চলতি আইএসএলের শুরুটা খুব একটা ভাল না হলেও ইস্টবেঙ্গলের কোচ কার্লস কুয়াদ্রাত দলের পারফরম্যান্সে খুশি। সোমবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে তারা জামশেদপুর এফসি-র বিরুদ্ধে গোলশূন্য ড্র করে। ফলে ঘরের মাঠে দু’পয়েন্ট খোয়াতে হয় তাদের। আইএসএলের ইতিহাসে অবশ্য এই প্রথম ইস্টবেঙ্গল তাদের অভিযান শুরু করল কোনও গোল না খেয়ে। 

কিন্তু শুরুতেই এই পারফরম্যান্স দেখে আদোও বিরক্ত বা অখুশি নন অতীতে আইএসএল চ্যাম্পিয়ন দলের কোচ। রাতে ম্যাচের পর সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আমরা সবে মরশুম শুরু করছি এবং অনেক কিছুই ক্রমশ উন্নতি হবে। তবে দলের ছেলেরা যা খেলেছে, তাতে আমি সন্তুষ্ট। অনেক ভাল ভাল সুযোগ তৈরি করেছি আমরা। শুরুতেই আমরা গোল পেয়ে গেলে ছবিটা পুরো বদলে যেত। সেক্ষেত্রে প্রতিপক্ষ গোল শোধ করার জন্য আরও ওপেন হয়ে যেত এবং আমরাও আরও আক্রমণ করতে পারতাম”। 

তিন পয়েন্ট না পেলেও অখুশি নন স্প্যানিশ কোচ। বলেন, “ভাল খেলেছি আমরা। সবাইকে বুঝতে হবে যে, উল্টোদিকের দলটাও আমাদের হারাতেই নেমেছিল। ওদেরও ভাল ফল পাওয়ার জন্য একটা পরিকল্পনা ছিল। আমি খুশি। তবে রক্ষণে আমাদের আরও উন্নতি দরকার। জর্ডন, চুঙনুঙ্গা-রা এই দলে নেই। সে জন্য ডুরান্ড কাপে রক্ষণে যারা খেলেছিল, তাদের নিয়ে এই ম্যাচে নামতে পারিনি। সে দিক থেকে ক্লিন শিট রাখতে পারাটা ভাল। এক পয়েন্টও এসেছে। আমি সে জন্য খুশি। সব সময় তিন পয়েন্ট পাওয়া সম্ভব হয় না। পরের ম্যাচের জন্য আমাদের খেলোয়াড়দের ইতিবাচক হতে হবে”। 

এ দিন সারা ম্যাচে অনেকগুলি গোলের সুযোগ হাতছাড়া করে ইস্টবেঙ্গল। দলের স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড হাভিয়ে সিভেরিওই সবচেয়ে বেশি সুবর্ণ সুযোগ পান। কিন্তু কোনওটাই কাজে লাগাতে পারেননি। এই নিয়ে আইএসএলে টানা আটটি ম্যাচে গোল করতে পারলেন না তিনি, যা তাঁর কেরিয়ারে সবচেয়ে খারাপ সময়। এই প্রসঙ্গে কোচ বলেন, “অনুশীলনে কিন্তু সিভেরিও প্রচুর ফিনিশ করে। ফুটবলে এ রকম হয়েই থাকে। খুব দ্রুত ঘটনাগুলো ঘটে। সেখানে কয়েক মিলিমিটার বা সেন্টিমিটারের জন্য গোলের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়। আমাদের পরিকল্পনা খুব পরিষ্কার ছিল। আমরা সেই অনুযায়ী খেলেছিও। কিন্তু শেষ পাস যদি ঠিক না হয়, তা হলেই মুশকিল হয়। সেটাই হয়েছে বারবার”। 

গতবারের সর্বোচ্চ স্কোরার ব্রাজিলীয় ফরোয়ার্ড ক্লেটন সিলভাকে এ দিনও ম্যাচের ৫৭ মিনিটের মাথায় নামতে দেখা যায়। মাঠে নামলেও চেনা ছন্দে পাওয়া যায়নি তাঁকে। অফ সিজনের পর যে তাঁর জড়তা এখনও কাটেনি, তা স্পষ্ট বোঝা যায় এ দিন। দলের কোচ তা স্বীকারও করে নেন। ক্লেটন সম্পর্কে তিনি বলেন, “এখনও পুরো তৈরি হয়নি ক্লেটন। ও যেহেতু দেরি করে দলে যোগ দেয়, তাই ডুরান্ড কাপে ও বেশিক্ষণ মাঠে থাকতে পারেনি। অন্যরা যেখানে মাঠে প্রায় সাতশো মিনিট কাটিয়ে ফেলেছে, সেখানে ক্লেটন মাঠে তিনশো মিনিট মতো থাকতে পেরেছে। ওর পুরো ম্যাচফিট হয়ে উঠতে সময় লাগবে। আরও বেশি সময় পেলে ও নিজেকে তৈরি করে ফেলবে। ও আমাদের দলের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। যখন বুঝব, ওকে দিয়ে শুরু করানো যেতে পারে, তখন নিশ্চয়ই ওকে দিয়ে শুরু করাব”। 

ম্যাচের শেষ দিকে লাল-হলুদ ফুটবলারদের যে ক্লান্তি ঘিরে ধরে, তা স্বীকার করতেও দ্বিধা করেননি কুয়াদ্রাত। বলেন, “শেষ দিকে আমাদের ছেলেরা ক্লান্ত হয়ে পড়ে ঠিকই। কিন্তু জামশেদপুরের খেলোয়াড়দের চেয়ে কম। আসলে সবে মরশুম শুরু হচ্ছে। তাই পুরো ফিট হতে ফুটবলারদের এখনও অনেক কিলোমিটার দৌড়তে হবে। এটা ঠিকই যে, আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়ি। কিন্তু আমরা শেষ দিকে যেখানে তিন পয়েন্টের জন্য ঝাঁপাই, সেখানে ওরা (জামশেদপুর) সময় নষ্ট করা ও কাউন্টার অ্যাটাকের দিকেই বেশি জোর দেয়। আমরাই ঝুঁকি নিয়ে গোলের চেষ্টা বেশি করেছি”। 

দলের খেলায় কোচ অখুশি না হলেও খেলোয়াড়রা যে খুশি নন, তা স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন দলের স্প্যানিশ তারকা বোরহা হেরেরা। সাংবাদিক বৈঠকে কোচের পাশে বসেই তিনি বলেন, “আমরা আজ ম্যাচ জিততেই নেমেছিলাম। তাই এই ফলে আমরা খুশি নই। তবে আমরা ওদের (জামশেদপুর) চেয়ে ভাল খেলেছি এবং গোলের সুযোগও অনেক তৈরি করেছি। তবে ফুটবলে এমন হয়। সব ম্যাচে জেতা যায় না। আমাদের এ রকমই ভাল খেলে যেতে হবে। বরং আরও উন্নতি করতে হবে”। 

ইস্টবেঙ্গলের পরবর্তী ম্যাচও ঘরের মাঠে, আগামী শনিবার, হায়দরাবাদ এফসি-র বিরুদ্ধে।