রীতিমতো দাপুটে পারফরম্যান্স দেখিয়ে ভারতকে ছগোলে হারাল সংযুক্ত আরব আমিরশাহী। সোমবার দুবাইয়ের জাবিল স্টেডিয়ামে ভারতীয় ফুটবল দলের চলতি দুবাই সফরের দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচে তারা অনায়াসে হারিয়ে দিল ভারতীয় দলকে। গত বৃহস্পতিবার ওমানের বিরুদ্ধে যেমন লড়াকু ফুটবল খেলেছিল ভারত, এ দিন সে রকম লড়াই করতে পারেনি তারা। আমিরশাহীর দাপটের কাছে মাথা নত করতে হয় তাদের।

আমিরশাহীর সেরা ফরোয়ার্ড আলি মবখৌত এই ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেন। খলিল ইব্রাহিম, ফাবিও লিমা ও সেবাস্তিয়ান তাগলিয়াবিউ বাকি তিনটি গোল করেন।

  • আলি মবখৌত প্রথমার্ধে দুটি গোল করে দলকে বিরতিতে এগিয়ে রাখেন।
  • দ্বিতীয়ার্ধে হ্যাটট্রিকের গোলটি করেন মবখৌত।
  • টি গোল খেলেও এ দিন অনেকগুলি গোল বাঁচিয়ে আরও বড় হার বাঁচান গুরপ্রীত।

সোমবার আগের ম্যাচের দলে আটটি পরিবর্তন করেন ভারতীয় কোচ ইগর স্টিমাচ। ওমানের বিরুদ্ধে ম্যাচে খেলা শুধু মনবীর সিং, সুরেশ ওয়াঙজাম ও আকাশ মিশ্র এ দিনের দলে ছিলেন। তবে প্রথম এগারোয় মাত্র একজনের আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়, লিস্টন কোলাসো।

প্রায় নতুন দল মাঠে নামলে যা হয়, সেটাই হয় এ দিন। ভারতীয় কোচ ইগর স্টিমাচ আগের দিন বলেছিলেন ওমানের চেয়ে কঠিন প্রতিদ্বন্দী আমিরশাহী। এ দিন মাঠে সেটাই প্রমাণ করে দিল তারা। শুরু থেকেই এ দিন ভারতকে বেশ চাপে রাখে আমিরশাহী। ভারতীয় ফুটবলাররা ঠিকমতো বলই ধরে রাখতে পারছিলেন না। শুরুর দশ মিনিট ভারতের অর্ধেই বেশির ভাগ খেলাটা হয়। ১২ মিনিটের মাথাতেই প্রথম গোল করে দলকে এগিয়ে দেন মবখৌত। লিমার পাস থেকে বল পেয়ে তিনি অফসাইডের ফাঁদ এড়িয়ে গোল ছেড়ে বেরিয়ে আসা গোলকিপার গুরপ্রীত সিং সান্ধুর মাথার ওপর দিয়ে চিপ করে বল সোজা গোলে পাঠিয়ে দেন (১-০)।

গোলের পরও ম্যাচের রাশ ছিল আমিরশাহীরই হাতে। একবারের জন্য তারা বিপক্ষকে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ করতে দেয়নি। ৩০ মিনিটের মাথায় আমিরশাহীকে ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ তৈরি করে দেন ডিফেন্ডার আদিল খান। বক্সের মধ্যে তিনি হ্যান্ডবল করে ফেলায় রেফারি পেনাল্টি দেয় আমিরশাহীকে, যা থেকে গোল করেন সেই মবখৌত (২-০)।

৩৮ মিনিটের মাথাতেই মবখৌত হ্যাটট্রিক পেয়ে যেতেন। এ বারও সেই লিমার পাস পেয়েই গোলের দিকে দৌড় শুরু করেন তিনি। এ বারও অফসাইডের ফাঁদ এড়িয়ে যান। কিন্তু এ বার লক্ষ্যভ্রষ্ট হন, সাইড নেটে শট মারেন। ৪২ মিনিটের মাথায় বক্সের বাইরে থেকে তিনি ফের একটি জোরালো শট নেন গোলে। তবে তা বারের ওপর দিয়ে বেরিয়ে যায়। 

প্রথমার্ধের শেষে ফল ছিল ২-০। দ্বিতীয়ার্ধেও একই ভাবে দাপট দেখায় আমিরশাহী। ৫৩ মিনিটের মাথায় ফের ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ পান লিমা। কিন্তু গোলের সামনে থেকে তাঁর হেড লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। বান্দার মহম্মদের জোরালো গোলমুখী ফ্রি কিক দক্ষতার সঙ্গে বাঁচান গুরপ্রীত।

৫৮ মিনিটের মাথায় রেইনিয়ে ফার্নান্ডেজ এবং ইশান পন্ডিতাকে বেঞ্চ থেকে নামান কোচ স্টিমাচ। কোলাসো ও লালেঙমাউইয়াকে তুলে নেন তিনি। কিন্তু তাতেও তেমন লাভ হয়নি।

তৃতীয় গোলটিও আসে সেই মবখৌতের পা থেকেই। বান্দার বক্সের মধ্যে একটি ক্রস দেন। আদিল ঠিকমতো ইন্টারসেপ্ট করতে না পারায় তা পৌঁছয় মবখৌতের পায়ে। তিনি ঠাণ্ডা মাথায় বিনা বাধায় বল নিয়ন্ত্রণ করে গোলে ঠেলে দেন (৩-০)।

তৃতীয় গোল হয়ে যাওয়ার পরে আরও দুটো প্রায় নিশ্চত গোল বাঁচান গুরপ্রীত। এ দিন সারা ম্যাচেই কঠিন পরীক্ষা দিতে হয় ভারতীয় গোলকিপারকে। তাতেও দূর্গ রক্ষা করতে পারেননি তিনি। আরও গোল খেতে হয় তাঁকে। ৬৪ মিনিটের মাথায় মবখৌতের নিখুঁত থ্রু থেকে গোল করেন খলিল (৪-০)।

আরও যে গোল খেতে হবে তাঁদের, তা বোধহয় ভাবতেই পারেননি ভারতীয় ফুটবলাররা। কিন্তু তাঁদের ভুলেই ৭১ মিনিটের মাথায় পাঁচ নম্বর গোলটিও খেয়ে যায় ভারত। বক্সের সামনে বিপজ্জনক জায়গায় ভারত বলের দখল হারালে সেখান থেকে লিমা বল পেয়ে তা গোলে ঠেলে দেন (৫-০)।

শেষ গোলটি লিমার সহায়তাতেই হয়। করেন সেবাস্তিয়ান তাগলিয়াবিউ। লিমা বাঁ দিক দিয়ে উঠে আশিক কুরুনিয়ানকে ধোঁকা দিয়ে বক্সের মধ্যে ঢুকে সেবাস্তিয়ানকে স্কোয়ার করেন। সেবাস্তিয়ানের গোল করতে কোনও অসুবিধাই হয়নি (৬-০)। খেলা শেষের আগে আরও গোল খেতে পারত ভারত। কিন্তু গুরপ্রীতের একাধিক দুর্দান্ত সেভের জন্য তা আর সম্ভব হয়নি।