ভারতীয় দলের ফুটবলারদের মানসিকতার প্রশংসা করলেন প্রধান কোচ ইগর স্টিমাচ। সম্প্রতি মণিপুরের ইম্ফলে সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন আয়োজিত যে ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হল ভারত, তাতে ফিফা ক্রমতালিকায় তাদের চেয়ে ওপরে থাকা কিরগিজ প্রজাতন্ত্রকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় সুনীল ছেত্রীর নেতৃত্বাধীন দল। এর আগে মায়ানমারকেও হারায় তারা।

মায়ানমারকে ১-০-য় হারানোর পরে কিরগিজদের ২-০-য় হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। দুই ম্যাচেই দাপুটে পারফরম্যান্স দেখান ভারতীয় ফুটবলাররা। প্রথম ম্যাচে অনিরুদ্ধ থাপার গোলে জয় আসে ও দ্বিতীয় ম্যাচে সন্দেশ ঝিঙ্গন ও সুনীল ছেত্রী গোল করে দলকে জেতান। স্টিমাচের তত্ত্বাবধানে থাকা দলটি এই নিয়ে টানা পাঁচটি ম্যাচে জয় পেল।

এর আগে ভারত এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে কম্বোডিয়া, আফগানিস্তান, হংকংকে হারিয়ে এশিয়ার সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের মূলপর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। এই নিয়ে টানা দ্বিতীয়বার এশিয়ান কাপের মূলপর্বে খেলবে ভারত, যা দেশের ফুটবলের ইতিহাসে প্রথম।

সাম্প্রতিক এই সাফল্য নিয়ে স্টিমাচ বলেছেন, “ছেলেদের মানসিকতা এবং দলের সামগ্রিক পরিবেশ ছিল খুবই ইতিবাচক। এই ফলগুলোই দলের মধ্যে একটা ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করে দেবে। ঘরের মাঠে টানা পাঁচটি জয় পেলাম আমরা। আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলার পক্ষে এই ধারাবাহিক সাফল্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ”।

ইম্ফলের টুর্নামেন্টে ভারত তিনটি গোল করে। কিন্তু গোল খায়নি। দুই ম্যাচেই ‘ক্লিন শিট’ রেখে মাঠ ছাড়েন সুনীল ছেত্রীরা। প্রথম ম্যাচে ভারত মায়ানমারকে ১-০-য় হারানোয় এবং টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় ম্যাচে মায়ানমার ও কিরগিজ প্রজাতন্ত্র ১-১ ড্র করায় তাদের দ্বিতীয় ম্যাচে ড্র করলেই ভারত সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট পেয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে যেত। কিন্তু মাঠে নামার আগে থেকেই স্টিমাচ জানিয়ে তাঁরা ম্যাচটা জিততেই নামবেন। ক্রমতালিকায় তাদের চেয়ে ১১ ধাপ ওপরে থাকা কিরগিজ প্রজাতন্ত্রকে মোটেই খাটো করে দেখা উচিত নয় বলে জানিয়েছিলেন দলনেতা সুনীল ছেত্রী।

সে জন্যই শুরু থেকেই তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েনি ভারতীয় দল। সুযোগ পেলে তবেই আক্রমণে ওঠে তারা। শারীরিক দিক থেকে এগিয়ে কিরগিজরা ভারতীয়দের নানা ভাবে চাপে রাখার চেষ্টা করেও পেরে ওঠেনি অনিরুদ্ধ থাপাদের দক্ষতা ও ক্ষিপ্রতার জন্য। কী ভাবে বড় চেহারার খেলোয়াড়দের বোকা বানাতে হবে, তা আগে থেকেই দলের ছেলেদের জানিয়ে রেখেছিলেন ক্রোয়েশিয়ান কোচ। সে দিন কোচের নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে ম্যাচ জিতে চ্যাম্পিয়নের খেতাবও জেতে তারা।

দুই ম্যাচেই দলের পারফরম্যান্সে খুশি ভারতীয় দলের কোচ বলেন, “দুই ম্যাচেই দলের ছেলেরা খুবই ধারাবাহিক এবং শৃঙ্খলাবদ্ধ ছিল। মায়ানমার বা কিরগিজ, কোনও দলকেই আমরা কোনও বড় সুযোগ তৈরি করতে দিইনি। পরের ম্যাচে দ্বিতীয়ার্ধে মিনিট দুয়েকের জন্য আমরা অবশ্য একটু নরম মনোভাব দেখিয়াছিলাম। ওই সময় আমরা আমরা আরও ভাল কিছু করতে পারতাম। তবে ছেলেরা ক্রমশ উন্নতি করছে”।

মণিপুরের ফুটবলপ্রেমী জনতা ও সেখানকার আয়োজকদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে স্টিমাচ বলেন, “মণিপুরের সরকার, মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী (শ্রী এন বীরেন সিং) এবং আয়োজকদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। যারা অসাধারণ পরিবেশ তৈরি করেছিলেন, সেই সমর্থকদেরও অনেক ধন্যবাদ জানাই”। এই প্রথম মণিপুরে কোনও আন্তর্জাতিক ফুটবলের আসর বসল, যা পুরোপুরি সফল।    

মণিপুরের ফুটবলপ্রেমীদের নিয়ে দলনেতা সুনীল ছেত্রী আগেই বলেছিলেন, “দর্শকদের কাছ থেকে যা সমর্থন পেয়েছি, তা এক কথায় অসাধারণ। গ্যালারিতে প্রচুর বাচ্চা মেয়ে ও তাদের মায়েদেরও দেখেছি। বাইরে থেকেও অনেকে এসেছেন আমাদের খেলা দেখতে। এগুলো সত্যিই খুব ভাল। এই নিয়ে দ্বিতীয়বার ইম্ফলে এসেছি আমি। তবে খেলছি প্রথমবার। বুঝতে পারছি, কেন এখানকার লোকেরা ফুটবলের জন্য পাগল”।

এই টুর্নামেন্টে আন্তর্জাতিক ফুটবলে তাঁর ৮৫তম গোলটি করেন সুনীল। বিশ্বের সেরা দশ আন্তর্জাতিক গোলদাতাদের তালিকায় হাঙ্গেরির কিংবদন্তি ফেরেঙ্ক পুসকাসকে পিছনে ফেলে দেন তিনি। দুই ম্যাচেই পুরো ৯০ মিনিট মাঠে ছিলেন ৩৮ বছর বয়সি সুনীল। পুরো দলটাকেই তিনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন।