পাঞ্জাব এফসি-র বিরুদ্ধে তিন পয়েন্ট না পেতে পারলেও আফসোস নেই ইস্টবেঙ্গলের স্প্যানিশ কোচ কার্লস কুয়াদ্রাতের। শেষ পর্যন্ত যে পয়েন্ট খোয়ায়নি তাঁর দল, একেই তিনি ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন।

শনিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে গোলশূন্য ড্র করে মাঠ ছাড়ে লাল-হলুদ বাহিনী ও পাঞ্জাব এফসি। এই ম্যাচ থেকে এক পয়েন্ট পাওয়ায় অবশ্য লিগ টেবলে প্রথম ছয়ে চলে এল ইস্টবেঙ্গল। তাদের নর্থইস্টের অর্জিত পয়েন্ট (৯) সমান হলেও গোলপার্থক্যে একধাপ এগিয়েই রইল। অন্যদিকে পাঞ্জাব রয়ে গেল এগারো নম্বরেই।

গত ম্যাচে ইস্টবেঙ্গল ৫-০-য় জিতেছিল নর্থইস্ট ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে। অন্যদিকে, পাঞ্জাব এফসি ৩-১ গোলে এগিয়ে থাকার পর বেঙ্গালুরু এফসি-র বিরুদ্ধে ৩-৩ ড্র করে। ফলে আশা করা হয়েছিল, এই দুই দলের ম্যাচে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। তা হলে বটে, কিন্তু তাতে কোনও পক্ষই কোনও গোল করতে পারল না। যে ম্যাচ থেকে তিন পয়েন্ট আশা করেছিলেন ইস্টবেঙ্গল সমর্থকেরা। সেই ম্যাচে মাত্র এক পয়েন্ট পেয়েও তেমন আক্ষেপ করতে শোনা গেল না কোচকে। উল্টে দলের ছেলেদের প্রশংসা করলেন।

ম্যাচের পরে রাতে সাংবাদিক বৈঠকে কুয়াদ্রাত বলেন, “আমার মনে হয় না আজ আমাদের কোনও সমস্যা ছিল বা আমরা খারাপ খেলেছি। আজ আমাদের প্রতিপক্ষ দুর্দান্ত রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলেছে। আমাদের খেলোয়াড়দের আটকানোর যাবতীয় চেষ্টা ওরা করেছে। আমরা যেমন ওদের চেয়ে বেশি আক্রমণ করেছি, তেমনই ওদের বক্সে বেশি হানা দিয়েছি। কিন্তু শেষ পাস বা ক্রসের ক্ষেত্রে দুই দলই প্রায় সমান ছিল। এক্ষেত্রে আমরা কেউই ভাল কিছু করতে পারিনি”।

একাধিক আক্রমণ সত্ত্বেও গোল না পাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে কুয়াদ্রাত বলেন, “ওদের গোলের সামনে গিয়ে আমরা ভাল খেলতে পারিনি। গোল পেলে ম্যাচটা অন্যরকম দাঁড়াত। তবে দলের ছেলেদের চেষ্টায় আমি খুশি। আমরা যে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী ছিলাম না, তা আমরা বোঝাতে পেরেছি। তিন পয়েন্ট পাওয়ার জন্য যে লড়াই প্রয়োজন, তা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমরা করেছি। ফুটবলে তো গোলই আসল। সে জন্য আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। তবে ক্লিন শিট বজায় রাখতে পেরেছি এবং তিন পয়েন্ট খোয়াইনি। গোল না পেলে গোল আটকাতে হবেই। জানুয়ারির অবকাশের আগে এখনও আমাদের সামনে ছ’পয়েন্ট অর্জন করার সুযোগ আছে। এই ছ’পয়েন্ট খুবই জরুরি। এই ভাবেই লড়ে যেতে হবে আমাদের”।

