চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী সাধারণত তাদের বলা হয়, যাদের মধ্যে যখনই দেখা হয়, তখন এমন একটা লড়াই হয় যা যে কোনও দর্শকের রক্তে তুফান তোলে। কোনও লড়াইয়ে এক পক্ষ জেতে তো কোনও লড়াইয়ে অন্য পক্ষ। কোন লড়াইয়ে কোন পক্ষ জিতবে, তা আগে থেকে বলার সাহস হয় না কারও। 

ইন্ডিয়ান সুপার লিগে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট ও মুম্বই সিটি এফসি-কে অনেকেই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বলে ঠিকই, কিন্তু চিরপ্রতিদ্বন্দ্বিতার আসল শর্ত পূরণ করতে পেরেছে কি এই লড়াই? বোধহয় না। কারণ, দেশের সেরা ফুটবল লিগে সবুজ-মেরুন বাহিনী যতবার আরব সাগর পাড়ের দলের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে, তার কোনও বারই জয়ের হাসি নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারেনি। হয় হেরেছে, না হয় ড্র করেছে। 

পিছন দিকে ফিরে তাকালে দেখা যায় আইএসএলে দুই দল মুখোমুখি হয়েছে আটবার। তার মধ্যে ছ’বার জিতেছে মুম্বই সিটি এফসি। দু’বার ড্র হয়েছে। একবারও জিততে পারেনি মোহনবাগান। আইএসএলে এ পর্যন্ত বাকি সমস্ত দলকে হারাতে পারলেও মুম্বই সিটি এফসি-কে কখনও হারাতে পারেনি কলকাতার ঐতিহ্যবাহী দল। বারবার মুম্বই কাঁটায় বিদ্ধ হয়েছে তারা। 

সেই মুম্বই সিটি এফসি-কে হারিয়েই এ বার লিগশিল্ড জয়ের সুযোগ মোহনবাগানের সামনে। অর্থাৎ, এতদিন যা করতে পারেনি তারা, সেই একজোড়া অসাধ্য সাধন করার চ্যালেঞ্জ নিয়ে সোমবার সন্ধ্যায় মাঠে নামবেন দিমিত্রিয়স পেট্রাটস, জনি কাউকো, মনবীর সিং, শুভাশিস বোসরা। 

টানা চারবার ব্যর্থ

এ বার ঠিক যেরকম পরিস্থিতি, সে রকমই পরিস্থিতি ছিল ২০২১-এর ২৮ ফেব্রুয়ারি। দুই ক্লাবের সামনেই ছিল লিগের সেরা হওয়ার হাতছানি। তৎকালীন এটিকে মোহনবাগানের সামনে ছিল আরও সহজ শর্ত। সেই ম্যাচে ড্র করলেই তারা তাদের প্রথম আইএসএল মরশুমেই হয়ে উঠত লিগসেরা। 

কিন্তু এটিকে মোহনবাগানের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দেয় মুম্বই সিটি এফসি। বাম্বোলিমের জিএমসি স্টেডিয়ামে ২-০ গোলে জিতে সে বার আইএসএলের শীর্ষস্থান দখল করে এবং পরের মরশুমে এশিয়ার সবচেয়ে বড় ক্লাব-লিগ এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে স্প্যানিশ কোচ সের্খিও লোবেরার মুম্বই। 

সে বারও মোহনবাগানের কোচ ছিলেন আন্তোনিও লোপেজ হাবাস। এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের টিকিট পাওয়ার জন্য সে দিন মুম্বই সিটি এফসি-র সামনে জয় ছাড়া কোনও রাস্তা ছিল না। এটিকে মোহনবাগান ড্র করলেই সেই সম্মান অর্জন করে নিতে পারত। কিন্তু হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করেও মুম্বইয়ের দু’টি গোল শোধ করতে পারেননি রয় কৃষ্ণা, ডেভিড উইলিয়ামসরা। সাত মিনিটের মাথায় সেনেগালিজ ডিফেন্ডার মুর্তাদা ফল গোল করে এগিয়ে দেন দলকে। ৩৯ মিনিটের মাথায় সেই ব্যবধান বাড়ান নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড বার্থোলোমিউ ওগবেচে। ভুল শুধরে দ্বিতীয়ার্ধে গোল শোধ করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠলেও মুম্বইয়ের দুর্ভেদ্য রক্ষণ ভেদ করে বিপক্ষের জালে বল জড়াতে পারেনি এটিকে মোহনবাগান। 

