এ মরশুমে মোহনবাগানের রক্ষণ সামলানোর দায়িত্ব মূলত যাঁর ওপর, সেই অস্ট্রেলিয়া থেকে আসা স্কটিশ ডিফেন্ডার টম অ্যালড্রেডের কাছে ভারতে এসে ফুটবল জীবনের নতুন ইনিংস শুরু করাটাই একটা বড় চ্যালেঞ্জ। অস্ট্রেলিয়া থেকে এশিয়ার অন্যতম সেরা ফুটবলখেলিয়ে দেশগুলির কোনও ক্লাবে না গিয়ে সোজা ভারতে আসার অন্যতম কারণ যখন এই নতুন চ্যালেঞ্জ উপভোগ করা, তেমনই ভারতের সেরা ফুটবল লিগ ইন্ডিয়ান সুপার লিগের ক্রমোন্নতি। 

কলকাতায় আসার পর প্রথম সাংবাদিক বৈঠকে বুধবার তেমনই জানালেন গত মরশুমে অস্ট্রেলিয়ার এ-লিগে ব্রিসবেন রোর-কে নেতৃত্ব দেওয়া এবং তাদের হয়ে লিগে ২৫টি ম্যাচ খেলা সেন্টার ব্যাক অ্যালড্রেড। তাঁর ভারতে আসার কারণ যে আইএসএলের ক্রমশ বড় হয়ে ওঠা, তা জানিয়ে অ্যালড্রেড বলেন, “এর আগে ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ায় খেলেছি। যখন ইউরোপ ছেড়ে অস্ট্রেলিয়ায় আসি তখন আমার সামনে একটা নতুন লিগে খেলার সুযোগ ছিল। ভারতে আসার কারণ, এখানকার লিগ আইএসএল ক্রমশ বড় হয়ে উঠছে”। 

স্কটল্যান্ডের এই ৬ ফুট ২ ইঞ্চি উচ্চতার ডিফেন্ডার এ বছর ফেব্রুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্ব নেন। ২০১৯-এ তিনি ব্রিসবেন রোরে যোগ দেন। তার পর থেকে এ-লিগে তিনি ১০২টি ম্যাচ খেলেছেন। রক্ষণ সামলানোর পাশাপাশি তিনটি গোলও করেছেন ও দুটি গোলে অ্যাসিস্টও করেছেন ৩৩ বছর বয়সী এই সেন্টার ব্যাক। তার আগে তিনি ইংল্যান্ডের বারি এফসি, স্কটল্যান্ডের মাদারওয়েল এফসি, ইংল্যান্ডের ব্ল্যাকপুল, বরো-সহ দুই দেশের অনেক ক্লাবের হয়ে খেলেন। ২০০৮ থেকে ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়ায় খেলার পর এ বার তিনি এসেছেন ভারতে। 

ভারতে আসার আগেই আইএসএল নিয়ে অনেক খবর নিয়ে নেন তিনি। আইএসএলের অনেক ম্যাচও দেখেছেন। ভারতের এক নম্বর লিগ নিয়ে অ্যালড্রেড বলেন, “ভারতের লিগে অনেক ভাল ভাল দেশীয়, বিদেশী ফুটবলারদের খেলতে দেখেছি। মোহনবাগানের ভারতীয় ফুটবলাররাও খুবই ভাল। এখানে এসে ভারতীয় সতীর্থদের সঙ্গেও কথা হয়েছে, ওদেরও অনেকের ইউরোপে গিয়ে খেলার যোগ্যতা আছে বলে মনে হয় আমার। আমি একটা নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে চেয়েছিলাম। এই নিয়ে চতুর্থ দেশে খেলতে এসেছি আমি। এ দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী ক্লাব তো মোহনবাগানই। তাই এখানে এসে খুবই ভাল লাগছে, নিজেকে আরও আত্মবিশ্বাসী ও শক্তিশালী মনে হচ্ছে”। 

তাঁর ভারত-পর্বের শুরুটাও বেশ ভাল হয়েছে বলে জানালেন অ্যালড্রেড। এ দেশে পা রাখার কয়েক দিন পরেই মাঠে নেমে পড়তে হয় তাঁকে। ডুরান্ড কাপের প্রথম ম্যাচেই শুরু থেকেই খেলেন তিনি। যদিও একটু শ্লথ লেগেছে তাঁকে। কিন্তু সমর্থকদের হতাশ করার মতো পারফরম্যান্স দেখাননি তিনি। 

