‘করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে’— এমন মনোভাব নিয়েই বুধবার চলতি সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের আয়োজক দেশ মলদ্বীপের ওপর কার্যত ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে ভারতকে। না পারলে সাত বারের চ্যাম্পিয়নদের ফাইনালে ওঠার রাস্তা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তাই সে সংকল্প নিয়েই মাঠে কঠিন লড়াইয়ে নামবেন সুনীল ছেত্রীরা। আপাতত যা অবস্থা, তাতে ফাইনালের চেয়েও কঠিন লড়াইয়ে নামতে চলেছে ভারত।

চলতি সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে লিগ তালিকার যা অবস্থা, তাতে পাঁচটি দলের মধ্যে শ্রীলঙ্কা ছাড়া বাকি চারটি দলই ফাইনালে উঠতে পারে। মলদ্বীপ ও নেপাল তিনটি করে ম্যাচে ছয় পয়েন্ট করে অর্জন করে লিগ টেবলের প্রথম দুই স্থানে রয়েছে। মলদ্বীপের গোল পার্থক্য যেহেতু দুই ও নেপালের এক, তাই মলদ্বীপ একে। তাদের চেয়ে এক পয়েন্ট কম পেয়ে ভারত তিন নম্বরে। গত ম্যাচে মলদ্বীপের কাছে হেরে যাওয়ায় বাংলাদেশ আপাতত চার পয়েন্ট পেয়ে চার নম্বরে রয়েছে।

বুধবার রাতে ভারত ও মলদ্বীপ মুখোমুখি হওয়ার আগে বিকেলে বাংলাদেশ ও নেপাল একে অপরের মুখোমুখি হবে, যে ম্যাচের জয়ী দল ফাইনালে জায়গা পাকা করে ফেলবে। সেক্ষেত্রে রাতের ম্যাচে যারা জিতবে, তারাই হবে অপর ফাইনালিস্ট। যার অর্থ, বুধবারের দুই ম্যাচ কার্যত এই টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল।

কিন্তু যেহেতু এগুলো লিগের ম্যাচ, তাই ড্র হওয়ারও তো সম্ভাবনা রয়েছে। কোন ম্যাচ ড্র হতে পারে বা কোন ম্যাচ পারে না, তা তো আর আগে থেকে বোঝা যায় না। যে ম্যাচ ড্র হবে, সেই ম্যাচের দল বেশ চাপে পড়ে যাবে। তবে ড্র করলে নেপাল ও মলদ্বীপেরই বেশি লাভ। কারণ, সেক্ষেত্রে ছিটকে যাবে ভারত ও বাংলাদেশই। তাই এই দুই দলের কাছেই বুধবার জয় ছাড়া ফাইনালে ওঠার কোনও রাস্তা নেই।

দুই দলের পয়েন্ট সংখ্যা একই হয়ে গেলে ফাইনালে তোলার ক্ষেত্রে প্রথমে দেখা হবে লিগ পর্বে পরষ্পরের মুখোমুখিতে সফল হয়েছে কারা। তাও যদি সমান হয়, তখন দেখা হবে দুই দলের মধ্যে কাদের গোল পার্থক্য ভাল। সেই পরিসংখ্যানেও ফয়সালা না হলে দেখা হবে দুই দলের মধ্যে কারা বেশি গোল দিয়েছে। তাতেও সিদ্ধান্ত নেওয়া না গেলে দেখা হবে সামগ্রিক গোল পার্থক্য এবং লিগ পর্বে কারা বেশি গোল করেছে। কোনও পন্থাই সফল না হলে টাই ব্রেকারে (দুই দল মাঠে থাকলে) নির্ধারিত হতে পারে সফল দল, না হলে টসে নির্ধারিত হবে বিষয়টি।

ভারতকে এ সব এড়াতে গেলে জিতে আট পয়েন্ট নিয়ে লিগ শেষ করতে হবে। তা হলে তাদের দ্বিতীয় সেরা দল হিসেবে ফাইনালে যাওয়া নিশ্চিত। ভারতের জয়ের আগে নেপাল ও বাংলাদেশ ম্যাচ ড্র হলে ভারত এক নম্বর দল হিসেবে ফাইনালে উঠবে। সুতরাং, বুধবার ভারতের জয় ছাড়া অন্য কোনও লক্ষ্যই থাকা উচিত না।

কিন্তু ঘরের মাঠ ও গ্যালারিতে ভরা সমর্থকের সুবিধা পাওয়া মলদ্বীপকে কি হারাতে পারবে ভারত? এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। গত দুই ম্যাচেই টানা জয় পেয়েছে মলদ্বীপ। প্রথম ম্যাচে তারা এক গোলে হেরেছিল নেপালের কাছে। সেই নেপালকে রবিবার রীতিমতো চাপে রেখে ১-০ গোলে হারায় ভারত। নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার আট মিনিট আগে সুনীল ছেত্রী অনবদ্য গোল করে ভারতকে লড়াইয়ে রাখে। তার আগে অবশ্য একাধিক সুযোগ নষ্ট করেন সুনীল, মনবীররা। সেই সুযোগের অর্ধেকও কাজে লাগাতে পারলে ভারত ওই ম্যাচে দু-তিন গোলে জিতত।