শুধু যে সবুজ-মেরুন বাহিনীর লিগসেরা হওয়ার স্বপ্ন ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল মুম্বই সিটি এফসি, তা নয়, সে বার তাদের নক আউট চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনাও শেষ করে দেয় এই মুম্বই সিটি এফসি। ফাইনালে টানটান উত্তেজনায় ভরা ম্যাচে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ে ৯০ মিনিট পর্যন্ত ফল ১-১ থাকার পরে বিপিন সিংয়ের গোলে ফাইনাল জিতে নেয় তারা। ১৮ মিনিটের মাথায় ডেভিড উইলিয়ামসের গোলে এটিকে মোহনবাগান এগিয়ে যাওয়ার পরে তাঁরই সতীর্থ স্প্যানিশ ডিফেন্ডার তিরির নিজ গোলে সমতা আনে মুম্বই সিটি এফসি। সব শেষে বিপিন সিংয়ের গোলে ম্যাচের নিষ্পত্তি হয় এবং শেষ হাসি হাসেন বিপিন ও তাঁর সতীর্থরাই। সেই ঘা এখনও শুকোয়নি হাবাসের মনে। 

সেবার লিগপর্বে প্রথম মুখোমুখিতেও মুম্বই সিটি এফসি হারিয়ে দেয় মোহনবাগানকে। প্রথম লেগে তখন দ্বিতীয় সেরা এটিকে মোহনবাগান ও মুম্বই শীর্ষে।  কলকাতার দলকে ১-০ গোলে হারিয়ে লিগ টেবলে শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রেখেছিল তারা। দুই স্প্যানিশ কোচের কৌশলের যুদ্ধে একমাত্র গোলটি করেন নাইজেরিয়া-জাত তারকা ফরোয়ার্ড বার্থোলোমিউ ওগবেচে। গোয়ার ফতোরদা স্টেডিয়ামে সে দিন ৬৯ মিনিটের মাথায় ফরাসি মিডফিল্ডার হুগো বুমৌসের পাস থেকে দর্শনীয় গোল করে দলকে জেতান তিনি। তবে সেই গোলের এগারো মিনিট আগেই গঙ্গাপাড়ের ক্লাব এগিয়ে যেতে পারত এডু গার্সিয়ার গোলে। প্রায় ফাঁকা গোল পেয়েও লক্ষ্যভ্রষ্ট হন তিনি। যার মাশুল তাদের দিতে হয় ম্যাচ হেরে। 

এ ভাবে বারবার মুম্বইয়ের দলের বিরুদ্ধে নিজেদের ভুলের মাশুল দিতে হয় মোহনবাগান শিবিরকে। আইএসএলে প্রথম চারবারের দ্বৈরথে জয়ের মুখ দেখতে পায়নি তাদের। কিন্তু ২০২১-২২ মরশুমের লিগ পর্বের প্রথম লেগে যেটা ঘটে, তা মেনে নেওয়া খুব কঠিন ছিল মোহনবাগান সমর্থকদের পক্ষে। 

পাঁচ গোলের জ্বালা

বাংলার ফুটবলে প্রবাদ আছে, কলকাতা ডার্বির জয়ীরা পরের ম্যাচে জিততে পারে না। ২০২১-এর ১ ডিসেম্বরের রাতে ফতোরদার জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে সেই প্রবাদই সত্যি হয়। তার আগেই যতটা দাপট নিয়ে কলকাতা ডার্বি জিতেছিল এটিকে মোহনবাগান, মুম্বই সিটি এফসি সে দিন তার চেয়েও বেশি দাপটের সঙ্গে ৫-১ গোলে হারায় তাদের। সবুজ-মেরুন বাহিনীর বিরুদ্ধে সেটিই ছিল মুম্বই সিটি এফসি-র সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয়।  

