বাংলার মাটি থেকে ভারতীয় ফুটবলের আকাশ ছোঁয়ার হাতছানি সব সময়ই তাঁর সামনে। ভারতীয় দলে তাঁকে না পেয়ে দলের প্রধান কোচ ইগর স্টিমাচ বারবার আফসোস করেছেন। বলেছেন, এই ছেলেটির মধ্যে ভবিষ্যতের তারকা হয়ে ওঠার যাবতীয় উপাদান রয়েছে।

দেশের ফুটবলপ্রেমীদের নজর অবশ্য আগেই কেড়েছিলেন বারাকপুর থেকে উঠে আসা চেন্নাইন এফসি-র ফরোয়ার্ড রহিম আলি। ২০১৯-২০ মরশুমে হিরো আইএসএল অভিষেকে। তার আগেও হিরো আই লিগে ইন্ডিয়ান অ্যারোজের হয়ে খেলে সাফল্য পান এবং সেই সাফল্যই তাঁকে ভারতের অনূর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপ দলে জায়গা করে দেয়।

কিন্তু এ বছর যখন ভারতের সিনিয়র দলের হয়ে এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে মাঠে নামার সময় আসে, তখনই চোটের জন্য কয়েক মাসের জন্য মাঠের বাইরে ছিটকে যেতে হয় রহিমকে। সেই লড়াই জিতে মাঠে ফিরেছেন ২২ বছর বয়সি এই ভারতীয় ফরোয়ার্ড, যিনি তাবড় তাবড় বিদেশি ফুটবলারদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে খেলেছেন দেশের এক নম্বর ফুটবল লিগে। গত মরশুমে ১৮টি ম্যাচে দুটি গোল ও দুটি অ্যাসিস্ট করেন তিনি।

তবে এ সবই যে তাঁর কাছে বড় চ্যালেঞ্জ এবং প্রতিদিনই যে এমন নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত তিনি, তা বলতে দ্বিধা নেই রহিমের। indiansuperlegue.com কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তেমনই বলেছেন তিনি। এখনও যে ফুটবল থেকে অনেক কিছু শেখার বাকি তাঁর এবং কঠোর পরিশ্রম করে যে আবার ভারতীয় দলে জায়গা করে নিতে চান রহিম, সে কথাও শুনিয়েছেন বাংলার ছেলেটি। সেই সাক্ষাৎকারেরই উল্লেখযোগ্য অংশ তুলে দেওয়া হল।   

তিন বছর আগে চেন্নাইন এফসি-তে যোগ দেওয়ার পরে ক্রমশ নিজেকে উন্নত করে তুললে কী ভাবে? কাদের কাছে সবচেয়ে বেশি সাহায্য পেয়েছ?

চেন্নাইন এফসি-র কাছ থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পরে মনে হয়েছিল, ওরা দুবারের হিরো আইএসএল চ্যাম্পিয়ন। তাই নিশ্চয়ই একটা ভাল দল গড়ার দিকে এগোচ্ছে, যাতে আরও ট্রফি জিততে পারে। এ জন্যই আমি এই ক্লাবের প্রতি আরও আগ্রহী হয়ে উঠি। চেন্নাইন এফসি-র জন্য (হিরো আইএসএল) ট্রফি জেতাই এখন আমার লক্ষ্য। নিজের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য এটাই আদর্শ মঞ্চ। অনিরুদ্ধ থাপা, রাফায়েল ক্রিভেলারো, এলি সাবিয়া, লুসিয়ান গোয়ানের মতো ফুটবলারদের কাছ থেকে যথেষ্ট সাহায্য পেয়েছি। ওরা আমাকে আমার খেলার স্টাইলে উন্নতি করতে প্রচুর উৎসাহ জুগিয়েছে। ওদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি আমি। আমার বয়স কম, তাই এখনও অনেক কিছু শেখার বাকি আছে।

যে জায়গায় তুমি খেলো, সেই জায়গায় মূলত বিদেশিরাই আধিপত্য করে। এর ফলে কি তোমার চ্যালেঞ্জটা আরও কঠিন হয়েছে? টেকনিক ও মনস্তাত্বিক দিক থেকে এই চ্যালেঞ্জটা কী ভাবে সামলাও?

