প্রতিবেশী রাজ্যের ‘ঘরের’ মাঠে ধারাবাহিক গোয়ার বিরুদ্ধে কঠিন চ্যালেঞ্জ লাল-হলুদের
খাতায় কলমে হোম ম্যাচ হলেও শনিবার বিকেলে তারা এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে নামবে ভুবনেশ্বরের কলিঙ্গ স্টেডিয়ামে। তাই হোম অ্যাডভান্টেজ পুরোপুরি পাওয়া কঠিন। প্রায় আড়াই সপ্তাহের ছুটির পর খেলতে নেমে লাল-হলুদ বাহিনী ভাল খেলবে, এমন আশাই করা যায়। আবার উল্টেটাও হতে পারে। দীর্ঘ ছুটিতে ছন্দ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

মরশুমের শুরুটা যতটা ভাল হয়েছিল ইস্টবেঙ্গলের, আইএসএলের শুরুটা ততটা ভাল হয়নি। তিনটি ম্যাচের মধ্যে একটি করে জয়, ড্র ও হারের স্বাদ পেয়েছে তারা। ফলে চার পয়েন্ট পেয়ে তারা লিগ টেবলের সাত নম্বরে রয়েছে। বেঙ্গালুরুতে শেষ ম্যাচে যথেষ্ট ভাল পারফরম্যান্স দেখিয়েও শেষ পর্যন্ত সুনীল ছেত্রীদের কাছে হার মানতে হয় তাদের। সেই হারের পর এ বার জয়ে ফেরার পালা তাদের।
খাতায় কলমে হোম ম্যাচ হলেও শনিবার বিকেলে তারা এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে নামবে ভুবনেশ্বরের কলিঙ্গ স্টেডিয়ামে। দুর্গাপূজার আবহে কলকাতায় ম্যাচ আয়োজন করার প্রশাসনিক সমস্যা রয়েছে বলে ম্যাচটি সরিয়ে দেওয়া হয়েছে প্রতিবেশী রাজ্যে। তাই হোম অ্যাডভান্টেজ পুরোপুরি পাওয়া কঠিন। প্রায় আড়াই সপ্তাহের ছুটির পর খেলতে নেমে লাল-হলুদ বাহিনী ভাল খেলবে, এমন আশাই করা যায়। আবার উল্টেটাও হতে পারে। দীর্ঘ ছুটিতে ছন্দ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
এফসি গোয়ার সামনেও অবশ্য একই চ্যালেঞ্জ। চলতি লিগে হ্য়দরাবাদ এফসি-র বিরুদ্ধে তাদের প্রথম ম্যাচই স্থগিত রাখতে হয়। পরের দুটি ম্যাচেই তারা জেতে। ফলে দুই ম্যাচ থেকে ছ’পয়েন্ট নিয়ে তারা আপাতত লিগ টেবলে তিন নম্বরে রয়েছে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট ও মুম্বই সিটি এফসি-র পরেই। লিগে এটিই প্রথম অ্যাওয়ে ম্যাচ তাদের। বাইরের মাঠে জয়ের ধারা বজায় রাখার চ্যালেঞ্জ নিয়েই শনিবার ওডিশার মাঠে নামবেন সন্দেশ ঝিঙ্গন, কার্ল ম্যাকহিউ, কার্লোস মার্টিনেজরা।
দুই শিবিরের খবর
