এএফসি এশিয়ান কাপের মূলপর্বে ওঠার লড়াই চলছে ভারতের। আগামী সপ্তাহেই সেই অভিযানের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ হংকংয়ের বিরুদ্ধে, যে ম্যাচে না জিততে পারলে ২০২৭-এ আবু ধাবিতে মূলপর্বে খেলার রাস্তা কঠিন হয়ে উঠবে সুনীল ছেত্রীদের। কিন্তু সেই ম্যাচের ছ’দিন আগে, বুধবার, ফিফার ক্রম তালিকায় ৯৯ নম্বরে থাকা থাইল্যান্ডের কাছে তাদের ০-২ হারের পর আসন্ন সেই ম্যাচের ফল নিয়ে আশাবাদী হওয়া যেন একটু কঠিন।

একাধিক সহজ গোলের সুযোগ নষ্ট করে এ দিন থাইল্যান্ডের পাতুম থানিতে যে ভাবে হারতে হল ১২৭ নম্বর ভারতকে, তার মধ্যে ইতিবাচক কিছু খুঁজে পাওয়া কঠিন। প্রতিপক্ষের গোলের সামনে গিয়ে ভারতীয় ফুটবলারদের খেই হারিয়ে ফেলার পুরনো রোগ যে একেবারেই সারেনি, তা এই ম্যাচে আরও একবার বোঝা যায়।

প্রায় ফাঁকা গোল পেয়েও যে ভাবে অনেকটা এগিয়ে আসা গোলকিপারের গায়ে বল মেরে অবধারিত গোলের সুযোগ নষ্ট করেন লিস্টন কোলাসো, যে ভাবে তাঁর সাজিয়ে দেওয়া বল গোলের সামনে থেকেও মিস করেন আশিক কুরুনিয়ান, সেগুলিকে অবিশ্বাস্য বললেও কম বলা হবে। সবচেয়ে বড় কথা শুরুতেই গোল খেয়ে পিছিয়ে পড়া সত্ত্বেও ভারতীয় ফুটবলারদের মধ্যে যে আগ্রাসী মানসিকতার অভাব দেখা যায়, তা নিশ্চয়ই কোচ মানোলো মার্কেজকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে।

শুধু আক্রমণ নয়, ভারতের রক্ষণেও বেশ দুর্বলতা দেখা যায় এ দিন। অষ্টম মিনিটে যে ভাবে বক্সের মাথা থেকে সোজা গোলে শট নেওয়ার সময় অরক্ষিত ছিলেন বেঞ্জামিন জেমস ডেভিস, তা অবাক করার মতোই ছিল। বক্সের মাথাতেই এক ছোট্ট টোকায় যিনি সেই গোলের পাস বাড়িয়ে দেন, সেই কোরাউইচ তাসাও ছিলেন প্রায় অরক্ষিত। তারই মাশুল দিতে হয় ভারতকে। দ্বিতীয়ার্ধে, ম্যাচের ৫৯ মিনিটের মাথায় বক্সের অনেক বাইরে থেকে অভিষেক টেকচামকে ধোঁকা দিয়ে মাপা কার্লিং শটে যে গোলটি করেন থাইল্যান্ডের ফরোয়ার্ড পোরামেত আর্জভিলাই, তাও ভারতীয় রক্ষণের ফুটবলারদের চমকে দেয়। সেই সময় সন্দেশ ঝিঙ্গনদের রক্ষণ প্রায় ফাঁকাই ছিল বলা যায়। বল বারের নীচে লেগে যখন গোলে ঢুকে যায়, তখন গোলকিপার বিশাল কয়েথকে প্রায় অসহায় লাগছিল। ম্যাচের বয়স এক ঘণ্টা হওয়ার আগেই দু’গোলের ধাক্কা সামলানোর অনেক চেষ্টা করেও পারেনি ভারতের আক্রমণ বিভাগ। বারবার আক্রমণ করেও প্রতিপক্ষের গোল এরিয়ায় গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলে তারা এবং তাতেই তাদের দুর্বলতা প্রকট হয়ে ওঠে। ম্যাচের ২৪ মিনিটের মাথাতেই কোলাসোর মাপা ফ্রি কিক থেকে গোলের সামনে উড়ে আসা বলে হেড করেন সুনীল ছেত্রী।

কিন্তু থাই গোলকিপার সারানন আনুইনের অসাধারণ সেভ তাঁকে গোল শোধ করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে। ৩৩ মিনিটের মাথায় বাঁ দিক দিয়ে উঠে বক্সে ঢুকে গোললাইনের সামনে আশিককে গোলের বল প্রায় সাজিয়ে দেন কোলাসো। বল ঠিকমতো গোলে ঠেলতে পারলে অবশ্যই গোল পেতেন আশিক। কিন্তু তিনি পারেননি। ৪০ মিনিটের মাথায় অভিষেকের দূরপাল্লার শট কয়েক ইঞ্চির জন্য গোলের বাইরে বেরিয়ে যায়। এর মধ্যে এক গোলে এগিয়ে থাকলেও থাইল্যান্ডের ব্যবধান বাড়ানোর চেষ্টা ছিল অব্যহত। তাসা ও আর্জভিলাই অল্পের জন্য বল জালে জড়াতে পারেননি। তাঁরা সফল হলে ব্যবধান প্রথমার্ধেই হয়তো আরও বেড়ে যেত।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই বক্সের বাইরে থেকে কোলাসোর কার্লিং ফ্রি কিক গোলে ঢোকার আগের মুহূর্তে ধরে ফেলেন গোলকিপার। রিজার্ভ বেঞ্চ থেকে নামা লালিয়ানজুয়ালা ছাঙতেও একক চেষ্টায় গোলের মুখ খোলার চেষ্টা করেন। কিন্তু প্রতিপক্ষের রক্ষণে বারবার আটক হয়ে যান তিনি। শেষ দিকে থাইল্যান্ড ব্যবধান আরও বাড়ানোর সুযোগ পায়। কিন্তু ততক্ষণে ভারতীয় দলের রক্ষণ অনেকটাই সতর্ক হয়ে উঠেছিল। তবে তাতে কোনও লাভ হয়নি।

ভারতীয় দল: বিশাল কয়েথ (গোল), আনোয়ার আলি, সন্দেশ ঝিঙ্গন (অধিনায়ক), লিস্টন কোলাসো, মনবীর সিং (লালিয়ানজুয়ালা ছাঙতে ৬৭’), সুনীল ছেত্রী (ব্রেন্ডন ফার্নান্ডেজ ৭৬’), আয়ুষ ছেত্রী (নিখিল প্রভু ৬৭’), লালেংমাওইয়া রালতে (সুরেশ সিং ওয়াংজাম ৪৬’), আশিক কুরুনিয়ান (সুহেল আহমদ ভাট ৮১’), আশিস রাই (বরিস সিং ৮১’), অভিষেক সিং টেকচাম।