রবিবার ফের ভারতীয় ফুটবলের সেই মহারণ, যেখানে দুই দলের দ্বৈরথ এক জাতির মধ্যে সাময়িক বিভেদ সৃষ্টি করে দেয়। সারা বিশ্বের বাঙালি যে ফুটবল-যুদ্ধের জন্য দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। সেই মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গলের লড়াই ফের হতে চলেছে রবিবার রাতে। আর এই যুদ্ধে যে তারা শুধুমাত্র জয়ের জন্যই ঝাঁপাবেন, তা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন সবুজ-মেরুন বাহিনীর অধিনায়ক শুভাশিস বোস।

ইন্ডিয়ান সুপার লিগের ফিরতি লেগে রবিবার মুখোমুখি হতে চলেছে কলকাতার দুই প্রধান ফুটবল ক্লাব। মাসখানেক আগে প্রথম লেগে দুই দলের ম্যাচ শেষ হয়েছিল ২-২ ফলে। সে দিন কলকাতা ডার্বি তার চেনা আগুনে মেজাজে ফেরে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে।

উত্তেজনায় প্রায় কাঁপতে কাঁপতে ৯০ মিনিটের সেই ফুটবল যুদ্ধ দেখেন যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের প্রায় ষাট হাজার দর্শক। তুমুল উত্তেজনার মধ্যেই সে দিন চার-চারটি গোল হয়। তিন মিনিটের মাথায় যেমন গোল হল, তেমন ৮৭ মিনিটের মাথাতেও গোল হতে দেখা যায়।

ম্যাচের শুরুতেই গোল করে দলকে এগিয়ে দিয়েছিলেন জীবনে প্রথম ডার্বিতে নামা মণিপুরী তরুণ অজয় ছেত্রী। ১৭ মিনিটের মাথায় সমতা আনেন মোহনবাগানের আলবানিয়ান ইউরো কাপার আরমান্দো সাদিকু। বিরতিতে ১-১ থাকার পর ৫৫ মিনিটের মাথায় পেনাল্টি থেকে গোল করে দলকে ফের এগিয়ে দেন লাল-হলুদ অধিনায়ক ক্লেটন সিলভা। তবে তাদের জয়ের সম্ভাবনায় জল ঢেলে ফের সমতা আনেন মোহনবাগানের অস্ট্রেলীয় ফরোয়ার্ড দিমিত্রিয়স পেট্রাটস।

সেই প্রথম আইএসএলের কলকাতা ডার্বি অমীমাংসিত ভাবে শেষ হয়। তার আগে যতবার দুই প্রধান আইএসএলে মুখোমুখি হয়েছিল, প্রতিবারই জয়ের হাসি হাসতে হাসতে মাঠ ছাড়তে দেখা যায় মোহনবাগানের খেলোয়াড়দেরই। এ বারও ফের সে ভাবেই জয়ের হাসি মুখে নিয়ে মাঠ ছাড়তে চান সবুজ-মেরুন বাহিনীর অধিনায়ক শুভাশিস।

আসন্ন ডার্বি নিয়ে তিনি indiansuperleague.com কে বলেন, “এখন প্রতিটা পয়েন্টই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, লিগ শিল্ডের দৌড়ে আমরা রয়েছি। তাই ইস্টবেঙ্গল এফসি-র বিরুদ্ধে আমরা তিন পয়েন্টের জন্যই ঝাঁপাব। যাতে আমরা শীর্ষে উঠতে পারি। ডার্বি কলকাতার সমর্থকদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। সমর্থকদের মুখে হাসি ফোটানো আমাদের দায়িত্ব। কিন্তু গতবার তা পারিনি। আশা করি এ বার পারব”।

এই মুহূর্তে দুই দলের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স বিচার করে বিশেষজ্ঞরা মোহনবাগানকে এগিয়ে রাখলেও কলকাতা ডার্বি এমন এক ম্যাচ, যেখানে ভবিষ্যদ্বাণী করা মানেই বড় ঝুঁকি নেওয়া। কিন্তু চলতি বছর শুরু হওয়ার পর থেকে মোহনবাগান যে ভাবে এখনও ছ’টি ম্যাচের মধ্যে চারটিতে জয় পেয়ে ও দু’টিতে ড্র করে ১৪ পয়েন্ট অর্জন করেছে এবং সেই জায়গায় ইস্টবেঙ্গল আটটি ম্যাচের মধ্যে পাঁচটিতেই হেরেছে, সেখানে সবুজ-মেরুন শিবিরকেই অনেকে এগিয়ে রাখতে চাইছে।

