গতবারের চ্যাম্পিয়ন ইস্টবেঙ্গল এফসি-র খেলা দিয়ে এ বার কলিঙ্গ সুপার কাপ শুরু হচ্ছে রবিবার। ভুবনেশ্বরে এ মরশুমের এই টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলের মুখোমুখি হবে ইন্ডিয়ান সুপার লিগের অপর দল কেরালা ব্লাস্টার্স এফসি।

প্রথম দু’বারের সুপার কাপের মতো সরাসরি নকআউট ফরম্যাটে অনুষ্ঠিত হবে এ বারের এই টুর্নামেন্ট। তৃতীয় ও চতুর্থ সুপার কাপে যেমন গ্রুপ পর্ব এবং নকআউট- মিলিত ফরম্যাটে হয়েছিল, পঞ্চমবার তা হবে না। ফলে দলগুলিকে শুরু থেকেই কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। মোট ১৫টি দল এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে আইএসএলের ১৩টি দল এবং আই-লিগ থেকে দু’টি দল রয়েছে। আই লিগের আরও একটি দল চার্চিল ব্রাদার্সের খেলার কথা ছিল। তবে তারা নাম প্রত্যাহার করে নেওয়ায় ১৫টি দলকে নিয়েই হচ্ছে এই টুর্নামেন্ট।

কলিঙ্গ সুপার কাপ ২০২৫-এর চ্যাম্পিয়ন দল ২০২৫–২৬ এএএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ২ প্লে-অফে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে। তাই এই টুর্নামেন্ট ক্লাবগুলির কাছে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। ইস্টবেঙ্গল এফসি গতবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুবাদে এ মরশুমে এএফসি-র টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগ পেয়েছিল। এ বারও তারা এই খেতাব ধরে রাখার জন্য মরিয়া।

এ মরশুমের আইএসএলে তারা লিগ টেবলে ন’নম্বরে থেকে অভিযান শেষ করে। এই ব্যর্থতা ভুলতে তাদের সুপার কাপে ভাল পারফরম্যান্স দেখানো খুবই জরুরি বলে মনে করেন তাদের কোচ অস্কার ব্রুজোন। শনিবার এক ভার্চুয়াল সাংবাদিক বৈঠকে অস্কার বলেন, “গত তিন সপ্তাহ ধরে আমরা পরিশ্রম করছি। কারণ, এই টুর্নামেন্ট আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা গতবারের চ্যাম্পিয়ন এবং এই টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হলে এশীয় মঞ্চে ফের খেলার সুযোগ আসবে আমাদের কাছে। এটাই আমাদের কাছে প্রেরণা”।

কিন্তু আইএসএলের ব্যর্থতা তাদের তাড়া করে বেড়ালে ফের সমস্যায় পড়তে হতে পারে। কারণ, এখানে প্রতিটি ম্যাচে মরণ-বাঁচন লড়াই। জিতলে তবেই পরবর্তী ধাপে যেত পারবে তারা। রবিবার তাদের প্রি কোয়ার্টার ফাইনালে প্রতিদ্বন্দ্বী কেরালা ব্লাস্টার্স এফসি, যাদের বিরুদ্ধে আইএসএলে তারা প্রথম ম্যাচে ১-২-এ হেরে গিয়েছিল, কিন্তু ফিরতি লিগে একই ব্যবধানে জেতে।

প্রথম লিগের ম্যাচে দ্বিতীয়ার্ধে পিভি বিষ্ণুর দেওয়া গোলে এগিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও নোয়া সাদাউই সমতা আনেন এবং নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার দু’মিনিট আগে কোয়ামে পেপরা-র গোলে হার মানে তারা। ফিরতি লিগে সেই হারের বদলা নেয় লাল-হলুদ বাহিনী। সেই বিষ্ণুর গোলেই এগিয়ে যায় তারা এবং ব্যবধান বাড়ান হিজাজি মাহের। ম্যাচের শেষ দিকে দানিশ ফারুকের গোলে ব্যবধান কমলেও হার বাঁচাতে পারেনি কেরালা ব্লাস্টার্স। ইস্টবেঙ্গলের চেয়ে এক পয়েন্ট বেশি পেয়ে এক ধাপ ওপরে থেকে লিগ শেষ করে তারা। ফলে তাদের কাছেও এই টুর্নামেন্ট গুরুত্বপূর্ণ।

ইস্টবেঙ্গলের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট এ বার আইএসএলে জোড়া খেতাব জয়ের নজির গড়ার পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট পেয়ে লিগ শীর্ষে থাকার নজিরও গড়ে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের এই অসাধারণ ও ঐতিহাসিক পারফরম্যান্স যে তাদের সমর্থকদের হতাশা আরও বাড়িয়ে তুলেছে, তা স্বীকার করে নিয়ে লাল-হলুদ কোচ অস্কার এ দিন বলেন, “এই মরশুম মোটেই ভাল যায়নি আমাদের। সে জন্য সমর্থকদের হতাশ ও ক্ষুব্ধ হওয়াই স্বাভাবিক।
আমাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাব যেখানে অত ভাল ফল করেছে, সেখানে তাদের এই প্রতিক্রিয়া হওয়ারই কথা। আমরা সহজে এটা মেনে নিতে পারিনি। কিন্তু আমরা পেশাদার। তাই আমরা সমর্থকদের দেখাতে চাই আমরা ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া”।