ইস্টবেঙ্গল এফসি: এই ম্যাচের আগে কোচ কার্লস কুয়াদ্রাত বলেই দিয়েছেন, তাঁর দলের সবাই মাঠে নামার জন্য প্রস্তুত। দলের স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড হাভিয়ে সিভেরিও ও সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার সল ক্রেসপোর সঙ্গে হায়দরাবাদ এফসি থেকে আসা স্প্যানিশ মিডফিল্ডার বোরহা হেরেরা গঞ্জালেস প্রত্যেকেই ভাল ফর্মে রয়েছেন। আর এক স্প্যানিশ তারকা ডিফেন্ডার হোসে পার্দোও রক্ষণকে ভরসা জোগাচ্ছেন। এ ছাড়া গত মরশুমে দলে থাকা বিদেশি স্ট্রাইকার ক্লেটন সিলভা তো এ বারেও আছেন। হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে তাঁর জোড়া গোলেই জেতে ইস্টবেঙ্গল। তাঁর সঙ্গে নির্ভরযোগ্য উইঙ্গার নাওরেম মহেশ সিংও দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছেন। তবে সিনিয়র ডিফেন্ডার হরমনজ্যোৎ সিং খাবরা, ওডিশা এফসি থেকে আসা উইঙ্গার নন্দকুমার শেখর, কেরালা ব্লাস্টার্স থেকে আসা ডিফেন্ডার নিশু কুমার ও পাঞ্জাবের গোলকিপার প্রভসুখন গিলদের সেরা ফর্মে ফিরতে হবে। জর্ডন থেকে আসা নতুন বিদেশি ডিফেন্ডার হিজাজি মাহেরকে এই ম্যাচে মাঠে নামাতে পারে ইস্টবেঙ্গল। তবে শুরু থেকেই তাঁকে দেখা যাবে কি না, সেটাই দেখার।
এফসি গোয়া: গত ম্যাচে ওডিশা এফসি-র বিরুদ্ধে ৪-২-৩-১-এ সাজিয়েছিল এফসি গোয়া। সন্দেশ ঝিঙ্গনের নেতৃত্বাধীন রক্ষণ কিন্তু এই ম্যাচে দু’টি গোল হজম করে। জয় গুপ্তার মতো তরুণ প্রতিভাবান ও ওদেই ওনান্দিয়ার মতো অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার দলে থাকলেও তাদের রক্ষণে যে চিড় ধরানো যায়, তা প্রমাণ করে দিয়েছে ওডিশা। মাঝমাঠে কার্ল ম্যাকহিউয়ের মতো নির্ভরযোগ্য ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার ও নোয়া সাদাউইর মতো অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার রয়েছেন, যিনি গোল করার জন্য ছটফট করেন। তাঁকে আটকে রাখাটা ইস্টবেঙ্গলের অন্যতম প্রধান কাজ হতে চলেছে। নোয়া যেমন একদিক থেকে আক্রমণে ওঠেন, তেমন উদান্ত সিং অন্য দিক থেকে আক্রমণ তৈরি করেন। সামনে কার্লোস মার্টিনেজের মতো বিপজ্জনক স্ট্রাইকার থাকাটাও প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারদের কাছে কঠিন পরীক্ষা। তাদের রিজার্ভ বেঞ্চও বেশ শক্তিশালী। রাওলিন বোর্জেস থেকে শুরু করে নারায়ণ দাস, ভিক্টর রড্রিগেজরাও রয়েছেন সেখানে।
সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স
ইস্টবেঙ্গল এফসি: গত তিন মরশুম ধরে টানা একতরফা ব্যর্থতার পর এ বছর ডুরান্ড কাপের ফাইনালে উঠে ইস্টবেঙ্গলকে নতুন দিশা দেখিয়েছেন কুয়াদ্রাত ও তাঁর দলের ফুটবলাররা। ৫৫ মাস পরে কলকাতা ডার্বিও জেতে তারা। কিন্তু ডুরান্ডের ছন্দ ধরে রাখতে পারেনি তারা। জামশেদপুরের বিরুদ্ধে গোলশূন্য ড্রয়ের পর দ্বিতীয় ম্যাচে ক্লেটন সিলভা ফর্মে ফেরেন। দলও জয়ে ফেরে। ব্রাজিলীয় তারকার জোড়া গোলে চলতি লিগের প্রথম জয় পায় তারা। বেঙ্গালুরুতে ফের ছন্দপতন হয় তাদের। ২-১-এ তাদের হারিয়ে লিগের প্রথম জয় পায় সুনীল ছেত্রীর দল। হারার মতো না খেলেও হারতে হয় ইস্টবেঙ্গলকে। হাভিয়ে হার্নান্ডেজের এক অনবদ্য বাইসাইকেল কিকের গোলে হার স্বীকার করতে হয় তাদের।
