মুম্বইয়ে যে ফুটবল খেলেছিল তারা, গত ম্যাচে ঘরের মাঠে চেন্নাইন এফসি-র বিরুদ্ধে তার ধারেকাছেও যেতে পারেনি তাঁর দল। রবিবার কলকাতা ডার্বিতে সেই পারফরম্যান্স যে চান না, চান মুম্বই-ম্যাচের পারফরম্যান্স, তা স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন ইস্টবেঙ্গল এফসি-র কোচ অস্কার ব্রুজোন। গত ম্যাচে দলের ০-৩ হারে তিনি যে বেশ বিরক্ত, তাও সাংবাদিকদের জানাতে ভোলেননি তিনি।

শনিবার সাংবাদিক বৈঠকে লাল-হলুদ কোচ বলেন, “গত ম্যাচের উদাহরণ না টানাই ভাল। তার আগে আমরা যা খেলেছি, তার সঙ্গে গত ম্যাচের পারফরম্যান্সের কোনও মিল নেই। গত ম্যাচে মানসিকতা, তীব্রতা, ভাবনা, তাগিদ কিছুই ছিল না। ওই ম্যাচের সমস্যাগুলো শোধরাতে আমাদের অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। বিশেষত, বাঁ দিকের সমস্যা। ঘরের মাঠে তিন গোলে হারের জায়গা থেকে ফিরে আসা কঠিন। মুম্বইয়ের মাঠে আমরা যে স্তরের ফুটবল খেলেছি, গত এক সপ্তাহ ধরে সেই স্তরে দলকে ফেরাতে অনেক পরিশ্রম করতে হচ্ছে”।

চেন্নাইনের বিরুদ্ধে জঘন্য হারের প্রতিক্রিয়া রবিবারের ডার্বিতে দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন স্প্যানিশ কোচ। তিনি বলেন, “গত ম্যাচে লজ্জাজনক পারফরম্যান্স দেখিয়েছি আমরা। তার প্রতিক্রিয়া কী রকম হয়, তা কাল বোঝা যাবে। অনুশীলনে সবাই খুব পরিশ্রম করেছে। এই ম্যাচে আমরা নিজেদের নিয়ে একটু বেশিই ভাবার সুযোগ পাব। কারণ, আমাদের প্রতিপক্ষ মহমেডানও অনেক সমস্যার মধ্যে রয়েছে। তবে ওদের লড়াকু মানসিকতা রয়েছে। ওদের অন্তর্বর্তী কোচ ওয়াডু কেমন, তা আমরা জানি। ও দলটাকে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করবেই। ওরাও ইতিবাচক ভাবে লিগ শেষ করার চেষ্টা করবে। এটা ওদের হোম ম্যাচ। আমরা যদি আমাদের ইচ্ছাশক্তির সাহায্যে একটু আক্রমণাত্মক, তীব্র ও নিখুঁত ফুটবল খেলতে পারি, তা হলে আমাদেরই কাল ভাল খেলা উচিত”।

স্পষ্টবাদী অস্কার দল ভাল খেললে ফুটবলারদের প্রশংসা যেমন করেছেন, তেমনই খারাপ পারফরম্যান্সের জন্য তাদের সমালোচনা করতে বিন্দুমাত্র পিছপা নন। তিনি বলেন, “গোয়া বা আইএসএলের ভাল দলগুলোর বিরুদ্ধে যখন আমরা খেলি, তখন সমর্থকদের কাছে আমরা দায়বদ্ধ থাকি। ওরা যে রকম নিঃস্বার্থ ভাবে আমাদের সমর্থন করে, সে জন্যই আমরা দায়বদ্ধ। তবে এই মুহূর্তে আমার মনে হয় না, আমরা (ইস্টবেঙ্গলের মতো) এক ঐতিহ্যপূর্ণ ও বড় ক্লাবের অংশ হওয়ার যোগ্যতার প্রমাণ দিতে পেরেছি। তাই আমাদের ভাবতে হবে কী ভাবে আমাদের লিগ শেষ করা উচিত”।

