বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে ভারতের গ্রুপে কাতার, কুয়েত, আফগানিস্তান বা মঙ্গোলিয়া
আগামী বিশ্বকাপ ফুটবলের বাছাই পর্বে ভারতের গ্রুপে রয়েছে কাতার, কুয়েত ও আফগানিস্তান অথবা মঙ্গোলিয়া। বৃহস্পতিবার দুপুরে মালয়েশিয়ায় আগামী বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপের বাছাই পর্বের যে গ্রুপ বিন্যাস হল, তাতে এ রকমই জানা গিয়েছে। ভারত যেহেতু এখন ফিফার বিশ্ব ক্রমতালিকায় প্রথম একশোর মধ্যে রয়েছে, তাই তারা সরাসরি দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে খেলবে। চলতি বছরের ১৬ নভেম্বর থেকে বাছাই পর্বের দ্বিতীয় রাউন্ডের খেলা শুরু হবে।


আগামী বিশ্বকাপ ফুটবলের বাছাই পর্বে ভারতের গ্রুপে রয়েছে কাতার, কুয়েত ও আফগানিস্তান অথবা মঙ্গোলিয়া। বৃহস্পতিবার দুপুরে মালয়েশিয়ায় আগামী বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপের বাছাই পর্বের যে গ্রুপ বিন্যাস হল, তাতে এ রকমই জানা গিয়েছে। ভারত যেহেতু এখন ফিফার বিশ্ব ক্রমতালিকায় প্রথম একশোর মধ্যে রয়েছে, তাই তারা সরাসরি দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে খেলবে। চলতি বছরের ১৬ নভেম্বর থেকে বাছাই পর্বের দ্বিতীয় রাউন্ডের খেলা শুরু হবে।
বাছাই পর্বে ভারতের গ্রুপে তাদের চেয়ে ক্রমতালিকায় ওপরে থাকা একমাত্র দল কাতার। বাকি দু’টি দল ক্রমতালিকায় তাদের চেয়ে নীচে রয়েছে। প্রতি গ্রুপ থেকে দুটি করে দল তৃতীয় রাউন্ডে উঠবে। ফলে ভারতের তৃতীয় রাউন্ডে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। গত বিশ্বকাপের ও আসন্ন এশিয়ান কাপের আয়োজক কাতার এখন বিশ্ব ক্রমতালিকায় ৫৯ নম্বরে রয়েছে। ভারত রয়েছে ৯৯ নম্বরে। কুয়েত ১৩৭, আফগানিস্তান ১৫৭ ও মঙ্গোলিয়া ১৮৩ নম্বরে রয়েছে। প্রথম রাউন্ডে আফগানিস্তান ও মঙ্গোলিয়ার মধ্যে লড়াইয়ে জয়ী দল উঠবে দ্বিতীয় রাউন্ডে।
সম্প্রতি ভারতের সঙ্গে কুয়েতের একাধিকবার দেখা হয়েছে ফুটবল মাঠে। তাদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করে এক ম্যাচে ড্র করে (শেষ মুহূর্তে নিজেদের অসাবধানতায় হওয়া নিজ গোলে) এবং সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে এক গোলে পিছিয়ে থেকেও অবশেষে টাই ব্রেকারে জেতে ভারত। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ভারত এ পর্যন্ত ন’বারের মুখোমুখিতে চারবার হারিয়েছে। একবার জিতেছে আফগানরা। বাকি চারবারই ড্র হয়েছে। গত বছর জুনে বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপের বাছাই পর্বে ভারত তাদের হারায় ২-১-এ। সুতরাং পরিসংখ্যানও এগিয়ে রেখেছে ভারতকে।
এ ছাড়াও এ দিন লটারির মাধ্যমে অন্যান্য গ্রুপের যে বিন্যাস হয়, তাতে অন্য গ্রুপগুলি দাঁড়াল এ রকম:
গ্রুপ বি- মায়ানমার বা ম্যাকাও, উত্তর কোরিয়া, সিরিয়া, জাপান
গ্রুপ সি- সিঙ্গাপুর বা গুয়াম, থাইল্যান্ড, চিন, দক্ষিণ কোরিয়া
গ্রুপ ডি- চিনা তাইপে বা তিমর, মালয়েশিয়া, কিরগিজ প্রজাতন্ত্র, ওমান
গ্রুপ ই- হংকং চিন বা ভুটান, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান, ইরান
গ্রুপ এফ- ইন্দোনেশিয়া বা ব্রুনেই, ফিলিপিন্স, ভিয়েতনাম, ইরাক
গ্রুপ জি- কম্বোডিয়া বা পাকিস্তান, তাজিকিস্তান, জর্ডন, সৌদি আরব
গ্রুপ এইচ- নেপাল বা লাওস, ইয়েমেন বা শ্রীলঙ্কা, বাহরিন, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী
গ্রুপ আই- মলদ্বীপ বা বাংলাদেশ, লেবানন, প্যালেস্তাইন, অস্ট্রেলিয়া
