ক্লাব মরশুমে অসাধারণ সাফল্য পেয়েছেন তিনি। এ বার সামনে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ তাঁর। ক্লাব মরশুমের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এ বার আন্তর্জাতিক ফুটবলের লক্ষ্যেও সফল হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলেছেন শুভাশিস বোস। সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের বিচারে বর্ষসেরা ফুটবলারের খেতাব জয়ী বাংলার এই তারকা মনে করেন, থাইল্যান্ড ও হংকংয়ের বিরুদ্ধে তাদের সবচেয়ে বড় লক্ষ্য হওয়া উচিত গোল অক্ষত রাখা এবং গোল করা। নিজের শহর কলকাতায় তারই প্রস্তুতি শিবির চলছে এখন। সেই প্রস্তুতি শিবিরেই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় এই লক্ষ্যের কথা জানালেন শুভাশিস।

তিনি বলেন, "আমি মনে করি আমাদের দলে অনেক প্রতিভাবান এবং সৃজনশীল খেলোয়াড় আছে, যারা গোল করতে পারে। এমনকী, সুনীল (ছেত্রী) ভাই-ও দলে ফিরে এসেছে, তাই আশা করি, আগামী দুটি ম্যাচে আমরা গোল করব এবং রক্ষণভাগেও দৃঢ়তা বজায় রেখে ক্লিন শিট রাখতে পারব"।

মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট-এর হয়ে আইএসএল মরসুমে অসাধারণ সাফল্য, এবং বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার—এ সব কিছুই আরও সাফল্যের জন্য তাঁকে উসকে দিয়েছে। জুন মাসের ফিফা আন্তর্জাতিক উইন্ডোয় ভারতের নীল জার্সিতেও সেই সাফল্য বজায় রাখতে চান তিনি।

আগামী ১০ জুন হংকংয়ের কাওলুন সিটিতে এএফসি এশিয়ান কাপ ২০২৭ বাছাই পর্বের ম্যাচে তারা হংকংয়ের মুখোমুখি হবে, যা ভারতের পক্ষে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ হতে চলেছে। এই ম্যাচের প্রস্তুতির অঙ্গ হিসেবে ৪ জুন তারা থাইল্যান্ডের পাতুম থানিতে একটি প্রীতি ম্যাচ খেলবে সেই দেশের জাতীয় দলের বিরুদ্ধে।

এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে ভারতের গ্রুপে রয়েছে হংকং, সিঙ্গাপুর ও বাংলাদেশ। বাছাই পর্বে মোট ২৪টি দলকে ছ’টি গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে। প্রতি গ্রুপের এক নম্বর দলগুলি মূলপর্বে উঠবে, যেখানে ইতিমধ্যেই ১৮টি দল জায়গা পাকা করে ফেলেছে। ভারত রয়েছে ‘সি’ গ্রুপে। আগামী বছর ৩১ মার্চ পর্যন্ত চলবে বাছাই পর্বের এই খেলাগুলি। তার পরেই বোঝা যাবে কারা এই গ্রুপ থেকে ২০২৭-এ সৌদি আরবে এশিয়ান কাপের মূলপর্বে খেলবে।

এই গ্রুপে ভারতই (১২৬) ফিফা ক্রমতালিকায় সবার ওপরে থাকা দল। হংকং রয়েছে ১৫৫ নম্বরে, সিঙ্গাপুর ১৬০-এ ও বাংলাদেশ ১৮৫। তবে প্রথম ম্যাচেই ভারত হোঁচট খেয়েছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গোলশূন্য ড্র করে। গ্রুপে থাকা অপর দুই দল হংকং ও সিঙ্গাপুর-ও তাদের ম্যাচে গোলশূন্য ড্র করে। ফলে গ্রুপের প্রতিটি দলই একই জায়গায় রয়েছে। ভারতের স্বস্তির কারণ বলতে শুধুমাত্র এটুকুই। তবে হংকংয়ের বিরুদ্ধে আসন্ন ম্যাচে ভারতকে জেতার সংকল্প নিয়েই নামতে হবে।

মার্চে মলদ্বীপের বিরুদ্ধে ফ্রেন্ডলি ম্যাচে ৩-০-য় জিতেছিল ভারত। জাতীয় কোচ হিসেবে মার্কেজের প্রথম জয় ছিল সেটি। কিন্তু তার কয়েকদিন পরেই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নিরুত্তাপ গোলশূন্য ড্রয়ের ফলে ফের ধাক্কা খায় তারা। অর্থাৎ, বাছাই পর্বের শুরুটা মোটেই ভাল হয়নি তাদের। কিন্তু বাকি পাঁচটি ম্যাচে তাদের ভাল না খেললে গ্রুপশীর্ষে থেকে মূলপর্বে ওঠা হবে না ভারতের।