সম্প্রতি প্রতি ম্যাচেই তাদের সঙ্গী হয় চোট-আঘাত, নয় কার্ড সমস্যা। রবিবারের ম্যাচেও তার ব্যতিক্রম হবে না। অস্কার জানান, “চোট-আঘাত নিয়েই চলতে হচ্ছে আমাদের। প্রতি সপ্তাহেই এই সমস্যার সন্মুখীন হতে হচ্ছে। হয় চোট, না হলে কার্ড সমস্যা। এখন অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি। তবে যে-ই মাঠে নামুক, তাকে তার ভূমিকা ঠিকমতো পালন করতেই হবে। আত্মবিশ্বাস-সহ প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের চেয়ে ভাল খেলতে হবে এবং ইতিবাচক ফল আনতে হবে। কাল কারা নেই, সেই তালিকা দিয়ে প্রতিপক্ষকে সতর্ক করে দিতে চাই না। এটুকু বলতে পারি অনেককেই কাল মাঠে নামানো যাবে না। তবে চোট-আঘাত, কার্ড সমস্যা নিয়ে যে আমি অজুহাত খাড়া করি না, তা সবাই জানেন”।

এখনই দলের ঘুরে দাঁড়ানোর সময়, মনে করেন ইস্টবেঙ্গল কোচ। সেরা ছয়ে পৌঁছনোও যে তাদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব, তাও মেনে নিতে দ্বিধান্বিত নন তিনি। বলেন, “আইএসএলে সেরা ছয়ে থেকে শেষ করা এখন প্রায় অসম্ভব। এই বাস্তবটা মেনে নিতেই হবে। এই ব্যাপারে কাউকে ঠকাতে চাই না আমরা। এখন আমরা ১১ নম্বরে আছি। গোল পার্থক্য আমাদের ভাল নয়। আরও পাঁচটা ম্যাচ বাকি আমাদের। এই জায়গা থেকে আমরা যদি ৮, ৯, ১০ নম্বরেও যেতে পারি, তা হলেও ভাল। দেড়-দু’মাস ধরে আমরা একই জায়গায় রয়েছি। এই জায়গা থেকে উঠতে চাই। তাই আমাদের সামনে এখন অনেক কাজ”।

যা করার, তা যে তাদেরই করতে হবে, ফুটবলারদের উদ্দেশে এমনই বার্তা দিয়ে অস্কার বলেন, “আমরা যদি অপেক্ষা করি, কখন আমাদের সময় আসবে, তা হলে বড় সমস্যা হবে। আমাদেরই সময় ঘোরাতে হবে। সব বাধা, বিপত্তি পেরিয়ে ভাল সময় আনতে হবে। আমার মনে হয় মরশুমটা এর চেয়ে ভাল জায়গায় থেকে শেষ করার ক্ষমতা আমার মধ্যে আছে”।

আমরা পেশাদার, মোটিভেশন খুঁজে নিই: মেসি বৌলি

দলের নতুন বিদেশী ক্যামেরুনের ফরোয়ার্ড রাফায়েল মেসি বৌলিকে সঙ্গে নিয়েই এ দিন সাংবাদিকদের সামনে আসেন অস্কার। তিনি বলেন, “আমি এসেছি ইস্টবেঙ্গলের মতো ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যে ভরা একটা ক্লাবকে সাহায্য করতে। আমাদের লক্ষ্য, যতটা ভাল ভাবে মরশুম শেষ করা যায়। এখনও আইএসএলে পাঁচটা ম্যাচ বাকি আমাদের। এর পরে এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগ আছে। তবে এখন আমাদের কাছে কালকের দিনটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কাল একটা ভাল দলের বিরুদ্ধে বড় ম্যাচ খেলতে নামছি আমরা। তাই এখন এই ম্যাচে মনোনিবেশ করছি আমরা”।

দল ভাল জায়গায় নেই। তবু কী করে নিজেকে মোটিভেট করছেন, জানতে চাওয়ায় মেসি বৌলি বলেন, “আমরা পেশাদার। প্রতিদিনই মোটিভেশন খুঁজে নিই আমরা। তাই দলের সামনে আপাত ভাবে কোনও লক্ষ্য নেই মনে করলেও মরশুম ভাল ভাবে শেষ করাটাই এখন মূল লক্ষ্য। কারণ, আগামী মাসেই আমাদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ আছে, এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগ। আমাদের সমর্থকদের জন্যও। গতকালই দেখছিলাম, সমর্থকেরা খুবই হতাশ। তাদের আরও লজ্জিত হতে না দেওয়াই এখন আমাদের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ”।