রবিবার ব্লাস্টার্সকে হারাতে পারলে কোয়ার্টার ফাইনালে মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের বিরুদ্ধেই নামতে হবে তাদের। প্রি কোয়ার্টার ফাইনালে তাদের চার্চিল ব্রাদার্সের বিরুদ্ধে খেলার কথা ছিল। কিন্তু চার্চিল টুর্নামেন্ট থেকে নাম তুলে নেওয়ায় প্রি কোয়ার্টারে বাই পেয়ে সরাসরি কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার ছাড়পত্র পেয়ে গিয়েছে সবুজ-মেরুন বাহিনী। টুর্নামেন্টের সূচী অনুযায়ী কোয়ার্টার ফাইনালে উঠলে কলকাতার দুই প্রধানেরই মুখোমুখি হওয়ার কথা। সেই ম্যাচ হবে আগামী শনিবার।

তবে সেই ম্যাচে নামার আগে ব্লাস্টার্সকে হারানোর চ্যালেঞ্জ জিততে হবে তাদের। সদ্য ক্লাব ছেড়েছেন গতবারের সুপার কাপের নায়ক ক্লেটন সিলভা। হিজাজি মাহেরও চোট পেয়ে এই মরশুমে আর নেই। তাই বাকি পাঁচ বিদেশীদের নিয়েই এই টুর্নামেন্টে নামছে ইস্টেবঙ্গল এফসি। ডিফেন্ডার হেক্টর ইউস্তে, মিডফিল্ডার সল ক্রেসপো ও রিচার্ড সেলিস, ফরোয়ার্ড দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকস ও মেসি বৌলি। এঁদের মধ্যে আবার ক্রেসপোর চোট। তিনি রবিবারের ম্যাচে খেলতে পারবেন কি না, তার নিশ্চয়তা দিতে পারলেন না অস্কার। তিনি জানান, “সল গত দু’দিন অনুশীলন করতে পারেনি। রবিবার সকালে ঠিক করব, ওকে খেলানো হবে কি না”।

ক্রেসপো যদি শেষ পর্যন্ত না খেলতে পারেন, তা হলে হয়তো রবিবার ইস্টবেঙ্গলের মাঝমাঠ সামলাবেন নাওরেম মহেশ, জিকসন সিং ও শৌভিক চক্রবর্তীদের মধ্যে দু’জন। রক্ষণে হয়তো হেক্টরের সঙ্গে থাকবেন আনোয়ার আলি, লালচুঙনুঙ্গা ও মহম্মদ রকিপ। আক্রমণে দেখা যেতে পারে দিয়ামান্তাকস ও মেসিকে। দুই প্রান্ত দিয়ে হয়তো তাঁদের সাহায্য করবেন সেলিস ও বিষ্ণু। এই আক্রমণ বিভাগের সবচেয়ে বড় সমস্যা, গোলের অনেক সুযোগ তৈরি করেও সেগুলিকে প্রতিপক্ষের জালে জড়াতে না পারা। এই টুর্নামেন্টেও এই সমস্যার সমাধান করতে না পারলে তাদের ফের ভুগতে হবে।

তাদের নতুন কোচ ডেভিড কাতালার প্রশিক্ষণে এই প্রথম ম্যাচ খেলতে নামবে কেরালা ব্লাস্টার্স এফসি। তিনি এদিন বলেন, “রক্ষণে আমাদের সমস্যা আছে। তবে আমার কাছে সব বিভাগেই উন্নতি গুরুত্বপূর্ণ। আমি চাই, দলের সব বিভাগই শক্তিশালী হোক এবং দল সঙ্ঘবদ্ধ ভাবে ফুটবল খেলুক। আইএসএলে ব্যর্থতার পর দলের কয়েকজন খেলোয়াড় মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছে। আমি তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ফেরানোর চেষ্টা করছি। তাই এই টুর্নামেন্টে ভাল কিছু করে মরশুমটা ভাল ভাবে শেষ করতে চাই আমরা”।

ইস্টবেঙ্গলের মতো কেরালা ব্লাস্টার্সও তাদের পূর্ণশক্তির দল নিয়ে এই টুর্নামেন্টে নামছে। অধিনায়ক আদ্রিয়ান লুনা, তারকা স্ট্রাইকার নোয়া সাদাউই, কোয়ামে পেপরা ও ইয়েসুস জিমিনিজ-রা এই দলে রয়েছেন। গোলকিপার শচীন সুরেশ, ডিফেন্ডার হরমিপম রুইভা, মিলস দ্রিনচিচ, মিডফিল্ডার ভিবিন মোহনন, দানিশ ফারুক, কোরু সিং-দের মতো নির্ভরযোগ্য ফুটবলারদের নিয়েই ভুবনেশ্বরে এসেছে কেরালা-বাহিনী। ফলে লড়াইটা যে খুব একটা সহজ হবে ইস্টবেঙ্গলের পক্ষে, তা ধরে নিলে সেটা বোকামিই হবে।

কলকাতার আর এক আইএসএল ক্লাব মহমেডান এসসি শুক্রবার প্রি কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হবে আইএসএলের প্লে অফে ওঠা নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি-র বিরুদ্ধে। তাদের হারিয়ে সাদা-কালো বাহিনী কোয়ার্টার ফাইনালে উঠলে মুখোমুখি হতে পারে জামশেদপুর এফসি অথবা হায়দরাবাদ এফসি-র। টুর্নামেন্টের দুই সেমিফাইনাল হবে ৩০ এপ্রিল এবং ফাইনাল ৩ মে।

কলিঙ্গ সুপার কাপের ম্যাচগুলির সরাসরি সম্প্রচার হবে স্টার স্পোর্টস ৩ (কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে) এবং লাইভ স্ট্রিমিং হবে জিওহটস্টার-এ।