চলতি প্রস্তুতি শিবির প্রসঙ্গে শুভাশিস বলেন, "গত কয়েকটি ম্যাচে হয়ত আমরা কিছু ছোটখাটো ভুল করেছি। কিন্তু এখন আমাদের কাজ ভুলগুলি শোধরানো। আমরা এই ম্যাচগুলোর আগে নিজেদের এই দিকগুলোতে উন্নত করতে চাই। কোচ আমাদের এই শিবিরে উন্নতির জায়গাগুলো নিয়ে আলোচনা করছেন, এবং আমরা সবাই সেই অনুযায়ী অনুশীলন করছি"।

ইতিমধ্যেই জাতীয় দলের হয়ে ৪২টি ম্যাচ খেলেছেন এবং তৃতীয়বারের মতো এএফসি এশিয়ান কাপে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছেন। ২০১৯-এ সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতে এশিয়ান কাপে মাত্র ২৩ বছর বয়সে যাত্রা শুরু করেন তিনি। গত সাত বছরের এই সফর তাঁর ধারাবাহিকতার প্রমাণ।

এ মরসুমে ইন্ডিয়ান সুপার লিগে ছ’টি গোল করে শুভাশিস ছিলেন ভারতীয় খেলোয়াড়দের মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা, একজন লেফট-ব্যাকের পক্ষে যা যথেষ্ট ভাল পরিসংখ্যান। যদিও তিনি এখনও দেশের হয়ে প্রথম গোলের অপেক্ষায় রয়েছেন। ভারতের হয়ে গোল করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাঁর কাছে। তবে ক্লিন শিট থাকলেই তিনি সন্তুষ্ট। সে জন্য নিজের সেরা খেলাটা খেলতে চান তিনি।

নিজের ফর্ম নিয়ে কলকাতার প্রস্তুতি শিবিরে সাংবাদিকদের শুভাশিস বলেন, "এই বছরটা আমার খুব ভাল কেটেছে এবং এই ধরনের একটি মরশুম যে কোনও খেলোয়াড়ের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তোলে। এই পারফরম্যান্স আমাকে আরও কঠোর পরিশ্রম করতে এবং নিজেকে উন্নত করতে অনুপ্রাণিত করে, যাতে আমি দেশের জন্য আরও ভাল খেলতে পারি। আমরা আমাদের সেরাটা দিতে চাই ও ভারতকে জেতাতে চাই"।

নিজের শহরে প্রস্তুতি শিবির হওয়ায় খুশি শুভাশিস বলেন, "আমি বিশেষভাবে খুশি যে এই শিবিরটা কলকাতায় হচ্ছে এবং ফেডারেশন এখানে ন্যাশনাল সেন্টার ফর এক্সেলেন্সের মত সুবিধা গড়ে তুলেছে, যাতে জাতীয় দল ভাল মানের মাঠে অনুশীলন করতে পারে। আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি, যে দেশের হয়ে খেলতে পারছি। প্রতিটি ম্যাচই গুরুত্বপূর্ণ। কখনও ভাল খেলি, কখনও খারাপ— এটাই খেলার অঙ্গ। গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল, আমরা সবাই একসঙ্গে খেলি। দল হিসেবে কাজ করি। আমরা শুধু গোল বাঁচাতে পারি না, গোল দিতেও পারি"।

ক্লাব থেকে ভারতীয় শিবিরে এসে ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রসঙ্গে ২৯ বছর বয়সী তারকা ডিফেন্ডার বলেন, "আমরা সবাই এই মরশুমে বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে খেলেছি, কিন্তু এখন আমাদের একসাথে খেলার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে, যেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আমরা সবাই বিভিন্ন কোচ ও পদ্ধতির অধীনে খেলেছি। এখন আমাদের কোচ মানোলো যে সিস্টেম তৈরি করেছেন, তার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হবে যেন আমরা সম্মিলিতভাবে ভাল খেলতে পারি। অবশ্যই আমাদের সবাইকে একই রকম চিন্তাধারায় থাকতে হবে এবং একই মানসিকতা নিয়ে খেলতে হবে"।