আগামী বৃহস্পতিবারই ভারত আগামী ফিফা বিশ্বকাপ ও এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বের অভিযান শুরু করতে চলেছে। ওই দিন কুয়েত সিটির জাবের আল আহমাদ স্টেডিয়ামে কুয়েতের বিরুদ্ধে খেলতে নামবে ভারত। যার প্রস্তুতি এখন চলছে দুবাইয়ে।

ভারতের গ্রুপে কাতার ও কুয়েত ছাড়াও থাকবে আফগানিস্তান। ভারতের গ্রুপে তাদের চেয়ে ক্রমতালিকায় ওপরে থাকা একমাত্র দল কাতার। বাকি দু’টি দল ক্রমতালিকায় তাদের চেয়ে নীচে রয়েছে। প্রতি গ্রুপ থেকে দুটি করে দল তৃতীয় রাউন্ডে উঠবে। ফলে ভারতের তৃতীয় রাউন্ডে ওঠার সম্ভাবনা অবশ্যই রয়েছে, যদি তারা তাদের সেরা পারফরম্যান্স দেখাতে পারে। গত বিশ্বকাপ ও আসন্ন এশিয়ান কাপের আয়োজক কাতার এখন বিশ্ব ক্রমতালিকায় ৬১ নম্বরে রয়েছে। ভারত রয়েছে ১০২ নম্বরে। কুয়েত ১৩৬-এ এবং আফগানিস্তান ১৬০ নম্বরে রয়েছে।

বিশ্ব ফুটবলের নিয়ামক সংস্থা ফিফা জানিয়েছে, ২০২৬-এ বিশ্বকাপের মূলপর্ব হবে ৪৮টি দেশকে নিয়ে। এশিয়া থেকে আটটি দল খেলবে সেই বিশ্বকাপে। এ ছাড়াও আরও একটি এশীয় দেশ প্লে-অফের গণ্ডী পেরিয়ে মূলপর্বে উঠতে পারে। ফলে ভারত ধারাবাহিক ভাবে ভাল পারফরম্যান্স দেখাতে পারলে ভাল খবর পেতে পারে। যদিও তা এখন বেশিরভাগ ভারতীয় ফুটবলপ্রেমীর কাছেই অলীক স্বপ্ন।

ভারতীয় ফুটবল দল অবশ্য বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে ভাল খেলা ও অঘটন ঘটানোর দৃষ্টান্ত এর আগেও রেখেছে। একাধিকবার ভারত আশাতীত ভাল খেলে অঘটন ঘটিয়েছে। কিন্তু ধারাবাহিকতার অভাবে বারবার ব্যর্থ হয়েছে তারা।

১৯৮৬-র বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে ভারত পূর্ব এশিয়া জোনের গ্রুপ পর্বে দুই নম্বরে ছিল। কিন্তু গ্রুপ থেকে মাত্র একটি দল পরের পর্বে ওঠায় ইন্দোনেশিয়া সেই গ্রুপ থেকে ওঠে। ১৯৯৪ বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে ভারত এশীয় অঞ্চলের গ্রুপ ডি-তে সবার শেষে ছিল। ১৯৯৮ বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে দশ নম্বর গ্রুপের তিন নম্বরে থেকে শেষ করে ভারত। ২০০২ বিশ্বকাপের বাছাই পর্বেও প্রথম রাউন্ডে গ্রুপের তিন নম্বর জায়গায় ছিল ভারত। পরের বারেও দ্বিতীয় রাউন্ডে তৃতীয় গ্রুপের তিন নম্বরে থেকে শেষ করে ভারত।

