দারুণ উচ্ছ্বাস, তারকা খেলোয়াড় আর বিপুল প্রত্যাশা নিয়ে ২০১৪ সালে যাত্রা শুরু করে ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (আইএসএল)। কিন্তু সবার মনে তখন একটাই আগ্রহ ছিল—প্রতিটি লিগের যেমন প্রথম নায়ক থাকে, আইএসএলের ইতিহাসে প্রথম নায়ক হবেন কে?

উত্তরটা পেতে বেশি সময় লাগেনি। লিগের উদ্বোধনী ম্যাচেই ইথিওপিয়ার ফরোয়ার্ডফিকরু টেফেরা আইএসএলের প্রথম গোলটি করেন। সেই গোল শুধু যে এটিকে এফসিকে এগিয়ে দিয়েছিল, তা নয়, বরং আইএসএল-কে উপহার দিয়েছিল তার প্রথম অবিস্মরণীয় মুহূর্ত

আইএসএলে মাত্র দুই মরশুম খেলেন ফিকরু। কিন্তু এই অল্প সময়েই তিনি লিখে যান অসংখ্য গল্প। তাঁর উল্লাস, উদযাপন ও একাধিক নাটকীয় মুহূর্ত, যা এখনও সমর্থকদের মনে গেঁথে আছে।

ইতিহাসের নায়ক

ফিকরু এটিকে এফসিতে যোগ দিয়েছিলেন তেমন কোনও হইচই-আড়ম্বর ছাড়াই। কিন্তু মাঠে প্রথম দিন থেকেই তিনি নিজের নাম লিখে ফেলেন ইন্ডিয়ান সুপার লিগের ইতিহাসে।উদ্বোধনী ম্যাচেমুম্বই সিটি এফসির বিরুদ্ধে এই ইথিওপিয়ান ফরোয়ার্ডই করেছিলেন আইএসএলের প্রথম গোল। সল্টলেক স্টেডিয়ামে ম্যাচের প্রায় আধঘণ্টা পার হওয়ার আগেই তিনি শান্তভাবে এগিয়ে আসা সুব্রত পালকে কাটিয়ে বলটিকে নিখুঁতভাবে লব করে জালে জড়ান এবং গোল উদযাপনে তাঁর নিজস্ব স্টাইল সমারসল্ট দিয়ে দর্শকদের মন মুহূর্তেই জয় করে ফেলেন।

কিন্তু শুধু এই একটি গোলই নয়, ফিকরুকে জনপ্রিয় করে তুলেছিল তাঁর উপস্থিতি। সাহসী, আগুনে ও প্রাণশক্তিতে ভরপুর ফিকরু অল্প সময়ের মধ্যেই হয়ে উঠেছিলেন সমর্থকদের প্রিয়। একেকটি গুরুত্বপূর্ণ গোল করে অ্যাক্রোবেটিক ভঙ্গিতে উদযাপন করতেন আর এটিকে এফসির আক্রমণকে করে তুলেছিলেন ধারালো, যা তাঁকে প্রতিপক্ষের কাছে দুর্বোধ্য করে তুলেছিল। যেমন প্রতিপক্ষকে হতাশ করতেন তিনি, তেমনই দর্শকদের মাতিয়েও তুলতেন। সবচেয়ে বড় কথা, তিনি কখনও একঘেয়ে হয়ে পড়েননি। ছিলেন বৈচিত্রে ভরপুর।

সেই মরশুমের শেষে ফিকরুর ঝুলিতে ছিল পাঁচ গোল এবং তিনটি অ্যাসিস্ট, যা লিগ পর্বে এটিকে এফসি-র তৃতীয় স্থান দখলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে অপ্রত্যাশিত এক চোটের কারণে তিনি প্লে-অফে খেলতে পারেননি। তবুও এটিকে এফসিফাইনালে কেরালা ব্লাস্টার্সকে হারিয়ে জিতে নেয় প্রথম আইএসএল কাপ।

চেন্নাইয়ে নতুন অধ্যায়

ফিকরুর আইএসএল অভিযান অবশ্য এখানেই শেষ হয়নি। ২০১৫-য় তিনি ভারতে ফিরে আসেন। তবে এবার আর কলকাতায় নয়, মার্কো মাতেরাজ্জির অধীনে চেন্নাইন এফসির হয়ে। তাঁকে নিয়ে অনেক প্রত্যাশা ছিল চেন্নাইন সমর্থকদের। কিন্তু তাদের দলের আক্রমণভাগে এত ভাল ভাল ফরোয়ার্ড ছিলেন যে, মাঠে বেশি সময় কাটাতে পারেননি।

সে মরশুমে তার একমাত্র গোলটি এসেছিল তাঁর পুরনো দল এটিকে এফসির বিরুদ্ধে।কলকাতায় সেমিফাইনালে রিজার্ভ বেঞ্চ থেকে নেমে জয়সূচক গোলটি করেন, যা এটিকে এফসির ঘুরে দাঁড়ানোর আশা শেষ করে দেয় এবং চেন্নাইন এফসিকে ফাইনালে উঠতে সাহায্য করে। ফাইনালে, ‘মারিনা মাচানস্’ নাটকীয়ভাবে৩-২-এর ব্যবধানে এফসি গোয়াকে হারিয়ে জিতে নেয় আইএসএল কাপ

আজও যখন ফুটবলপ্রেমীরা আইএসএলের শুরুর দিনগুলোর দিকে ফিরে তাকান, তখন ফিকরুর নাম অবধারিতভাবে উঠে আসে। তাঁর ঐতিহাসিক প্রথম গোল, পরিচিত সমারসল্ট উদযাপন আর নির্ভীক খেলার ধরন তাঁকে অবিস্মরণীয় করে তুলেছে। তিনি হয়তো খুব বেশি দিন আইএসএলে খেলেননি, কোনও ব্যক্তিগত সম্মানও অর্জন করেননি। কিন্তু তিনি উপহার দিয়েছেন লিগের ইতিহাসের প্রথম বড় মুহূর্ত। যা চিরকালই সোনার অক্ষরে লেখা থাকবে।