ভারতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার জন্য ইস্টবেঙ্গলকে ধন্যবাদ মণিপুরী তারকা মহেশের
গত মরশুমে যখন স্টিফেন কনস্টান্টাইনের তত্ত্বাবধানে খেলেছিলেন, তখনও দলের ন’টি গোলে তাঁর প্রত্যক্ষ অবদান ছিল। গত আইএসএলে তাঁর খেলা দেখেই ভারতীয় দলে তাঁকে ডেকে নেন স্টিমাচ। তার পর থেকে ভারতের হয়ে ১৩টি ম্যাচ খেলে তিনটি গোল করেছেন মহেশ এবং একটি গোলে অ্যাসিস্ট করেছেন।

ভারতীয় দলে ডাক পাওয়ার জন্য তাঁর বর্তমান ক্লাব ইস্টবেঙ্গলকে ধন্যবাদ জানালেন ভারতীয় ফুটবলের নতুন তারকা উইঙ্গার নাওরেম মহেশ সিং। গত মরশুমে ইস্টবেঙ্গলে যোগ দেওয়ার পরেই তিনি ভারতীয় দলে ডাক পান। তার পর থেকে ইগর স্টিমাচের দলের নিয়মিত সদস্য হয়ে উঠেছেন মহেশ।
সম্প্রতি মহেশকে আরও তিন মরশুমের জন্য চুক্তিবদ্ধ করেছে লাল-হলুদ বাহিনী। আর কোনও ভারতীয় ফুটবলারের সঙ্গে এমন চুক্তি এখন পর্যন্ত করেনি কলকাতার এই ক্লাব। ক্লাবের এই সমর্থনে আপ্লুত মহেশ বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, “ইস্টবেঙ্গলে খেলার সুযোগ পাওয়া আমার কাছে সন্মানের। ক্লাবে নিয়মিত খেলার সুযোগ পাই বলে জাতীয় দলেও ডাক পেয়েছি। এই ক্লাবে থেকে আরও উন্নতি করতে চাই। কোচ ও সাপোর্ট স্টাফ নিয়মিত আমার পারফরম্যান্স নিয়ে বিস্তারিত তথ্য আমাকে দেন। এগুলোর ওপর ভিত্তি করে আশা করি, আরও উন্নতি করতে পারব। তবে কখনও কোনও চাপ অনুভব করি না, বরং আনন্দই পাই বেশি”।
গত আইএসএল মরশুমের শেষে, এ বছর মার্চে মহেশ ভারতের সিনিয়র দলের জার্সি গায়ে প্রথম মাঠে নামেন ত্রিদেশীয় কাপে মায়ানমারের বিরুদ্ধে। মাত্র ছ’মাসের মধ্যে তিনি স্টিমাচের প্রথম এগারোয় জায়গা সুনিশ্চিত করে ফেলেছেন। নিজের গতি, ক্ষিপ্রতা, অসাধারণ ড্রিবলিং এবং নিখুঁত অনুমান ক্ষমতার জন্য তিনি দ্রুত উন্নতি করছেন এবং ইতিমধ্যেই ভারতীয় দলের নির্ভরযোগ্য সদস্য হয়ে উঠেছেন।
ইস্টবেঙ্গল এফসি-র কোচ কার্লস কুয়াদ্রাতও তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। গত মরশুমে যখন স্টিফেন কনস্টান্টাইনের তত্ত্বাবধানে খেলেছিলেন, তখনও দলের ন’টি গোলে তাঁর প্রত্যক্ষ অবদান ছিল। গত আইএসএলে তাঁর খেলা দেখেই ভারতীয় দলে তাঁকে ডেকে নেন স্টিমাচ। তার পর থেকে ভারতের হয়ে ১৩টি ম্যাচ খেলে তিনটি গোল করেছেন মহেশ এবং একটি গোলে অ্যাসিস্ট করেছেন তিনি।
গত সপ্তাহে মারডেকা কাপের ম্যাচে আয়োজক দেশ মালয়েশিয়ার বিরুদ্ধে ভারতের প্রথম গোলটি তিনিই করেন এবং সেটি ছিল অনবদ্য। ডানদিকের উইং দিয়ে ওঠা লালিয়ানজুয়ালা ছাঙতের ক্রস বক্সের মধ্যে এসে পড়লে তা দুর্দান্ত ব্যাকহিল করে মহেশের কাছে পাঠান সহাল। দুর্দান্ত গতিতে সোজা গোলে শট নেন মহেশ। কিন্তু সেই ম্যাচে ভারত ২-৪-এ হেরে যায়। ভারতের একটি নিশ্চিত গোল বাতিল করে দেন থাইল্যান্ডের রেফারি মোঙ্কোলচাই পেছরি। সেই গোলটি হলে ভারত ৩-৩ করতে পারত এবং ম্যাচের ছবিটা হয়তো অন্য রকম হত। রেফারির আরও কয়েকটি সিদ্ধান্তও সে দিন ভারতের বিরুদ্ধে যায়।
Sheer magic from Mahesh! 🪄✨#IndianFootball #EastBengalFC #PestabolaMerdeka2023 #MASIND #BackTheBlue #BlueTigers https://t.co/r5KuiFr8Gj
— East Bengal FC (@eastbengal_fc) October 15, 2023