ভারতে এসে যে ফুটবলটা বেশ উপভোগ করছেন, তা জানিয়ে অ্যালড্রেড সাংবাদিকদের বলেন, “আমার কাছে ভারতে আসাটা একটা নতুন অভিজ্ঞতা। উপভোগও করছি। অস্ট্রেলিয়া থেকে ভারতে এসে যে অনেক কিছু অন্যরকম দেখব, তা জানতামই। এর আগেও যেহেতু একাধিক দেশে খেলতে গিয়েছি, তাই পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াটা আমার কাছে খুব একটা কঠিন নয়। এখানে আসার পর খুব ভাল অনুশীলন হয়েছে। সতীর্থরাও খুব ভাল। এখানকার অভিজ্ঞতা বেশ ভাল, উপভোগ্য। কলকাতার মানুষের সঙ্গে মেশার চেষ্টা করছি। বেশ ভালই লাগছে ওদের”। 

সবুজ-মেরুন শিবিরে তাঁর তিন স্বদেশীয় বিশ্বকাপার রয়েছেন। দুই তারকা ফরোয়ার্ড দিমিত্রিয়স পেট্রাটস, জেসন কামিংস তো আগে থেকেই আছেন। এ মরশুমের আগে যোগ দিয়েছেন আর এক দুরন্ত ফরোয়ার্ড জেমি ম্যাকলারেন। সে জন্য আরও খুশি ও স্বচ্ছন্দ অ্যালড্রেড। অজি সতীর্থদের প্রসঙ্গ উঠতেই তিনি বলেন, “দিমি, জেমি ও জেসন-অস্ট্রেলিয়ায় এই তিন খেলোয়াড়ের সঙ্গেই খেলার অভিজ্ঞতা আছে আমার। তিনজনই খুব ভাল খেলোয়াড়। অনেক গোল করে এবং করায়ও। ওদের গোল-অবদান প্রচুর। ওরা সবাই এ লিগের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়। ওদের সঙ্গে মাঠে নামার অপেক্ষায় আছি। সতীর্থদের সবার সঙ্গেই একটু একটু করে ভাল সম্পর্ক গড়ে উঠছে আমার। দল হিসেবে খেলতে হবে আমাদের। মোহনবাগানের মতো দল, যারা ট্রফি জিততে অভ্যস্ত, সেই দলের ফুটবলার হিসেবে আমাদের সবাইকেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে”।

বৃহস্পতিবার বিকেলে ডুরান্ড কাপের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নামছে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। প্রতিপক্ষ ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্স। প্রথম ম্যাচে কাশ্মীরের ডাউনটাউন হিরোজকে এক গোলে হারানোর পর দ্বিতীয় ম্যাচে দল আরও শক্তিশালী হয়ে মাঠে নামবে বলে ধারণা অ্যালড্রেডের। এই ম্যাচ নিয়ে তিনি বলেন, “দলের সিনিয়র খেলোয়াড়রা একে একে যোগ দিচ্ছে অনুশীলনে। প্রথম ম্যাচের সময় এখানকার দল, পরিবেশ নিয়ে অতটা ওয়াকিবহাল ছিলাম না। তখন দলের সিনিয়র খেলোয়াড়ও বেশি ছিল না। রিজার্ভ দলের খেলোয়াড়রাই মূলত খেলে সেই ম্যাচে। দিন দশেক অনুশীলনের পরে ও সিনিয়ররা এসে যাওয়ায় আমরা এখন অনেকটা শক্তিশালী”। 

এই ম্যাচের পরই মরশুমের প্রথম কলকাতা ডার্বি আগামী ১৮ অগাস্ট। তার প্রস্তুতির জন্য আরও ন’দিন পেয়ে যাবে দুই দলই। কলকাতায় আসার আগে ও পরে ডার্বির কথা অনেক শুনলেও সেই ম্যাচ নিয়ে এখনও ভাবনা শুরু করেননি বলে জানালেন স্কটিশ ডিফেন্ডার। বলেন, “এখানে আসার পর থেকে গত দিন দশেক ধরে লোকের মুখে শুধু ডার্বির কথা শুনে যাচ্ছি। কলকাতায় আসার আগে ভিডিও-ও দেখেছি অনেক। সতীর্থদের কাছ থেকেও শুনেছি, কতটা গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচ। বৃহস্পতিবারের ম্যাচের পরে আমাদের ডার্বি খেলতে নামতে হবে। যে কোনও ডার্বির ক্লাবের কাছেই এটা একটা বিশাল ম্যাচ। তবে ফুটবলে সব সময় পরবর্তী ম্যাচেই মনোনিবেশ করা হয়। তাই বৃহস্পতিবার ডুরান্ড কাপের ম্যাচটাই এখন আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ”।