এফসি গোয়া: ডুরান্ড কাপের সেমিফাইনালে উঠেও মোহনবাগানের কাছে ছিটকে যায় এফসি গোয়া। হায়দরাবাদ এফসি-র আইএসএল জয়ী প্রাক্তন কোচ মানোলো মার্কেজ তাঁর প্রাক্তন দলের বিরুদ্ধেই প্রথম ম্যাচে নামার আশায় ছিলেন। কিন্তু ম্যাচটি স্থগিত রাখা হয়। ফলে তারা প্রথম ম্যাচ খেলে নবাগত পাঞ্জাব এফসি-র বিরুদ্ধে। কার্লোস মার্টিনেজের ১৭ মিনিটের গোলে সেই ম্যাচে জয় দিয়ে চলতি আইএসএল শুরু করে গোয়ার দলটি। পরের ম্যাচে গোয়ার প্রাক্তন কোচ সের্গিও লোবেরার দল তাদের কড়া চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেও শেষ পর্যন্ত ৩-২ গোলে জেতেন মার্টিনেজরা। নোয়া সাদাউই জোড়া গোল করেন, তার মধ্যে একটি পেনাল্টি থেকে। জয় গুপ্তার শেষ মিনিটের গোল গোয়াকে জয় এনে দেয়।
পরিসংখ্যান যা বলছে
আইএসএলে ইস্টবেঙ্গল তাদের শেষ দুটি হোম ম্যাচে অপরাজিত থেকেছে। শনিবারের ম্যাচেও অপরাজিত থাকতে পারলে এটাই হবে তাদের ঘরের মাঠে দীর্ঘতম সাফল্যের ইতিহাস। লাল-হলুদ কোচ কার্লস কুয়াদ্রাত আইএসএলে সবচেয়ে বেশি সাফল্য পেয়েছেন এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে। সব মিলিয়ে তাঁর প্রশিক্ষণাধীন দল চারটি ম্যাচ জিতেছে গোয়ার বিরুদ্ধে। তাদের বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত কোনও ম্যাচ হারেননি কুয়াদ্রাত। লাল-হলুদ বাহিনীর সেরা ভারতীয় তারকা নাওরেম মহেশ সিং এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে দু’টি গোল করেছেন ও দু’টিতে অ্যাসিস্ট করেছেন। তাদের হয়ে চলতি লিগে সবচেয়ে বেশি গোলের সুযোগ তৈরি করেছেন সল ক্রেসপো। সাতটি গোলের সুযোগ তৈরি করেছেন তিনি। নন্দকুমার শেখর এ পর্যন্ত মোট ১৪টি ক্রস দিয়েছেন ওপেন প্লে থেকে, যা ভারতীয়দের মধ্যে এই লিগে সবচেয়ে বেশি।
তাদের শেষ আটটি অ্যাওয়ে ম্যাচে জিততে পারেনি এফসি গোয়া। তিনটি ড্র করেছে ও পাঁচটিতে হেরেছে। এটাই তাদের অ্যাওয়ে ম্যাচে দীর্ঘতম ব্যর্থতার নজির। প্রতিপক্ষের বক্সের গড়ে প্রতি ম্যাচে ৩৫টি করে টাচ রয়েছে এফসি গোয়ার। চলতি লিগে আর কোনও দল প্রতিপক্ষের বক্সে এত টাচ করতে পারেনি। ফাইনাল থার্ডে বল দখলের লড়াইয়ে এ পর্যন্ত ছ’বার জিতেছেন নোয়া সাদাউই। চলতি লিগে এই বিষয়ে তিনিই সবার চেয়ে এগিয়ে। তাদের হয়ে চলতি লিগে সবচেয়ে বেশি গোলের সুযোগ তৈরি করেছেন ব্র্যান্ডন ফার্নান্ডেজ। মোট সাতটি গোলের সুযোগ তৈরি করেছেন তিনি।