আমার জায়গায় খেলা ফুটবলাররা সব সময়ই আমার কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। তাই প্রতিদিন নিজেকে উন্নত করে তোলার তাগিদ থাকে। জানি যে, বিদেশি ফুটবলাররা আমার চেয়ে ভাল এবং সেই জন্যই তাদের হিরো আইএসএলে খেলার জন্য আনা হয়। এটা আমার কাছে বড় চ্যালেঞ্জ এবং এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে আমি প্রস্তুত। সে জন্য আমাকে ফুটবলের প্রতি আরও নিষ্ঠাবান হতে হবে, আরও বেশি পরিশ্রম করতে হবে এবং বিনীত থাকতে হবে।

তোমার ফুটবল জীবনের শুরুর কথা যদি একটু বলো, ২০১৭-য় ইন্ডিয়ান অ্যারোজের হয়ে খেলার সুযোগ  পেলে কী ভাবে?

কোকা কোলা কাপে বাংলার হয়ে খেলার পরে আমাকে ইন্ডিয়ান অ্যারোজ দলের জন্য বাছা হয়। ৬-৭ বছর বয়সে ফুটবল শুরু করেছিলাম। দাদার খেলা দেখতে ফুটবলে মাঠে যেতাম এবং সেই থেকেই ফুটবলের প্রতি আকর্ষণ জন্মায় আমার মধ্যে। তবে শুরুতে আমার খেলা নিয়ে আমার পরিবারের লোকেদের তেমন আগ্রহ বা সমর্থন কিছুই ছিল না। পরে যখন আমি কোকা কোলা কাপে খেলি, মোহনবাগানের হয়ে খেলি, তখন পরিবারের লোকেরা আমার পাশে এসে দাঁড়ায়। সেখান থেকেই আমার ফুটবল জীবন শুরু হয়।

এএফসি এশিয়ান কাপ ২০২৩-এর মূলপর্বে ভারতীয় দলের যোগ্যতা অর্জন নিয়ে কী বলবে? জাতীয় দলের কাছে তোমার কী প্রত্যাশা?

চোটের জন্য ভারতীয় দলে সুযোগ পেয়েও খেলতে না পারায় আমি খুবই হতাশ। কিন্তু ফুটবল এ রকমই। চোট-আঘাত ফুটবলেরই একটা অঙ্গ এবং চোট যে কোনও সময় হতেই পারে। তবে ভারতীয় দল বাছাই পর্বে যে পারফরম্যান্স দেখিয়েছে, তাতে আমি খুবই খুশি। আমি খেলা দেখতে গিয়েছিলাম এবং ওদের পারফরম্যান্স দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছি। এই দলের জন্য আমি গর্বিত। আমি আত্মবিশ্বাসী যে, নিয়মিত পরিশ্রম করে ও অদূর ভবিষ্যতে ফের জাতীয় দলে ডাক পাব।

ভারতীয় দলের হয়ে তো ছটি ম্যাচ খেলা হয়ে গিয়েছে তোমার। সেই অভিজ্ঞতা সম্পর্কে যদি কিছু বলো

হ্যাঁ, ভারতের হয়ে ছটি ম্যাচ খেলেছি ঠিকই। কিন্তু আমার পক্ষে ব্যাপারটা মোটেই সহজ ছিল না। যখনই আমি সুযোগ পাই, তখনই নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করি। (সুনীল) ছেত্রী ভাইয়ের সঙ্গে যখনই মাঠে নামি, তখন আমি মুহূর্তগুলো দারুন উপভোগ করি। ছেত্রী ভাই আমাদের সব সময়ই ফুটবলকে উপভোগ করার ব্যাপারে বেশি উৎসাহ জোগান। তাতে খেলাটা অনেক সহজ হয়ে যায়। ম্যাচে এবং অনুশীলনের ফাঁকে উনি শুধু আমাকে নয়, দলের প্রত্যেককে সাহায্য করেন। ওঁর মতো একজন সিনিয়র তারকা যদি আমার মতো উঠতি খেলোয়াড়দের পাশে থাকেন, তা হলে তার প্রশংসা করতেই হবে।