আগামী বছর এএফসি এশিয়ান কাপে ভারতের যে গ্রুপবিন্যাস হয়েছে, তা দেখে খুশি হলেও ভারতীয় দলের ক্রোয়েশিয়ান কোচ ইগর স্টিমাচের ধারনা, গতবারের চেয়েও এ বার কঠিন গ্রুপে রয়েছে ভারত। তাই তাদের কাজটা মোটেই সোজা হবে না।

এএফসি এশিয়ান কাপের মূলপর্বে ভারত রয়েছে গ্রুপ বি-তে। তাদের সঙ্গে একই গ্রুপে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, উজবেকিস্তান ও সিরিয়া। ফিফা ক্রমতালিকায় বর্তমানে ভারত যেখানে রয়েছে ১০১ নম্বরে, সেখানে তাদের গ্রুপে থাকা সিরিয়া ৯০, উজবেকিস্তান ৭৪ ও অস্ট্রেলিয়া রয়েছে ২৯ নম্বরে।

বৃহস্পতিবার দোহার অপেরা হাউসে যে গ্রুপবিন্যাস অনুষ্ঠান হয়, তাতে উপস্থিত ছিলেন স্টিমাচ। গ্রুপে তাদের সঙ্গে অন্য কোন কোন দেশ রয়েছে, তা জানার পরে স্টিমাচ সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনকে জানান, “এএফসি এশিয়ান কাপে আমাদের লড়াইটা বেশ কঠিন হতে চলেছে। চার বছর আগের চেয়েও এ বারের লড়াইটা আরও কঠিন। তবে আমরা প্রতি পদক্ষেপে লড়াই করব”।

সর্বভারতীয় সংবাদপত্র ‘দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া’-কে স্টিমাচ বলেন, “আমরা জানতাম, কঠিন গ্রুপে পড়ব আমরা। আরও কঠিন হতে পারত। তবে এ সব নিয়ে ভেবে আর সময় নষ্ট করতে চাই না। এখন সব কিছুই নির্ভর করছে প্রস্তুতির ওপর। এখানে একাধিক দলের কোচের সঙ্গে কথা বললাম, ওঁরা বেশির ভাগই চার সপ্তাহের শিবির করবে বলে ঠিক করেছে। যে দলের ফুটবলাররা ইউরোপের বিভিন্ন লিগে খেলে, তাদের এই প্রস্তুতিতে পাওয়া যাবে না। কারণ, ক্লাবগুলো এশিয়ান কাপ শুরুর এক সপ্তাহ আগে তাদের ছাড়বে। কিন্তু অন্যদের পাওয়া যাবে। আমাদেরও তৈরি হতে হবে”।

আগামী বছর ১২ জানুয়ারি থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি কাতারে অনুষ্ঠিত হবে এএফসি এশিয়ান কাপ। ভারতে তাদের প্রথম ম্যাচ খেলবে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে, ১৩ জানুয়ারি। ১৮ জানুয়ারি তাদের প্রতিপক্ষ উজবেকিস্তান ও ২৩ জানুয়ারি সিরিয়া।

এশিয়ার সবচেয়ে বড় আন্তর্দেশীয় প্রতিযোগিতার মূলপর্বে ভারত এই প্রথম পরপর দু’বার অংশ নিতে চলেছে। গতবার অল্পের জন্য নক আউট পর্বে যেতে পারেনি ভারত। তাইল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৪-১ জয় দিয়ে শুরু করলেও তার পরে সংযুক্ত আরব আমিরশাহী (০-২) ও বাহরিনের (০-১) কাছে হেরে যাওয়ায় টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যায় তারা। শেষ মুহূর্তে বাহরিন পেনাল্টি পেয়ে যাওয়ায় সুনীল ছেত্রীদের নক আউট পর্বে ওঠা সম্ভব হয়নি। এ বার কী হবে, সেটাই দেখার। তবে কোচ তাঁর দল নিয়ে আশাবাদী। অন্যান্য দলের কোচেদের সঙ্গে কথা বলার পর তাঁর ধারণা, গ্রুপে ভারত বিশ্ব ক্রমতালিকার সবচেয়ে নীচে থাকা দল হলেও সবাই সমীহ করছে তাদের।

এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমাদের প্রতিপক্ষের কোচেদের দিকে যদি দেখেন, তা হলে বোঝা যাবে এটাই অন্যতম কঠিন গ্রুপ। প্রত্যেকেই খুবই অভিজ্ঞ ও সিরিয়াস কোচ। তবে যাদের সঙ্গেই দেখা করেছি, তারা বলেছেন, ভারত যথেষ্ট গোছানো দল ও যে কোনও দলকে ধাক্কা দিতে পারে। ওঁদের মুখে এ কথা শুনেই আমার আত্মবিশ্বাস আরও বেড়ে গিয়েছে”।

মোট ছ’টি গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে ২৪টি দলকে। গ্রুপ এ-তে রয়েছে তাজিকিস্তান, লেবানন, চীন ও আয়োজক কাতার। গ্রুপ সি-তে রয়েছে চীনা হংকং, প্যালেস্তাইন, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী ও ইরান। ইন্দোনেশিয়া, ইরাক, জাপান ও ভিয়েতনাম রয়েছে গ্রুপ ডি-তে। মালয়েশিয়া, বাহরিন, জর্ডন ও দক্ষিণ কোরিয়া গ্রুপ ই-তে এবং গ্রুপ এফ-এ রয়েছে তাইল্যান্ড, কিরগিজ রিপাবলিক, ওমান ও সৌদি আরব।

প্রতি গ্রুপ থেকে দুটি সেরা দল প্রি কোয়ার্টার ফাইনালে উঠবে। ভারত তাদের গ্রুপে সেরা দুইয়ে থাকতে পারবে কি না, সেটাই দেখার। অবশ্য ছ’টি গ্রুপের তিন নম্বর দলগুলির মধ্যে সেরা চারটির মধ্যে থাকলেও ১৬ দলের নক আউট রাউন্ডে খেলার যোগ্যতা পাওয়া যাবে। সে জন্য ভারতকে গ্রুপ পর্বে তিনটির মধ্যে অন্তত দু’টি ম্যাচে জিততে হবে।

এশিয়ান কাপের প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই শুরু করে দিয়েছে ভারত। গত মার্চে তারা ইম্ফলে ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টে মায়ানমারকে ১-০-য় ও কিরগিজ রিপাবলিককে ২-০-য় হারায়। আগামী মাসে তারা প্রথমে ভুবনেশ্বরে ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপে খেলবে এবং তার পরে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেবে। তার পরে আরও প্রস্তুতি সফর ও ফ্রেন্ডলি ম্যাচের পরিকল্পনা রয়েছে ভারতের। এর মধ্যে হিরো আইএসএল-সহ ক্লাব টুর্নামেন্টগুলিও হবে। ফলে ভারতীয় দলের ফুটবলাররা এশিয়ান কাপের আগে প্রচুর ম্যাচ-টাইম পেতে চলেছেন।

এই নিয়ে পঞ্চমবার এশিয়ান কাপের মূলপর্বে অংশ নিতে চলেছে ভারত। ১৯৬৪, ১৯৮৪, ২০১১ ও ২০১৯-এ অংশ নেয় ভারত। ১৯৬৪-তে রানার্সেরও খেতাবও অর্জন করে তারা। এ বার মহদেশের সবচেয়ে বড় ফুটবলের আসরে দক্ষিণ এশিয়া থেকে একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিচ্ছে ভারতই।