প্রথমার্ধে বিক্রম প্রতাপ সিংয়ের জোড়া গোল ও ইগর অ্যাঙ্গুলোর গোলে এগিয়ে যায় মুম্বই। দ্বিতীয়ার্ধে মুর্তাদা ফল ও বিপিন সিং ব্যবধান বাড়িয়ে নেন। ম্যাচ শেষের আধ ঘণ্টা আগে মোহনবাগানকে একটি গোল এনে দেন পরিবর্ত হিসেবে নামা ডেভিড উইলিয়ামস। কিন্তু তার বেশি কিছুই করতে পারেননি সবুজ-মেরুন ফুটবলাররা। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই লাল কার্ড দেখে বেরিয়ে যেতে হয় মোহনবাগানের ডিফেন্ডার দীপক টাঙরিকে। তার জেরে আরও দুর্বল হয়ে পড়ে তারা। মুম্বইয়ের মতো দাপুটে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ওই অবস্থা থেকে ম্যাচে ফেরা সবুজ-মেরুন শিবিরের পক্ষে অসম্ভব ছিল। এই হারের পরেই হাবাসের মনের ঘা আরও বেড়ে যায়। এবং সেই ক্ষত নিয়েই তিনি এর পরে দায়িত্ব ছেড়ে দেশে ফিরে যান। 

তাঁর জায়গায় দায়িত্বে আসেন আর এক স্প্যানিশ তারকা কোচ হুয়ান ফেরান্দো। তিনি এসে মোহনবাগানকে মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে জয়ে ফেরাতে পারেননি ঠিকই। কিন্তু মুম্বই সিটি এফসি-কে পরপর দু’টি ম্যাচে রুখে দেন। প্রথমে সেই মরশুমেই দ্বিতীয় লেগে ১-১-এ এবং তার পরের মরশুমের প্রথম লেগে ২-২-এ। 

অবশেষে অবরুদ্ধ মুম্বই 

তারিখটা ছিল ২০২২-এর ৩ ফেব্রুয়ারি। সে দিন অল্পের জন্য মুম্বই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে প্রথম জয়ের সুযোগ হাতছাড়া হয় সবুজ-মেরুন ব্রিগেডের। তবে আইএসএলের কঠিনতম প্রতিদ্বন্দীদের সেই প্রথম জিততে দিল না এটিকে মোহনবাগান। ফতোরদার পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে দুই দলের মধ্যে ফুটবলযুদ্ধের তীব্রতা ওঠে চরমে। দুই দলই প্রচুর গোলের সুযোগ তৈরি করে এবং হাতছাড়াও করে। দু’পক্ষের আক্রমণ ও রক্ষণ বিভাগের মধ্যে তুমুল লড়াইয়ের শেষে ম্যাচ শেষ হয় ১-১-এ। 

ন’মিনিটের মাথায় আইএসএলে ৫০ তম ম্যাচ খেলতে নামা ডেভিড উইলিয়ামসের গোলে এটিকে মোহনবাগান এগিয়ে যায়। কিন্তু সেই গোলের ১৫ মিনিট পরে তাঁরই সতীর্থ ডিফেন্ডার প্রীতম কোটালের নিজগোলে সমতা আনে মুম্বই সিটি এফসি। এর পরে দুই দল একের পর এক গোলের সুযোগ তৈরি করলেও সেগুলি গোলে পরিণত করতে পারেনি কোনও পক্ষই। ডেভিড উইলিয়ামসের একটি হেড পোস্টে লেগে ফিরে না এলে বা দুই গোলকিপার একাধিক অবধারিত গোল না বাঁচালে এই ম্যাচের স্কোরলাইন হয়তো অন্যরকম হত। কিন্তু সে দিনও জয়ের ভাগ্য ছিল না মোহনবাগানের সঙ্গে। 

