সুনীল ছেত্রীর জোড়া গোলে আয়োজক মলদ্বীপকে হারিয়ে এ বারের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ফুটবলের ফাইনালে উঠল ভারত। ফল ৩-১। আগামী শনিবার ফাইনালে তারা নেপালের মুখোমুখি হবে। বুধবার মলদ্বীপের মালে-তে ন্যাশনাল ফুটবল স্টেডিয়ামে সুনীল ছেত্রীর দুগোল ও মনবীর সিংয়ের গোলে মলদ্বীপকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে সাত বারের চ্যাম্পিয়ন ভারত। মলদ্বীপের হয়ে পেনাল্টি থেকে গোল করেন আলি আশফাক।     

এই নিয়ে ১২ বার দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় আন্তর্দেশীয় ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠল ভারত। এর আগে সাতবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তারা, চারবার রানার্স হয়েছে। ২০১৮-য় ফাইনালে এই মলদ্বীপের কাছেই ১-২ গোলে হেরে রানার্স হতে হয়েছিল ভারতকে। এ বার গ্রুপলিগের শেষ ম্যাচে তাদের হারিয়েই ফাইনালে উঠলেন সুনীল ছেত্রীরা এবং মলদ্বীপকে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে দিলেন তাঁরা।

শনিবার ফাইনালে ভারত মুখোমুখি হবে নেপালের। এ দিন বিকেলের ম্যাচে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ১-১ ড্র করে ফাইনালে জায়গা করে নেয় নেপাল। ভারত চার ম্যাচে আট পয়েন্ট পেয়ে লিগ তালিকার শীর্ষে থেকে ফাইনালে উঠল। নেপালের অর্জিত পয়েন্ট সংখ্যা চার ম্যাচে সাত। মলদ্বীপ শেষ করল তিন নম্বরে ও বাংলাদেশ চারে।

  • ২৬ মিনিট: বাঁ দিকের উইং থেকে রাহুল ভেকের ফ্রি কিকে গোলের সামনে থেকে হেড করেন সুনীল ছেত্রী। কিন্তু তা পোস্টে লেগে ফিরে আসে।
  • ৩৩ মিনিট: ভারতের গোল। ডান দিক দিয়ে বল নিয়ে বিপক্ষের বক্সে ঢুকে ছগজের বক্সের সামনে ডানদিক থেকে ৪৫ ডিগ্রি কোণ থেকে মাপা শটে গোল করেন মনবীর।
  • ৪৩ মিনিট: মলদ্বীপের গোল শোধ। গোলমুখী ফরোয়ার্ড হামজাকে বক্সের মধ্যে প্রীতম অবৈধ ভাবে বাধা দেওয়ায় পেনাল্টি পায় মলদ্বীপ, যা থেকে গোল করে সমতা আনেন আশফাক।
  • ৬২ মিনিট: দ্বিতীয় গোল ভারতের। বক্সের মধ্যে থেকে মাপা কোণাকুনি শটে গোল করেন সুনীল, যা তিনি পান মনবীরের কাছ থেকে।
  • ৭১ মিনিট: ভারত ৩-১। ডান দিকের উইং থেকে আসা ফ্রি কিকে অসাধারণ ও নিখুঁত হেড করে বল জালে জড়িয়ে দেন তিনি।

গত ম্যাচের দলে কোনও পরিবর্তন না করেই এ দিন প্রথম একাদশ নামান ভারতীয় কোচ ইগর স্টিমাচ। ৪-৪-২ ছকে খেলা শুরু করে ভারত। এ দিন মূলত ভারতেরই আধিপত্য থাকলেও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করে গিয়েছে মলদ্বীপ। বল দখলের লড়াইয়ে ভারত সামান্য এগিয়ে (৫৬-৪৪) ছিল যেমন, তেমনই গোলে শটের সংখ্যার দিক থেকেও সামান্যই এগিয়ে (৪-৩) ছিলেন সুনীলরা। তবে শারীরিক ফুটবলও যথেষ্ট হয় এ দিন, যা কড়া হাতে নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে রেফারি ভারতের তিনজনকে ও মলদ্বীপের দুজনকে হলুদ কার্ড দেখান। তবে রেফারিংয়ে একেবারে খুশি না হয়ে বারবার প্রতিবাদ করায় ম্যাচের শেষ দিকে লাল কার্ড দেখতে হয় ভারতীয় কোচ ইগর স্টিমাচ ও তাঁর এক সহকারী কোচকে। ফাইনালে এই দুজন মাঠে থাকতে পারবেন না।  

শুরুর দিকে ভারত বিপক্ষকে চাপে রাখার চেষ্টা করলেও মলদ্বীপ প্রতি আক্রমণে ওঠার চেষ্টা করছিল বারবার। ৯ মিনিটের মাথায় তাদের তারকা খেলোয়াড় আলি আশফাক এমনই এক প্রতি আক্রমণে বিপজ্জনক জায়গায় বল পেয়ে যান। তখন তাঁকে বাধা দেওয়ার জন্য শুধু রাহুল ভেকে ছিলেন। কিন্তু সময় নষ্ট করে ফেলায় দ্রুত অন্য ডিফেন্ডাররা তাঁকে ঘিরে ধরেন এবং রাহুল তাঁর পা থেকে বল কেড়ে নেন। ২৮ মিনিটের মাথাতেও একই ভাবে ফাঁকায় বল পেয়ে যান আশফাক। এ বার তাঁকে থামান শুভাশিস বসু।