নতুন কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাসের প্রশিক্ষণে ও ফিনল্যান্ডের আন্তর্জাতিক ফুটবলের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন মিডফিল্ডার জনি কাউকোর ছোঁয়ায় মোহনবাগান যেন নতুন করে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে। টানা তিন ম্যাচে হেরে গত বছরটা শেষ করা বাগান-বাহিনী চলতি বছর শুরু করে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে ২-২ ড্র দিয়ে। তার পর আর একটি মাত্র ম্যাচে ড্র করে তারা। বাকি ছ’টি ম্যাচেই জেতে। এই ছয় ম্যাচে তারা ১২ গোল দিয়ে মাত্র চারটি গোল খেয়েছে।

গত ম্যাচে জামশেদপুর এফসি-র বিরুদ্ধে রীতিমতো দাপুটে ফুটবল খেলে জামশেদপুর এফসি-কে ৩-০-য় হারিয়ে লিগ টেবলের দু’নম্বরে উঠে এল মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। আক্রমণ বিভাগের তিন তারকা অস্ট্রেলীয় স্ট্রাইকার দিমিত্রিয়স পেট্রাটস, তাঁর স্বদেশীয় বিশ্বকাপার জেসন কামিংস ও আলবানিয়ান স্ট্রাইকার আরমান্দো সাদিকু, প্রত্যেকেই গোল পান। এই ম্যাচের পর থেকেই লিগ শিল্ড জয় করার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে তারা।

গত ম্যাচে ছন্দে ফিরে আসা নিয়ে শুভাশিস বলেন, “জামশেদপুরের বিরুদ্ধে দল হিসেবে আমরা ভাল খেলেছি। প্রত্যেকেই একশো শতাংশ দিয়েছে। যে পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছিলাম, তা কার্যকর করতে পেরেছি। দুই উইংয়ে মনবীর অসাধারণ খেলে। আমরা প্রচুর সুযোগ তৈরি করেছি সে দিন। ওডিশার বিরুদ্ধে ম্যাচেও আমরা অনেক সুযোগ পেয়েছিলাম, কিন্তু একটা থেকেও গোল পাইনি। কিন্তু জামশেদপুরের বিরুদ্ধে আমরা সুযোগগুলো গোলে পরিণত করতে পেরেছি, যে জন্য তিন পয়েন্ট অর্জন করতেও পেরেছি”।

সে দিনের ম্যাচে তিন স্ট্রাইকারেরই গোল পাওয়া নিয়ে অধিনায়কের মন্তব্য, “স্ট্রাইকাররা সব সময়ই গোল করতে চায়। গোল করতে পারলে ওদের আত্মবিশ্বাসও বাড়ে। পেট্রাটস, কামিংস, সাদিকুরাও এই ম্যাচের পর বাড়তি মানসিক শক্তি অর্জন করল। ডার্বির আগে এই জয় আমাদের আরও উজ্জীবিত করে তুলেছে”।

জনি কাউকো দলে ফের যোগ দেওয়ার পর থেকেই মোহনবাগানের মাঝমাঠ যথেষ্ট শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। গোলের সুযোগও আগের চেয়ে অনেক বেশি তৈরি হচ্ছে। হাবাস ও কাউকোর ছোঁয়ায় দল যে আরও টগবগ করে ফুটছে, এ কথায় সায় দিয়ে শুভাশিস বলেন, “জনি অসাধারণ ফুটবলার। সত্যিই খুব ভাল খেলছে ও। কোচ হাবাসের প্রশিক্ষণে আমরা অনেক সঙ্ঘবদ্ধ ফুটবল খেলছি। দল হিসেবে আক্রমণে উঠছি, আবার রক্ষণেও দল হিসেবেই খেলছি। দল হিসেবে খেলতে পারছি বলেই আমাদের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স ভাল হচ্ছে”।