কুয়েতের মাঠে রীতিমতো দাপুটে ফুটবল খেলে জয় পাওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই খুশি ভারতীয় ফুটবল দলের হেড কোচ ইগর স্টিমাচ। কিন্তু ভারতের এই জয়ে তিনি খুব একটা অবাক হননি। ম্যাচের পরে সাংবাদিকদের এই কথাই জানালেন তিনি। 

বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্বকাপ ২০২৬ ও এশিয়ান কাপ ২০২৭-এর বাছাই পর্বের প্রথম ম্যাচেই ১-০-য় জিতে তিন পয়েন্ট অর্জন করে ভারত। কুয়েত সিটির জাবের আল আহমাদ স্টেডিয়ামে মনবীর সিংয়ের গোলে বহু প্রতীক্ষিত জয় পান সুনীল ছেত্রীরা। এর ফলে এশীয় অঞ্চলের বাছাই পর্বের দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে তৃতীয় রাউন্ডে ওঠার দৌড়ে কিছুটা এগিয়ে গেল ভারত। 

বাছাই পর্বের এশীয় অঞ্চলে ‘এ’ গ্রুপে কাতারেরও সংগ্রহে তিন পয়েন্ট। বৃহস্পতিবার তারা আফগানিস্তানকে ৮-১ গোলে হারায়। ফলে গোলপার্থক্যের বিচারে তারাই এখন গ্রুপশীর্ষে। দুই নম্বরে ভারত। স্টিমাচের দলকে এখনও পাঁচটি ম্যাচ খেলতে হবে, দু’টি বিদেশে ও তিনটি ঘরের মাঠে। যার প্রথমটি হতে চলেছে আগামী মঙ্গলবার ভুবনেশ্বরের কলিঙ্গ স্টেডিয়ামে। তার আগে এই জয় ভারতীয় ফুটবলারদের যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস জোগাল বলা যায়। 

বৃহস্পতিবার জাবের আল আহমাদ স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে ভারতীয় সমর্থকদের জমায়েত ছিল আশাতীত। যখনই ভারতীয় ফুটবলাররা আক্রমণে উঠছিলেন, তখনই সমর্থকদের গর্জনে কেঁপে উঠছিল সারা স্টেডিয়াম। এমনিতেই শুরু থেকেই উজ্জীবিত ফুটবল খেলে ভারত। তার ওপর সমর্থকদের এই গর্জন তাদের আরও তাতিয়ে তোলে এবং ৯৭ মিনিটের (স্টপেজ টাইম-সহ) বেশির ভাগ সময়ই দাপুটে ফুটবল খেলে তারা। সারা ম্যাচে একাধিক সুযোগ তৈরির পর ৭৫ মিনিটের মাথায় মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের তারকা মনবীর সিংয়ের অসাধারণ গোলে জয় পায় ভারত।  

সমর্থকদের প্রশংসা করে স্টিমাচ বলেন, “গ্যালারি থেকে যে সমর্থন আমরা পেয়েছি, তার প্রশংসা করতেই হবে। মনে হচ্ছিল যেন আমরা ঘরের মাঠেই খেলছি। তবে আমি এই ফলে অবাক হইনি। কারণ, নিজের দলের ওপর আমার বরাবরই আস্থা ছিল। কিন্তু আমি প্রতিপক্ষকেও সন্মান করি। আমাদের লক্ষ্য প্রতি ম্যাচই জেতা। কিন্তু শুধু আবেগে ভাসলে চলে না। এই ধরনের কথা বলার সময় বাস্তবটাকেও মাথায় রাখতে হয়। গত সাড়ে চার বছর ধরে আমাদের দলের ছেলেরা যে পরিশ্রম করেছে, তার পরে ওদের ওপর আস্থা রাখাটাই স্বাভাবিক”। 

কুয়েতকে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়াটাই যে ছিল তাদের কৌশল, সে কথা জানিয়ে ভারতীয় দলের ক্রোয়েশিয়ান কোচ বলেন, “আমরা জানতাম যে এই ম্যাচে ড্র করতে পারলে আমাদের গ্রুপে দ্বিতীয় স্থানে থাকার সম্ভাবনা আরও বাড়বে। তাই কুয়েতকে ছত্রভঙ্গ করাটাই ছিল আমাদের লক্ষ্য। ওদের অধৈর্য্য করে তুলে মানসিক চাপে ফেলে দেওয়াই ছিল আমাদের উদ্দেশ্য, যাতে ওরা লং বল-এ খেলার কৌশল অবলম্বন করতে বাধ্য হয়”। 

তাঁদের পরিকল্পনা সফল হয়েছে বলে মনে করেন স্টিমাচ। বলেন, “এই ম্যাচ আমরাই নিয়ন্ত্রণ করেছি এবং কুয়েতকে তেমন কোনও সুযোগই দিইনি। আমার একটাই চিন্তা ছিল, কয়েকজন নিয়মিত খেলোয়াড়ের চোট। কিন্তু ওদের জায়গায় যারা খেলেছে তারা অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখিয়েছে”। 

“কুয়েত টেকনিকের দিক থেকে আমাদের চেয়ে এগিয়ে। কারণ, ওদের দলে টেকনিকের দিক থেকে দক্ষ ফুটবলারের সংখ্যা বেশি। তবে কোনও অজানা কারণে, ওরা সম্প্রতি ভাল খেলতে পারছে না। আমাদের দলের ছেলেরা ওদের চাপে ফেলে দিতে পেরেছে”।

একাধিক সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার পর ৭৫ মিনিটের মাথায় আকাঙ্খিত গোলটি পেয়ে যায় ভারত। বাঁ উইং দিয়ে দ্রুত গতিতে উঠে কুয়েতের বক্সে ঢুকে লিলিয়ানজুয়ালা ছাঙতে গোলের সামনে থাকা মনবীর সিংকে নিখুঁত ক্রস দেন, যা ফিনিশ করতে কোনও ভুল করেননি মনবীর (১-০)। বক্সের মাথা থেকে দুই ডিফেন্ডারের মাঝখান দিয়ে বাঁ পায়ের শটে বল জালে জড়িয়ে দেন তিনি।

জয়ের নায়ক মনবীর সিং ম্যাচের পরে বলেন, “একটা ভাল গোল করতে পেরে আমি খুশি। সতীর্থদের পরিশ্রম ও একাগ্রতার ফল এটা। আমার সৌভাগ্য যে গোল করতে পেরেছি। পরের ম্যাচগুলোতে আশা করি আরও গোল করার সুযোগ পাব। গোল করে দলকে জেতানোর এই অনুভূতিটা ঠিক বলে বোঝাতে পারব না”।

আগামী মঙ্গলবার ভারত ও কাতারের ম্যাচ সন্ধ্যা সাতটায় শুরু হবে। তার পরে রাত সাড়ে দশটায় সৌদি আরবের দামামে মুখোমুখি হবে কুয়েত ও আফগানিস্তান।