প্রথম ১৫ মিনিটে সুযোগ তৈরির দিক থেকে মলদ্বীপই এগিয়ে ছিল এ দিন। গ্যালারি ভর্তি সমর্থকদের চিৎকারে ফুটবলাররা বেশ উদ্বুদ্ধও হয়ে ওঠেন। যেহেতু একটি ড্র করলেই ফাইনালে উঠে পড়ার সুযোগ ছিল আয়োজকদের সামনে, তাই খুব একটা চাপে ছিল না তারা। ভারত বরং কিছুটা বেশি চাপেই ভুগছিল। কারণ, ফাইনালে ওঠার জন্য এই ম্যাচে জেতা ছাড়া কোনও রাস্তা ছিল না সাত বারের সাফ চ্যাম্পিয়নদের। তবে ভুল পাসের প্রবণতা ও বোঝাপড়ার অভাব এই ম্যাচেও দেখা যায় ভারতীয় দলের মধ্যে।

ভারত ক্রমশ ছন্দে ফিরে আসে এবং ২৬ মিনিটের মাথায় গোলের সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে যায়। বাঁ দিকের উইং থেকে রাহুল ভেকের ফ্রি কিকে গোলের সামনে থেকে হেড করেন সুনীল ছেত্রী। কিন্তু তা পোস্টে লেগে ফিরে আসে। এর পরে আর গোলের জন্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি ভারতকে। ৩৩ মিনিটের মাথায় দুর্দান্ত কোণাকুনি শটে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন মনবীর সিং। ডান দিক দিয়ে বল নিয়ে বিপক্ষের বক্সে ঢুকে ছগজের বক্সের সামনে ডানদিক থেকে ৪৫ ডিগ্রি কোণ থেকে মাপা শটে গোল করেন মনবীর।

ওই গোলের সময় কার্যত ভারতের হাতেই ছিল ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ। মনবীরের গোলের পর থেকে ম্যাচের রাশ তারাই নিজেদের হাতে নিয়ে নেয়। কিন্তু প্রথমার্ধের শেষ দিকে ৪২ মিনিটের মাথায় যে ভুল করেন প্রীতম, তার মাশুল দিতে হয় ভারতকে। গোলমুখী ফরোয়ার্ড হামজা মহম্মদকে বক্সের মধ্যে প্রীতম অবৈধ ভাবে বাধা দেওয়ায় পেনাল্টি পায় মলদ্বীপ, যা থেকে গোল করে সমতা আনেন আশফাক। 

দ্বিতীয়ার্ধ শুরুর পাঁচ মিনিটের মধ্যেই ব্র্যান্ডন ফার্নান্ডেজ চোট পেয়ে মাঠের বাইরে চলে যাওয়ায় উদান্ত সিং পরিবর্ত হিসেবে মাঠে নামেন। তবে শুরুর দিকে ভারত ধারালো আক্রমণে উঠতে পারেনি। দশ মিনিট পর থেকে ছন্দে ফেরে তারা। ৬০ মিনিটের মাথায় ডান দিক থেকে গোলের সুযোগ তৈরির চেষ্টা করে ভারত। তবে তা ব্যর্থ হলে ফিরতি বলে বক্সের বাইরে থেকে লম্বা শট নেন সুরেশ, যা গোলের বাইরে চলে যায়।   

ভারতকে স্বস্তি এনে দেয় সুনীল ছেত্রীর অনবদ্য গোল, যা তিনি করেন ৬২ মিনিটের মাথায়। বক্সের মধ্যে থেকে মাপা কোণাকুনি শটে গোল করেন সুনীল। মনবীরের কাছ থেকে বল পেয়ে গোলটি করেন তিনি। এই গোলের পরেই বিপক্ষের বক্সের মাথা থেকে ফ্রি কিক পেয়ে যায় মলদ্বীপ। আলি আশফাক সোজা গোলে শট নিলে তা সেভ করেন গোলকিপার গুরপ্রীত।

সুনীল তাঁর দ্বিতীয় গোল করে ব্যবধান বাড়িয়ে নেন ৭১ মিনিটের মাথায়। ডান দিকের উইং থেকে আসা ফ্রি কিকে অসাধারণ ও নিখুঁত হেড করে বল জালে জড়িয়ে দেন তিনি। স্টিমাচের তত্ত্বাবধানে থাকা ভারতীয় দল এই প্রথম একই ম্যাচে দুইয়ের বেশি গোল করল।

দল মাঠে সফল হলেও ভারতীয় কোচ কিন্তু মাঠের বাইরে সমানে তাঁর অসন্তোষ প্রকাশ করে যান রেফারির বিরুদ্ধে। অনেকবার তাঁকে সতর্ক করার পরে নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার দশ মিনিট আগে লাল কার্ড দেখানো হয়। লাল কার্ড দেখেন তাঁর কোচিং দলের আর এক সদস্যও।

ম্যাচের শেষ দিকে মলদ্বীপ একাধিকবার প্রতি আক্রমণের চেষ্টা করলেও ভারত তাদের গোলের সামনে প্রায় দেওয়াল তুলে দেওয়ায় তাদের পক্ষে আর ব্যবধান কমানো সম্ভব হয়নি।  

ভারতীয় দল: গুরপ্রীত সিং সান্ধু (গোল), রাহুল ভেকে, শুভাশিস বসু, প্রীতম কোটাল, মন্দার রাও দেশাই (চিঙলেনসানা সিং), লালেঙমাউইয়া (লিস্টন কোলাসো), ইয়াসির মহম্মদ (অনিরুদ্ধ থাপা), সুরেশ রেশ সিং, ব্র্যান্ডন ফার্নান্ডেজ (উদান্ত সিং), মনবীর সিং (রহিম আলি), সুনীল ছেত্রী (গ্ল্যান মার্টিন্স)।