২০১০-এর বাছাই পর্বের প্রথম রাউন্ডের প্লে অফ থেকেই ছিটকে যায় তারা এবং ২০১৪-য় দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে ছিটকে যায় তারা। ২০১৮-য় দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠলেও গ্রুপের শেষে ছিল ভারত এবং গতবার, অর্থাৎ ২০২২ বিশ্বকাপের বাছাই পর্বের দ্বিতীয় রাউন্ডে গ্রুপের তিন নম্বরে থেকে ছিটকে যায়। আজ পর্যন্ত কোনও বারই ভারতের বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের তৃতীয় রাউন্ডে ওঠা হয়নি। এ বার তাদের সামনে সেই ঐতিহাসিক মাইলফলক প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ এসেছে। কিন্তু সে জন্য তাদের ধারাবাহিক ভাবে সেরা পারফরম্যান্স দেখাতে হবে। যেমন তারা অতীতে মাঝে মাঝে দেখাতে পেরেছে।

বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে এ বারের অভিযান শুরুর আগে ভারতের অতীতের সেরা পারফরম্যান্সগুলির দিকে একবার ফিরে তাকানো যাক।

ভারত ২-০ ফিলিপিন্স, বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব ১৯৯৮

কাতারের দোহায় সেই ম্যাচের শেষ দশ মিনিটে পরপর দু’গোল করেন রমন বিজয়ন ও ব্রুনো কুটিনহো। বিজয়ন গোলটি করেন ৮১ মিনিটে ও কুটিনহো গোল করেন ৮৫ মিনিটে। সেই ম্যাচের প্রথম এগারোয় বাংলার দুই ফুটবলার দীপেন্দু বিশ্বাস ও বাসুদেব মন্ডল ছিলেন। রিজার্ভ বেঞ্চে ছিলেন হেমন্ত ডোরা, অলোক দাস ও অমিত দাস। বাইচুং ভুটিয়াকেও সেই ম্যাচে রিজার্ভ বেঞ্চে রাখা হয়েছিল। তবে ২৮ মিনিটের মাথায় গুরিন্দর গিলের জায়গায় তাঁকে নামানো হয়। ভারতীয় দলের অপর পরিবর্ত খেলোয়াড় ছিলেন রমন বিজয়ন। তিনি বাসুদেব মন্ডলের জায়গায় ৬২ মিনিটের মাথায় নামেন ও ৮১ মিনিটের মাথাতেই গোল করে দলকে এগিয়ে দেন। এই ম্যাচে জিতলেও শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে তাদের ১-১ ড্র ও কাতারের কাছে ০-৬-এ হার ভারতকে লড়াই থেকে ছিটকে দেয়।

ভারত ১-০ সংযুক্ত আরব আমিরশাহী, বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব ২০০২

বেঙ্গালুরুতে সেই ম্যাচে ভারত গ্রুপের প্রথম ম্যাচেই অপ্রত্যাশিত ভাবে হারায় সংযুক্ত আরব আমিরশাহীকে। জুলস আলবার্তো ডায়াসের গোলে জেতে ভারত। ৭২ মিনিটের মাথায় গোল করে ভারতকে এই অঘটনের জয় এনে দেন তিনি। দীপক মন্ডল, মহেশ গাওলি, রেনেডি সিং, জো পল আনচেরি, বাইচুং ভুটিয়ারা সেই ম্যাচে শুরু থেকে খেলেন। আইএম বিজয়ন দ্বিতীয়ার্ধে ৫৮ মিনিটের মাথায় মাঠে নামেন। কিন্তু পরের ম্যাচে ইয়েমেনের সঙ্গে তারা ১-১ ড্র করে, যা ছিল অপ্রত্যাশিত। আমিরশাহীও তাদের ঘরের মাঠে ১-০-য় জিতে বদলা নিয়ে নেয়। ইয়েমেনের সঙ্গে ফের ৩-৩ ড্র হয় ভারতের। শেষে ব্রুনেইকে পরপর দুটি ম্যাচে হারিয়েও কিছু করতে পারেননি। গ্রুপে ইয়েমেন ও ভারতের পয়েন্ট এক থাকলেও গোলপার্থক্যের বিচারে ইয়েমেন গ্রুপে দুই ও ভারত তিন নম্বরে ছিল। কেউই পরের রাউন্ডে যেতে পারেনি।