তবে রেফারির বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ করতে রাজি নন মহেশ। তিনি এই হারে নিজেদের ভুলই দেখছেন বেশি। এই প্রসঙ্গে মহেশ বলেন, “সে দিন কুয়ালালামপুরে আমরা নিজেদের ভুলেই হেরেছি। আমাদের অনেক মিস পাস হয়েছে। ওদের পেনাল্টি দিয়েছি আমরা। তৃতীয় গোলটা যেমন আমার ব্যাকপাস থেকে বল নিয়ে ওরা করেছিল। দোষ আমাদের অবশ্যই ছিল। রেফারিং নিয়ে কোনও কথা না বলাই ভাল। তবে আমরা সে দিন অনেক সুযোগ তৈরি করেছি। পরের ম্যাচে হয়তো আমরা আরও ভাল খেলব, আরও গোল করব”।
চলতি আইএসএলেও যথেষ্ট ভাল ফর্মে রয়েছেন মণিপুর থেকে উঠে আসা এই ২৪ বছর বয়সী তারকা উইঙ্গার। বেঙ্গালুরু এফসি-র বিরুদ্ধে একটি গোলও করেন তিনি। সেই গোলটিও অসাধারণ ছিল। নন্দকুমার শেখরের মাপা থ্রু বল পেয়ে সে দিন নিখুঁত ভাবে তাকে গোলে পরিণত করেন মহেশ। তাঁর প্রথম টাচ ও ফুটওয়ার্কে পরাস্ত হন বেঙ্গালুরুর রক্ষণের জুটি পরাগ শ্রীবাস ও স্লাভকো দামিয়ানোভিচ। তাঁরা ব্যর্থ হওয়ার পর মহেশের সামনে ছিলেন শুধু গোলকিপার গুরপ্রীত সিং সান্ধু, যাঁকে পেরিয়ে বল জালে জড়িয়ে দিতে খুব একটা অসুবিধা হয়নি।
সে দিন নন্দকুমার তাঁকে গোল করতে সাহায্য করলেও ইস্টবেঙ্গলের একদিকের উইংয়ে যতটা তৎপর মহেশ, অপর উইংয়ে ততটা তৎপরতা দেখাতে পারছেন না নন্দকুমার। ডুরান্ড কাপে মরশুমের প্রথম ডার্বিত গোল করে ইস্টবেঙ্গলকে জিতিয়ে নায়ক হয়ে ওঠার পর তিনি কেমন যেন হারিয়ে যাচ্ছেন। যদিও মহেশ বলছেন, দল কোচের পরিকল্পনা অনুযায়ীই খেলছে এবং এতে তিনি খুশি। তাঁর মতে, “উইং দিয়ে আক্রমণের ব্যাপারে আমরা যে রকম পরিকল্পনা নিয়েছিলাম, সে রকমই পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলছি আমরা। সে জন্য আমি খুশি। যদিও সব কিছুর মতো এই জায়গাতেও আরও উন্নতি করার চেষ্টায় রয়েছি। তবে আমরা খুব খারাপ খেলছি না বোধহয়”।
লিগে সামনেই তাদের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে। দু’সপ্তাহের বিশ্রামের পর এই ম্যাচেই প্রথম মাঠে নামবে লাল-হলুদ বাহিনী। প্রতিপক্ষ এফসি গোয়া দুটি ম্যাচের মধ্যে দুটিতেই জিতে ছয় পয়েন্ট নিয়ে তিন নম্বরে রয়েছে। পাঞ্জাব এফসি-কে ১-০ ও ওডিশা এফসি-কে ৩-২-এ হারায় তারা। আগামী প্রতিপক্ষ নিয়ে মহেশ বলেন, “গোয়া খুবই ভাল দল। ডুরান্ড কাপেও দেখেছি ওরা আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলে। রক্ষণেও ওদেই, সন্দেশ ঝিঙ্গনের মতো অভিজ্ঞ ফুটবলাররা রয়েছে। এই ম্যাচেও আমি একই ভূমিকা পালন করতে চাই। উইঙ্গার হিসেবেই খেলতে চাই। সুযোগ পেলে গোলও করব”।
চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে লিগের প্রথম কলকাতা ডার্বি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা স্থগিত হয়ে যাওয়ায় ইস্টবেঙ্গলের সামনে ফের একটি দীর্ঘ ছুটি আসতে চলেছে। শনিবারের পরে তারা ফের মাঠে নামবে ৪ নভেম্বর কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে। তার পরে আইএসএলে ফের সাময়িক বিরতি থাকায় ইস্টবেঙ্গলকে আবার মাঠে নামতে হবে ২৫ নভেম্বর।
ডার্বি স্থগিত থাকায় অবশ্য বিচলিত নন মহেশ। তিনি বলেন, “এটা কোনও অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। নির্দিষ্ট কারণেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে হয়তো। এখন হচ্ছে না তো কি, পরে তো হবে। সব সময়ই আমরা মাঠে নামার জন্য তৈরি থাকি। যখনই সেই ম্যাচ আবার হবে, তখনই আমরা মাঠে নেমে পড়ব। এতে আমাদের কোনও অসুবিধা নেই”।