার প্রতিপক্ষের ডিফেন্সকে বিপাকে ফেলেন কোলাসো। ৩৮তম মিনিটে সহালের পাস থেকে গোল করেন কোলাসো (৩-০)।

তাঁর প্রথম শটটি গোলকিপারের পাস দিয়ে জালে জড়িয়ে যায়। তখন পুরোপুরি ম্যাচের নিয়ন্ত্রণে ছিল মোহনবাগান এবং তাদের বক্সে তেমন কোনও বিপজ্জনক পরিস্থিতিই তৈরি করতে পারেনি সেনা দল। গোলকিপার বিশাল কয়েথকে নেহাতই দর্শকের ভূমিকায় দেখা যায়।

দ্বিতীয়ার্ধেও মেরিনার্সরা খেলার নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখে। সুহেল এবং কামিংস ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ মিস করেন। দ্বিতীয়ার্ধে এয়ারফোর্স দলের ডিফেন্সে উন্নতি দেখা যায়। কিন্তু অনিরুদ্ধ থাপার দুর্দান্ত শটে তাদের প্রতিরোধ ভেঙে যায়। বদলি খেলোয়াড়টি বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া দূরপাল্লার শটে গোলে বল পাঠান (৪-০)। জেসন কামিংস তাঁর দ্বিতীয় গোলটি করেন বাঁ-পায়ের শটে, যা ছিল দলের পঞ্চম গোল (৫-০)।

ম্যাচের শেষ দিকেও মোহনবাগান ফুটবলারদের মধ্যে কোনও ক্লান্তির ছাপ ছিল না। গোল-পার্থক্য বাড়ানোর উদ্দেশে একই রকম আক্রমণাত্মক মেজাজে ছিল তারা। পরিবর্ত হিসেবে নামা গ্রেগ স্টুয়ার্টকে কার্যত গোল সাজিয়ে দেন জেসন কামিংস এবং ষষ্ঠ গোলটি করতে ভুল করেননি মুম্বই সিটি এফসি-র প্রাক্তন তারকা ফুটবলারটি। একটি বুদ্ধিদীপ্ত ফিনিশ দিয়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের সমাপ্তি টানেন তিনি এবং আসন্ন কলকাতা ডার্বির দামামাও বাজিয়ে দেন।