এ বারই প্রথম ফাইনালে উঠে চ্যাম্পিয়নের খেতাবও জিতে নিল হায়দরাবাদ এফসি। রবিবার গোয়ার ফতোরদায় পন্ডিত জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে নির্ধারিত সময়ে ১-১ হওয়ার পরে দু’বারের রানার্স আপ কেরালা ব্লাস্টার্কে টাই ব্রেকারে ৩-১-এ হারাল নিজামের শহরের দল। চার বছর পরে নক-আউটে ওঠা কেরালা ব্লাস্টার্সকে তৃতীয়বার

চ্যাম্পিয়নশিপের দোরগোড়া থেকে ফিরে আসতে হল। টাই ব্রেকারে তিন-তিনটি শট আটকে দিয়ে হায়দরাবাদের জয়ের নায়ক হয়ে ওঠেন হায়দরাবাদের গোয়ানিজ গোলকিপার লক্ষ্মীকান্ত কাট্টিমণি। এই ঐতিহাসিক সাফল্যের পরে স্বাভাবিক ভাবেই উচ্ছ্বাসের বাঁধ ভেঙে যায় হায়দরাবাদ শিবিরে। এই জয় নিয়ে দুই শিবিরের প্রতিক্রিয়া এখানে তুলে ধরা হল।

মানুয়েল মার্কেজ, হেড কোচ, হায়দরাবাদ এফসি

বিরতিতে ছেলেদের বলি, আরও সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে খেলতে। প্রথমার্ধে আমাদের মধ্যে প্রচুর ফাঁকা জায়গা থাকছিল। দ্বিতীয়ার্ধে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতেই আমাদের খেলাটা পাল্টে গেল। ওরা আমাদের আগে গোল করলেও আমরা সে জন্য সমতা এনে ফেলি। গত কয়েক সপ্তাহে আমাদের দিন কী ভাবে কেটেছে, সে তো আর ভোলার নয়। তবে আজ আমাদের ছেলেরা অনেক ব্যক্তিত্ব নিয়ে খেলেছে। আমাদের গোলকিপার কাট্টিমণি এই মুহূর্তে সেরা। বিশেষ করে আমাদের খেলার স্টাইলের পক্ষে ও একেবারে মানানসই। শুধু গোলে নয়, বক্সের বাইরে বেরিয়েও ও দারুণ ফুটবল খেলে। ভারতীয় দলের কোচ ইগর স্টিমাচ ওকে দলে ডাকবেন কি না, সেটা সম্পুর্ণ তাঁর ব্যাপার। তবে গত দু’বছর ধরে ওর উন্নতি দেখে আমি এটুকু বলতে পারি, এই মুহূর্তে ও ভারতের অন্যতম সেরা গোলকিপার। আজকের ম্যাচে ও কার্যত কোনও ভুল করেনি।

ইভান ভুকোমানোভিচ, হেড কোচ, কেরালা ব্লাস্টার্স

জিততে না পারলেও ফাইনালে খেলাটাও কম বড় কথা নয়। যে কোনও ফুটবলার বা কোচের কাছে এটা একটা বড় প্রাপ্তি। পেনাল্টিতে হার মেনে নেওয়াটা কঠিন ঠিকই। আমাদের দুর্ভাগ্য বলতে পারেন। তবে শুধু এই ম্যাচে নয়, সারা মরশুমে আমরা ভাল খেলেছি, সে জন্য আমি খুব খুশি। গত কয়েক মরশুমে আমাদের আরও খারাপ সময় গিয়েছে। এই মরশুমেও হার দিয়ে শুরু করেও ঘুরে দাঁড়াই আমরা। যথেষ্ট পরিশ্রম করেছি সবাই এবং অনেক ভাল ম্যাচ খেলেছি। অনেকেই ভাবতে পারেনি, আমরা ফাইনালে উঠব। তবু আমরা যোগ্য দল হিসেবেই ফাইনালে উঠেছি। এটা একটা ভাল ভিত তৈরি হল। পরের মরশুমে এই ভিতের ওপর দাঁড়িয়েই আমাদের আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরতে হবে। আজ প্রথমার্ধে আমরা যথেষ্ট ভাল খেলেছিলাম। ভাল পাস করেছি। দুটো ভাল সুযোগও পেয়েছিলাম। এই ধরনের ম্যাচে একটা গোলই যে ম্যাচের ফয়সালা করে দিতে পারে, তা জানতাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত শেষ দিকে আমরা একটা গোল খেয়ে গেলাম। পেনাল্টিতে কী হবে, না হবে, তা বলা বেশ কঠিন।

লক্ষ্মীকান্ত কাট্টিমণি, গোলকিপার, হায়দরাবাদ এফসি

এই মাঠে এত বড় সাফল্য পাওয়াটা ছিল আমার স্বপ্ন। আজ সেই স্বপ্ন পূরণ হল। আমাদের পুরো দলের জন্য আমি খুব খুশি। আমার ভাই (সাহিল তাভোরা) অসাধারণ একটা গোল করে ম্যাচটাকে অতিরিক্ত সময়ে টেনে নিয়ে গেল। এই সাফল্যের অনেকটা কৃতিত্ব আমাদের কোচ মানুয়েলের। উনিই আমাদের বুক চিতিয়ে খেলতে সাহায্য করেছেন। প্রতি দিন বলেছেন সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে খেলো। ওঁর কথা মেনেই খেলেছি এবং তার ফলই পেলাম হিরো আইএসএল চ্যাম্পিয়ন হয়ে।