ভারত ৫-০ ব্রুনেই, বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব ২০০২

বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে এটাই ভারতের সবচেয়ে বড় জয়। বেঙ্গালুরুতেই এই জয় পেয়েছিল ভারত। ১২ মিনিটে ডায়াস প্রথম গোল করে দলকে এগিয়ে দেন। ২৪ মিনিটের মাথায় দ্বিতীয় গোল করেন আইএম বিজয়ন। ৩৬ মিনিটে ব্যবধান বাড়ান বাইচুং ভুটিয়া, আনচেরি চার নম্বর গোলটি করেন ৬১ মিনিটের মাথায় ও ৮০ মিনিটের মাথায় শেষ গোল করেন হাকিম আব্দুল। ব্রুনেইয়ের ফুটবলাররা একটিও গোল শোধ করতে পারেননি। এই ম্যাচের ন’দিন আগেই ব্রুনেইয়ে গিয়ে তাদের ১-০-য় হারিয়ে আসে ভারত।

ভারত ১-০ সিঙ্গাপুর, বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব ২০০৬

সেবার জাপান, ওমান, সিঙ্গাপুরের সঙ্গে বেশ কঠিন গ্রুপে ছিল ভারত। বাছাই পর্বের প্রথম ম্যাচেই সিঙ্গাপুরকে হারিয়ে দিয়ে হইচই ফেলে দেয় ভারত। ২০০৪-এর ফেব্রুয়ারিতে গোয়ার ফতোরদা স্টেডিয়ামে হওয়া সেই ম্যাচের ৫০ মিনিটের মাথায় রেনেডি সিংয়ের গোলে জেতে ভারত। কিন্তু কোচিতে তার পরের ম্যাচেই তারা ওমানের কাছে ১-৫-এ হেরে যায় ও জাপানের কাছে ৭-০-য় হারে। ফিরতি ম্যাচেও জাপান ৪-০-য় জেতে। সিঙ্গাপুরের কাছে ফিরতি ম্যাচে তারা ০-২-এ জেতে এবং ওমানের বিরুদ্ধে গোলশূন্য ড্র করে। ছয় ম্যাচে সে বার মাত্র দুগোল দিয়ে ১৮ গোল খেয়েছিল ভারত।

কাতার ০-০ ভারত, বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব ২০২২

বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ কাতারকে গোলশূন্য ড্রয়ে আটকে রাখাটা ছিল ভারতীয় দলের কাছে বড় সাফল্য। ২০১৯-এর এএফসি এশিয়ান কাপের চ্যাম্পিয়ন ছিল তারা। সেই কাতারের কাছে বড় ব্যবধানে হারবে ভারত, এমনই আগাম ধারণা ছিল বিশেষজ্ঞদের। দোহার জাসিম বিন হামাদ স্টেডিয়ামে ২০১৯-এর সেপ্টেম্বরে সেই ম্যাচই এ পর্যন্ত ইগর স্টিমাচের প্রশিক্ষণাধীন ভারতীয় দলের কাছে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ফলাফল। ওই ম্যাচ থেকে এক পয়েন্ট অর্জন করাটা ছিল ভারতের মতো দলের কাছে বড় ব্যাপার। তার আগের ম্যাচেই ওমান ২-১-এ ভারতকে হারায়। সেই পর্বে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের বিরুদ্ধেও ড্র করে ভারত। এই ফলগুলিই গতবার তৃতীয় রাউন্ডে ওঠার লড়াই থেকে ছিটকে দেয়। সেই ম্যাতে কাতারের ঝারালো আক্রমণকে রুখে দেয় ভারতের অদম্য রক্ষণ। বিশেষ করে গোলকিপার গুরপ্রীত সিং সান্ধুর অতিমানবিক গোলকিপিং সে দিন সবাইকে অবাক করে দেয়। সে ম্যাচে ১১টি অবধারিত গোল বাঁচিয়ে ম্যাচের সেরার পুরস্কার অর্জন করেন গুরপ্রীত।