গোল সংখ্যা বাড়ানোর জন্যই যে তাঁকে এনেছে ইস্টবেঙ্গল, তা মনে করিয়ে দিতে ক্যামেরুনের তারকা বলেন, “ফুটবল একটা প্রক্রিয়া, যা আমাদের অনুসরণ করতে হয়। তাতে কখনও কখনও কোনও দল বেশি গোল করে, আবার কখনও গোল হয় না। তবে এগিয়ে যাওয়াটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিনই এগোতে হয়। দল ভাল হলে জয়ে ফিরবেই, এই নিয়ে সন্দেহ নেই। আর যখন দল জিতবে, তখন কে গোল করল, তার গুরুত্ব থাকে না। তখন দলই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। মরশুমের শেষ পর্যন্ত আমাদের চেষ্টা করে যেতে হবে। যতটা ভাল খেলা যায়”।

এক সপ্তাহ আগেই কলকাতায় পৌঁছেছেন তিনি। এই অল্প সময়ে দ্রুত পরিবেশ ও সতীর্থদের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে ভাল খেলার চেষ্টা করবেন বলে জানিয়ে মেসি বৌলি বলেন, “এখানকার পরিবেশ, সতীর্থদের সঙ্গে মানিয়ে নিতে তো সময় লাগবেই। কিন্তু এখন যা পরিস্থিতি, তাতে মানিয়ে নেওয়ার সময় নেই। আমরা পেশাদার। একে অপরকে সাহায্য করতেই হবে। আমি বা দিমি, বা অন্য যে কেউ গোল করুক, তা দলের পক্ষে ভাল। দলের জন্যই তো এখানে সবাই আছি আমরা”।

আর ভুল করলে চলবে না: মেহরাজউদ্দিন ওয়াডু

রবিবারের বড় ম্যাচ নিয়ে মহমেডান এসসি-র কোচ মেহরাজউদ্দিন ওয়াডু বলেন, দলের এ রকম একটা অবস্থায় দায়িত্ব নেওয়া যে কোনও কোচের পক্ষে কঠিন। দল নিয়ে বেশি অনুশীলনের সুযোগই পাইনি আমি। মহমেডান সব সময়ই জেতার কথা মাথায় নিয়েই মাঠে নামে। তবে আমরা পারছি না। তবে আশা করি, এর পর থেকে আমরা আরও ভাল খেলব। মাঝে মাঝে ব্যক্তিগত ভুলের জন্য আমরা ম্যাচ হারছি। কিন্তু এই ভুলগুলো আর করলে চলবে না। অনুশীলনে সেটাই করার চেষ্টা করছি আমরা। ম্যাচেও তা করে দেখাতে হবে”।

ডার্বির গুরুত্ব নিয়ে কোচ বলেন, “ডার্বি কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা এর সঙ্গে জড়িত সকলেই জানেন। তাই কালকের ম্যাচে আমরা আমাদের সর্বস্ব উজাড় করে দিতে চাই। ইস্টবেঙ্গলের পক্ষে যাতে ম্যাচটা কঠিন হয়ে ওঠে, সেই চেষ্টাই থাকবে আমাদের। আমরা ইতিবাচক মনোভাব নিয়েই মাঠে নামব”।

সুযোগকে গোলে পরিণত করতে না পারার রোগ যে মরশুমের শুরু থেকেই রয়েছে তাঁর দলে, তা স্বীকার করে নিয়ে মেহরাজউদ্দিন বলেন, “আমরা অনুশীলনে এই সমস্যা শোধারনোর চেষ্টা করছি। সে জন্য আমরা সম্প্রতি একজন বিদেশী ফরোয়ার্ডকেও এনেছি। আশা করি, কাল আমরা গোল পাব। তবে ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগানের মতো দলের বিরুদ্ধে গোল পাওয়া সব সময় কঠিন। তবে প্রতিপক্ষের গোল আটকানোর জন্য আমাদের রক্ষণকেও শক্তপোক্ত হতে হবে”।