পরের মরশুমে, অর্থাৎ ২০২২-২৩-এ তাদের প্রথম লড়াই। সে বারই জৈব বলয় ছেড়ে ফের হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে পদ্ধতিতে ফিরে আসে ইন্ডিয়ান সুপার লিগ। ‘হাড্ডাহাড্ডি লড়াই’ বলে সেই রাতে মুম্বই ফুটবল এরিনার সেই ফুটবল-যুদ্ধের তীব্রতাকে সঠিক ভাবে বোঝানো অসম্ভব। ‘উপভোগ্য’ শব্দ ব্যবহার করলেও ম্যাচটি সম্পর্কে সঠিক বিশেষণ দেওয়া হয় না। উত্তেজনার চরম উপাদানে ঠাসা রোমহর্ষক এক ফুটবল দ্বৈরথ বললে তাও কিছুটা কাছাকাছি যেতে পারে। 

দু’পক্ষের দু’টি করে গোল, অসংখ্য গোলের সুযোগ, অজস্রবার ক্রসবারে লেগে ফিরে আসা, দুই দলের ওঠানামার গতিতে অভাবনীয় ক্ষিপ্রতা ও দু’পক্ষের রক্ষণের মরিয়া লড়াই— সব কিছুই মজুত থাকা সেই ম্যাচকে গত মরশুমের অন্যতম সেরা ম্যাচের তকমা দেওয়া যেতেই পারে। শেষ পর্যন্ত ম্যাচের ফল হয় ২-২। 

হুয়ান ফেরান্দো কোচ হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরে মুম্বই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে এটিকে মোহনবাগান সে বার দ্বিতীয় ড্র করে। ম্যাচের চতুর্থ মিনিটেই লালরিনজুয়ালা ছাঙতের গোলে মুম্বই এগিয়ে যাওয়ার পরে ৪৭ মিনিটের মাথায় মেহতাব সিংকে নিজ গোলে বাধ্য করেন জনি কাউকো। ৭২ মিনিটের মাথায় ডিফেন্ডার রস্টন গ্রিফিথের গোলে ফের এগিয়ে যায় মুম্বই সিটি এফসি। কিন্তু নির্ধারিত সময় শেষের ঠিক এক মিনিট আগে দ্বিতীয় গোলও শোধ করে দেন সবুজ-মেরুন মিডফিল্ডার কার্ল ম্যাকহিউ। 

বাড়তি সময়ে জয়সূচক গোলেরও সুযোগ পান দিমিত্রিয়স পেট্রাটস। কিন্তু বারে লেগে বল ফিরে আসে। সে দিন এ ভাবে যে কতবার যে দু’পক্ষের ফুটবলারদের গোলমুখী শট বিপক্ষের ক্রসবারে প্রতিহত হয়েছে, তার সঠিক হিসাব দেওয়া কঠিন। এখানেই শেষ নয়, লেনি রড্রিগেজ লাল কার্ড দেখায় এটিকে মোহনবাগানকে শেষ ১৯ মিনিট দশজনে খেলতে হয়। তা সত্ত্বেও তাঁরা গোল শোধ করে এবং ম্যাচ জেতার জায়গাতেও চলে যায়। কিন্তু মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে জয়ভাগ্য তাদের সঙ্গে বরাবরের মতো সে দিনও ছিল না। 

ফের দুঃসময় 

এই দু’বারই ড্রয়ের পর গত মরশুমের ফিরতি লেগে ফের জয়ে ফিরে আসে মুম্বই সিটি এফসি। গত বছরের ১৪ জানুয়ারি মোহনবাগানের ঘরের মাঠ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে তাদের বিরুদ্ধে প্রথম নামে মুম্বই সিটি এফসি। অনেকে ভেবেছিলেন, ঘরের মাঠে হাজার পঞ্চাশ সমর্থকের সামনে থেকে জয় ছিনিয়ে নিয়ে যেতে পারবে না মুম্বই। কিন্তু সেই আশাতেও জল ঢেলে দিয়ে গর্বের হাসি মুখে নিয়ে মাঠ ছাড়ে মুম্বই। 

যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে দুই দলের মধ্যে ৯০ মিনিটের রোমহর্ষক লড়াইয়ের পরে ১-০-য় জেতে মুম্বই সিটি এফসি। ২৯ মিনিটের মাথায় লালিয়ানজুয়ালা ছাঙতের গোলে লিগের এগারো নম্বর জয়টি তুলে নেয় লিগ শীর্ষে থাকা মুম্বই সিটি এফসি। এই জয়ের সঙ্গে সঙ্গে নক আউটেও পাকাপাকি জায়গা করে নেয় তারা এবং শেষে লিগশিল্ডও জেতে। সে দিন দুই দলের রক্ষণ ও গোলকিপারকে কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়। কলকাতার দলের গোলকিপার বিশাল কয়েথ যেখানে আটটি গোল বাঁচান, সেখানে ছ’টি সেভ করেন মুম্বইয়ের গোলকিপার ফুর্বা লাচেনপা। মুম্বই যেখানে ন’টি গোলমুখী শট নেয়, সেখানে এটিকে মোহনবাগানের গোলমুখী শটের সংখ্যা ছিল ছয়। 

চলতি মরশুমেও সবুজ-মেরুন বাহিনীর বিরুদ্ধে অপরাজিত থাকার রেকর্ড অক্ষুণ্ণ রেখেছে মুম্বই সিটি এফসি। গত ডিসেম্বরে মুম্বই ফুটবল এরিনায় গতবারের নক আউট চ্যাম্পিয়নদের ২-১-এ হারায় গতবারের লিগশিল্ডজয়ীরা। প্রথমার্ধে জেসন কামিংসের গোলে এগিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও সেই ব্যবধান ধরে রাখতে পারেনি মোহনবাগান। ৪৪ মিনিটে সমতা আনেন গ্রেগ স্টুয়ার্ট এবং ৭৩ মিনিটে বিপিন সিংয়ের দেওয়া গোলে আটবারের মুখোমুখিতে ছ’নম্বর জয়টি পায় সাগরপাড়ের দল।

কিন্তু সে দিন সেই ম্যাচের ফলের সঙ্গে ম্যাচের মেজাজের বিন্দুমাত্র মিল ছিল না। কড়া হাতে সেই ম্যাচ নিয়ন্ত্রণ করেন রেফারি রাহুল গুপ্তা এবং সাতটি হলুদ কার্ড ও সাতটি লাল কার্ড দেখান। এতগুলি লাল কার্ড ও হলুদ কার্ড একসঙ্গে কখনও দেখানো হয়নি ইন্ডিয়ান সুপার লিগে।  মুম্বই সিটি এফসি-র আকাশ মিশ্র, গ্রেগ স্টুয়ার্ট, বিক্রম প্রতাপ সিং ও অধিনায়ক রাহুল ভেকে লাল কার্ড দেখার সঙ্গে মোহনবাগানের আশিস রাই, লিস্টন কোলাসো ও হেক্টর ইউস্তেকেও এই কার্ড দেখানো হয়। 

দুই দলের মধ্যে বারবার ফুটবলের লড়াইয়ে উত্তেজনার পারদ চরমে ওঠে ঠিকই। কিন্তু দুই পক্ষের ফুটবলাররা উত্তেজিত হয়ে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি করলে, তা মোটেই বাঞ্ছনীয় না। সোমবার ফের দুই দল মুখোমুখি হবে। এ বার যুবভারতীর সবুজ গালিচায়। দুই দলই যে ফর্মে আছে, তাতে এ বারেও ফুটবলের লড়াই হয়তো পৌঁছবে চরম সীমায়। কিন্তু এ বারেও কি জয়ের হাসি হাসবে অতিথিরা, না কি নিজেদের ঘরের মাঠে মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে আটবার জিততে না পারার জ্বালা মেটাবে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট? হিসেব শুধু যে গোটা দলের বাকি আছে, তা তো নয়। কোচ হাবাসের সঙ্গেও মুম্বইয়ের দলের অনেক বোঝাপড়া বাকি। সেই সব হিসেবের খতিয়ান তো পাওয়া যাবে আজ রাতেই।