ঘরের মাঠে মরশুমের প্রথম হার, ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার খরা কাটাতে পারল না এটিকে
গত তিন বছরে কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে জয় ছিল না এটিকে এফসি-র। রবিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে সেই খরা কাটানোর সুযোগ ছিল কলকাতার দলের সামনে। কিন্তু এ বারও পারল না তারা। ব্লাস্টার্স তাদের ১-০ গোলে হারানোয় এটিকের কেরালা-গাঁট কিন্তু রয়েই গেল।


গত তিন বছরে কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে জয় ছিল না এটিকে এফসি-র। রবিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে সেই খরা কাটানোর সুযোগ ছিল কলকাতার দলের সামনে। কিন্তু এ বারও পারল না তারা। ব্লাস্টার্স তাদের ১-০ গোলে হারানোয় এটিকের কেরালা-গাঁট কিন্তু রয়েই গেল। ৭০ মিনিটের মাথায় হলিচরণ নারজারির গোলে জিতে কেরালা ব্লাস্টার্স উঠে এল লিগ টেবলের ৬ নম্বরে। অন্য দিকে এ বারের হিরো আইএসএলে এই প্রথম হোম ম্যাচ হেরে এটিকে নেমে গেল তিন নম্বরে।
দুঃসময় এ দিন আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছিল কলকাতার দলকে। বেশ কিছু অবধারিত গোলের সুযোগ নষ্ট করার খেসারত তো দিতে হলই রয় কৃষ্ণাদের, তা ছাড়াও ডেভিড উইলিয়ামসের অনুপস্থিতির মাশুলও দিতে হল তাদের। ডেভিডের জায়গায় বলবন্ত সিংকে নামানোর সিদ্ধান্তও অপ্রত্যাশিত। শেষ পর্যন্ত ম্যাচের শেষে বাড়তি পাঁচ মিনিটে মাথা গরম করে মেজাজ হারানোয় লাল কার্ড দেখতে হয় কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাসকে। অর্থাৎ শনিবার এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে দলের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ তাঁকে গ্যালারিতে বসে দেখতে হবে। মাঠে নামতে পারবেন না। টানা নয় ম্যাচে জয়হীন থাকা কেরালা ব্লাস্টার্স গত ম্যাচেই হায়দ্রাবাদেকে পাঁচ গোলে হারিয়ে যে বার্তা দিয়েছিল, তা যে ফাঁকা আওয়াজ নয়, তা এদিন বুঝিয়ে দিলেন তাদের ফুটবলাররা। বুঝিয়ে দিলেন, হিরো আইএসএলের খেলা আরও জমে উঠতে পারে।
- ৩৫ মিনিটে রয় কৃষ্ণার হেড গোল লাইনে দাঁড়িয়ে বাঁচান বার্থোলোমিউ ওগবেচে।
- ৬৫ মিনিটে সদ্য চোট সারিয়ে মাঠে ফেরা অগাস্টিন ইনিগেজ ফের চোট পেয়ে মাঠ ছাড়ায় এটিকে রক্ষণ বেশ দুর্বল হয়ে পড়ে। অগাস্টিনের জায়গায় নামেন জয়েশ রানে।
- বিপক্ষের ডিফেন্সের দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়েই ৭০ মিনিটে গোল করেন হলিচরণ নারজারি। বক্সের বাইরে থেকে গোলে শট নেওয়ার সময় তাঁকে রোখার কেউ ছিল না।
- ম্যাচের শেষে স্টপেজ টাইমে এটিকে কোচ হাবাস অসংযত আচরণ করায় লাল কার্ড দেখেন।
যে ভাবেই হোক এটিকে-কে তাদের ঘরের মাঠে আটকাতেই হবে, এই সংকল্প নিয়েই যেন নেমেছিল কেরালা ব্লাস্টার্স এফসি, যারা লিগের প্রথম ম্যাচে কলকাতার দলকে হারিয়েছিল। আর প্রথম ম্যাচে হারের বদলা নিতেই হবে, এমন ভাবনা নিয়েই নেমেছিল কলকাতার দলের ফটবলাররা, এমনই মনে হচ্ছিল প্রথম ৪৫ মিনিটের খেলা দেখে।
একের পর এক সুযোগ নষ্ট করেন দুই দলের খেলোয়াড়রাই। ২৮ মিনিটে মেসি বৌলির গোলমুখী শট এক খেলোয়াড়ের গায়ে লেগে দিকভ্রষ্ট হয়। দুই দলের খেলোয়াড়রাই যে প্রচণ্ড উত্তেজতি ছিলেন, তা প্রবীর দাসকে মারিও আরকেসের কনুই দিয়ে গুঁতো মারা দেখেই বোঝা যায়। ৩৫ মিনিটে রয় কৃষ্ণার হেড গোল লাইনে দাঁড়িয়ে যদি না বাঁচাতেন বার্থোলোমিউ ওগবেচে, তা হলে তখনই এগিয়ে যেত এটিকে এফসি।