ম্যাচের পরে সুনীল ছেত্রী সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের সোশ্যাল মিডিয়া পেজে মন্তব্য করেন, “আমরা এই টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত তেমন ভাল খেলিনি। গত দুই ম্যাচে বিপক্ষকে চাপে রাখতে পারলেও গোলের সামনে আমরা কিন্তু খুবই খারাপ খেলেছি। প্রচুর সুযোগ নষ্ট করেছি আমরা, স্ট্রাইকাররা। গত ম্যাচে, এই ম্যাচেও। কিন্তু এগুলো অজুহাত হতে পারে না। আমরা সৌভাগ্যবান যে, আজ একটা গোল পেয়ে যাওয়ায় ফাইনালে ওঠার আশা জিইয়ে রাখতে পেরেছি। কিন্তু এখনও অনেক উন্নতি করতে হবে আমাদের”। ফাইনালের মুখে এসে এই কথা বলতে হচ্ছে ভারত অধিনায়ককে, এটাই চিন্তার বিষয়।

ভারতীয় দলের কোচ ইগর স্টিমাচের বক্তব্য, “আমাদের গোল করতে হবে। সুযোগগুলোকে কাজে লাগাতে হবে। এই একটা ব্যাপারে আমাদের আরও উন্নতি করা দরকার। শুরুতেই গোলের সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে এই ধরনের ম্যাচগুলোই অনেক সহজ হয়ে যায়। না হলে শেষ পর্যন্ত ভুগতে হয়। তবে অবশ্যই আমাদের ধৈর্য্য ধরতে হবে”।

সুনীল ছেত্রীর সুযোগ নষ্ট নিয়ে কোচ বলেন, “গত ম্যাচে সুনীল অনেক আগেই তফাৎটা গড়ে দিতে পারত। কিন্তু ও আমাদের সবাইকে ম্যাচের শেষ পর্যন্ত মানসিক চাপে রাখল। তবে ওর জন্য আমরা খুশি। সারা দল ওর জন্য পরিশ্রম করে। যাতে ও নিয়মিত গোল করতে পারে”।

মলদ্বীপের বিরুদ্ধে ম্যাচ নিয়ে মঙ্গলবার স্টিমাচ সাংবাদিকদের বলেন, “মলদ্বীপের কাছে পরিস্থিতিটা সোজা। কারণ, ফাইনালে ওঠার জন্য ওদের একটা ড্র হলেই চলবে। আমরাও জানি, কালকের ম্যাচে আমাদের ঠিক কী কী করতে হবে। দলের ছেলেরা শেষ লিগ ম্যাচের জন্য কতটা তরতাজা হয়ে উঠতে পারবে, এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়”।

মলদ্বীপ দুরন্ত ফর্মে রয়েছে এই টুর্নামেন্টে। নেপালের কাছে হারলেও সারা ম্যাচে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করে তারা। ম্যাচে ৮৬ মিনিটের মাথায় গোল খেয়ে হারতে হয় তাদের। দুই দলের পরিসংখ্যান দেখলেই বোঝা যায় কী হাড্ডাহাড্ডি ম্যাচ সে দিন হয় তাদের মধ্যে। দেশীয় কোচ আলি সুজেইনের তত্ত্বাবধানে থাকা মলদ্বীপের এই জাতীয় দলের প্রচুর পাস খেলার প্রবণতা রয়েছে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধেও তারা প্রায় পাঁচশো পাস খেলে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে রেখে সাফল্য অর্জন করে।

তবে ভারতের মতো সুযোগকে গোলে পরিণত করার সমস্যা মলদ্বীপেরও রয়েছে। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ম্যাচে যার জন্য মাত্র এক গোলে জেতে তারা। ঠিকমতো সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে আরও বেশি গোলে জিততে পারত মলদ্বীপ। রীতিমতো প্রস্তুতি নিয়ে এই টুর্নামেন্টে নেমেছে মলদ্বীপ। কাতারে দু’টি ফ্রেন্ডলি ম্যাচ খেলে তারা। সেখানে লুসাইল এফসি-র বিরুদ্ধে ৪-২-এ জেতে এবং সেখানকার জাতীয় সেনা দলের সঙ্গে ১-১ ড্র করে। মূলত এই দুই ম্যাচ থেকেই সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য ২৪ জনের দল গড়েন কোচ আলি।

ভারতীয় স্কোয়াড:

গোলকিপার- গুরপ্রীত সিং, ধীরজ সিং ও বিশাল কয়েথ

ডিফেন্ডার- প্রীতম কোটাল, সেরিটন ফার্নান্ডেজ, চিঙলেনসানা সিং, রাহুল ভেকে, শুভাশিস বসু, মন্দার রাও দেশাই

মিডফিল্ডার- উদান্ত সিং, ব্র্যান্ডন ফার্নান্ডেজ, লালেংমাউইয়া, অনিরুদ্ধ থাপা, সাহাল আব্দুল সামাদ, জিকসন সিং, গ্ল্যান মার্টিন্স, সুরেশ ওয়াংজাম, লিস্টন কোলাসো, মহম্মদ ইয়াসির

ফরোয়ার্ড- মনবীর সিং, রহিম আলি, সুনীল ছেত্রী ও ফারুখ চৌধুরি

ভারত বনাম মলদ্বীপ

সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২১

ভেনু: ন্যাশনাল ফুটবল স্টেডিয়াম, মালে

সময়: ১৩ অক্টোবর, রাত ৯.৩০ (ভারতীয় সময়)

টিভি সম্প্রচার: ইউরোস্পোর্ট