জোয়াও ভিক্টর, অধিনায়ক, হায়দরাবাদ এফসি

সারা মারশুমে আমরা নিজেদের যে ভাবে নিঙড়ে দিয়েছি, আজ তারই সুফল পেলাম। কোভিডের জন্য আমাদের অনেককে কোয়ারান্টাইনে যেতে হয়েছে। যার ফলে লিগশিল্ড থেকেও দূরে চলে যাই আমরা। পরিবারের থেকে এতদিন ধরে এই অবস্থায় এত দিন ধরে থাকা, এটা আমাদের সবার পক্ষেই খুবই কঠিন। তবে আমরা যেহেতু একটা পরিবারের মতো থাকি, তাই অতটা কঠিন মনে হয় না। আমার ফুটবল জীবনে এত ভাল একটা দলের সঙ্গে থাকার অভিজ্ঞতা কখনও হয়নি। প্রথমার্ধে আমরা তেমন ভাল খেলতে পারিনি। দুই দলই একটা করে সুযোগ পেয়েছি। গ্যালারিতে সমর্থকেরা ছিলেন। তাদের সামনে আমাদের তরুণরা বোধহয় একটু বেশি চাপে পড়ে গিয়েছিল। তবে দ্বিতীয়ার্ধে আমরা দারুন খেলেছি। ওদের (কেরালা ব্লাস্টার্স) সমর্থকই গ্যালারিতে বেশি ছিল ঠিকই। কিন্তু আমি মাঠে নামলে ও সব খেয়াল করি না। শেষ পর্যন্ত তো আমাদের জেতানোর জন্য আমাদের ফ্যানরাই ছিল যথেষ্ট।

সাহিল তাভোরা, মিডফিল্ডার, হায়দরাবাদ এফসি (নির্ধারিত সময়ের গোলদাতা)

অনেক দিন পরে গ্যালারিতে আজ সমর্থকেরা ছিলেন। ফলে পরিবেশটা দুর্দান্ত ছিল। অবশ্যই মাঞ্জাপ্পাড়া (কেরালা ব্লাস্টার্সের সমর্থকদের দল) অসাধারণ। সব সময়ই ওরা খুব মুখর থাকে গ্যালারিতে। ডেকান লেজিয়ন ও হায়দরাবাদের অন্যান্য সমর্থকেরাও আজ সমানে আমাদের জন্য গলা ফাটিয়েছে। আমারও কিছু আত্মীয়, বন্ধুরা আজ গ্যালারিতে ছিল। তাই আমার কাছে এটা অসাধারণ একটা মুহূর্ত। যাবতীয় কৃতিত্ব কাট্টিমণির। ও না থাকলে আজ আমরা এই জায়গায় পৌঁছতে পারতাম না। আমাদের কোচ আমাদের কাছ থেকে প্রতি দিন একশো শতাংশ চেয়েছেন। যেমন দ্বিতীয় সেমিফাইনালে আমরা তেমন ভাল খেলতে পারিনি। তাই কোচ বলেছিলেন, আজ নিজেদের সেরাটা উজাড় করে দিতেই হবে। আমরা সেটাই করেছি।

বার্থোলোমিউ ওগবেচে, স্ট্রাইকার, হায়দরাবাদ এফসি

দারুন একটা ম্যাচ হল। কেরালা ব্লাস্টার্স প্রতিপক্ষ হিসেবে খুবই ভাল। তবে আমাদের এই সন্মানটা প্রাপ্য ছিল। গত বছর আমরা অল্পের জন্য সেমিফাইনালে উঠতে পারিনি আর এ বছর কোভিডের জন্য লিগশিল্ডও হাতছাড়া হল। শেষ পর্যন্ত আমরা আমাদের লক্ষ্যে যে পৌঁছতে পেরেছি, এটাই ভাল খবর। খুব ভাল খেলার জন্য কেরালা ব্লাস্টার্সকে অভিনন্দন। আমাদের কাজটা ওরা খুবই কঠিন করে তুলেছিল।

জোয়েল চিয়ানিজ, ফরোয়ার্ড, হাদরাবাদ এফসি

গতবার অল্পের জন্য সেমিফাইনালে উঠতে না পারায় আমরা সবাই খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। গত ম্যাচে আমরা প্রচুর চেষ্টা করেও জিততে পারিনি। তাই এ বার চ্যাম্পিয়ন হয়ে সব পুষিয়ে গেল। এই জায়গায় আসাটা আমাদ্র প্রাপ্য ছিল এবং আজকের লড়াইটা জেতা মোটেও সোজা হয়নি। তাই দলের সকলকে অভিনন্দন।