৪২ মিনিটে বক্সের ঠিক বাইরে থেকে নেওয়া ফ্রি কিকে ম্যান্ডি সোসা গোলের অনেক বাইরে দিয়ে বল পাঠিয়ে দেন। সারা অর্ধে কেরালা এফসি-র পায়ে বেশিরভাগ বল থাকলেও তাদের চেয়ে অনেক বেশি সুযোগ তৈরি করে এটিকে। একটা সময়ে কেরালার দলের বল পজেশন ছিল ৫৯ শতাংশ। এই অবস্থাতেও শেষের দিকে সমানে চাপ বাড়িয়ে যায় এটিকে।
এ দিন হ্যামস্ট্রিং চোটের জন্য মাঠে নামতে পারেননি ডেভিড উইলিয়ামস। কিন্তু তাঁর জায়গায় জবি জাস্টিনকে না নামিয়ে কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাস কেন বলবন্ত সিংকে নামালেন, এটাই বড় প্রশ্ন। বলবন্ত, যিনি ম্যাচের মধ্যে নেই, তিনি প্রত্যাশিত ভাবেই হতাশ করেন। বাঁ দিকের উইং প্লে থেকে এ দিন মাইকেল সুসাইরাজকে আটকে দিয়েছিল কেরালার মাঝমাঠ। সেই জায়গাটা পূরণ করা উচিত ছিল বলবন্তের। কিন্তু তিনি একেবারেই সেই কাজটা করতে পারেননি। রয় কৃষ্ণা ডান দিক থেকে আক্রমণ করায় প্রবীর দাসকে সেই সমস্যায় পড়তে হয়নি।
দ্বিতীয়ার্ধে, বলবন্তকে বসিয়ে জবিকে নামানো হয় ঠিকই, কিন্তু তিনি তেতে ওঠার আগেই চোট সারিয়ে মাঠে ফেরা অগাস্টিন ইনিগেজ চোট পেয়ে যাওয়ায় এটিকে-র রক্ষণভাগ বেশ দুর্বল হয়ে পড়ে। কিন্তু অগাস্টিন বেরিয়ে যাওয়ায় জয়েশ রানে কেন, সেটাও কম বড় প্রশ্ন নয়। আক্রমণের ধার বাড়ানোটা উদ্দেশ্যে হতে পারে। কিন্তু অগাস্টিনের মতো ফুটবলারের বাইরে বেরিয়ে যাওয়ায় যেখানে রক্ষণ দুর্বল হয়ে পড়ে, সেখানে রক্ষণ না সামলে আক্রমণের ধারা বাড়ানোর চেষ্টা কেন! তরুণ ডিফেন্ডার সুমিত রাঠি দুর্দান্ত পারফরম্যান্স না দেখালে হয়তো আরও বিপদে পড়ত এটিকে।
অগাস্টিন বেরিয়ে যাওয়ায় ভিক্টর মনজিলকে নীচে নেমে এসে ডিফেন্স সামলানোর কাজে মন দিতে হয়। হাভিয়ে হার্নান্ডেজকেও এ দিন চেনা ফর্মে পাওয়া যায়নি। রক্ষণের এই দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়েই ৭০ মিনিটে ম্যাচ জেতানো গোলটা করে দেন হলিচরণ নারজারি। এটিকে-র রক্ষণভাগের ফাঁককে রীতিমতো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় হলিচরণের এই গোল। তিনি যখন বক্সের বাইরে থেকে গোলে শট নেন, তখন তাঁকে রোখার মতো কেউ ছিল না। উড়ন্ত অরিন্দমেরও এক্ষেত্রে বেশি কিছু করার ছিল না।
বলবন্তের জায়গায় জবি জাস্টিন নামায় বাঁ দিক দিয়ে গোল তৈরির চেষ্টা বাড়ে ঠিকই কিন্তু একাধিকবার সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয় কেরালার কঠোর ডিফেন্সিভ ফুটবলের জন্য। একবার জবির দেওয়া ফরোয়ার্ড থেকে রয় কৃষ্ণা ক্রস দিলেও বক্সের মধ্যে তা নেওয়ার মতো কেউ ছিল না। ৮০ মিনিটে গোলের সামনেই সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলেন রয় কৃষ্ণা। কিন্তু অসাধারণ ক্ষিপ্রতায় তা বাঁচিয়ে দেন কেরালার গোলকিপার টি পি রেহনেশ। ৮৫ মিনিটে ব্যবধান বাড়ানোর সম্পুর্ণ ব্যবস্থা করে ফেলেছিলেন কেরালার মুহামাদু। তাঁর গোলমুখী হেডে অবধারিত গোল বাঁচিয়ে দেন অরিন্দম।
দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি এ দিন কম হয়নি। তাই দ্বিতীয়ার্ধে পাঁচ মিনিট বাড়তি সময় দেওয়া হয়। কিন্তু এই বাড়তি সময়টা কাজে লাগাতে পারেনি এটিকে। বরং তাদের কোচ হাবাস রেফারি ও বিপক্ষের সাপোর্ট স্টাফের দিকে তেড়ে গিয়ে লাল কার্ড দেখেন। ফলে শনিবার এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে এই মুহূর্তের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে গ্যালারিতে বসেই ম্যাচ দেখতে হবে কলকাতার দলের স্প্যানিশ কোচকে।