হিরো আইএসএলের ইতিহাসে যাঁদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে, তাঁদের একজন অবশ্যই লুইস গার্সিয়া। বরং এই লিগে তাঁকে বরাবরই একটা বিশেষ জায়গায় রাখা হবে। ২০১৪-য় প্রথম আইএসএলে তিনি প্রথম মার্কি প্লেয়ার হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন এটিকে-তে (তখন আতলেটিকো দ্য কলকাতা) এবং সে বছর কলকাতার ক্লাবকে চ্যাম্পিয়ন করার পিছনে স্পেনের জাতীয় দল ও লিভারপুলের হয়ে খেলা এই প্রাক্তন ফুটবলারের অবদান ছিল যথেষ্ট। সেই সাফল্যে গার্সিয়ার সঙ্গে বোরহা ফার্নান্ডেজ, হোসেমি, জোফ্রে মাতিউ, শুভাশিস রায়চৌধুরি, অর্ণব মণ্ডলদের অবদানও ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

কেমন ছিল ভারতে তাঁর সেই অভিযান? এখনও মনে আছে তাঁর প্রতিটি দিনের কথা। এখনও সেই স্মৃতি রীতিমতো উপভোগ করেন এটিকে-র এই কিংবদন্তি। তাই হিরো আইএসএলের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে লেট’স ফুটবল লাইভ অনুষ্ঠানে সম্প্রতি অনন্ত ত্যাগিকে শুনিয়েছেন সেই রোমাঞ্চকর দিনগুলোর কথা। বলেছেন সেই সফরে পাওয়া প্রিয় বন্ধু, স্মরণীয় ম্যাচ, মনে রাখার মতো ঘটনার কথা। এখনও কী ভাবে সেই স্মৃতি তাজা রেখেছেন মনের মধ্যে, তাও জানিয়েছেন এটিকে সমর্থকদের।

হিরো আইএসএলের ইতিহাসে প্রথম ম্যাচটা ছিল কলকাতায়। এটিকে বনাম  মুম্বই সিটি এফসি। সেই ম্যাচটার কথাই সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে লুইস গার্সিয়ার। বলেন, “বলতেই হবে, অসাধারণ অভিজ্ঞতা হয়েছিল সে দিন। মুম্বই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে যে উদ্বোধনী ম্যাচটা খেলেছিলাম, সেটা আমার ফুটবল জীবনের অন্যতম সেরা ম্যাচ। স্টেডিয়ামে ঠাসা লোক ছিল সে দিন। বিভিন্ন ক্লাবের সমস্ত মার্কি প্লেয়াররা সে দিন এসেছিল। বিশেষ করে কলকাতায় নিজেদের সমর্থকদের সামনে খেলার অভিজ্ঞতাটা ছিল দুর্দান্ত”।

ইংল্যান্ড, গ্রিস ও মেক্সিকোর বিভিন্ন ক্লাবে খেলার পরে লা মাসিয়ার প্রাক্তন এই তারকা অবসর ভেঙে যোগ দেন আন্তোনিও লোপেজ হাবাসের তত্ত্বাবধানে থাকা আতলেটিকো দ্য কলকাতায়। কেন অবসর ভেঙে কলকাতার মতো একটা অজানা শহরে এসে ফুটবলে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি? গার্সিয়া বলেন, “২০১৪-য় অবসর নেওয়ার পরেও মনটা খচখচ করত। ইচ্ছে করত মাঠে ফিরে যাই। তা ছাড়া কোনও দিনই চ্যালেঞ্জ নিতে ভয় পাইনি। এটাও আমার কাছে একটা নতুন চ্যালেঞ্জ ছিল। ভারতের মতো একটা দেশে, যেখানকার সংস্কৃতি সম্পুর্ণ অন্য রকম, সেখানে এসে খেলার সুযোগটা আমার কাছে বেশ আকর্ষণীয় মনে হয়েছিল। দিন দুয়েক পরেই চুক্তি সই করি। মরশুম শুরুর আগেই এটিকে-তে যোগ দিই”।

প্রথম বছর হিরো আইএসএলে মার্কো মাতেরাজি, রবার্ট পিরেস, জোয়ান কাপদেভিয়ার মতো আন্তর্জাতিক তারকারা খেলেছিলেন। তাঁদের সঙ্গে খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে লুইস গার্সিয়া বলেন, “ভারতে যাওয়ার আগেও ওদের অনেকের বিরুদ্ধে যেমন খেলেছিলাম, তেমনই অনেককে সতীর্থ হিসেবেও পেয়েছিলাম। তবে সে বার অভিজ্ঞতাটা অন্য রকম ছিল, কারণ, ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে খেলেছিলাম আমরা। বিভিন্ন জায়গায় আলাদা আলাদা সংস্কৃতি। খেলাটাও বিভিন্ন রকমের হত। কারণ, কোথাও উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া, যেমন গোয়ায়, তারপরই দু-একদিনের মধ্যে চলে যেতে হচ্ছে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে, যেখানে বেশ ঠাণ্ডা”।

স্বদেশীয় কোচ হাবাসের সঙ্গে সেবার পুরো মরশুমটাই কাটিয়ে দিয়েছিলেন গার্সিয়া। হাবাস পরের বারেও এটিকে-র সঙ্গে ছিলেন। কিন্তু তৃতীয় মরশুমের আগে কলকাতা ছেড়ে চলে যান। গত মরশুমে (২০১৯-২০) ফিরে এসে এটিকে-কে নজিরবিহীন তৃতীয়বারের জন্য চ্যাম্পিয়ন করেন তিনি, যা ছিল তাঁর নিজের দ্বিতীয় আইএসএল খেতাব। স্পেনের এই বিখ্যাত কোচের সঙ্গে কাটানো দিনগুলোর কথা বলতে গিয়ে গার্সিয়া বলেন, “হেড কোচের সঙ্গে সম্পর্কটা ভাল থাকলে সব কিছুই ভাল থাকে। হেড কোচের মন জয় করাটাই তখন আমাদের ও দলের ভারতীয় ফুটবলারদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল। আমরা যে ক’জন স্প্যানিশ খেলোয়াড় ছিলাম দলে, আমাদের মধ্যে যেমন ভাল সম্পর্ক ছিল, তেমনই ছিল কোচের সঙ্গেও। ভারতীয় খেলোয়াড়দের সঙ্গেও আমাদের বোঝাপড়টা চমৎকার ছিল। তাই আমাদের সাফল্য পাওয়াটা অনেক সোজা হয়ে ওঠে”।

পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও সেই দলের সতীর্থদের সঙ্গে এখনও যোগাযোগ রয়েছে তাঁর, জানালেন লুইস গার্সিয়া। দলের ফুটবলারদের নিয়ে তখন যে হোয়াটস্যাপ গ্রুপ হয়েছিল, সেটা এখনও সচল রয়েছে বলে জানান তিনি। বলেন, “এখনও সেই হোয়াটস্যাপ গ্রুপটা রয়েছে, যেটার নাম ‘কলকাতিয়ানোস’, মানে কলকাতা থেকে। ২০১৪-য় তৈরি হওয়া এই গ্রুপের সদস্যরা এখনও সবাই বেশ অ্যাক্টিভ। সবার মধ্যেই যোগাযোগটা রয়েছে”। কথাগুলো বলার সময় হাসিতে ভরা মুখটা বেশ উজ্জ্বল হয়ে উঠল ৪১ বছর বয়সি মিডফিল্ডারের।