দলের রক্ষণেরও প্রশংসা করে কুয়াদ্রাত বলেন, “আমাদের রক্ষণ যে শক্তিশালী, সেটা আমাদের উপলব্ধি করতে হবে। গোল খাওয়া বন্ধ করা প্রয়োজন ছিল আমাদের। ওদের আমরা আজ কোনও সহজ সুযোগও তৈরি করতে দিইনি। মেরার যে শটটা পোস্টে লাগল, সেটা ছাড়া ওরা আর কোনও ভাল সুযোগ তৈরি করতে পারেনি। আমাদের ক্লেটন, বিষ্ণুরা সেই তুলনায় ভাল ভাল সুযোগ পেয়েছে। এই ম্যাচে হয়তো আমরা এক গোলে জিততে পারতাম। কিন্তু সে জন্য তো বল গোলে ঢোকাতে হবে। এখন আমাদের পরের ম্যাচের প্রস্তুতির দিকে তাকানো ছাড়া কোনও উপায় নেই”।

দলের তরুণ খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সে খুশি কোচ। বলেন, “আমরা আজ একাধিক তরুণ খেলোয়াড়কে ব্যবহার করেছি। কারণ, ওরা যথেষ্ট গতিময়। ওরা সহজেই সঠিক জায়গায় নিজেদের নিয়ে যেতে পারে এবং দ্রুততার সঙ্গে। ফলে শেষ দিকে অনেক সময়ও বেঁচে যায়। বিষ্ণু অনেক চেষ্টা করেছে, যাতে ম্যাচের ছবিটা বদলে দেওয়া যায়। তবে ওদের এখনও অনেক শিখতে হবে। কারণ, এই স্তরের ফুটবল অন্যরকম। ওদের জানতে হবে বক্সের মধ্যে পরপর টিনজনকে ড্রিবল করার পর বল পাস করা ছাড়া কোনও রাস্তা নেই। এ সব ওদের আরও ভাল করে শিখতে হবে। আমার এই ক্লাবে দু’বছর চুক্তি আছে। আশা করি, ওদের এগুলো শিখিয়ে দিতে পারব”।

প্রতিপক্ষ পাঞ্জাব এফসি এই ম্যাচে ড্র করে লিগের শুরুতে টানা ন’টি ম্যাচে জয়হীন থাকার নজির গড়ল। এর দুই মরশুম আগে ইস্টবেঙ্গলও টানা আটটি ম্যাচে জয়হীন থাকার পর জয়ের মুখ দেখে। তাদের বিরুদ্ধে জিততে না পারলেও প্রতিপক্ষের প্রশংসা শোনা গেল কুয়াদ্রাতের মুখে। বলেন, “পাঞ্জাব প্রতি ম্যাচে উন্নতি করছে। কারণ, ওরা সবে ইন্ডিয়ান সুপার লিগের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে শুরু করে দিয়েছে। গত ম্যাচে ৩-১-এ এগিয়ে থাকার পর শেষে ওরা ৩-৩ ড্র করে। এগুলো থেকেই ওরা শিখছে অনেক কিছু। তবে ওরা আজ রক্ষণ যথেষ্ট ভাল করেছে। কাউন্টার অ্যাটাকও করেছে অনেক। প্রথমার্ধে একটাই সুযোগ ওরা পেয়েছিল। লুকা, মেরা আরও কয়েকটি সুযোগ তৈরি করে। ওরা তিন পয়েন্ট পাওয়ার অনেক চেষ্টা করেছে। কিন্তু আমরা তা হতে দিইনি”।

তবে এই সময়ে এই ধরনের ম্যাচে পয়েন্ট খোয়ানো মানে যে লিগের শেষ দিকে বেশ চাপে পড়ে যেতে পারে তারা, তা স্বীকারই করে নিচ্ছেন লাল-হলুদ কোচ। বলেন, “আমাদের মতো অনেক দলই এখন ড্র করছে, পয়েন্ট খোয়াচ্ছে। মরশুমের শেষে তাদের এমন অবস্থা দাঁড়াতে পারে, তখন প্রতি ম্যাচই ফাইনাল মনে হবে। সেটা বোঝা যাবে সুপার কাপের পর”। সুপার কাপ হচ্ছে জানুয়ারিতে। ওই সময়ে ভারতীয় দল এশিয়ান কাপ খেলবে। তাই পুরো দল পাওয়া যাবে না। ভারতীয় দলে যারা ডাক পাবেন, তাঁদের বাদ দিয়েই সুপার কাপে দল নামাতে হবে আইএসএল ও আইলিগের দলগুলিকে।