প্রতি গ্রুপের প্রথমেই যে দেশগুলির নাম উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলি প্রথম রাউন্ডে নিজেদের মধ্যে খেলে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠবে।
গত এক মাস ধরে যে দাপট নিয়ে ফুটবল খেলেছে ভারতীয় দল তার পরে অনেকেই এশিয়ান কাপে তাদের ভাল ফল করার ব্যাপারে ক্রমশ আশাবাদী হয়ে উঠছেন। এ বার আসন্ন বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপের বাছাই পর্বের গ্রুপ তৈরি হওয়ার পরে এই প্রতিযোগিতায় সফল হওয়া নিয়েও যথেষ্ট আশাবাদী হওয়া যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
গত দু’মাসে ফিফা ক্রমতালিকায় একেবারে কাছাকাছি থাকা দল লেবাননকে ভারত তিনবারের মুখোমুখিতে যে ভাবে দু’দু-বার হারিয়েছে ও একবার ড্র করেছে, তার কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। এ ছাড়া কুয়েতকেও একাধিকবার হারিয়েছে তারা। তবে কাতারের বিরুদ্ধে ড্র করলেও এখন পর্যন্ত কোনও ম্যাচ জিততে পারেনি ভারত।
চলতি বছরে ভারত এ পর্যন্ত ১১টি ম্যাচ খেলেছে। তার মধ্যে ন’টিতে জিতেছে এবং দু’টিতে ড্র করেছে। অর্থাৎ এই বছরে এখন পর্যন্ত হারের মুখে দেখেনি ক্রোয়েশিয়ান কোচ ইগর স্টিমাচের প্রশিক্ষণাধীন ভারত। টানা আটটি ম্যাচে গোল না খাওয়ার পর সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের গ্রুপ পর্বে কুয়েতের বিরুদ্ধে গোল খান সুনীলরা, তাও আত্মঘাতী গোল। এমন ধারাবাহিকতা অনেকদিন দেখেনি ভারতীয় ফুটবলপ্রেমীরা। সে দেশের মাটিতেই হোক বা বিদেশে। এই ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের ফলে ফিফার বিশ্ব ক্রমতালিকায় ৯৯ নম্বরে উঠে এসেছে ভারত। এই উন্নতিই আসন্ন বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে ভারতকে বাড়তি অক্সিজেন জোগাতে পারে।
২০২৬-এর ফিফা বিশ্বকাপের মূলপর্ব হবে ৪৮টি দলকে নিয়ে। এশিয়া থেকে আটটি দল খেলবে সেই বিশ্বকাপে। এর পরেও আরও একটি এশীয় দেশ প্লে-অফের গণ্ডী পেরিয়ে মূলপর্বে উঠতে পারে। এশিয়ার মোট ৪৫টি দেশ এই বাছাই পর্বে অংশ নেবে। এশিয়ায় ভারতের স্থান ১৮ নম্বরে। তাই বৃহস্পতিবারের গ্রুপবিন্যাস অনুষ্ঠানে ভারতের জায়গা হয় দু’নম্বর পাত্রে। যার ফলে তারা এই বাছাই পর্বে সরাসরি দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে।
গ্রুপবিন্যাসের সময় এশিয়ার ৪৫টি দেশকে চারটি পাত্রে রাখা হয়। সেরা ৯টি দেশকে রাখা হয় এক নম্বর পাত্রে। এশীয় ক্রমতালিকায় যারা ১০ থেকে ১৮ নম্বরে রয়েছে, তাদের রাখা হয় ২ নম্বর পাত্রে। ৩ নম্বর পাত্রে ছিল ১৯ থেকে ২৭ নম্বর দেশ এবং শেষ ১৮টি দেশের জায়গা হয় ৪ নম্বর পাত্রে। এই শেষ ১৮টি দেশ বাছাই পর্বের প্রথম রাউন্ডের ম্যাচ খেলবে এবং জয়ীরা দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে।
বাছাই পর্বের দ্বিতীয় রাউন্ডে ভারতকে যে ক্রমতালিকায় তাদের ওপরে থাকা একটি দলের মুখোমুখি হতে হবে, তা ঠিকই ছিল। কারণ, ভারতকে ২ নম্বর পাত্রে রাখা হয়। সেজন্যই ক্রমতালিকায় তাদের নীচে থাকা দেশগুলির মধ্যে থেকে বেছে নেওয়া হয় তাদের অন্যান্য প্রতিদ্বন্দীদের। এই গ্রুপ থেকে দুটি সেরা দল তৃতীয় রাউন্ডে উঠবে। ফলে ভারতের তৃতীয় রাউন্ডে পৌঁছনোর সম্ভাবনা থাকবে যথেষ্ট। যা ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাসে কখনও ঘটেনি। আর তৃতীয় রাউন্ডে উঠতে পারলে ভারত বিশ্বকাপের মূলপর্বের দিকে একধাপ এগিয়ে যাবে।