দ্বৈরথের ইতিহাস
হিরো ইন্ডিয়ান সুপার লিগে দুই দল মুখোমুখি হয়েছে ছ’বার। গোয়া জিতেছে তিনবার। ইস্টবেঙ্গল একবার। বাকি দু’বার ড্র হয়েছে। দু’বারই ড্র হয় ১-১-এ, ২০২০-২১ মরশুমে। ২০২১-২২ মরশুমে প্রথম লেগে এফসি গোয়া ৪-৩-এ জেতে এবং ফিরতি লেগে ২-১ জিতে তার বদলা নেয় ইস্টবেঙ্গল। গত মরশুমের প্রথম সাক্ষাতে ২-১-এ জেতে এফসি গোয়া। দ্বিতীয় লড়াইয়ে ৪-২-এ জেতে গোয়ার দল।
নজরে যাঁরা
নাওরেম মহেশ সিং: দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছেন মণিপুরী তারকা উইঙ্গার নাওরেম মহেশ সিং। গত ম্যাচে তিনি ১৫ মিনিটের মাথায় অসাধারণ একটি গোল করেন। নন্দকুমার শেখরের মাপা থ্রু বল পেয়ে নিখুঁত ভাবে তাকে গোলে পরিণত করেন মহেশ। সমর্থকেরা নিশ্চয়ই শনিবারও সে রকমই একটি গোল দেখতে চান তাঁর কাছ থেকে। এ পর্যন্ত মোট সাতটি ক্রস দিয়েছেন মহেশ। তার মধ্যে তিনটি সফল হয়েছে। এ পর্যন্ত পাঁচটি গোলের সুযোগ তৈরি করেছেন তিনি। তিনটির মধ্যে দুটি শট গোলে রাখেন তিনি। পাসিং অ্যাকিউরেসি ৭৭ শতাংশ।
নোয়া সাদাউই: মরক্কোর এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার এ পর্যন্ত দুটি গোল করেছেন। তিনি এফসি গোয়ার আক্রমণ বিভাগের অন্যতম সেরা অস্ত্র। উইং দিয়ে আক্রমণে উঠে প্রতিপক্ষের রক্ষণে চিড় ধরানোর ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ। চলতি লিগে এ পর্যন্ত ১২টি শট মেরেছেন, যার মধ্যে পাঁচটি রেখেছেন গোলে। তিনটি গোলের সুযোগও তৈরি করেছেন। গত মরশুমে ন’টি গোল করা ও ন’টি অ্যাসিস্ট দেওয়ার পর এই মরশুমে তিনি সবার নজরে রয়েছেন। গত ম্যাচে পেনাল্টি থেকে গোলও করেন তিনি। তার ১৩ মিনিট পর প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড়ের পা থেকে বল ছিনিয়ে নিয়ে গোলে শট নেন ও সফলও হন। যথেষ্ট ক্ষিপ্র এই তারকা চিন্তায় ফেলতে পারেন লাল-হলুদ ডিফেন্ডারদের।
ম্যাচ- ইস্টবেঙ্গল এফসি বনাম এফসি গোয়া
ভেনু- কলিঙ্গ স্টেডিয়াম, ভুবনেশ্বর
সময়- ২০ অক্টোবর, ২০২৩, বিকেল ৫.৩০
সরাসরি সম্প্রচার ও স্ট্রিমিং
টিভি: ডিডি বাংলা ও কালার্স বাংলা সিনেমা- বাংলা, স্পোর্টস ১৮ খেল- হিন্দি, স্পোর্টস ১৮ ১ এসডি ও এইচডি- ইংলিশ, ভিএইচ ১ এসডি ও এইচডি- ইংলিশ, সূর্য মুভিজ- মালয়ালাম
স্ট্রিমিং: জিও সিনেমা ও ওয়ানফুটবল